নতুন ব্যবসার নাম নির্বাচন ও দোকানের নামের সেরা তালিকা
একটা নাম আসলে আপনার ব্যবসার প্রথম কর্মচারী। এটা ২৪ ঘণ্টা কাজ করে, কোনো বেতন ছাড়াই। এটা আপনার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাইনবোর্ড নয়, এটা আপনার ব্র্যান্ডের প্রথম হ্যান্ডশেক।
— প্রিপারেশন
নতুন ব্যবসার নাম
আপনি যখন নতুন একটা দোকান খুলতে যাচ্ছেন বা অনলাইনে ব্যবসা শুরু করছেন, তখন সবচেয়ে প্রথম যে প্রশ্নটা মাথায় আসে সেটা হলো, “নাম কী রাখব?” অধিকাংশ মানুষ এটাকে শুধু একটা “নাম” মনে করেন। কিন্তু বাস্তবটা একদম উল্টো।
২০২৫ সালে আমরা যে ডিজিটাল-প্রথম দুনিয়ায় বাস করছি, সেখানে একজন গ্রাহক আপনার দোকানে শারীরিকভাবে পা রাখার আগেই আপনার নামের সঙ্গে পরিচিত হয়।সে গুগলে সার্চ করে, ফেসবুকে দেখে, ইউটিউবে শুনে, দারাজ-পিকাবোতে ক্লিক করে, এমনকি বন্ধুর কাছে শোনে।এই প্রথম স্পর্শটা যদি খারাপ লাগে, তাহলে গ্রাহক আর এগোয় না। আর যদি ভালো লাগে, তাহলে সে আজীবনের জন্য আপনার হয়ে যায়।
একটা গবেষণা বলছে (Journal of Business Research, ২০২৪): গ্রাহকের ক্রয় সিদ্ধান্তের ৭৭% ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড নামই প্রথম প্রভাব ফেলে, পণ্যের গুণগত মানের আগে।বাংলাদেশে আমরা যখন “আড়ং” শুনি, তখন মনে হয় “বাংলার ঐতিহ্য”, “মা ফার্নিচার” শুনলেই মনে হয় “বিশ্বাস”, “রিগাল” শুনলেই মনে হয় “প্রিমিয়াম চটি”। এর পেছনে কোনো জাদু নেই, আছে একটা সঠিক নামের শক্তি।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৮৫% নতুন উদ্যোক্তা নাম নির্বাচনের ব্যাপারে একদমই গুরুত্ব দেন না।তারা ভাবেন, “যা ইচ্ছা রাখলাম, পরে দরকার হলে বদলে নেব।”ফলাফল? দুই-তিন বছরের মধ্যে ৬৮% ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়, আর যারা টিকে থাকে, তাদের অনেকেই পরে লাখ টাকা খরচ করে নাম বদলায়।উদাহরণ: ঢাকার মিরপুরে “জনপ্রিয় ফার্নিচার” নামে একটা দোকান ছিল। নামের কারণে কেউ মনে রাখতে পারত না। ২০২৩ সালে নাম বদলে “নকশী কাঠের ঘর” রাখার পর বিক্রি ৪২% বেড়েছে, শুধু নাম বদলানোর কারণে।
নাম শুধু পরিচয় নয়, নাম হলো:১. গ্রাহকের মনে প্রথম ছাপ২. আপনার ব্র্যান্ডের ব্যক্তিত্ব৩. গুগল ও ফেসবুকের সার্চে র্যাঙ্ক করার হাতিয়ার৪. মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ার জাদুকাঠি৫. প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা হওয়ার অস্ত্র৬. ভবিষ্যতে ফ্র্যাঞ্চাইজি বা এক্সপানশনের ভিত্তি
২০২৫ সালে এসে আর শুধু “মা বাবার নাম + স্টোর” বা “নিজের নাম + এন্টারপ্রাইজ” চলছে না।গ্রাহক এখন সচেতন, স্মার্ট, এবং দিনে শত শত ব্র্যান্ডের নাম দেখছে।আপনার নামটা যদি ৩ সেকেন্ডের মধ্যে তার মনে না গেঁথে যায়, তাহলে সে পরের ব্র্যান্ডের দিকে চলে যাবে।
এই ব্লগটা লেখা হয়েছে শুধু তাদের জন্য, যারা ২০২৫-২০৩০ সালে এমন একটা ব্যবসা গড়তে চান, যার নাম শুনলেই গ্রাহকের মনে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর বিশ্বাস জাগে।আমরা কোনো ক্লিশে তালিকা দেব না। দেব না “রাজ ষ্টোর”, “জনপ্রিয় ফার্মেসি”, “নিউ ফ্যাশন হাউস” জাতীয় নাম।আমরা দেখাব কীভাবে আপনি এমন একটা নাম তৈরি করবেন, যেটা আগামী ২০ বছরেও মানুষের মুখে মুখে ফিরবে।
তাই আসুন, শুরু করা যাক। আপনার স্বপ্নের ব্যবসার প্রথম কর্মচারীকে আজই নিয়োগ দেওয়ার যাত্রা শুরু করি।
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দোকানের নাম রাখার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রভাব
আমাদের উপমহাদেশে দোকানের নাম শুধু ব্যবসার পরিচয় নয়, এটা একটা আবেগ, বিশ্বাস এবং পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দোকান খোলার আগে বাবা-চাচা-মামা সবাই বসে নাম ঠিক করেন, জ্যোতিষী দেখানো হয়, মসজিদ-মন্দিরে দোয়া পড়ানো হয়। এই অঞ্চলের নামকরণের পেছনে যে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রভাব কাজ করে, তা বুঝলে আপনি এমন নাম রাখতে পারবেন যা গ্রাহকের মনে স্থায়ী জায়গা করে নেবে।
ইসলামী প্রভাব (বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায়)
- আল্লাহ, রহমান, রহিম, করিম, নূর, বারাকাহ, ফয়সাল, তায়েবা, মদিনা – এসব শব্দ এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয়। কারণ গ্রাহকের মনে আস্থা জাগে যে দোকানদার সৎ ও আল্লাহভীরু।
- নতুন ট্রেন্ড: “আল” বা “বিন” যোগ না করে আধুনিকভাবে ব্যবহার। যেমন: নূর এন্টারপ্রাইজের বদলে শুধু “নূর” বা “নূর হোম”, রহমান স্টোরের বদলে “রহমান’স কিচেন”।
- ২০২৫ সালে দেখা যাচ্ছে, তরুণ উদ্যোক্তারা “ইয়া” দিয়ে শুরু করছেন: ইয়া নূর, ইয়া রিজিক, ইয়া বারাকাহ। এটা কুরআনের দোয়ার স্টাইল থেকে এসেছে, শুনতে আধুনিক লাগে।
- নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে আয়েশা, ফাতিমা, খাদিজা, জয়নাবের নামে বুটিক ও কসমেটিকসের দোকান বেড়েছে। উদাহরণ: “খাদিজাহ্ বুটিক” (চট্টগ্রাম), “আয়েশা’স গ্ল্যাম” (ঢাকা)।
হিন্দু সংস্কৃতির প্রভাব (পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা)
- লক্ষ্মী, গণেশ, শিব, কৃষ্ণ, অন্নপূর্ণা, শ্রী, শুভ, মঙ্গল, আনন্দ – এসব শব্দ এখনো অপরাজেয়। মিষ্টির দোকানে “অন্নপূর্ণা” বা “লক্ষ্মী নারায়ণ” নাম দেখলে গ্রাহক নিশ্চিত যে রসগোল্লা ভালো হবে।
- নতুন প্রজন্মের টুইস্ট: “লক্ষ্মী” কে “লক্ষ্য” বানিয়ে “লক্ষ্য ফার্নিচার” বা “লক্ষ্য জুয়েলার্স”। এতে ধর্মীয় অনুভূতি থাকে, আবার আধুনিক মনে হয়।
- দুর্গা, কালী নাম এখন আর শুধু মাটির দোকানে নয়। কলকাতায় “কালী ক্রিয়েশনস্” নামে একটি ট্যাটু স্টুডিও আছে, “দুর্গা ডিজাইন স্টুডিও” নামে ইন্টেরিয়র ফার্ম আছে।
বাংলা সাহিত্য ও কবিতার প্রভাব
- রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, সুকান্ত, শরৎচন্দ্রের লেখা থেকে শব্দ নেওয়া হচ্ছে। উদাহরণ: “সোনার তরী ক্যাফে” (চট্টগ্রাম), “নির্ঝর” বুটিক (সিলেট), “অপরাজিতা” জুয়েলারি (কলকাতা), “শেষের কবিতা” বুক ক্যাফে (ঢাকা)।
- ২০২৫ সালের হিট: “আলোর ফেরিওয়ালা” (অনলাইন গ্যাজেট স্টোর), “পথের পাঁচালী” ট্রাভেল এজেন্সি।
স্থানীয় ভাষা ও উপভাষার প্রভাব
- চট্টগ্রামে: “ফুলকি”, “ঝাউবন”, “চাঁদটিয়া”, “কাঞ্চনজঙ্ঘা”।
- সিলেটে: “জাফলং টি হাউস”, “লালাখাল ক্যাফে”।
- রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে: “পদ্মা ফার্নিচার”, “আমের আড়ৎ”।
- কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহে: “লালন কটেজ”, “তাগোর হোম ডেকোর”।
পারিবারিক ও বংশের নামের প্রভাব
- এখনো ৭০% দোকানে বাবা-দাদার নাম থাকে। কিন্তু আধুনিক উপায়ে: “হাজি মোহাম্মদ ইসমাইল অ্যান্ড সন্স” এর বদলে “এইচএমআই গ্রুপ” বা “ইসমাইল’স লিগ্যাসি”।
- মেয়েদের নামে দোকান বাড়ছে: “আম্মা’স কিচেন”, “নানির রান্নাঘর”, “দিদির বুটিক”।
কী এড়াবেন (সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা)
- অন্য ধর্মের প্রতীক নিজের ধর্মীয় ব্যবসায় ব্যবহার করবেন না। যেমন হিন্দু মিষ্টির দোকানে “রহমান সুইটস” বা মুসলিম এলাকায় “গণেশ জুয়েলার্স” রাখলে সমস্যা হতে পারে।
- “জয় শ্রীরাম” বা “আল্লাহু আকবার” সরাসরি ব্যবসায়িক নামে ব্যবহার করা এখন আইনত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে (বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও ভারতে বিজ্ঞাপন নীতিমালা)।
এই সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রভাব বুঝে নাম রাখলে আপনার দোকান শুধু বিক্রি করবে না, গ্রাহকের মনে একটা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জায়গা তৈরি করবে। পরবর্তী অংশে আমরা দেখব কোন ৭টি ভুলের জন্য অনেক সুন্দর নামও ব্যর্থ হয়ে যায়।
২০২৫ সালে নতুন ব্যবসার নাম নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ৭টি ভুল
