শিক্ষা ও সাক্ষরতার ইতিহাস

প্রিপারেশন

২৬ নভেম্বর, ২০২৫

'Education' শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ, educere বা educare হতে। 'শিক্ষা' শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ 'শাস' ধাতু হতে। 'শিক্ষা' হলো শরীর, মন ও আত্মার সুসামঞ্জস্য উন্নয়ন ঘটানোর কৌশল। ১৭ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক শিক্ষা দিবস ও ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস দুটি নিয়ে এবারের আয়োজন। 

ঐতিহাসিক মহান শিক্ষা দিবস

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বে তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলন সংঘটিত হয়। এই আন্দোলনের সূচনা হয় অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, গণমুখী শিক্ষার প্রসার, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য-বঞ্চনা নিরসন তথা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে।

ইতিহাস: প্রথমে এই আন্দোলন শুরু হয় ঢাকা কলেজ থেকে। তিন বছরের ডিগ্রি পাস কোর্সের বিপক্ষে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা প্রথম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ডিগ্রির প্রতিবন্ধী ছাত্র এম আই চৌধুরী এ আন্দোলনের সূচনা করেন। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন কলেজে এ আন্দোলন চলতে থাকে। 'ডিগ্রি স্টুডেন্টস ফোরাম' নামে সংগঠন পরে 'ইস্ট পাকিস্তান স্টুডেন্টস ফোরাম' নামে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন চালাতে থাকে। ১০ আগস্ট ১৯৬২ আন্দোলনের গুণগত পরিবর্তন ঘটে। এদিন বিকেলে ঢাকা কলেজ ক্যান্টিনে স্নাতক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় শ্রেণির ছাত্ররা এক সমাবেশে মিলিত হয়। এই সভার পূর্ব পর্যন্ত ছাত্র সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলনের কোনো যোগসূত্র ছিল না। এক সভায় ১৫ আগস্ট সারা দেশে ছাত্রদের সাধারণ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

দেশব্যাপী ছাত্রসমাজের কাছে তা ব্যাপক সাড়া জাগায়। এরপর আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ সচিবালয়ের সামনে ছাত্রদের অবস্থান ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়। পূর্ব পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে। এমতাবস্থায় ১০ সেপ্টেম্বর কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলেও ছাত্ররা ১৭সেপ্টেম্বর হরতালের ডাক দেয়। ব্যাপক প্রচারের সাথে চলতে থাকে পথসভা, খণ্ডমিছিল। ব্যবসায়ী সমিতি, কর্মচারী সমিতি, রিকশা ইউনিয়ন, শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ১৭সেপ্টেম্বর ১৯৬২, ১৪৪ ধারা উপেক্ষিত করে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়। সেদিন পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশ নির্বিচারে শিক্ষার্থীদের উপর গুলি করে। শহিদ হন নবকুমার স্কুলের ছাত্র বাবুল, বাসের কন্টাক্টর গোলাম মোস্তফা ও গৃহকর্মী ওয়াজিউল্লাহ।

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস

৮ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হয়। ১৯৭২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান প্রণীত হয়। তার ১৭নং অনুচ্ছেদে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সাক্ষরতা বিস্তারে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সাক্ষরতা দিবস উদ্যাপিত হয়। ১৯৬৭সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এবং ১৯৭২ সাল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদ্যাপিত হয়ে আসছে। উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সাক্ষরতার সংজ্ঞায় ভিন্নতা থাকলেও ১৯৬৭ সালে ইউনেস্কো সর্বজনীন একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। তখন শুধু কেউ নাম লিখতে পারলেই তাকে সাক্ষর বলা হতো। পরবর্তীতে প্রায় প্রতি দশকেই এই সংজ্ঞায় পরিবর্তন আসে এবং ১৯৯৩ সালের একটি সংজ্ঞায় ব্যক্তিকে সাক্ষর হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। সেগুলো হলো- ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে, নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে, দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ হিসাব-নিকাশ করতে পারবে।

সাক্ষর

সাক্ষর এর ইংরেজি Literate। এটি স + অক্ষর = সাক্ষর। এর অর্থ হলো অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন, অক্ষরযুক্ত, অল্পশিক্ষিত। অর্থাৎ অক্ষর দিয়ে বা বর্ণ দিয়ে কিছু লিখতে ও পড়তে পারা। যে ব্যক্তি অক্ষর দিয়ে কোনো কিছু পড়তে ও লিখতে পারে তাকে সাক্ষর বলে। অন্যদিকে, সাক্ষরতা (Literacy) হলো একটি ধারাবাহিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রম। নিরক্ষর ব্যক্তিদের সাক্ষর করে তোলার জন্য সরকারি, বেসরকারি ভাবে যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় তাই মূলত সাক্ষরতা কার্যক্রম। যেমন- গণশিক্ষা কার্যক্রম, বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম, মৌলিক শিক্ষা কার্যক্রম।

স্বাক্ষর

স্বাক্ষর এর ইংরেজি Signature। এখানে স্ব নিজ, আপন অক্ষর বর্ণ, সুতরাং স্বাক্ষর নিজের অক্ষর। কাজেই শব্দের উৎপত্তিগত দিক থেকে বলা যায় কোনো ব্যক্তি নিজের নাম লিখতে বা দস্তখত বা সই করতে পারাই হলো স্বাক্ষর। তাই বলা যায় অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি কোনো কিছুতে যে নাম বা চিহ্ন ব্যবহার করেন তাকেই ঐ ব্যক্তির স্বাক্ষর বলে।

বিষয় : সাধারণ জ্ঞান