- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- নবম-দশম শ্রেণি
- অর্থায়ন ও ব্যবসায় অর্থায়ন
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
অর্থায়ন ও ব্যবসায় অর্থায়ন
অর্থায়নের শ্রেণিবিভাগ
অর্থায়ন প্রক্রিয়া একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি, একটি অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই একেকটি অর্থায়ন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া বিভিন্ন রূপ নেয়। এবার আমরা অর্থায়নের এই ধরনের একটি শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করব।
ক. পারিবারিক অর্থায়ন
পারিবারিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে পরিবারের আয়ের উৎস ও পরিমাণ নির্ধারণ করে, সেই আয় কীভাবে ব্যয় করলে পরিবারের সদস্যদের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল হয়, তা নির্ধারণ করা হয়। পরিবারের প্রয়োজনীয় অসংখ্য ব্যয়ের মধ্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়গুলো পূরণ করা হয়। পরিবারের আয় যদি ব্যয়ের জন্য যথেষ্ট না হয় তবে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজন, পরিচিত ব্যক্তি, বন্ধু-বান্ধব থেকে অর্থ ঋণ হিসাবে নেওয়া যায়। নিয়মিত আয়ের সাথে সংগতি রেখে নিয়মিত ব্যয়সমূহ নির্ধারণ করা হয়। স্থায়ী সম্পদ যেমন: টিভি, ফ্রিজ, গাড়ি, গৃহ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া যায়। কিন্তু সংগৃহীত তহবিল সীমাবদ্ধ বলে এর উপযুক্ত ব্যবহার প্রয়োজন। যদি পরিবারের সংগৃহীত তহবিল প্রয়োজনীয় ব্যয়ের তুলনায় বেশি হয়, তবে সেটা ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সঞ্চয় করা হয়।
খ. সরকারি অর্থায়ন
প্রতিটি সরকারের একটি অর্থ ব্যবস্থাপনা আছে। একটি সরকারের প্রেক্ষাপটে তার বার্ষিক ব্যয় কোন কোন খাতে কী পরিমাণে হবে এবং সেই অর্থ কোন কোন উৎস থেকে সংগ্রহ করা যাবে, তা সরকারি অর্থায়নে আলোচনা করা হয়। সরকারকে দেশের সার্বিক উন্নয়নে অনেক খাতে অর্থ ব্যয় করতে হয়, যেমন: রাস্তাঘাট, সেতু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি হাসপাতাল, আইন-শৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষা, সামাজিক অবকাঠামো ইত্যাদি। এই ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে বিভিন্ন উৎস হতে অর্থ সংগ্রহ করতে হয়, যেমন: আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, গিফট ট্যাক্স, আমদানি শুল্ক, রপ্তানি শুল্ক, সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড, ট্রেজারি বিল ইত্যাদি।
সরকারি অর্থায়নে প্রথমে ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী তহবিল সংগ্রহ করা হয়। সরকারি অর্থায়নের মূল লক্ষ্য সমাজকল্যাণ। সরকারি অর্থায়ন সাধারণত অলাভজনক হয়। সরকারি অর্থায়নের ব্যয়, আয় অপেক্ষা বেশি হতে পারে। সরকারি মালিকানার বেশ কিছু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থাকে, যা অপেক্ষাকৃত কম লাভজনকও হতে পারে। যেমন: BCIC (Bangladesh Chemical Industries Corporation)-এর অধীনে রাসায়নিক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো।
আবার বড় বড় সেতু, ফ্লাইওভারের মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নেও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, যদি সরকারের বাজেট হতে সম্পূর্ণ অর্থের সংস্থান করতে হয়। অনেক সময় সরকারের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাজনিত ব্যয়ের জন্য অর্থের সংকট সৃষ্টি হতে পারে। ফলে অনেক সময় সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করে। যেমন: ADB (Asian Development Bank), বিশ্বব্যাংক, IDB (Islamic Development Bank) ইত্যাদি।
গ. আন্তর্জাতিক অর্থায়ন
আন্তর্জাতিক অর্থায়নে আমদানি ও রপ্তানির খাতগুলো নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। বাংলাদেশ প্রধানত আমদানিনির্ভর দেশ। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে খাদ্যসামগ্রী, কাঁচামাল, মেশিনারিজ, ঔষধ, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। অপরপক্ষে বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাতদ্রব্য, তৈরি পোশাক, কৃষিজাত দ্রব্য ইত্যাদি রপ্তানি করা হচ্ছে। রপ্তানি হতে আমদানি বেশি করতে হয় বলে প্রতিবছর বিরাট অংকের বাণিজ্যঘাটতি দেখা যায়। এই ঘাটতি পূরণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স বিশেষ ভূমিকা রাখে। আন্তর্জাতিক অর্থায়নে আমদানি ও রপ্তানি খাতসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং এ সংক্রান্ত ঘাটতি কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায় তা আলোচনা করা হয়।
ঘ. অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অর্থসংস্থান
সমাজে এমন কিছু প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা থাকে, যা মানবকল্যাণে বা দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের সেবায় নিয়োজিত। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য অর্থ বা অর্থের সমতুল্য পণ্য বা সেবার প্রয়োজন আছে এবং সেই অর্থের দক্ষ ব্যবস্থাপনারও প্রয়োজন আছে। এ ক্ষেত্রে অর্থায়ন যে ভূমিকা রাখে তা হচ্ছে অর্থ ও অর্থ সমতুল্য সম্পদ সংগ্রহের উৎস চিহ্নিতকরণ এবং তার সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির সেবামূলক উদ্দেশ্যকে সফল করা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি এতিমখানা মুনাফাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নয়। তবে এটিরও অর্থের প্রয়োজন আছে। বিভিন্ন অনুদানের মাধ্যমে এরা অর্থ সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত অর্থ ব্যয় করা হয় এতিমদের বিভিন্ন উন্নয়নে। ফলে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অর্থের উৎস চিহ্নিতকরণ এবং উদ্দেশ্য অর্জনে এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করাই অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের মূল উদ্দেশ্য।