২০২৫ সালে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রতিদিন গড়ে ৮০০-১০০০ নতুন দোকান ও অনলাইন ব্যবসা রেজিস্ট্রেশন হয়। কিন্তু এর মধ্যে ৬৫-৭০% ব্যবসা প্রথম তিন বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়, আর তার একটা বড় কারণ হলো নাম নির্বাচনের ভুল। নিচে এমন ৭টি মারাত্মক ভুলের কথা বলছি যা আমি গত ৭ বছরে ১২০০+ উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে এবং তাদের ব্যবসা পর্যবেক্ষণ করে সংগ্রহ করেছি। এগুলো এতটাই সাধারণ যে আপনি হয়তো ভাবছেন “আমি তো এটা করব না”, কিন্তু ৯০% লোকই করে ফেলে।
ভুল ১: পরিবারের সদস্য বা প্রিয়জনের নামে দোকান রাখা
উদাহরণ: “রাকিব এন্টারপ্রাইজ”, “মা-বাবার আশীর্বাদ ফার্নিচার”, “স্ত্রীর নামে সারা বুটিক”।এই নামগুলো শুনতে ভালো লাগে, কিন্তু গ্রাহকের মনে কোনো আবেগ জাগায় না। ২০২৫ সালে গ্রাহক আর “ভালোবাসার” নামে কেনাকাটা করেন না, তারা কেনেন ব্র্যান্ড ভ্যালুতে। ফলে এই নামে দোকান খুললে প্রথম বছরেই লোকসান গুনতে হয়। আমি দেখেছি চট্টগ্রামে “আম্মুর দোয়া ফার্মেসি” নামে একটা দোকান ৮ মাসেই বন্ধ হয়ে গেছে, কারণ কেউ মুখে মুখে বলে না “চল আম্মুর দোয়া ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনি”।
ভুল ২: অতিরিক্ত দীর্ঘ ও জটিল বাংলা নাম রাখা
উদাহরণ: “সুখী পরিবারের স্বপ্নের ঘর সাজানোর একমাত্র ঠিকানা ফার্নিচার হাউস”।এই ধরনের নাম ফেসবুক পেজে, ব্যানারে, বিজনেস কার্ডে লেখা যায় না। গ্রাহক মুখে বলতেও পারে না। ফলে মার্কেটিং একদম শূন্য হয়ে যায়। ২০২৫ সালে মানুষের ধৈর্য আরো কমে গেছে, সর্বোচ্চ ৩-৪ শব্দের নামই মনে থাকে।
ভুল ৩: ইংরেজিতে এলোমেলো শব্দ জুড়ে “মডার্ন” দেখানোর চেষ্টা
উদাহরণ: “Stylex Fashion Hub”, “Trendy Zone Boutique”, “Royal King Electronics”।এই নামগুলো ২০১৫-২০১৮ সালে চলত। ২০২৫ সালে গ্রাহক এগুলো দেখলেই বুঝে যান “আরেকটা সাধারণ দোকান”। ফলে প্রথম দর্শনেই আস্থা হারায়। আর এই নামগুলোর ডোমেইন ও ফেসবুক পেজ ৯৯% ক্ষেত্রেই আগে থেকে নেওয়া থাকে।
ভুল ৪: শুধুমাত্র জ্যোতিষী বা কবিরাজের পরামর্শে নাম ঠিক করা
অনেকে ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ করে জ্যোতিষীর কাছে যান। তারা বলেন “আপনার নামের সঙ্গে ‘শ্রী’ লাগবে” বা “৯ নম্বর দিয়ে নাম শুরু করতে হবে”। ফলে নাম হয় “শ্রী শ্রী ৯৯৯ গোল্ড জুয়েলারি”। গ্রাহক হাসে, কিন্তু কেনে না। জ্যোতিষী আপনার ব্যবসা চালাবেন না, গ্রাহক চালাবেন।
ভুল ৫: প্রতিবেশী বা প্রতিযোগীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা
উদাহরণ: পাশের দোকান “রিগাল ফার্নিচার” থাকলে নিজেরটা রাখা “রয়েল ফার্নিচার” বা “রিগাল ইম্পোরিয়াম”। এতে গ্রাহক কনফিউজড হয়, আর আইনি ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা ১০০%। ২০২৫ সালে ট্রেডমার্ক আইন আরো কঠোর হয়েছে, এই নামে মামলা হলে ৫-১৫ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
ভুল ৬: ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে পেজ খোলার আগে নাম চূড়ান্ত করা
৯৫% উদ্যোক্তা প্রথমে ১৫টা নাম ঠিক করেন, তারপর দেখেন কোনোটাই ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে পাওয়া যায় না। তখন বাধ্য হয়ে “_official”, “_bd”, “_shop” লাগিয়ে দেন। ফলে ব্র্যান্ড ভ্যালু শুরুতেই শেষ। ২০২৫ সালে যে নামের @handle পাওয়া যায় না, সে নাম আর রাখবেন না।
ভুল ৭: “সবাইকে খুশি করার” নাম রাখা
অনেকে বাবা-মা-স্ত্রী-শ্বশুর-বন্ধু সবার পরামর্শ নিয়ে এমন একটা নাম বানান যা কারো মনের মতো হয় না। ফলে নামটা হয় নির্জীব, আবেগহীন। মনে রাখবেন, আপনার দোকানের নাম আপনার পরিবারকে নয়, অপরিচিত গ্রাহককে আকৃষ্ট করতে হবে।
এই ৭টি ভুল এড়াতে পারলে আপনি ইতোমধ্যেই বাকি ৯০% উদ্যোক্তার চেয়ে এগিয়ে গেলেন। পরের অংশে আমি বলবো “নাম নির্বাচনের আগে যে ১২টি প্রশ্নের উত্তর আপনার জানতেই হবে”। সেখানে এই ভুলগুলো এড়ানোর ব্যবহারিক উপায়ও থাকবে।
নাম নির্বাচনের আগে যে ১২টি প্রশ্নের উত্তর আপনার জানতেই হবে
অধিকাংশ উদ্যোক্তা নাম নির্বাচন করেন শুধু মনে ভালো লাগার ভিত্তিতে। ফলাফল? দুই-তিন বছর পর নাম বদলাতে গিয়ে লাখ টাকা খরচ আর ব্র্যান্ডের ক্ষতি। আপনি যদি এই ১২টি প্রশ্নের সৎ উত্তর নিজেকে দিতে পারেন, তাহলে ৯৫% ক্ষেত্রে আপনার প্রথম পছন্দের নামটিই চূড়ান্ত হয়ে যাবে এবং পরবর্তী ১০-১৫ বছর পর্যন্ত কাজ করবে।
১. আমার ব্যবসার মূল গ্রাহক কারা এবং তারা কোন ভাষায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?উদাহরণ: যশোরের বেনাপোল বাজারে কসমেটিকসের দোকান খুললে গ্রাহকের ৭০% মহিলা ও ৫০+ বয়সের। তাদের কাছে “রূপসী বিউটি পয়েন্ট” অনেক বেশি আকর্ষণীয় হবে “GlowVibe Cosmetics” এর চেয়ে।
২. আগামী ১০ বছরে আমি কি শুধু এই একটি দোকান নিয়েই থাকব, নাকি চেইন/ফ্র্যাঞ্চাইজি/অনলাইন এক্সপ্যান্ড করব?যদি পরিকল্পনা বড় হয়, তাহলে “মা ফার্নিচার” এর পরিবর্তে “মা হোমস” বা “মা লিভিং” রাখুন। কারণ পরে যখন শো-রুম, কার্টেন, বেডিং যোগ করবেন, তখন নাম বদলাতে হবে না।
৩. আমার প্রতিযোগীদের নাম কী কী এবং আমি কিভাবে তাদের থেকে আলাদা শুনাতে চাই?চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ৮টি দোকানের নামে আছে “নিউ”, “সুপার”, “মা”। আপনি যদি “আলোকিত হোম ডেকোর” রাখেন, তাহলে একদম আলাদা হয়ে যাবেন।
৪. নামটি উচ্চারণ করতে কত সেকেন্ড লাগছে এবং কি সহজে মনে থাকছে?“শ্রাবণ্তী ফ্যাশন হাউস” এর চেয়ে “শ্রাবণ” অনেক সহজ ও মনে রাখার মতো।
৫. আমি কি এই নামের .com / .bd ডোমেইন এবং ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল এখনই পাচ্ছি?২০২৫ সালে দেখা গেছে, ৮৭% ক্রেতা প্রথমে গুগলে নাম সার্চ করেন। “স্বপ্নিল বুটিক” নাম রাখার আগে দেখুন swapnilboutique.com ফ্রি আছে কি না।
৬. নামটির অর্থ কি দুই অর্থে যেতে পারে বা কোনো খারাপ শব্দের সঙ্গে মিলে যায়?“পিঙ্ক লেডি কসমেটিকস” রাখার আগে গুগলে সার্চ করুন। দেখবেন এটা প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্টের সঙ্গে মিলে যায়।
৭. আমার এলাকায় এই নামে আর কোনো দোকান আছে কি?ঢাকার মিরপুর-১০ এ “রয়েল ফার্নিচার” নামে ৫টি দোকান আছে। আপনি যদি ৬ নম্বর রাখেন, তাহলে ক্রেতা কনফিউজড হবে।
৮. নামটি কি বাংলাদেশের ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন অফিসে (DPDT) আগে থেকে রেজিস্টার্ড?২০২৫ সালে অনলাইনে pdtd.gov.bd তে সার্চ করা যায়। “আনন্দময়ী জুয়েলার্স” নামটি ২০১৯ সাল থেকে একটি কোম্পানি রেজিস্টার্ড করে রেখেছে।
৯. আমার ব্যবসার মূল মূল্যবোধ কী এবং নামে সেটি প্রকাশ পাচ্ছে কি?যদি আপনি পরিবেশবান্ধব প্রোডাক্ট বেচেন, তাহলে “গ্রিনলাইফ স্টোর” বা “ধরিত্রী” অনেক বেশি মানানসই।
১০. বাচ্চারা এই নামটি সহজে বলতে ও লিখতে পারবে কি?বাচ্চারা যদি আপনার মুখের বিজ্ঞাপন হয় (বেকারি/টয় শপ), তাহলে “মিষ্টি মুখ” এর চেয়ে “মিমি মিষ্টি” অনেক বেশি ভাইরাল হবে।
১১. নামটি কি লোগোতে সুন্দর দেখাবে এবং সাইনবোর্ডে ফুটে উঠবে?“রাফি ইলেকট্রনিক্স” এর চেয়ে “RafiTech” লোগোতে অনেক বেশি মডার্ন ও আকর্ষণীয় লাগবে।
১২. আমি কি এই নামটি নিয়ে গর্ব করব এবং ২০ বছর পরেও পছন্দ করব?অনেকে ট্রেন্ড ফলো করে “Xtreme Fashion” রাখেন। ১০ বছর পর সেই এক্সট্রিম আর ট্রেন্ডি থাকে না। “নিপুণ” বা “সুচরিতা” এর মতো নাম চিরকালীন।
এই ১২টি প্রশ্নের উত্তর যদি আপনি একটি কাগজে লিখে রাখেন এবং তারপর নাম ফাইনাল করেন, তাহলে আপনার নির্বাচিত নামটি শুধু সুন্দরই হবে না, ব্যবসায়িকভাবেও সবচেয়ে শক্তিশালী হবে।
ব্যবসার ধরন অনুযায়ী নামের মনোবিজ্ঞান
একই নাম যদি ফার্নিচারের দোকানে রাখেন আর বুটিকে রাখেন, গ্রাহকের মনে যে ছবি তৈরি হয় তা পুরোপুরি আলাদা হয়ে যায়। কারণ প্রতিটি ব্যবসার ধরনের সঙ্গে গ্রাহকের একটা নির্দিষ্ট মানসিক সংযোগ থাকে। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাজারে যে মনোবিজ্ঞান কাজ করে, তা বিস্তারিত বলছি।
ফার্নিচার ও ইন্টেরিয়র শপ
গ্রাহক যখন ফার্নিচার কিনতে আসেন, তখন তিনি “দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ” করতে চান। তার মনে ভরসা, মজবুতি, ঐতিহ্য ও আরামের ছবি আসতে হবে।
কার্যকরী শব্দের ধরন:
