• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি
  • সুখী মানুষ (গদ্য)
সুখী মানুষ (গদ্য)

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

সুখী মানুষ (গদ্য)

সুখী মানুষ - মমতাজউদদীন আহমদ

সুখী মানুষ

মমতাজউদদীন আহমদ

চরিত্র পরিচিতি

নাম
বয়স
মোড়ল
৫০
কবিরাজ
৬০
হাসু
৪৫
রহমত
২০
লোক
৪০

(প্রথম দৃশ্য)

[মোড়লের অসুখ। বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে। কবিরাজ মোড়লের নাড়ি পরীক্ষা করছে। মোড়লের আত্মীয় হাসু মিয়া আর মোড়লের বিশ্বাসী চাকর রহমত আলী অসুখ নিয়ে কথা বলছে।]

হাসু : রহমত, ও রহমত আলী।

রহমত : শুনছি।

হাসু : ভালো করে শোনো, ঐ কবিরাজ যতই নাড়ি দেখুক, তোমার মোড়লের নিস্তার নাই।

রহমত : অমন ভয় দেখাবেন না। তাহলে আমি হাউমাউ করে কাঁদতে লেগে যাব।

হাসু : কাঁদ, মন উজাড় করে কাঁদ। তোমার মোড়ল একটা কঠিন লোক। আমাদের সুবর্ণপুরের মানুষকে বড় জ্বালিয়েছে। এর গরু কেড়ে, তার ধান লুট করে তোমার মোড়ল আজ বনী। মানুষের কান্না দেখলে হাসে।

রহমত : তাই বলে মোড়লের ব্যারাম ভালো হবে না কেন?

হাসু : হবেই না তো। মোড়ল যে অত্যাচারী, পাপী। মনের মধ্যে অশান্তি থাকলে ওষুধে কাজ হয় না। দেখে নিও, মোড়ল মরবে।

রহমত : আর আজে-বাজে কথা বলবেন না। আপনি বাড়ি যান।

কবিরাজ: এত কোলাহল করো না। আমি রোগীর নাড়ি পরীক্ষা করছি।

রহমত : ও কবিরাজ, নাড়ি কী বলছে। মোড়ল বাঁচবে তো!

কবিরাজ: মূর্খের মতো কথা বল না। মানুষ এবং প্রাণী অমর নয়। আমি যা বলি মনোযোগ দিয়ে তাই শ্রবণ কর।

হাসু : আমাকে বলুন। মোড়ল আমার মামাতো ভাই।

রহমত : মোড়ল আমার মনিব।

কবিরাজ: এই নিষ্ঠুর মোড়লকে যদি বাঁচাতে চাও, তাহলে একটি কঠিন কর্ম করতে হবে।

হাসু : বাঘের চোখ আনতে হবে?

কবিরাজ : আরও কঠিন কাজ।

রহমত : হিমালয় পাহাড় তুলে আনব? 

কবিরাজ : পাহাড়, সমুদ্র, চন্দ্র, নক্ষত্র কিছুই আনতে হবে না।

মোড়ল : আর সহ্য করতে পারছি না। জ্বলে গেল। হাড় ভেঙে গেল। আমাকে বাঁচাও।

কবিরাজ: শান্ত হও। ও রহমত, মোড়লের মুখে শরবত ঢেলে দাও। (রহমত মোড়লকে শরবত দিচ্ছে)

হাসু : ঐ মোড়ল জোর করে আমার মুরগি জবাই করে খেয়েছে। আমি আজ মুরগির দাম নিয়ে ছাড়ব।

মোড়ল : ভাই হাসু এদিকে এস, আমি সব দিয়ে দেব। আমাকে শান্তি এনে দাও।

কবিরাজ মোড়ল, তুমি কি আর কোনোদিন মিথ্যা কথা বলবে?

মোড়ল : আর বলব না। এই তোমার মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করছি, আর কোনোদিন মানুষের ওপর জবরদস্তি করব না। আমাকে ভালো করে দাও।

কবিরাজ: লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। আর কোনোদিন লোভ করবে?

মোড়ল : না। লোভ করব না, অত্যাচার করব না। আমাকে শাস্তি দাও। সুখ দাও।

কবিরাজ: তাহলে মনের সুখে শুয়ে থাক, আমি ওষুধের কথা চিন্তা করি।

মোড়ল সুখ কোথায় পাব? আমাকে সুখ এনে দাও।

হাসু : অন্যের মনে দুঃখ দিলে কোনোদিন সুখ পাবে না।

মোড়ল আমার কত টাকা, কত বড় বাড়ি! আমার মনে দুঃখ কেন?

কবিরাজ: চুপ কর। যত কোলাহল করবে তত দুঃখ বাড়বে। হাসু এদিকে এস, আমার কথা শ্রবণ কর। মোড়লের ব্যামো ভালো হতে পারে, যদি...

রহমত যদি কী?

