• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • ব্যাংকিং ব্যবসায় ও তার ধরন
ব্যাংকিং ব্যবসায় ও তার ধরন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ব্যাংকিং ব্যবসায় ও তার ধরন

ব্যাংকের শ্রেণিবিন্যাস

কার্যাবলি, মালিকানা, অঞ্চল, গ্রাহক ইত্যাদির ভিত্তিতে ব্যাংকিং ব্যবসায়কে নিম্নলিখিত ৯.২ নং ছক অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস করা যায়:

ক. কার্যভিত্তিক শ্রেণিকরণ
১. কেন্দ্রীয় ব্যাংক
২. বাণিজ্যিক ব্যাংক
৩. কৃষি ব্যাংক
৪. শিল্প ব্যাংক
৫. বিনিময় ব্যাংক
৬. অন্যান্য ব্যাংক

খ. মালিকানাভিত্তিক শ্রেণিকরণ
১. রাষ্ট্রীয় ব্যাংক
২. যৌথ মালিকানা ব্যাংক
৩. সমবায় ব্যাংক
৪. এনজিও ব্যাংক
৫. বিদেশি ব্যাংক
গ. অঞ্চলভিত্তিক শ্রেণিকরণ
১. আঞ্চলিক ব্যাংক
২. জাতীয় ব্যাংক
৩. আন্তর্জাতিক ব্যাংক

ঘ. বিশেষ গ্রাহকভিত্তিক শ্রেণিকরণ
১. শ্রমিক ব্যাংক
২. মহিলা ব্যাংক
৩. স্কুল ব্যাংক
৪. ভোক্তাদের ব্যাংক

ঙ. সুদমুক্ত ব্যাংক

ক. কার্যভিত্তিক শ্রেণিকরণ

১ . কেন্দ্রীয় ব্যাংক: কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সব ব্যাংকের মুরব্বি, পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক। গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র। কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Central Bank) মুদ্রাবাজারকে সুসংগঠিত আকারে পরিচালিত করার উদ্দেশ্যেই গঠিত। সাধারণত মুদ্রা প্রচলন, অর্থ সরবরাহ এবং ঋণ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ক্ষমতা ও দায়িত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়োজিত। পৃথিবীর প্রতিটি স্বাধীন রাষ্ট্রেরই একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক আছে। বাংলাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক, ইংল্যান্ডে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, জাপানে ব্যাংক অব জাপান কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে কার্যরত রয়েছে।

২. বাণিজ্যিক ব্যাংক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য জনগণের সঞ্চিত অর্থ আমানত হিসাবে গ্রহণ এবং সে আমানত হতে ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবায় নিয়োজিত ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংক (Commercial Bank) বলা হয়। যেমন: ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড।

৩. কৃষি ব্যাংক: কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষকগণকে বিভিন্ন মেয়াদের ঋণ প্রদানসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে যে ব্যাংক কাজ করে তাকে কৃষি ব্যাংক বলে। এটি একটি বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। আমাদের কৃষি উন্নয়ন অনেকখানি নির্ভর করে কৃষি ব্যাংকের দক্ষতার উপর। এলক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪. শিল্প ব্যাংক: দেশের শিল্প খাত উন্নয়নের লক্ষ্যে যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে শিল্প ব্যাংক বলে। যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, ভূমি ক্রয়, কারখানা নির্মাণ ইত্যাদির জন্য শিল্প ব্যাংক ঋণ প্রদান করে থাকে। বিডিবিএল (Bangladesh Development Bank Limited) বাংলাদেশে এই ধরনের একটি ব্যাংক।

৫. বিনিময় ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেন নিষ্পত্তি ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের জন্য যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে বিনিময় ব্যাংক বলে। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়, রপ্তানি ইত্যাদি এ ব্যাংকের কাজ।