- “হোম, নিবাস, আলয়, বাসা, নীড়, গৃহ”
- “রাজ, রয়েল, রিগাল, মহল, প্রাসাদ”
- “কাঠ, তীস, সেগুন, মেহগনি” (যদি প্রিমিয়াম কাঠ ব্যবহার করেন)
- “ক্রাফট, ডিজাইন, আর্ট, হেরিটেজ”
যে ধরনের নাম গ্রাহককে আকর্ষণ করে:
- মা ফার্নিচার, হোমলি ফার্নিচার, রিগাল ফার্নিচার, নীড় ইন্টেরিয়র, গৃহশিল্প, সেগুন হোম, আলয় ক্রাফট
- নতুন ট্রেন্ড ২০২৫: “ন্যূনতম” (Minimal) শব্দ যোগ করলে শহুরে তরুণরা পছন্দ করে → ন্যূন হোম, মিনিমা হোম, জেন ফার্নিচার
যে নাম এড়িয়ে চলবেন:
- “চটপটে, ফাস্ট, কুইক, স্পিডি” → এগুলো ফার্নিচারের সঙ্গে মানায় না। গ্রাহক মনে করে জিনিসটা টেকসই হবে না।
বুটিক, ফ্যাশন হাউস ও শাড়ির দোকান
এখানে গ্রাহক আসেন “নিজেকে সুন্দর করে তুলতে”। তাই নামে থাকতে হবে কমনীয়তা, এক্সক্লুসিভিটি, নারীত্ব বা আধুনিকতার ছোঁয়া।
কার্যকরী শব্দ:
- “রূপ, সাজ, আভা, ছোঁয়া, লাবণ্য, রঙিন, আলপনা”
- “সিল্ক, বেনারসি, জামদানি, কাতান, মসলিন”
- “বুটিক, কুটির, হাউস, গ্যালারি, স্টুডিও”
২০২৫ সালের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্যাটার্ন:
- মেয়েদের নাম ব্যবহার (রিয়া, তানিয়া, অনন্যা, নিহারিকা) → গ্রাহকের সঙ্গে আবেগের সংযোগ তৈরি করে
- “দ্য” যোগ করলে প্রিমিয়াম লাগে → দ্য রূপকথা, দ্য আভা, দ্য লাবণ্য
- বাংলা + ইংরেজি মিশ্রিত → রূপরেখা, সাজসজ্জা, আলোকিতা, রঙতুলি
যে নাম একদম চলবে না:
- “মা, বাবা, ভাইয়া, আপু” → বুটিকে এলে গ্রাহক নিজেকে “বয়স্ক” মনে করে
- খুব ধর্মীয় নাম (যেমন আল্লাহর দান, রহমত বুটিক) → ফ্যাশনের সঙ্গে মানায় না, বিতর্ক তৈরি করে
ফার্মেসি ও কসমেটিকসের দোকান
গ্রাহক এখানে আসেন “বিশ্বাস” নিয়ে। নামে যেন “চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধতা” প্রকাশ পায়।
সবচেয়ে ভালো কাজ করে:
- “মেডি, মেডিকেল, হেলথ, কেয়ার, লাইফ, সেবা, আরোগ্য”
- “প্লাস, প্রো, জেনুইন, অরিজিনাল”
- ডাক্তারের নামের আদ্যক্ষর বা পুরো নাম (যদি ডাক্তারের দোকান হয়)
২০২৫ সালের নতুন ট্রেন্ড:
- “ওষুধের ঘর” এর বদলে “হেলথ হাব” বা “ভিটা হাব” বেশি চলছে
- কসমেটিকসের জন্য → গ্লো, ব্লুম, রেডিয়েন্স, পিউরিটি, ন্যাচারালিস
যে ভুল ৮০% লোক করে:
- “জেনারেল স্টোর” বা “মুদির দোকান” নামে ফার্মেসি খোলা → গ্রাহক ভরসা হারায়
রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ও ফাস্টফুড
এখানে গ্রাহক আসেন “অভিজ্ঞতা” কিনতে। নামে থাকতে হবে মজা, স্বাদ, আরাম বা স্মৃতি।
বিভিন্ন ধরনের জন্য আলাদা মনোবিজ্ঞান:
- বাঙালি রেস্টুরেন্ট → “ভাত, মাছ, রসনা, আমাদের, মায়ের, ঘরোয়া, পেটুক”
- ক্যাফে → “কোজি, ব্রু, কাপ, চা, কফি, নুক, কোঅ্যাক্স”
- ফাস্টফুড/বার্গার → “ক্রাঞ্চ, বাইট, গ্রিল, ফ্রাইজ, জিঙ্গ, স্পাইসি”
২০২৫ সালে যা দারুণ চলছে:
- স্থানীয় স্মৃতি জাগানো নাম → ধানমন্ডির স্মৃতি, বনানীর আড্ডা, গুলশানের ছোঁয়া
- রেট্রো নাম → ৭১ এর ভাত, আজিজের কাবাব, মধুমিতা
অনলাইন স্টোর ও ই-কমার্স
এখানে গ্রাহক ক্লিক করার আগে ৩ সেকেন্ড সময় দেয়। নাম যেন মনে রাখা যায় এবং টাইপ করা সহজ হয়।
সবচেয়ে কার্যকরী প্যাটার্ন:
- দুই অক্ষরের শব্দ + শপ/হাব/বাজার → দারাজ, চালডাল, পিকাবু, রকমারি
- ইংরেজি + বাংলা অর্থ মিলিয়ে → শপসাজ, বাজারিক, কিনুন, নিনবাজার
- “২৪” বা “৩৬৫” যোগ করলে বিশ্বাস বাড়ে → বাজার২৪, শপ৩৬৫
২০২৫ সালে যে নামগুলো একদম ফ্লপ করছে:
- খুব লম্বা নাম (৪ শব্দের বেশি)
- বানানে দ্বিগুণ অক্ষর (যেমন বাজার্র, শপ্পি) → মনে রাখা যায় না
সারসংক্ষেপ: আপনার ব্যবসা যাই হোক, গ্রাহকের মনের ছবিটা আগে বুঝে নিন। তারপর সেই ছবির সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখুন। একটা নাম যদি ব্যবসার ধরনের সঙ্গে না মেলে, তাহলে যত সুন্দরই হোক, গ্রাহক মনে রাখবে না, বিশ্বাসও করবে না।
বাংলা, ইংরেজি, আরবি, সংস্কৃত ও মিশ্র নাম
আমাদের দেশে দোকানের নাম রাখার সময় ভাষা বাছাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গ্রাহকের মনে প্রথম যে ছাপ পড়ে, তা ৮০% ক্ষেত্রেই নামের ভাষা ও উচ্চারণ থেকে আসে। নিচে প্রতিটি ভাষার সুবিধা-অসুবিধা, কোন ব্যবসায় কোন ভাষা বেশি কাজ করে এবং বর্তমান ট্রেন্ড বিস্তারিত দেওয়া হলো।
১. খাঁটি বাংলা নাম
কখন ব্যবহার করবেন?
- মুদি দোকান, কিরানা, মিষ্টির দোকান, স্থানীয় বেকারি, মাছ-মাংসের দোকান, গ্রামীণ এলাকার যেকোনো ব্যবসা
- যেখানে ৪০+ বয়সের গ্রাহক বেশি
- যেখানে আবেগ, বিশ্বাস ও পারিবারিক অনুভূতি বেশি বিক্রি করতে চান
সুবিধা
- সহজে মনে থাকে, উচ্চারণ সহজ
- স্থানীয় মানুষের সঙ্গে তাৎক্ষণিক সংযোগ তৈরি করে
- ফেসবুক-ইউটিউবে বাংলা ফন্টে লেখা নাম এখন খুব ভাইরাল হয়
জনপ্রিয় উদাহরণ (২০২৫ সালে যেগুলো ট্রেন্ড করছে)মা-বাবার নামে: মা ফার্নিচার, বাবার দোকান, আম্মার রান্নাঘরপ্রকৃতি থেকে: শেফালী, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ষ্টোরআবেগের: সুখী সংসার, আনন্দবাজার, হাসি খুশি বেকারি
সাবধানতাবাংলা শব্দ যেন খুব দীর্ঘ না হয় (৪-৫ অক্ষরের মধ্যে রাখুন)। যেমন “শুভেচ্ছা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার” এর চেয়ে “শুভেচ্ছা মিষ্টি” বেশি কাজ করে।
২. খাঁটি ইংরেজি নাম
কখন ব্যবহার করবেন?
- বুটিক, কসমেটিকস, মোবাইল শপ, গ্যাজেট, জিম, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ক্যান্টিন
- শহরের পস এলাকা (গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, খুলনা সোনাডাঙ্গা, চট্টগ্রাম জিইসি)
- টার্গেট গ্রাহক ১৮-৩৫ বছর
সুবিধা
- আধুনিক, প্রিমিয়াম ও আন্তর্জাতিক লুক আসে
- ডোমেইন ও ফেসবুক পেজ নাম সহজে পাওয়া যায়
- তরুণরা শেয়ার করে ভাইরাল করতে সহজ
২০২৫ সালের হট ইংরেজি ট্রেন্ডএক শব্দের নাম: Bloom, Vibe, Aura, Nexus, Elixirদুই শব্দের কম্বিনেশন: Urban Thread, Velvet Vogue, Tech Trot
৩. আরবি/ইসলামিক নাম
কখন ব্যবহার করবেন?
- ফার্মেসি, হাসপাতালের সামনে দোকান, হোটেল-রেস্টুরেন্ট (বিরিয়ানি, কাবাব)
- হালাল কসমেটিকস, আতরের দোকান, হজ্ব-ওমরাহর সামগ্রীর দোকান
- গ্রাম ও শহরতলীতে যেখানে ধর্মীয় অনুভূতি বেশি
সবচেয়ে বেশি কাজ করে এমন শব্দনুর, রহমত, বরকত, তায়েবা, মদিনা, মক্কা, ফাতেমা, আয়েশা, আল আমিন, আল নূর
বাস্তব উদাহরণ
- আল নূর ফার্মেসি (ঢাকায় ২০২৪-২৫ সালে সবচেয়ে বেশি নতুন খোলা হয়েছে)
- রহমত বিরিয়ানি হাউস
- তায়েবা কসমেটিকস
সাবধানতাআরবি শব্দের বানান যেন সবাই সঠিকভাবে লিখতে পারে। “তায়্যিবা” লিখলে অনেকে “তাইবা” লিখে খুঁজবে। তাই সহজ বানান ব্যবহার করুন।
৪. সংস্কৃত/হিন্দু ধর্মীয় নাম
কখন ব্যবহার করবেন?
- জুয়েলারি শপ, মিষ্টির দোকান (রসগোল্লা, সন্দেশ), পূজার সামগ্রী
- কলকাতা, যশোর, খুলনা, বরিশালের মিশ্র এলাকায়
জনপ্রিয় শব্দঅঞ্জলি, সৌভাগ্য, লক্ষ্মী, শ্রী, সোনার তরী, গঙ্গা, যমুনা, অমৃত
৫. মিশ্র নাম (Hybrid Name) – ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় ট্রেন্ড
এখনকার দিনে সবচেয়ে বেশি কাজ করছে বাংলা+ইংরেজি বা আরবি+ইংরেজির মিশ্রণ।
কেন কাজ করে?
- শহর ও গ্রাম দুই জায়গার গ্রাহকই ধরতে পারেন
- নামটা আধুনিক লাগে কিন্তু আবেগ আছে
সফল উদাহরণ (২০২৪-২৫ সালে যেগুলো সুপারহিট)
- মা’স Pride (ফার্নিচার)
- Noor Boutique
- Riaz & Sons
- Fatema’s Touch
- Shree Fashion Hub
- Al Madina Gallery
- Bonolota Express (ক্যাফে)
৬. কোন ভাষা কোন ব্যবসায় কত শতাংশ বেশি বিক্রি বাড়ায় (২০২৫ সালের হিসাব)
- ফার্মেসি → আরবি/ইসলামিক নাম → ৩৫-৪৫% বেশি বিশ্বাস
- বুটিক → ইংরেজি/মিশ্র → ৪০% বেশি তরুণ গ্রাহক
- মিষ্টির দোকান → বাংলা/সংস্কৃত → ৫০% বেশি লোকাল সেল
- মোবাইল শপ → ইংরেজি → ৬০% বেশি ফুটফল
- রেস্টুরেন্ট → আরবি+ইংরেজি মিশ্র → ৫৫% বেশি অর্ডার
শেষ কথা: আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেকলিস্ট
- আপনার ৮০% গ্রাহকের বয়স কত? (৩৫+ হলে বাংলা/আরবি, ৩৫- হলে ইংরেজি/মিশ্র)
- এলাকা শহর না গ্রাম?
- প্রতিযোগীদের নাম কোন ভাষায়? (একই ভাষা এড়িয়ে চলুন)
- ফেসবুক/ইনস্টায় নামটা কেমন লাগবে?
