বাংলাদেশে OHCHR'র কার্যালয়
— প্রিপারেশন
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের কার্যালয় চালু হবে। এ লক্ষ্যে ১০ জুলাই ২০২৫ উপদেষ্টা পরিষদ বাংলাদেশে OHCHR'র কার্যালয় স্থাপন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এরপর ১৪ জুলাই ২০২৫ বাংলাদেশ সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করে জেনেভায় পাঠায়। ১৭ জুলাই ২০২৫ OHCHR'র পক্ষে হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক স্বাক্ষর করে। সমঝোতা স্মারকটিতে ২৮টি ধারা রয়েছে। সমঝোতা স্মারকের শর্ত অনুযায়ী তিন বছর মেয়াদি কার্যালয় চালু হবে। ভবিষ্যতে এর মেয়াদ বাড়াতে হলে সময়সীমা শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে জানাতে হবে। এ কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের অন্যান্য কূটনৈতিক কার্যালয়ের কূটনীতিকদের মতো দায়মুক্তি দেওয়া হবে।
কেন OHCHR'র কার্যালয়
ঢাকায় OHCHR'র কার্যালয় খোলার পেছনে যুক্তি হচ্ছে, এই কার্যালয় হলে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সরাসরি তদন্ত করতে পারবে। স্থানীয় পর্যায়ে কার্যালয় স্থাপন হলে মানবাধিকার সুরক্ষা ও প্রসার আরও সহজ হবে। বাংলাদেশের মানবাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
OHCHR কী ও কার্যাবলি
জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয় (OHCHR) বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষায় জাতিসংঘের প্রধান সংস্থা হিসেবে কাজ করে। ২০ ডিসেম্বর ১৯৯৩ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা জাতিসংঘ সচিবালয়ের একটি বিভাগ হিসেবে পরিচালিত হয়। এ সংস্থার ম্যান্ডেট জাতিসংঘের সনদ এবং মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র থেকে উদ্ভূত।
কাজের ক্ষেত্র
আন্তর্জাতিক OHCHR'র কাজ অত্যন্ত বিস্তৃত এবং বহুমুখী। এটির লক্ষ্য হলো সবার জন্য মানবাধিকারকে বাস্তবে রূপ দেওয়া। এই সংস্থার প্রধান প্রধান কাজের ক্ষেত্রগুলো হলো- সর্বজনীন মানবাধিকার সহযোগিতিকার ইস্যুতে নেতবস্থায় তার্যক্রম সমন্বয় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অনুমোদন ও বাস্তবায়ন প্রচার নতুন মানদণ্ড তৈরি মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সমর্থন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ জাতীয় মানবাধিকার অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা ক্ষেত্রভিত্তিক কার্যক্রম ও অভিযান শিক্ষা ও অ্যাডভোকেসি সরকারকে সহায়তা মানবাধিকারের মূলধারা।
কার্যালয় স্থাপনে আপত্তি
ঢাকায় কার্যালয় স্থাপনে কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন আপত্তি জানিয়েছে। তাদের আপত্তির প্রধান কারণ হলো, অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মানবাধিকারের নামে ইসলামি শরিয়াহ, পারিবারিক আইন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে। OHCHR'র কার্যালয় স্থাপন করলে তা সার্বভৌমত্ব ও ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে। বিশেষ করে Lesbian, Gay, Bisexual, Transgender and Queer (LGBTQ) অধিকারের ইস্যুটি।
সদর দপ্তর
OHCHR'র সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। এছাড়া নিউইয়র্ক কার্যালয়, আঞ্চলিক কার্যালয়, দেশীয় কার্যালয় এবং জাতিসংঘ শান্তি মিশনে মানবাধিকার শাখাগুলোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী উপস্থিতি বজায় রাখে এই সংস্থা। নিউইয়র্ক কার্যালয় জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করে।
আঞ্চলিক কার্যালয়
আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো বৃহত্তর অঞ্চলগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখে। এর মধ্যে রয়েছে- পূর্ব আফ্রিকা (আদ্দিস আবাবা), দক্ষিণ আফ্রিকা (প্রিটোরিয়া), পশ্চিম আফ্রিকা (ডাকার), দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া (ব্যাংকক), প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল (সুভা), মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা (বৈরুত), মধ্য এশিয়া (বিশকেক), ইউরোপ (ব্রাসেলস), মধ্য আমেরিকা (পানামা সিটি), দক্ষিণ আমেরিকা (সান্তিয়াগো), ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি (নাসাউ)।
দেশীয় এবং স্বতন্ত্র কার্যালয়
বর্তমানে দেশীয় এবং স্বতন্ত্র কার্যালয় রয়েছে ১৮টি। এই কার্যালয়গুলো স্বাগতিক সরকারগুলোর সাথে চুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সাধারণত মানবাধিকার সুরক্ষা, প্রচার, পর্যবেক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের ম্যান্ডেট থাকে।
দেশীয় কার্যালয়: ১৬টি- বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, শাদ, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, গিনি, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, নাইজার, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া ও ইয়েমেন।
স্বতন্ত্র কার্যালয়: ২টি- দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউক্রেন।