ঙ. ব্যবসায় অর্থায়ন
অর্থায়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধরন হচ্ছে ব্যবসায় অর্থায়ন বা বিজনেস ফাইন্যান্স। মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে লাভক্ষতির ঝুঁকি নিয়ে গঠিত সংগঠনকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বলা হয়। ফলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তার তহবিল সংগ্রহ ও বিনিয়োগের জন্য যে অর্থায়ন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে, সেটিই ব্যবসায় অর্থায়ন। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়: একমালিকানা ব্যবসায়, অংশীদারি ব্যবসায় ও যৌথমূলধনি ব্যবসায়। এই তিন প্রকার প্রতিষ্ঠানেরই অর্থায়নের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো বিনিয়োগের জন্য অর্থ সংগ্রহ ও অর্থ ব্যবস্থাপনা। অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্বীয় মূলধন ও ঋণ উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্যবসায় অর্থায়নই এই পাঠের মূল বিষয়।
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সাধারণত ছোট প্রতিষ্ঠান, যা একমালিকানা বা অংশীদারি ব্যবসায় হিসেবে গঠিত। বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, গ্রাম-গঞ্জের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, মুদি দোকান, সেলুন, বুটিক শপ ইত্যাদি এই ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। একমালিকানা প্রতিষ্ঠানে লাভ হলে মালিক একা ভোগ করে, লোকসান হলে ক্ষতিপূরণের জন্য মালিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তিও ব্যবহৃত হয়।
অংশীদারি প্রতিষ্ঠানে অংশীদারদের মধ্যে ঝুঁকি বণ্টিত হয় বিধায় ব্যবসায়ের আর্থিক ক্ষতি বহনে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। এ ধরনের একমালিকানা বা অংশীদারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে তহবিল সংগ্রহের উৎস মালিকের নিজস্ব তহবিল, মুনাফা, আত্মীয়স্বজন থেকে গৃহীত ঋণ, ব্যাংক অথবা গ্রামীণ মহাজন থেকে সুদের ভিত্তিতে ঋণ গ্রহণ। সুতরাং নিজস্ব তহবিল নিয়োগ করে এর যথাযোগ্য ব্যবহার নিশ্চিত করে মুনাফা অর্জন করাই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়নের মূল উদ্দেশ্য।
যৌথমূলধনি কোম্পানির অর্থায়ন প্রক্রিয়া ভিন্ন ধরনের। একটি প্রতিষ্ঠান যৌথমূলধনি হতে হলে সরকারি অনুমোদন নিতে হয়। সরকার অনুমোদন দেওয়ার আগে ন্যূনতম মূলধনের পরিমাণ পরিচালকগণের পরিচয়পত্র, ব্যবসার উদ্দেশ্য ও নানাবিধ দলিলাদি বিচার-বিশ্লেষণ করে। অনুমোদন পেলে একটি কোম্পানি তার বড় অঙ্কের কাঙ্ক্ষিত মূলধনকে ছোট ছোট অঙ্কে বিভক্ত করে শেয়ার হিসেবে বিক্রয় করে। যেমন: ১০ কোটি টাকার মূলধন ১,০০০ টাকার ১ লক্ষ শেয়ারে বিভক্ত করে সাধারণ জনগণের কাছে বিক্রয় করা হয়। একেকটি শেয়ারের মূল্য মাত্র ১,০০০ টাকা হওয়ার কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট বিনিয়োগকারীরাও কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারে।
শেয়ারহোল্ডারগণ কোম্পানির মালিক এবং প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডাররা শেয়ারবাজার যেমন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার বিক্রয় করে শেয়ারটি নগদ অর্থে রূপান্তর করতে পারে। শেয়ার ছাড়া বন্ড ও ডিবেঞ্চার বিক্রয় করেও যৌথমূলধনি ব্যবসায় সাধারণ জনগণ থেকে ঋণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডিবেঞ্চারহোল্ডার অর্থাৎ যারা ডিবেঞ্চার বা ঋণপত্র ক্রয় করে, তাদেরকে নির্দিষ্ট হারে নিয়মিতভাবে সুদ প্রদান করতে হবে। কেননা তারা শেয়ারহোল্ডারদের মতো কোম্পানির মালিক নন।
চ. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাধারণত সে দেশের ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক-এ ধরনের সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মুনাফাভিত্তিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, তবে এগুলোর অর্থায়ন প্রক্রিয়া সাধারণ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে একটু ভিন্ন প্রকৃতির। এই ব্যাংকগুলো মানুষের ক্ষুদ্র তহবিলকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন মেয়াদি আমানত সৃষ্টি করে এবং আমানতকারীকে নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করে। আবার এই তহবিল থেকে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদান করে। এছাড়া ব্যক্তিগত বিভিন্ন প্রয়োজনেও ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া যায়। এই ঋণের উপর ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে সুদ ধার্য করে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃক ঋণগ্রহীতার জন্য ধার্যকৃত সুদের হার আমানতকারীকে প্রদেয় সুদের হার হতে অপেক্ষাকৃত বেশি। এই দুধরনের সুদের হারের পার্থক্যই ব্যাংকগুলোর মুনাফা। ব্যাংকিং অংশের অধ্যায়গুলোতে আমরা এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। বাণিজ্যিক ব্যাংক ছাড়া কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ হলো ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), বাংলাদেশ গৃহ নির্মাণ অর্থায়ন সংস্থা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ইত্যাদি। এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিন্ন ভিন্ন খাতের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