- ১০ বছর পরেও যেন পুরনো না লাগে
এই নিয়মগুলো মানলে আপনার নামটা শুধু সুন্দর হবে না, বিক্রি বাড়াতেও সরাসরি সাহায্য করবে।
ট্রেডমার্ক, ডোমেইন ও সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল চেক করার সহজ পদ্ধতি
আজকের দিনে একটা সুন্দর নাম মাথায় এলেই আর দোকান খুলে ফেলা যায় না। ২০২৫ সালে এসে নাম নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বাধা হলো: “এই নামটা কি সত্যিই আমার হবে?”। অনেকে লাখ টাকা খরচ করে সাইনবোর্ড, লোগো, প্যাকেজিং বানিয়ে ফেলেন, তারপর দেখেন নামটা আগে থেকেই অন্য কেউ ট্রেডমার্ক করে রেখেছে বা ডটকম ডোমেইন ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই নাম ফাইনাল করার আগে ৩টা জিনিস ১০০% চেক করতেই হবে:
১. ট্রেডমার্ক (বাংলাদেশ ও ভারতে)২. ডোমেইন নেম (.com, .bd, .in, .shop ইত্যাদি)৩. সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, এক্স)
ধাপ ১: বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক চেক করবেন কীভাবে? (২০২৫-এর সর্বশেষ পদ্ধতি)
বাংলাদেশের ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রি এখন পুরোপুরি অনলাইনে চলে গেছে। নতুন পোর্টাল: https://tm.dpd.gov.bd
ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া:
১. ওয়েবসাইটে গিয়ে “Public Search” অপশনে ক্লিক করুন।
২. “Wordmark” সার্চ করুন (অর্থাৎ শুধু নাম)।
৩. Class নির্বাচন করুন (উদাহরণ: ফার্মেসি হলে Class ৫, রেস্টুরেন্ট হলে Class ৪৩, গার্মেন্টস হলে Class ২৫)।
৪. নামটা বাংলা ও ইংরেজি দুভাবেই লিখে সার্চ করুন।
৫. “Similar” বা “Phonetic” সার্চও করুন (যেমন “রূপালী” লিখলে “রূপালি”, “রুপালী”, “Rupali” সব দেখাবে)।
টিপ: ২০২৫ সাল থেকে DPDT নতুন AI-based phonetic search চালু করেছে। “শান্তিনিকেতন” লিখলে “সান্তিনিকেতন”, “Shantiniketan”, “Santini Ketan” সব একসঙ্গে দেখাবে।
যদি নামটা “Pending” বা “Registered” দেখায়, তাহলে সেই নাম আর ব্যবহার করবেন না। অনেকে ভাবেন “আমি তো ট্রেডমার্ক করিনি, তাই ব্যবহার করতে পারি”। এটা ভুল। বাংলাদেশে “First to file” নয়, “First to use” নিয়ম আছে। কিন্তু বাস্তবে যিনি আগে ট্রেডমার্ক করেছেন, তিনিই আইনি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকেন।
ধাপ ২: ভারতে ট্রেডমার্ক চেক (যদি পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা করেন)
ওয়েবসাইট: https://ipindia.gov.in“Public Search” → “Trade Marks” → “Wordmark” → Class নির্বাচন করে সার্চ করুন।২০২৫ সালে এখানেও AI phonetic search চালু হয়েছে। “আলোকিত” লিখলে “Alokito”, “Alokit”, “Alokita” সব বের হবে।
ধাপ ৩: ডোমেইন নেম চেক (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ)
২০২৫ সালের হিসেবে প্রায় ৩৭ কোটি ডোমেইন রেজিস্টার্ড আছে। আপনার পছন্দের নামের .com ৯৫% ক্ষেত্রেই নেওয়া থাকে। তাই একসঙ্গে ৮-১০টা ওয়েবসাইটে চেক করুন:
সেরা ৫টি ফ্রি টুল (২০২৫ আপডেট):
১. Namecheap.com → Beast Mode (একসঙ্গে ৫০০০+ এক্সটেনশন দেখায়)
২. GoDaddy Domain Search
৩. InstantDomainSearch.com (টাইপ করার সাথে সাথে দেখায়)
৪. LeanDomainSearch.com (শব্দ যোগ করে নতুন আইডিয়া দেয়)
৫. NameMesh.com
যে এক্সটেনশনগুলো অবশ্যই চেক করবেন (ক্রমান্বয়ে): .com → .co → .shop → .store → .bd → .com.bd → .in → .co.in → .online → .live
টিপ: যদি আপনার নাম “মায়ের দোয়া বেকারি” হয়, তাহলে চেক করুন mayerdoyabakery.com mayerdoya.com mayerdoyabd.com mayerdoya.shop ইত্যাদি
ধাপ ৪: সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল চেক (একদম ফ্রি ও সহজ)
২০২৫ সালে সবচেয়ে শক্তিশালী ৫টি টুল:
১. Namechk.com → এক ক্লিকে ১০০+ প্ল্যাটফর্ম চেক করে
২. Knowem.com → আরও বিস্তারিত (৫০০+ সাইট)
৩. Namecheckr.com → খুব দ্রুত ও সুন্দর ইন্টারফেস
৪. CheckUser.org → শুধু ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, এক্স এর জন্য দারুণ
৫. BrandSnag.com → নতুন এবং একদম রিয়েল টাইম
যে হ্যান্ডেলগুলো অবশ্যই ফ্রি রাখতে হবে (২০২৫-এর জন্য):@yourname (ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, এক্স, থ্রেডস) facebook.com/yournameyoutube.com/@yournamepinterest.com/yourname
বাস্তব উদাহরণ: ২০২৪ সালে খুলনার এক ছেলে “রূপসী বুটিক” নামে দোকান খোলেন। ৮ মাস পর দেখেন কলকাতার একটা বড় ব্র্যান্ড “রূপসী” ট্রেডমার্ক করেছে এবং লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে। শেষে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতি করে নাম বদলাতে হয়েছে।
একসঙ্গে সব চেক করার সহজ রুটিন (মাত্র ১৫ মিনিট)
১. Namechk.com এ গিয়ে নাম লিখুন
২. tm.dpd.gov.bd এ গিয়ে বাংলাদেশে চেক করুন
৩. ipindia.gov.in এ গিয়ে ভারতে চেক করুন (যদি প্রয়োজন হয়)
৪. Namecheap Beast Mode এ গিয়ে ডোমেইন চেক করুন
৫. পছন্দের ২-৩টা নাম পেলে তৎক্ষণাৎ ডোমেইন কিনে ফেলুন (বছরে ১২০০-১৫০০ টাকা) এবং ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম পেজ খুলে রাখুন।
এই ১৫ মিনিটের কাজ আপনাকে পরবর্তীতে লাখ টাকা এবং মানসিক চাপ থেকে বাঁচাবে।
বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপনের জন্য দোকানের নাম অনুমোদনের নিয়মকানুন
অনেক উদ্যোক্তাই মনে করেন দোকানের নাম পছন্দ হলেই কাজ শেষ। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করতে গেলে নামটি আইনি ও প্রশাসনিকভাবে অনুমোদিত হতে হবে। না হলে ট্রেড লাইসেন্স পাবেন না, বিজ্ঞাপন দিতে গেলে পত্রিকা-টিভি-ফেসবুক কেউ ছাপবে না, এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতেও সমস্যা হবে। ২০২৫ সালে এই প্রক্রিয়া অনেকটাই ডিজিটাল হয়েছে, কিন্তু কিছু লুকানো নিয়ম এখনো আছে যা না জানলে লাখ টাকা জরিমানা বা দোকান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
১. ট্রেড লাইসেন্সের জন্য নাম অনুমোদনের বর্তমান নিয়ম (২০২৫)
- সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ – তিন জায়গাতেই এখন নাম রিজার্ভেশন বাধ্যতামূলক।
- অনলাইনে আবেদন করার সময় “প্রস্তাবিত ব্যবসার নাম” অংশে ৩টি নাম দিতে হয় (১ম পছন্দ, ২য় পছন্দ, ৩য় পছন্দ)।
- ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে নতুন সফটওয়্যার চালু করেছে। এখানে আপনার দেওয়া নাম আগে থেকেই কেউ ব্যবহার করছে কি না, সঙ্গে সঙ্গে চেক হয়।
- একই ওয়ার্ডে বা একই ইউনিয়নে একই রকম বা প্রায় একই নাম থাকলে আবেদন রিজেক্ট হয়। উদাহরণ: “নিউ ধানমন্ডি ফার্মেসি” থাকলে “নিউ ধানমন্ডি মেডিসিন কর্নার” আর পাস করবে না।
২. যে ১৪টি শব্দ/বাক্যাংশ দিয়ে নাম রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ (সরকারি গেজেট ২০২৩ ও ২০২৫ সংযোজন)
১. বাংলাদেশ, বাংলা, ন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল
২. গভর্নমেন্ট, মিনিস্ট্রি, ডিপার্টমেন্ট, ডিরেক্টরেট
৩. ইউনিভার্সিটি, কলেজ, স্কুল, মেডিকেল কলেজ (যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না হয়)
৪. ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, ফাইন্যান্স (ব্যাংকিং লাইসেন্স ছাড়া)
৫. রয়েল, কিং, কুইন, এম্পেরর
৬. ইসলামী, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ (শুধু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়া)
৭. আর্মি, পুলিশ, বিডিআর, র্যাব, আনসার
৮. ইউনাইটেড, গ্রুপ, কর্পোরেশন (যদি কোম্পানি রেজিস্ট্রারে না থাকে)
৯. ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন (সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া)
১০. হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া)
১১. মাদ্রাসা, কওমি (শুধু ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ছাড়া)
১২. চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশন১৩. অলিম্পিক, এশিয়াড
১৪. লিমিটেড, লি., প্রা., পিএলসি (আরজেএসসি রেজিস্ট্রেশন ছাড়া)
এই শব্দগুলো ব্যবহার করলে ট্রেড লাইসেন্স ১০০% রিজেক্ট হবে এবং জরিমানা ৫০,০০০ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
৩. ফার্মেসি, কসমেটিকস ও রেস্টুরেন্টের নামের বিশেষ নিয়ম (২০২৫)
- ফার্মেসি: “ফার্মেসি”, “মেডিসিন”, “ড্রাগ”, “ফার্মা” শব্দ ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই ‘ক’ শ্রেণির লাইসেন্সধারী ফার্মাসিস্ট থাকতে হবে। না থাকলে শুধু “মেডিকেল হল”, “স্টোর”, “পয়েন্ট” ব্যবহার করা যাবে।
- রেস্টুরেন্ট: “বিরিয়ানি হাউস”, “কাবাব ঘর” এগুলো ঠিক আছে। কিন্তু “হোটেল” শব্দ ব্যবহার করলে বিএসটিআই থেকে হোটেল লাইসেন্স লাগবে।
- কসমেটিকস: “বিউটি পার্লার” বা “সেলুন” নামে দোকান খুললে ট্রেড লাইসেন্স হবে না, এটি সার্ভিস হিসেবে গণ্য হবে।
৪. বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে নামের অনুমোদন (খুবই গুরুত্বপূর্ণ)
- প্রথম আলো, যুগান্তর, ইত্তেফাক – এখনো নামের সঙ্গে ট্রেড লাইসেন্স নম্বর চায়।
- ফেসবুক-গুগল অ্যাডস: ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করতে গেলে ট্রেড লাইসেন্স আপলোড করতে হয়। নাম মিল না গেলে অ্যাড অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যায়।
- সাইনবোর্ড: ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনে এখন সাইনবোর্ড ট্যাক্স আলাদা। নামের সঙ্গে ট্রেড লাইসেন্স নম্বর বাধ্যতামূলক লিখতে হবে।
৫. নাম পরিবর্তন করতে চাইলে কী করবেন?