৬. অন্যান্য ব্যাংক: কার্যভিত্তিক শ্রেণিকরণে উল্লিখিত ব্যাংকগুলো ছাড়াও রয়েছে বিনিয়োগ ব্যাংক, সঞ্চয়ী ব্যাংক, বন্ধকী ব্যাংক, পরিবহন ব্যাংক, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ব্যাংক, আমদানি-রপ্তানি ব্যাংক প্রভৃতি। বিনিয়োগ ব্যাংক নবগঠিত কোম্পানির শেয়ারের অবলেখন বা underwriting, শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান, ব্রিজ ফিন্যান্স, ডিবেঞ্চার ফিন্যান্সসহ বিভিন্ন পরামর্শমূলক কার্যাদি সম্পাদন করে থাকে। সঞ্চয়ী ব্যাংক জনগণের অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চয় হিসাবে গ্রহণ ও মুনাফা বা সুদ প্রদানের মাধ্যমে জনগণকে অধিক সঞ্চয়ে উৎসাহিত করে তোলে। যেকোনো সময় এ ধরনের ব্যাংকে টাকা জমা এবং অর্থ উত্তোলনের সুযোগ বা অন্যান্য নিয়মে এই ব্যাংকের সঞ্চয় পরিচালিত হয়। ভূমি বন্ধক রেখে কৃষি বা শিল্পের প্রয়োজনে দীর্ঘমেয়াদে যে ব্যাংক ঋণ প্রদান করে, তাকে বন্ধকি ব্যাংক বলে। পরিবহন শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে যে বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে পরিবহন ব্যাংক বলা হয়। এ ব্যাংক যানবাহন নির্মাণ, যন্ত্রাংশ আমদানি, আধুনিকীকরণ, খুচরা যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ঋণ সরবরাহ করে থাকে। ক্ষুদ্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ব্যাংক আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্য যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে আমদানি-রপ্তানি ব্যাংক বলা হয়। এই ব্যাংক মূলত আমদানির জন্য ঋণ সরবরাহ, প্রত্যয়পত্র (L/C) সুবিধা, আমদানি তদারকিসহ বিভিন্ন উপদেশমূলক কাজ করে থাকে।

খ. মালিকানাভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ

১. রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক: সম্পূর্ণভাবে সরকারি মালিকানায় ও পরিচালনায় যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি ব্যাংক বলা হয়। যেমন: সোনালী ব্যাংক লি., জনতা ব্যাংক লি., বেসিক ব্যাংক লি. ইত্যাদি।

২. যৌথমূলধনি কোম্পানি ব্যাংক: কোম্পানি আইনের আওতায় যে ব্যাংক গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে যৌথমূলধনি কোম্পানি ব্যাংক (Joint Stock Company Bank) বলা হয়। এই ধরনের ব্যাংকগুলো প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির আদলে গঠিত হয়।

৩. সমবায় ব্যাংক: সমবায়ের নীতি ও আইন অনুযায়ী গঠিত ও পরিচালিত ব্যাংককে সমবায় ব্যাংক বলা হয়।

৪. এনজিও ব্যাংক: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো তাদের কাজের পাশাপাশি ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যাংক গঠন করে। এনজিওদের পরিচালিত ব্যাংকগুলো এ ধরনের ব্যাংকের আওতাভুক্ত।

৫. বিদেশি ব্যাংক: এক দেশের ব্যাংক যখন অন্য দেশে এসে ব্যবসায় পরিচালনা করে থাকে, ঐ দেশের জন্য তারা বিদেশি ব্যাংক হিসাবে আখ্যায়িত হয়। অর্থাৎ, বিদেশি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত ব্যাংককে বিদেশি ব্যাংক বলে। যেমন: স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।

গ. অঞ্চলভিত্তিক শ্রেণিকরণ

১ আঞ্চলিক ব্যাংক: কোনো অঞ্চল বিশেষের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে আঞ্চলিক ব্যাংক (Regional Bank) বলা হয়। যেমন: রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

২. জাতীয় ব্যাংক একটি দেশের সীমানায় থেকে ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালনা করলে তাকে জাতীয় ব্যাংক (National Bank) বলে।

৩. আন্তর্জাতিক ব্যাংক একটি দেশের জাতীয় সীমানার গণ্ডি ভেদ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে যে ব্যাংকের শাখা পরিচালনা করা হয়, তাকে আন্তর্জাতিক ব্যাংক (International Bank) বলে।