কবিরাজ: যদি আজ রাত্রির মধ্যেই-

হাসু : কী করতে হবে?

কবিরাজ: বদি একটি ফতুয়া সংগ্রহ করতে পার।

রহমত ফতুয়া?

কবিরাজ: হ্যাঁ, জামা। এই জামা হবে একজন সুখী মানুষের। তার জামাটা মোড়লের গায়ে দিলে, ভৎক্ষণাৎ তার হাড় মড়মড় রোগ ভালো হবে।

রহমত এ তো খুব সোজা ওষুধ।

কবিরাজ: সোজা নয়, খুব কঠিন কাজ। যাও, সুখী মানুষকে খুঁজে দেখ। সুখী মানুষের জামা না হলে অসুখী মোড়ল বাঁচবে না।

মোড়ল আমি বাঁচব। জামা এনে দাও, হাজার টাকা বখশিশ দেব।

(দ্বিতীয় দৃশ্য)

বনের ধারে অন্ধকার রাত। চাঁদের স্নান আলো। ছোট একটি কুঁড়েঘরের সামনে হাসু মিয়া ও রহমত গালে হাত দিয়ে ভাবছে।

রহমত কী তাজ্জব কথা, পাঁচ গ্রামে একজনও সুখী মানুষ পেলাম না। যাকেই ধরি, সেই বলে, না ভাই, আমি সুখী নই।

হালু : আর তো সময় নাই ভাই, এখন বারোটা। সুখী মানুষ নাই, সুখী মানুষের জামাও নাই। মোড়ল তো তাহলে এবার মরবে।

রহমত: আহা রে, আমরা এখন কী করব! কোথায় একটা মানুষ পাব, যে কিনা-

হাসু : পাওয়া যাবে না। সুখী মানুষ পাওয়া যাবে না। সুখ বড় কঠিন জিনিস। এ দুনিয়াতে ধনী বলছে, আরও ধন দাও, ভিখারি বলছে, আরও ভিক্ষা দাও; পেটুক বলছে, আরও খাবার

দাও। শুধু দাও আর দাও। সবাই অসুখী। কারও সুখ নেই।

রহমত: আমরাও বলছি, মোড়লের জন্য জামা দাও, আমাদের বখশিশ দাও। আমরাও অসুখী।

হাসু : চুপ চুপ! ঘরের মধ্যে কে যেন কথা বলছে।

রহমত: ভূত নাকি? চলেন, পালিয়ে যাই। ধরতে পারলে মাছভাজা করে খাবে।

এই যে, ভাই। ঘরের মধ্যে কে কথা বলছ? বেরিয়ে এস। হাসু :

রহমত ত্বকে ডাকবেন না।

[ঘর থেকে একজন লোক বেরিয়ে এলো।

লোক : তোমরা কে ভাই? কী চাও?

হাসু : আমরা খুব দুঃখী মানুষ। তুমি কে?

লোক : আমি একজন সুখী মানুষ।

হাসু : আঁ। তোমার কোনো দুঃখ নাই?

লোক : না। সারাদিন বনে বনে কাঠ কাটি। সেই কাঠ বাজারে বেচি। যা পাই, তাই দিয়ে চাল কিনি, ভাল কিনি। মনের সুখে খেয়ে-দেয়ে গান গাইতে-গাইতে শুয়ে পড়ি। এক ঘুমেই রাত কাবার।

হাসু : বনের মধ্যে একলা ঘরে তোমার ভয় করে না? যদি চোর আসে?

লোক : চোর আমার কী চুরি করবে?

হাসু : তোমার সোনাদানা, জামাজুতা? (লোকটি প্রাণখোলা হাসি হাসছে)

রহমত : হা হা করে পাগলের মতো হাসছ কেন ভাই।

লোক : তোমাদের কথা শুনে হাসছি। চোরকে তখন বলব, নিয়ে যাও, আমার যা কিছু আছে নিয়ে যাও।

হাসু : তুমি তাহলে সত্যিই সুখী মানুষ।

লোক : দুনিয়াতে আমার মতো সুখী কে? আমি সুখের রাজা। আমি মস্ত বড় বাদশা।

রহমত: ও বাদশা ভাই, তোমার গায়ের জামা কোথায়? ঘরের মধ্যে রেখেছ? তোমাকে একশ টাকা দেব। জামাটা নিয়ে এস।

লোক : জামা।

রহমত: জামা মানে জামা! এই যে, আমাদের এই জামার মতো জিনিস। তোমাকে পাঁচশ টাকা দেব। জামাটা নিয়ে এস, মোড়লের খুব কষ্ট হচ্ছে।

লোক : আমার তো কোনো জামা নাই ভাই।

হাসু : মিছে কথা বল না।

লোক : মিছে বলব কেন? আমার ঘরে কিছু নাই। সেই জন্যই তো আমি সুখী মানুষ।

পূর্ববর্তী

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