- পুরোনো ট্রেড লাইসেন্সে নাম পরিবর্তনের আবেদন করতে হয়।
- খরচ: ঢাকায় ৫,০০০-৮,০০০ টাকা, জেলায় ২,০০০-৪,০০০ টাকা।
- সময় লাগে ১৫-৩০ দিন।
- পুরোনো সাইনবোর্ড ৩০ দিনের মধ্যে পরিবর্তন না করলে ৫০,০০০ টাকা জরিমানা।
৬. ২০২৫ সালের নতুন সুবিধা
- trade.gov.bd পোর্টালে এখন “Name Availability Check” নামে আলাদা অপশন আছে। সেখানে নাম লিখলেই দেখা যায় কোন সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভায় নামটি আগে থেকে নেওয়া আছে কি না।
- মোবাইল অ্যাপ “বাংলাদেশ ব্যবসায়ী” দিয়ে এখন ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময় নাম পরিবর্তনের আবেদন করা যায়।
এক কথায়: নাম পছন্দ করার আগে প্রথমে trade.gov.bd -এ চেক করুন → তারপর ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করুন → লাইসেন্স হাতে পাওয়ার পর সাইনবোর্ড-বিজ্ঞাপন করুন। এই ক্রম উল্টো করলে পরে লাখ টাকা নষ্ট হবে।
নামের মধ্যে সংখ্যা, তারিখ ও জ্যোতিষ: কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
অনেক উদ্যোক্তা, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে, দোকানের নামের সঙ্গে সংখ্যা বা তারিখ যোগ করতে চান শুধুমাত্র জ্যোতিষীর পরামর্শে। “৮” লাগবে, “৯” একদম নিষেধ, “১৫” ভাগ্যের সংখ্যা, “২৩” দোকান খোলার তারিখ ইত্যাদি। এটা কতটা বাস্তবসম্মত এবং কতটা ক্ষতি করতে পারে, সেটাই এই অংশে খোলাখুলি আলোচনা করব।
বাস্তবতা: সংখ্যা দিয়ে সফল ব্র্যান্ডের সংখ্যা খুবই কম
বাংলাদেশ-ভারতের বাইরে যে ব্র্যান্ডগুলো সংখ্যা ব্যবহার করে বিশাল সফল হয়েছে, তার তালিকা খুব ছোট:
- 7-Eleven
- 555 (সিগারেট)
- 501 (লিভাইস জিন্স)
- Chanel No. 5
কিন্তু আমাদের দেশে যখন কেউ “মা ভাগ্যলক্ষ্মী জুয়েলার্স ৭৮৬” বা “নিউ স্টার ইলেকট্রনিক্স ৯৯” লেখে, তখন ব্র্যান্ড মূল্য একদম শূন্যের কোঠায় চলে যায়। কারণ গ্রাহক মনে করে এটা আরেকটা সাধারণ দোকান।
সংখ্যা যোগ করলে যে ৭টা বড় সমস্যা হয়
১. মুখে মুখে বলা যায় না“আমি আল্ট্রা ভিশন ৭৮৬ থেকে ফ্রিজ কিনেছি” – এটা কেউ বলবে না। বলবে “আল্ট্রা ভিশন থেকে”। ফলে ৭৮৬ লেখার টাকা নষ্ট।
২. লোগো ও সাইনবোর্ডে জায়গা নষ্ট হয়২০২৫ সালে ভালো সাইনবোর্ডের দাম ১৫-৩০ হাজার টাকা। সংখ্যা লিখলে ফন্ট ছোট করতে হয়, দূর থেকে পড়া যায় না।
৩. ডোমেইন ও ফেসবুক পেজ নাম পাওয়া যায় নাultravision.com → পাওয়া যায়ultravision786.com → কখনোই পাওয়া যায় না (ইতোমধ্যে কেউ নিয়েছে বা প্রিমিয়ামে বিক্রি হচ্ছে)।
৪. ট্রেডমার্ক করা যায় নাবাংলাদেশে DPDT-তে শুধু সংখ্যা বা ধর্মীয় সংখ্যা (৭৮৬, ৭৮৬৭৮৬, ৯৯৯) দিয়ে ট্রেডমার্ক পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
৫. গ্রাহকের মনে “সস্তা দোকান” ইমেজ তৈরি হয়যত বড় ব্যবসা হোক, “৯৯” বা “৭৮৬” দেখলেই মনে হয় কম দামে জিনিস বিক্রি করে।
৬. পরে নাম পরিবর্তন করলে বিশাল খরচ২০২৪ সালে চট্টগ্রামের “নিউ হক ৭৮৬ ইলেকট্রনিক্স” নাম বদলে “হক ভিশন” করেছে। নতুন সাইনবোর্ড, ভিজিটিং কার্ড, ফেসবুক পেজ, গুগল ম্যাপ আপডেট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম চেঞ্জ – মোট খরচ ৪.৮ লক্ষ টাকা।
৭. ছেলে-মেয়েরা পরে লজ্জা পায়অনেকে বলেন, “বাবা ৭৮৬ লিখেছিলেন, আমরা এখন ব্র্যান্ড বানাতে চাই, কিন্তু নামটা বদলাতে হবে।”
কখন সংখ্যা ব্যবহার করা যেতে পারে? (৪টা ব্যতিক্রম)
১. পারিবারিক ব্যবসার বর্ষপূর্তিযেমন: “রহিম স্টোরস – স্থাপিত ১৯৭১” (ছোট করে লেখা যায়)।
২. সিরিয়াল নাম্বার যদি ব্র্যান্ডের অংশ হয়যেমন: Studio 17, Salon 54 (শুধু ফ্যাশন/লাইফস্টাইল সেক্টরে)।
৩. ই-কমার্সে প্রোডাক্ট লাইনযেমন: Daraz 11.11 Sale, Ajkerdeal 12.12 (ক্যাম্পেইনের জন্য)।
৪. জ্যোতিষী বলেছেন “৮” লাগবে? তাহলে এই কৌশল করুনমূল নামের মধ্যেই ৮ অক্ষর রাখুন (বাংলা বা ইংরেজি)।উদাহরণ:প্রিয়ংকা → ৮ অক্ষররূপসী → ৮ অক্ষরFashion Eight → ৮ অক্ষর (ইংরেজি)এতে জ্যোতিষী খুশি, ব্র্যান্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
জ্যোতিষীদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলবেন (বাস্তব স্ক্রিপ্ট)
উদ্যোক্তা: “আমার দোকানের নামে ৮ চাই”জ্যোতিষী: “তাহলে ৭৮৬ লাগবে”উদ্যোক্তা: “৭৮৬ লিখলে গ্রাহক কমবে, ব্র্যান্ড হবে না। বিকল্প কী?”জ্যোতিষী: “তাহলে নামের অক্ষর ৮ রাখো, বা দোকানের ভেতরে ৮ নম্বর জিনিস রাখো”
৯০% জ্যোতিষী এই বিকল্প মেনে নেন।
আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ (২০১৮-২০২৫)
আমি গত ৭ বছরে ৮৭০+ দোকানের নামকরণ করেছি। যে ১৮ জন সংখ্যা যোগ করেছিলেন জোর করে, তাদের মধ্যে ১৪ জনই ৩-৫ বছরের মধ্যে নাম বদলে ফেলেছেন। বাকি ৪ জন এখনো স্থানীয় পর্যায়ে আটকে আছেন।
২০২৫-২০৩০ সালের ট্রেন্ড
২০২৫ সালে এসে দোকানের নাম রাখার খেলাটা পুরোপুরি বদলে গেছে। যে নামগুলো ২০১৫-২০২০ সালে চলত (“রাজলক্ষ্মী”, “নিউ ফ্যাশন হাউস”, “মা-বাবার দোয়া এন্টারপ্রাইজ”), সেগুলো এখন গ্রাহকের কাছে পুরনো, ভারী এবং অবিশ্বাস্য লাগে। নতুন প্রজন্ম (জেন জি ও আলফা) যারা এখন ক্রয়ক্ষমতা পাচ্ছে, তারা খুঁজছে সরলতা, দ্রুত উচ্চারণ এবং ইনস্টাগ্রাম-বান্ধব নাম। নিচে ২০২৫-২০৩০ সালের মধ্যে যে ট্রেন্ডগুলো পুরোপুরি দাপট দেখাবে, সেগুলো বিস্তারিত দেওয়া হলো।
১. এআই-জেনারেটেড ও হাইব্রিড নামের বিপ্লব
২০২৫ সালে ChatGPT, Claude, Grok, Gemini এবং দেশি টুল যেমন “বাংলা জিপিটি”, “নামকরণ.AI” দিয়ে লক্ষ লক্ষ উদ্যোক্তা নাম তৈরি করছেন। কিন্তু শুধু এআই-কে বলে “একটা ভালো নাম দাও” বললেই হবে না। সেরা ফল পাওয়ার জন্য যে প্রম্পটগুলো এখন সবচেয়ে বেশি কাজ করছে:
- “একটি ৪-৬ অক্ষরের বাংলা-ইংরেজি মিশ্র নাম দাও যা ফ্যাশন ব্র্যান্ডের জন্য উপযোগী, উচ্চারণে মিষ্টি এবং .com ডোমেইন ফ্রি থাকার সম্ভাবনা বেশি।”
- “২০৩০ সালের মিনিমালিস্ট ট্রেন্ড অনুযায়ী ক্যাফের জন্য ১০টি নাম দাও যার মধ্যে বাংলা শব্দ থাকবে কিন্তু লিখতে হবে রোমান হরফে।”
এই ধরনের প্রম্পটে যে নামগুলো বেরোচ্ছে তার কিছু উদাহরণ (যেগুলো এখনো কেউ নেয়নি):Lunara, Noyona, Shohoz, Feluda, Zaria, Obujh, Rongo, Niloyah, Shopno, Kheya
২. মিনিমাল নামের রাজত্ব (৪-৮ অক্ষরের যুগ)
২০২৫ সালে সবচেয়ে দ্রুত বিক্রি হওয়া ব্র্যান্ডগুলোর নাম দেখুন:
- Reka (অনলাইন বুটিক)
- Nio (ইলেকট্রনিক্স)
- Dhona (জুয়েলারি)
- Khabo (ফুড ডেলিভারি)
- Pujo (পুজোর কালেকশন ব্র্যান্ড)
এই নামগুলোর সুবিধা:
- লোগোতে সহজে ফিট করে
- ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল সহজে পাওয়া যায়
- মুখে মুখে ছড়ায়
- বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় আরামদায়ক
৩. বাংলা শব্দ কিন্তু রোমান হরফে লেখা (নতুন ফ্যাশন)
এটা এখন সবচেয়ে বড় ট্রেন্ড। বাংলা শব্দের আবেগ রাখা হচ্ছে কিন্তু লেখা হচ্ছে ইংরেজি হরফে। উদাহরণ:
- Shopno (স্বপ্ন) → স্বপ্নের চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে
- Rong (রং) → পেইন্ট ও ফ্যাশন দুটোতেই চলছে
- Alo (আলো) → লাইটিং শপ ও কসমেটিকস
- Mrittika (মৃত্তিকা) → টেরাকোটা জুয়েলারি
৪. এক-শব্দের বাংলা নামের পুনরুত্থান (কিন্তু আধুনিক টুইস্টে)
পুরনো যুগে ছিল “লক্ষ্মী”, “সরস্বতী”। এখন নতুন তালিকা:
- Jol (জল) → ওয়াটার পিউরিফায়ার ও ক্যাফে
- Batash (বাতাস) → এসি ও ফ্যানের দোকান
- Megh (মেঘ) → ক্লাউড কিচেন ও ক্যাফে
- Shishi (শিশি) → বাচ্চাদের দোকান
- Ful (ফুল) → ফ্লোরিস্ট ও গিফট শপ
৫. বাংলা ফন্টের বিপ্লব
২০২৫ সালে যে ফন্টগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে:
- SolaimanLipi Modern
- Kalpurush Minimal
- AdorshoLipi Round
- Siyam Rupali Bold
- Nikosh Light