ঘ. বিশেষ গ্রাহকভিত্তিক শ্রেণিকরণ

১. শ্রমিক ব্যাংক: শ্রমিকদের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা সৃষ্টি করে জীবনধারণের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে শ্রমিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমাদের দেশে স্বতন্ত্রভাবে শ্রমিক ব্যাংক নেই, তবে শিল্প-কারখানা এলাকায় শাখা খুলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ উদ্দেশ্য সাধন করে।

২. নারীদের ব্যাংক নারীদের সঞ্চয়ে উৎসাহিত করার জন্য, তাঁদেরকে ব্যাংকিং কার্যক্রমের সাথে পরিচিত করার জন্য এবং সর্বোপরি নারীদের বিভিন্ন ব্যাংকিং-সুবিধা প্রদান করার জন্য প্রতিষ্ঠিত ব্যাংককে নারীদের ব্যাংক বলে।

৩. স্কুল ব্যাংক: উন্নত দেশগুলোতে স্কুল ব্যাংক ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আমাদের দেশে অবশ্য এ ধরনের ব্যাংক ১৯৬০ সালের দিকে একবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের জন্য সঞ্চয় বাক্স বা ব্যাগ সরবরাহ করা হয়। শিক্ষার্থীরা এতে টাকা-পয়সা জমা করে থাকে। স্কুল থেকেই সঞ্চয়ে উৎসাহ দেওয়া এ ব্যাংকের উদ্দেশ্য।

৪. ভোক্তাদের ব্যাংক ভোক্তাদের বাকিতে পণ্য ক্রয়ের সুবিধা প্রদানের জন্যই এ ব্যাংক গঠিত ও পরিচালিত হয়। ব্যাংক তার মক্কেলকে একটি কার্ড সরবরাহ করে, যার নাম Credit Card এবং এর দ্বারা ভোক্তা বাকিতে বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারে।

ঙ. সুদমুক্ত ব্যাংক

ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী সুদমুক্তভাবে ব্যাংকিং সেবাদানের লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়। অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাথে সেবা প্রদানের সামঞ্জস্য থাকলেও ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদানের নিম্নলিখিত পণ্য ও সেবা দেখতে পাওয়া যায়।

১. মুদারাবা গ্রাহককে ব্যবসায়ের মূলধন জোগান দেওয়া এবং ব্যবসায়ের শরিক হিসেবে তার মূলধন ব্যবস্থাপনা করা এই সেবার অংশ।

২. মুসারাকা: ব্যাংক এবং গ্রাহকের যৌথ উদ্যোগে ব্যবসায় পরিচালনার মাধ্যমে লাভ ও লোকসান সমবণ্টনের মাধ্যমে এই ধরনের ব্যবসায় পরিচালনা করা হয়।

৩. মুরাবাহা ঋণগ্রহীতাকে কোনো কিছু (গাড়ি, যন্ত্রপাতি) ক্রয়ের জন্য যখন অর্থায়ন করা হয়, তখন তাকে মুরাবাহা সেবা বলা হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংক কিছু লাভসহ ঋণের অর্থ ফেরত পেয়ে থাকে।

৪. ইজারা ব্যাংক কখনো কখনো ক্রেতার পক্ষ হয়ে গ্রাহকের অনুরোধে বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্রেতার ব্যবহারের জন্য তার কাছে হস্তান্তর করে। নির্দিষ্ট সময় শেষে গ্রাহক ব্যাংকের পণ্য ব্যাংকের নিকট ফেরত দেয় এবং ব্যবহারের সময়টুকুর জন্য ব্যাংককে নির্দিষ্ট পরিমাণে ভাড়া প্রদান করে।

এছাড়া ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কার্দ-এ-হাসান, বাই-মুয়াজ্জেল, বাই-সালামসহ অন্যান্য পণ্য বিভিন্ন ব্যাংকে দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মরত ইসলামি ব্যাংকসমূহ হচ্ছে:

১) ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

২) আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি

৩) সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি

৪) এক্সিম ব্যাংক পিএলসি

৫) শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি

৬) ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি

৭) আইসিবি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি

পরবর্তী

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