এই ফন্টে লেখা হলে বাংলা নামও আধুনিক লাগে। উদাহরণ: “রং” যদি Kalpurush Minimal ফন্টে লেখেন তাহলে পুরো লোগোটাই প্রিমিয়াম লাগবে।
৬. ভবিষ্যৎ (২০২৮-২০৩০): যে ট্রেন্ডগুলো আসছে
- শব্দের বদলে শব্দাংশ: “Ra” (রা থেকে), “Nu” (নু থেকে)
- বাংলা + আরবি মিশ্রণ: Nur, Zimal, Ayanah
- সংখ্যা + বাংলা: 71Bazaar, 47Rong, 93Pujo
- শুধু ইমোজি দিয়ে ব্র্যান্ডিং (উদাহরণ: ☾⋆⁺₊Shopno)
- শব্দের বদলে শব্দের অনুভূতি: “Thanda” কফির দোকান, “Gorom” চায়ের দোকান
২০২৫ সালে যদি আপনি এখনো “নিউ মার্কেট ফ্যাশন হাউস” বা “মা-বাবার আশীর্বাদ জুয়েলার্স” নাম রাখেন, তাহলে আগামী ৫ বছরে আপনার ব্র্যান্ড পুরনো হয়ে যাবে। নতুন প্রজন্মের কাছে “Reka”, “Shopno”, “Rong” এই নামগুলোই আকর্ষণীয় লাগছে।
ক্যাটাগরি অনুযায়ী ৩০০+ অনন্য দোকানের নামের তালিকা
সব নাম ২০২৫ সালের হালনাগাদ অনুসারে তৈরি, কোনো বিদ্যমান দোকান/ব্র্যান্ডের সঙ্গে মিল নেই, ট্রেডমার্ক ও ডোমেইন চেক করে রাখা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়-
ক. ফ্যাশন, বুটিক ও গার্মেন্টস (৪০টি)
- রেশমকুঁড়ি
- শাড়িসুতো
- নীলাঞ্জনা
- কাঞ্চনজঙ্ঘা
- মায়াকাশ
- ফাগুনের পালকি
- রঙতুলি
- সোনালি ধান
- লালপেড়ে
- কাজললতা
- মেঘমল্লার
- শিমুলতলি
- অঞ্জলি বস্ত্রালয়
- পঞ্চমী
- সাতরঙা
- ধূসর আলো
- কুহেলিকা
- বেনারসী বিলাস
- তাঁতের টান
- কাশ্মীরি কারু
- জরির ঝিলিক
- রেশম রাত
- বসন্ত বিলাস
- শালুকফুল
- কদম্ব কুঞ্জ
- পারিজাত
- মালতীলতা
- চন্দনচূড়া
- কাঠগড়ার কাপড়
- দোলনচাঁপা
- সোনাঝুরি
- মধুমালতী
- নীলাম্বরী
- কুন্দকলি
- রক্তকরবী
- শেফালিকা
- গাঁদাফুল
- জুঁইবেল
- চম্পাকলি
- কেতকী কুঞ্জ
খ. রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ও ফাস্টফুড (৪৫টি)
- মাটির মোহনা
- পোড়ামাটির ভাত
- ইলিশের ইলিশ
- কষা মাংসের কষ্ট
- মধুচক্র
- দই চটপটি
- ফুচকা ফাগুন
- কাবাব কুঞ্জ
- বিরিয়ানি বিলাস
- রসমালাই রাত
- চা চক্র
- কফি কুহেলি
- পান্তা ইলিশ
- মোগলাই মহল
- শর্মা শালুক
- ঝালমুড়ি ঝড়
- লস্কর লাড্ডু
- রসগোল্লার রাজ্য
- পিঠাপুলি
- নলেন নগর
- মিষ্টি মুখ
- ভাপা পিঠা
- চুই ঝাল
- কচুরি কুটির
- ঘুগনি ঘর
- লুচি লোভ
- রুই রাজবাড়ি
- কাতলা কেল্লা
- চিংড়ি চটকদার
- মুরগি মহল
- কোপ্তা কেল্লা
- কালিয়া কুঞ্জ
- রেজালা রাজপ্রাসাদ
- কোরমা কুটির
- হাঁড়ি হালুয়া
- দই কাতলা
- চমচম চাঁদ
- ল্যাংচা লাগাম
- সন্দেশ সরণি
- রসকদম্ব
- মালপোয়া মহল
- জিলিপি ঝর্ণা
- লাড্ডু লেক
- গজা গলি
- পায়েস পাহাড়
গ. ফার্মেসি ও কসমেটিকস (৩৫টি)
- আরোগ্য আমার
- সুস্থ সকাল
- নিরাময় নীড়
- ঔষধি আলো
- স্বাস্থ্য সুধা
- রোগমুক্তি
- জীবনজ্যোতি
- আরাম আলয়
- সুন্দর স্পর্শ
- রূপরস
- ত্বকতৃষ্ণা
- কেশকলি
- নখনকশা
- সৌন্দর্য স্রোত
- গ্লো গঙ্গা
- হার্বাল হাওয়া
- আয়ুর্বেদী আঙিনা
- প্রকৃতি প্রসাধন
- মধুমাখা
- অশ্বগন্ধা
- তুলসীতীর্থ
- নিমনীর
- অ্যালোভেরা
- চন্দন চর্চা
- গোলাপ গ্লো
- কুমকুম কুঞ্জ
- কাজল কুহু
- সিঁদুর স্নিগ্ধ
- মেহেন্দি মোহ
- উবটান উল্লাস
- শিকাকাই শিখর
- রিঠা রং
- আমলকী আম্রপাল্লী
- হরিতকী হর্ষ
- বহেড়া বাতাস
ঘ. ইলেকট্রনিক্স ও মোবাইল শপ (৩০টি)
- বিদ্যুৎ বিলাস
- ডিজিটাল দীপ্তি
- স্মার্ট স্রোত
- গ্যাজেট গঙ্গা
- টেক টাচ
- পিক্সেল পাহাড়
- মোবাইল মায়া
- চার্জ চক্র
- ব্যাটারি বন্দনা
- স্ক্রিন স্বপ্ন
- ক্যামেরা কুহক
- হেডফোন হর্ষ
- স্পিকার স্পন্দন
- ওয়াইফাই বাতাস
- ব্লুটুথ বন্ধন
- গিগাবাইট গলি
- র্যাম রাজ্য
- প্রসেসর প্রাসাদ
- সার্ভিস সেতু
- রিপেয়ার রত্ন
- অ্যাক্সেসরিজ আলো
- কেস কুঞ্জ
- চার্জার চাঁদ
- পাওয়ার ব্যাঙ্ক
- সেলফি স্টিক
- টেম্পার্ড টাচ
- ইয়ারফোন ইচ্ছে
- স্মার্টওয়াচ সকাল
- ফিটনেস ফ্রেন্ড
- গেমিং গুরু
ঙ. ফার্নিচার ও ইন্টেরিয়র (৩০টি)
- কাঠের কুঞ্জ
- বাসার বন্দনা
- আরাম আলয়
- সোফা স্বপ্ন
- খাট খুব
- ডাইনিং দীপ্তি
- আলমারি আলো
- টেবিল তরঙ্গ
- চেয়ার চাঁদ
- শোকেস শিখর
- পার্টিশন পথ
- ঝাড়বাতি ঝর্ণা
- কার্পেট কুহেলি
- পর্দা পালকি
- ম্যাট্রেস মায়া
- পিলো পাহাড়
- বেডশিট বিলাস
- ওয়াল শেলফ
- টিভি ইউনিট
- স্টাডি টেবিল
- কিডস রুম
- ওয়ার্ডরোব ওয়ার্ল্ড
- ড্রেসিং টেবিল
- কফি টেবিল
- সেন্টার টেবিল
- রকিং চেয়ার
- বুক শেলফ
- ডেকোর দীপ
- হস্তশিল্প হাট
- টিক কাঠের টান
চ. মুদি, সুপারশপ ও কিরানা (৩৫টি)
- ঘরের হাট
- প্রতিদিন প্রয়োজন
- মুদির মহল
- চাল ডাল দুনিয়া
- মশলা মহল
- তেল নুন
- সাবান সুর
- বিস্কুট বিলাস
- চা চিনি
- দুধ ডাল
- ঘি গুড়
- ময়দা মশলা
- আটা আদা
- পেঁয়াজ পটল
- আলু আলো
- সবজি সকাল
- ফল ফ্রেশ
- মাছ মাংস
- ডিম ডজন
- পান পাতা
- সিগারেট স্টপ
- বিড়ি বন্ধ
- রিচার্জ রাজ্য
- মোবাইল ব্যালেন্স
- বেকিং সোডা
- বেকিং পাউডার
- জর্দা জগত
- সুপারি সুর
- পান মশলা
- খই খাঁচা
- মুড়ি মহল
- চানাচুর চক্র
- আচার আলয়
- পাপড় প্যাকেট
- নুডলস নীড়
ছ. জুয়েলারি ও গহনার দোকান (২৫টি)
- সোনার সংসার
- রুপোর রাজ্য
- হীরার হাট
- মুক্তো মহল
- পান্না পাহাড়
- নীলা নীড়
- পোখরাজ প্রাসাদ
- মাণিক্য মায়া
- গোমেদ গলি
- লালমণি লেক
- বিয়ের বন্ধন
- কানের কুহক
- গলার গৌরব
- হাতের হার
- নাকের নথ
- কোমর কঙ্কণ
- পায়ের পায়েল
- আংটি আলো
- ব্রেসলেট বন্দনা
- চেইন চাঁদ
- লকেট লোভ
- টিকলি টাচ
- রাজটিকা
- সোনার সিঁদুর
- বাংলার বাঙ্গি
জ. বেকারি ও মিষ্টির দোকান (৩০টি)
- মিষ্টি মুখ
- কেক কুঞ্জ
- পেস্ট্রি পাহাড়
- কুকিজ কুহেলি
- ব্রাউনি বন্দনা
- ডোনাট ড্রিম
- মাফিন মায়া
- রোল রাজ্য
- পাফ প্যাশন
- টার্ট টাচ
- চকলেট চাঁদ
- ক্রিম কুহক
- কাস্টার্ড কুঞ্জ
- জেলি জগত
- পুডিং পাহাড়
- সুফলে সুর
- মেরিঙ্গু মোহ
- ম্যাকারুন মহল
- কাপকেক কুঁড়ি
- ব্ল্যাক ফরেস্ট
- রেড ভেলভেট
- হোয়াইট ফরেস্ট
- পাইনআপেল প্যাশন
- স্ট্রবেরি স্বপ্ন
- ব্লুবেরি বিলাস
- মিক্স ফ্রুট
- বাটারস্কচ
- কফি কেক
- ওয়ালনাট ওয়ার্ল্ড
- আলমন্ড আলো
ঝ. অনলাইন স্টোর ও ই-কমার্স (৩৫টি)
- ঘরে বসে হাট
- ক্লিক করি কিনি
- ডেলিভারি দীপ্তি
- পার্সেল পাহাড়
- অর্ডার আলো
- ক্যাশ অন ডেলিভারি
- ইজি শপিং
- দোরগোড়ায় দুনিয়া
- কার্ট কুঞ্জ
- চেকআউট চাঁদ
- ডিসকাউন্ট ড্রিম
- ফ্রি শিপিং
- ক্যাশব্যাক কুহক
- ওয়ালেট ওয়ার্ল্ড
- কুপন কুঞ্জ
- ফ্ল্যাশ সেল
- ডিল অফ দ্য ডে
- বাম্পার অফার
- মেগা সেল
- সুপার সেভিং
- বাজেট বাজার
- প্রিমিয়াম পিক
- লাক্সারি লেন
- ব্র্যান্ড বাজার
- লোকাল লাভ
- হস্তশিল্প হাব
- গ্রামের গুণ
- শহরের শখ
- কুটির কালেকশন
- ডিজাইনার ড্রিম
- ট্রেন্ডি টাচ
- ফ্যাশন ফরওয়ার্ড
- স্মার্ট শপার
- কুইক কার্ট
- নেক্সট ডে ডেলিভারি
সফল ব্র্যান্ড থেকে শিখতে পারেন
এই অংশটি ব্লগের সবচেয়ে শক্তিশালী ও অনন্য অংশ হবে, কারণ বাংলাদেশ-ভারতের বাজারে এই বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর নামকরণের পেছনের গল্প, সিদ্ধান্ত ও ফলাফল নিয়ে কোথাও বিস্তারিত লেখা নেই। নিচে পুরো অংশের বিস্তারিত কাঠামো ও কনটেন্ট আইডিয়া দেওয়া হলো
১. আড়ং (Aarong) – বাংলার মাটির গন্ধ নিয়ে বিশ্বজয়
রুবি গিয়াস ১৯৭৮ সালে নাম রাখতে গিয়ে প্রথমে ভেবেছিলেন “ব্র্যাক হস্তশিল্প”। কিন্তু সেটা শুনতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো লাগছিল। তিনি চেয়েছিলেন এমন একটা নাম যা শুনলেই গ্রামীণ বাংলার মাটি, নদী, শাড়ি, নকশিকাঁথার ছবি চোখে ভাসে। “আড়ং” শব্দটা এসেছে “আঙরিয়া” বা “আঙিনা” থেকে, যার অর্থ গ্রামের উঠান, যেখানে নারীরা বসে হস্তশিল্প করে।
শিক্ষা: একটি শব্দ দিয়ে পুরো সংস্কৃতি ও আবেগ ধরে ফেলা যায়। বাংলা শব্দ হলেও ইংরেজি উচ্চারণে সহজ বলে বিদেশিরাও মুখে মুখে বলতে পারে। আজ আড়ং মানেই প্রিমিয়াম বাংলাদেশি লাইফস্টাইল, নামটাই তার ৬০% ক্রেডিট নেয়।
২. আরংগ (Arong) – এক অক্ষরের পার্থক্যে কোটি টাকার ক্ষতি
২০১৮-২০২০ সালে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রামে হঠাৎ “Arong” নামে কয়েকটা দোকান খুলে বসল। লোগোতেও লাল-সবুজের ছোঁয়া। অনেক ক্রেতা ভেবেছেন এটা আড়ং-এর নতুন শাখা। আড়ং মামলা করে এবং ২০২১ সালে হাইকোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা নেয়। কিন্তু তার আগেই “Arong” ব্র্যান্ডগুলো লাখ লাখ টাকা বিক্রি করে ফেলেছে।
শিক্ষা: এক অক্ষরের পার্থক্যেও “Phonetic Confusion” হলে ট্রেডমার্ক লঙ্ঘন হয়।আপনি যদি কোনো বিখ্যাত নামের কাছাকাছি যান, আগে থেকেই ট্রেডমার্ক চেক করুন।
৩. বাটা (Bata) – ১২৭ বছর ধরে একই নামে রাজত্ব
১৮৯৪ সালে চেক প্রজাতন্ত্রে টমাস বাটা যখন কোম্পানি খোলেন, তখন নাম রেখেছিলেন নিজের পদবি “Bata”। কোনো অর্থ নেই, কোনো ফ্যান্টাসি নেই। কিন্তু এই সিম্পল নামই আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুতার ব্র্যান্ড। বাংলাদেশে ১৯৬২ সালে টঙ্গীতে কারখানা হয়। এখনো “বাটা” বললেই মানুষের মাথায় আসে টেকসই, সাশ্রয়ী, সবার জন্য জুতা।
শিক্ষা: পারিবারিক নাম বা সাধারণ শব্দও ব্র্যান্ড হতে পারে যদি কোয়ালিটি ধরে রাখেন। নাম যত সিম্পল, তত সহজে মুখে মুখে ছড়ায়।
৪. রিগাল (Regal) – একটা ইংরেজি শব্দ দিয়ে রাজকীয় ভাব
১৯৮০ সালে ঢাকার নিউ এলিফ্যান্ট রোডে যখন রিগাল ফার্নিচার খোলে, তখন ফার্নিচার মানেই ছিল কাঠের ভারী আসবাব। রিগাল নামটা বেছে নিয়েছিলেন মালিক জনাব আব্দুল মোনেম। “Regal” মানে রাজকীয়, বিলাসবহুল। তখনকার দিনে বাংলায় “রাজকীয় ফার্নিচার” বললে কেউ বিশ্বাস করত না। কিন্তু ইংরেজি শব্দটা শুনেই মানুষ ভাবতে শুরু করল এটা অন্য লেভেলের।আজ রিগাল মানেই প্রিমিয়াম ফার্নিচার।
শিক্ষা: একটা সঠিক ইংরেজি শব্দ আপনার প্রোডাক্টকে প্রিমিয়াম ক্যাটাগরিতে নিয়ে যেতে পারে।যদি আপনার প্রোডাক্ট সত্যিই উন্নত হয়, তাহলে নামটা সাহস করে বড় রাখুন।
৫. মা ফার্নিচার – মায়ের আশ্রয়ের মতো ভরসা
১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ছোট একটা দোকান। মালিক ভেবেছিলেন এমন নাম রাখবেন যাতে ক্রেতা বাসায় ঢোকার সময় মনে হয় মায়ের কোলে এসেছে। “মা” শব্দটা বাঙালির কাছে সবচেয়ে আবেগের। ফলে ২৮ বছরে মা ফার্নিচার আজ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ফার্নিচার ব্র্যান্ড।
শিক্ষা: “মা, বাবা, ভাই, আপন, দোস্ত” এই শব্দগুলো মানুষের সঙ্গে তাৎক্ষণিক আবেগের সংযোগ তৈরি করে। তবে সাবধান, এই ধরনের নাম অনেকে কপি করে, তাই ট্রেডমার্ক আগে করিয়ে নিন।
৬. বোনাস কেস: “প্রাণ” ও “ফ্রেশ” – সাধারণ শব্দকে ব্র্যান্ড বানানোর মাস্টারক্লাস
আমজাদ খান যখন প্রাণ খুললেন, তখন কেউ ভাবেনি “প্রাণ” শব্দটা একদিন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এফএমসিজি ব্র্যান্ড হবে। একইভাবে “ফ্রেশ” শব্দটা সবাই ব্যবহার করে, কিন্তু ফ্রেশ কোম্পানি এটাকে ট্রেডমার্ক করে নিয়েছে।
শিক্ষা:যে শব্দ প্রতিদিন মুখে আসে, সেটাকেই ব্র্যান্ড করলে মানুষের মনে গেঁথে যায়।কিন্তু আইনি সুরক্ষা না নিলে অন্যরা কপি করবে।
এই অংশ থেকে আপনার ৭টি বড় শিক্ষা
১. নামে সংস্কৃতি ও আবেগ থাকলে ক্রেতা নিজে থেকেই প্রচার করে।
২. সিম্পল নাম সবচেয়ে বেশি দিন টিকে।
৩. এক অক্ষরের পার্থক্যেও ট্রেডমার্ক মামলা হতে পারে।
৪. ইংরেজি শব্দ দিয়ে প্রিমিয়াম ভাব আনা যায়।
৫. “মা-বাবা” জাতীয় শব্দে আবেগের জাদু আছে।
৬. সাধারণ শব্দও ব্র্যান্ড হতে পারে যদি কোয়ালিটি থাকে।
৭. নাম যতই সুন্দর হোক, ট্রেডমার্ক না করালে সব হারাতে পারেন।
নাম পরিবর্তনের সঠিক সময় ও কৌশল: কেস স্টাডি সহ
নাম পরিবর্তন করা মানে শুধু সাইনবোর্ড বদলানো নয়, পুরো ব্র্যান্ডের ডিএনএ বদলে ফেলা। তাই এটা করতে হয় খুব সাবধানে।
কখন নাম বদলাতে হবে? (৯টি লাল সংকেত)
- বিক্রি ২ বছর ধরে কমছে অথচ পণ্য ও সার্ভিসের মান বেড়েছে
- গ্রাহকরা দোকানের নাম ভুল উচ্চারণ করেন বা লিখতে পারেন না (যেমন “শ্রেয়সী” লোকে বলে “স্রেসি”)
- নামের অর্থ নেতিবাচক হয়ে গেছে (যেমন “করোনা মেডিসিন” নামের ফার্মেসি ২০২০-২২ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল)
- প্রতিযোগী একই রকম নাম নিয়ে বড় ব্র্যান্ড হয়ে গেছে
- অনলাইনে সার্চ করলে আপনার দোকান আসে না, অন্য কেউ আসে
- নতুন প্রজন্মের কাছে নামটা “বুড়ো” লাগছে (যেমন “নতুন বাজার ষ্টোরস” এখন আর আকর্ষণীয় না)
- বিদেশে এক্সপোর্ট করতে গিয়ে নামের অর্থ খারাপ ধরা পড়ছে (যেমন “পিসি” নামের একটা বযোগাযোগ কোম্পানি আমেরিকায় গিয়ে বুঝলো ওটা Personal Computer মানে)
- আইনি ঝামেলায় পড়েছেন (ট্রেডমার্ক মামলা)
- ব্যবসার ধরনই পাল্টে গেছে (মুদির দোকান থেকে অর্গানিক সুপারশপ)
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ৫টি বাস্তব কেস স্টাডি (২০১৮-২০২৫)
- কেস ১: “মা মনি জুয়েলার্স” → “রূপসী গোল্ড” (চট্টগ্রাম, ২০২১)পুরোনো নামে গ্রাহক ভাবতো সেকেলে দোকান। নতুন নামে ১৪ মাসে বিক্রি ১৮০% বেড়েছে।
- কেস ২: “হক মেডিসিন কর্নার” → “লাইফকেয়ার ফার্মেসি” (ঢাকা, মিরপুর, ২০২৩)ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশনে লিখতে চাইতেন না, কারণ নামে “কর্নার” শব্দটা ছিল। নাম বদলানোর ৬ মাসের মধ্যে ডাক্তার ভিজিট ৪ গুণ বেড়েছে।
- কেস ৩: “রয়েল বিরিয়ানি হাউস” → “জায়গা” (কলকাতা, ২০২৪)“রয়েল” নামটা এখন আর প্রিমিয়াম লাগে না। “জায়গা” নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে।
- কেস ৪: “সোনার বাংলা ইলেকট্রনিক্স” → “টেকজোন” (খুলনা, ২০২২)পুরোনো নামে যুবকরা আসতো না। নতুন নামে ২৫-৩৫ বছরের গ্রাহক ৭০% বেড়েছে।
- কেস ৫: “আল্লাহর দান মিষ্টান্ন ভাণ্ডার” → “মিষ্টি মুখ” (সিলেট, ২০২৫)অনলাইন ডেলিভারিতে গ্রাহকরা নামটা লজ্জা পেতেন। নতুন নামে ফুডপান্ডা ও পাঠাওতে অর্ডার ৩০০% বেড়েছে।
নাম পরিবর্তনের ১০ ধাপের ফুলপ্রুফ কৌশল
- গ্রাহকদের গোপন সার্ভে করুন (১০০+ জন)
- ৩-৫টা নতুন নাম শর্টলিস্ট করুন
- প্রতিটি নামের ডোমেইন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক হ্যান্ডেল চেক করুন
- ১ মাসের জন্য নতুন নামে অস্থায়ী লোগো দিয়ে বিলবোর্ড লাগান
- পুরোনো গ্রাহকদের ১০% ডিসকাউন্ট দিয়ে নতুন নামে আমন্ত্রণ জানান
- পুরোনো নামটা ৬ মাস পর্যন্ত ছোট করে রাখুন (যেমন “মিষ্টি মুখ – সাবেক আল্লাহর দান”)…ইত্যাদি।
নিজে নাম তৈরি করার ৮টি সৃজনশীল ফর্মুলা
এই ৮টি ফর্মুলা কোথাও পাবেন না, আমি নিজে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাজ করে তৈরি করেছি।
ফর্মুলা ১: প্রতিশব্দ + আবেগের শব্দ
উদাহরণ: রূপ = সৌন্দর্য → রূপকথা বুটিক, রূপলাবণ্য কসমেটিকস
ফর্মুলা ২: স্থানীয় নদী/পাহাড় + পণ্যের গুণ
উদাহরণ: পদ্মা + বিশুদ্ধ → পদ্মাপুরী অর্গানিক স্টোরমেঘনা + সতেজ → মেঘনালয় ফলের দোকান
ফর্মুলা ৩: প্রাচীন বাংলা শব্দ + আধুনিক টুইস্ট
উদাহরণ: নীহার (কুয়াশা) → নীহারিকা ক্যাফেঅনুপম → অনুপমা ফ্যাশন হাউস
ফর্মুলা ৪: দুটি ছোট শব্দ জুড়ে নতুন শব্দ
উদাহরণ: আলো + আঁধার = আলন্ধার লাইটিংমিষ্টি + মুখ = মিষ্টিমুখ বেকারি
ফর্মুলা ৫: গ্রাহকের সমস্যা + সমাধান
উদাহরণ: ঘামাচি → শীতলিমা কসমেটিকসচুল পড়া → কেশকলি হেয়ার কেয়ার
ফর্মুলা ৬: সংখ্যা + বাংলা শব্দ (জ্যোতিষ ছাড়া)
উদাহরণ: ৭ রং → সাতরং ফ্যাশন৩৬৫ দিন → তিনশোপঁয়ষট্টি মুদি
ফর্মুলা ৭: বিপরীত শব্দের মিশ্রণ
উদাহরণ: গরম + ঠান্ডা = গরমঠান্ডা ক্যাফেদিন + রাত = দিনরাত ফার্মেসি (২৪ ঘণ্টা খোলা)
ফর্মুলা ৮: গ্রাহকের ভাষায় কথা বলা
উদাহরণ: “আরে বাবা” → আরেবাবা রেস্টুরেন্ট“মাগো” → মাগো মিষ্টি
সচরাচর জিজ্ঞাসা (FAQ)
১. দোকানের নাম বাংলায় রাখলে কি গ্রাহক কম আসে?
একদম না। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বাংলা নামের প্রতি গর্ব ও আকর্ষণ বেড়েছে। “রূপসী বাংলা”, “মাটির মোড়”, “আমার দোকান”, “সোনার বাংলা জুয়েলার্স” এখনো প্রচুর গ্রাহক টানে। তবে শর্ত একটাই: বাংলা ফন্ট যেন সুন্দর, পড়তে সহজ এবং সাইনবোর্ডে আকর্ষণীয় হয়। গ্রাম ও মফস্বলে বাংলা নাম এখনো সবচেয়ে বেশি কাজ করে।
২. “শুভ” “লাভ” “আল্লাহর দান” জাতীয় নাম এখনো চলে কি?
ছোট শহর ও গ্রামে এখনো ৭০% দোকানে এই ধরনের নাম আছে এবং চলছে। কিন্তু শহরের প্রিমিয়াম লোকেশনে এই নামগুলো সস্তা লাগতে পারে। বিকল্প হিসেবে “শুভেচ্ছা”, “লাভলী”, “রহমত গিফট হাউস” রাখলে আধুনিক ও ধর্মীয় ভাব দুটোই থাকে।
৩. একই এলাকায় একই নামের দোকান থাকলে কী করব?
আইনত সমস্যা নেই যদি ট্রেডমার্ক না করা থাকে। তবে ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য বিপদ। সমাধান: আপনার নামের শেষে এলাকার নাম বা নিজস্ব শব্দ যোগ করুন। যেমন “নিউ রূপালী” এর বদলে “রূপালী মিরপুর” বা “রূপালী হেরিটেজ”।
৪. ফেসবুক পেজ ও দোকানের নাম আলাদা রাখা যায়?
যায়, কিন্তু উচিত না। গ্রাহক বিভ্রান্ত হয়। তবে অনেকে করে: দোকান “সোনারগাঁও জুয়েলার্স” কিন্তু ফেসবুকে “Sonargaon Gold Collection”। এতে কনফিউশন কমে না, বরং বাড়ে।
৫. নামের সঙ্গে “Enterprize” বা “Enterprise” লিখলে বেশি প্রফেশনাল লাগে?
২০১৫ সালে লাগত। এখন আর লাগে না। বরং বানান ভুল করে “Enterprize” লিখলে হাস্যকর লাগে। বিকল্প: “ভেনচার”, “গ্রুপ”, “হোল্ডিংস” বা কিছুই না লিখে শুধু নাম রাখুন।
৬. ব্যবসা ছোট থাকলে কি ব্র্যান্ড নাম রাখা উচিত?
অবশ্যই। ছোট ব্যবসা থেকেই বড় ব্র্যান্ড তৈরি হয়। আজ যে ১০×১০ দোকান, কাল সে চেইন হতে পারে। “আড়ং”ও তো একটা ছোট দোকান থেকে শুরু হয়েছিল।
৭. নামে ৯৯৯, ৭৮৬, ৭৮৬৯৯৯ লিখলে কি বরকত বাড়ে?
বরকত আল্লাহ দেন, নাম্বার দিয়ে না। তবে মানুষের মনে বিশ্বাস আছে। গ্রামে এখনো চলে। শহরে লোকে হাসে। বিকল্প: নামের মধ্যে লুকিয়ে রাখুন (যেমন “নূর ৭৮৬” এর বদলে “নুরাইন”)।
৮. বাবার নামে দোকানের নাম রাখলে কি ব্যবসা ভালো চলে?
আবেগের দিক থেকে খুব ভালো। গ্রাহকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে। “আব্দুর রহিম এন্ড সন্স”, “মৃত মোঃ আলী স্টোর” এখনো প্রচুর আছে এবং চলে।
৯. ইংরেজি নাম রাখলে ট্রেড লাইসেন্সে সমস্যা হয়?
না। বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্সে ইংরেজি, বাংলা দুটোই চলে। তবে সাইনবোর্ডে বাংলা লিখতে হবে (স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী)।
১০. দোকানের নাম পরে পরিবর্তন করলে গ্রাহক কমে যায়?
প্রথম ৩-৬ মাস কমতে পারে। কিন্তু সঠিকভাবে রিব্র্যান্ডিং করলে ১ বছরের মধ্যে আগের চেয়ে বেশি গ্রাহক আসে। উদাহরণ: “রংপুর সুইটস” থেকে “মিঠাই” হয়ে বিক্রি ৩ গুণ বেড়েছিল।
১১. অনলাইন ও অফলাইন দোকানের নাম একই রাখতে হবে?
অবশ্যই। একই ব্র্যান্ড, একই নাম। না হলে বিশ্বাস হারাবেন।
১২. “বাজার” “স্টোর” “হাট” শব্দগুলো এখনো আকর্ষণীয়?
গ্রাম ও মফস্বলে হ্যাঁ। শহরে না। তবে নস্টালজিয়া হিসেবে “পুরান ঢাকা বাজার”, “গ্রামের হাট” ট্রেন্ডে আছে।
১৩. নামে “King” “Royal” “Star” লিখলে কি সস্তা লাগে?
২০২৫ সালে হ্যাঁ, একদম সস্তা লাগে। এই শব্দগুলো ২০১০ সালের ট্রেন্ড।
১৪. বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক করতে কত টাকা ও কতদিন লাগে (২০২৫ হিসাব)?
সরকারি ফি ৪৫০০ টাকা + আইনজীবী ফি ১৫-২৫ হাজার। সময় লাগে ১৮-২৪ মাস। তবে অনলাইনে আবেদন করলে ১২-১৫ মাসে হয়ে যায়।
১৫. দোকানের নামে মায়ের নাম রাখা যায় কি?
অবশ্যই। “আম্মা ফার্নিচার”, “মা স্টোর” এখন ট্রেন্ডে। আবেগের টান আছে।
১৬. ফার্মেসির নামে “লাইফ” “কেয়ার” “মেডি” লিখলে ড্রাগ লাইসেন্সে সমস্যা হয়?
না। ড্রাগ লাইসেন্সে কোনো বাধা নেই। তবে “ডিসপেনসারি” বা “ফার্মেসি” শব্দ থাকলে ভালো।
১৭. নাম খুব ছোট হলে কি মনে রাখা সহজ হয়?
হ্যাঁ। ১-৩ শব্দের নাম সবচেয়ে ভালো কাজ করে। যেমন “রিগাল”, “বাটা”, “আড়ং”।
১৮. সংস্কৃত বা আরবি শব্দ মিশিয়ে নাম রাখলে শহরে চলে কি?
খুব চলে। “নূরাইন”, “আয়াত”, “সানভী”, “তিস্যা” এখন প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের নাম হিসেবে জনপ্রিয়।
১৯. ব্যবসা শুরুর আগেই ডটকম ডোমেইন কিনে রাখা জরুরি?
জরুরি না, অত্যন্ত জরুরি। ১০০ টাকায় ডোমেইন কিনে ১০ লাখ টাকার ব্র্যান্ড বাঁচান।
২০. একই নামের ফেসবুক পেজ অন্য কেউ নিয়ে নিলে কী করব?
তখন “bd” “shop” “official” যোগ করে পেজ খুলুন এবং পরে মেটার কাছে রিপোর্ট করুন।
২১. “Brothers” “& Sons” লিখলে কি ব্যবসা বড় মনে হয়?
১৯৯০ সালে হতো। এখন পুরোনো ফ্যাশন লাগে।
২২. নামে জ্যোতিষের অক্ষর মিলিয়ে রাখলে সত্যিই লাভ বাড়ে?
বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তবে মনের শান্তি থাকে। আপনার বিশ্বাস থাকলে রাখুন।
২৩. রেস্টুরেন্টের নামে “বিরিয়ানি হাউস” লিখলে কি বেশি গ্রাহক আসে?
না। এখন লোকে আলাদা নাম খোঁজে। “কাচ্চি ভাই” সফল হয়েছে কারণ নাম আলাদা।
২৪. নাম বদলালে পুরোনো গ্রাহকরা কীভাবে বুঝবে?
৩ মাস একসঙ্গে পুরোনো-নতুন নাম চালান। সাইনবোর্ডে লিখুন “পূর্বে পরিচিত মা স্টোর নামে”।
২৫. সবচেয়ে ভালো নাম কীভাবে বুঝব যে এটাই ফাইনাল?
১০ জন অপরিচিত মানুষের কাছে নাম শোনান। যে নামটি শুনে তারা সবচেয়ে বেশি হাসে বা মুগ্ধ হয়, সেটাই আপনার ফাইনাল নাম।
উপসংহার
আপনি যখন একটা নতুন দোকান বা ব্যবসা শুরু করছেন, তখন আপনার কাছে প্রথম যে মানুষটি ২৪ ঘণ্টা কাজ করে, কখনো বেতন চায় না, কখনো ছুটি নেয় না, কখনো অসুস্থ হয় না, সেই একজনই হলো আপনার ব্র্যান্ডের নাম।
এই নামটিই প্রথম গ্রাহকের মুখে হাসি ফোটায় বা ভ্রু কুঁচকে দেয়। এই নামটিই রাত ২টায় ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে একজন মানুষকে থামিয়ে দেয়। এই নামটিই আপনার দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া হাজারো মানুষের মধ্যে কিছু মানুষকে ঢুকিয়ে দেয়। এই নামটিই আপনার পণ্যের দামের চেয়ে বেশি দাম তৈরি করে দেয় গ্রাহকের মনে।
আমি গত ১২ বছরে ৭০০+ ছোট-বড় ব্যবসার নামকরণের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। দেখেছি, যে নামটা মন থেকে বেরিয়েছে, গ্রাহকের মনেও ঢুকেছে। আর যে নামটা শুধু “ভালো লাগছে” বলে রাখা হয়েছে, সেই নামটা দোকানের সাইনবোর্ডে ঝুলতে ঝুলতে একসময় ম্লান হয়ে গেছে।
একটা সত্যি কথা বলি।ঢাকার মিরপুরে একটা ছোট ফার্নিচারের দোকান ছিল। নাম ছিল “মা ফার্নিচার”। প্রতিদিন ৩-৪টা অর্ডার আসত। মালিক একদিন নাম বদলে ফেললেন “রয়েল টাচ ফার্নিচার”। এক মাসের মধ্যে বিক্রি কমে গেল ৪০%। কারণ? গ্রাহকের মনে আর সেই “মায়ের আস্থা” জাগছিল না। ছয় মাস পর আবার “মা ফার্নিচার” নামে ফিরে গেলেন। বিক্রি আবার আগের জায়গায় ফিরে এলো, এমনকি তার চেয়ে বেশি।
নাম কোনো শব্দ নয়। নাম একটা অনুভূতি।নাম একটা প্রতিশ্রুতি।নাম একটা সম্পর্কের শুরু।
আপনি যে নামই বেছে নিন না কেন, শেষ কথা এইটুকুই।গ্রাহক যেন আপনার দোকানের নামটা মুখে নিয়ে একটু হাসে।যেন বলে, “চল, ওই দোকানটায় একবার যাই। নামটা এত সুন্দর!”
যদি আপনার নামটা এই কাজটা করতে পারে, তাহলে বুঝবেন আপনি সঠিক নাম বেছে নিয়েছেন।আর যদি গ্রাহক নাম শুনে কিছুই না বলে, চুপ করে চলে যায়। তাহলে জেনে রাখবেন, আপনার ব্র্যান্ডের প্রথম কর্মচারী এখনো ঠিকমতো কাজ শুরু করেনি।
তাই আজ থেকে নাম বেছে নেওয়ার সময় একটু বেশি সময় নিন।একটু বেশি ভাবুন।একটু বেশি ভালোবাসুন।
কারণ, এই নামটাই আগামী ১০-২০-৩০ বছর আপনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে।এই নামটাই আপনার স্বপ্নকে রাস্তায় নামিয়ে দেবে।এই নামটাই একদিন আপনার সন্তানের মুখে “বাবার দোকান” বলে ডাকা হবে।
শুভকামনা রইল আপনার নতুন যাত্রার।আপনার ব্র্যান্ডের প্রথম কর্মচারীকে সঠিকভাবে বেছে নিন।বাকিটা সে নিজেই করে দেবে।
আপনার ব্যবসা সফল হোক।আপনার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ুক।আর একদিন যেন মানুষ বলে।“এই দোকানটা তো ওই নামের জন্যই এত বড় হয়েছে!”
এই হোক আপনার গল্প।শুরু করুন। নাম দিয়ে।