নীলনদে মেগা বাঁধ

প্রিপারেশন

৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে নীলনদে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে। ৩ জুলাই ২০২৫ ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আলী দেশটির পার্লামেন্টে এই তথ্য জানান।

মেগা বাঁধ

ইথিওপিয়ার উত্তর-পশ্চিমে নীলনদের ওপর ২ এপ্রিল ২০১১ বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বাঁধটির নাম দেওয়া হয় 'গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁ বাঁধ' (Grand Ethiopian Renaissance Dam-GERD)। এই বাঁধ নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। একে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাঁধটি প্রায় এক কিমি প্রশস্ত। উচ্চতা ৪৭৫ ফুট। বাঁধটির সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ৭,৪০০ কোটি কিউবিক মিটার। বাঁধটি সম্পূর্ণ নির্মাণ হলে এর উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৫.১৫ গিগাওয়াট। ২১ জুলাই ২০২০ বাঁধের জলাধারটিতে জল ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি ফেব্রুয়ারি ২০২২ বাঁধটি প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন শুরু করে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ জালিব্যবস্থাতে ৩৭৫ মেগাওয়াট হারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ইথিওপিয়ায় বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সক্ষমতা তার দ্বিগুণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এই বাঁধ থেকে।

নির্মাণের উদ্দেশ্য

আফ্রিকার দ্বিতীয় ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ইথিওপিয়া। পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ১৩.৫৫ কোটি। দেশটির অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী এখনো বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে বাস করে। বাঁধটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ইথিওপিয়াতে বিদ্যুৎশক্তির তীব্র ঘাটতি লাঘব করা ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিদ্যুৎশক্তি রপ্তানি করা। এ বাঁধের মাধ্যমে ৫,১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। বাঁধটি তৈরিতে বাইরের অর্থায়ন নেওয়া হয়নি। সরকারি বন্ড এবং প্রাইভেট ফান্ড থেকে বাঁধটি তৈরি করা হয়।

বাঁধ নিয়ে বিতর্ক

নীলনদ হলো আফ্রিকার দীর্ঘতম নদী। নীলনদের ভাটির দুই দেশ মিসর ও সুদান শুরু থেকে এই বাঁধ নির্মাণের আপত্তি ও সমালোচনা করে আসছে। মিসরের দাবি, বাঁধের কারণে পানির প্রবাহ কমলে প্রচণ্ড অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে। কারণ নীলনদের পানি প্রবাহের পুরো নিয়ন্ত্রণ তখন চলে যাবে ইথিওপিয়ার হাতে। শুধু মিসর নয়, নীলনদের ভাটিতে আরেকটি দেশ সুদানও এই প্রকল্প নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারাও পানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে। ৭ মে ১৯২৯ স্বাক্ষরিত চুক্তিতে (পরবর্তী সময়ে ১৯৫৯ সালের আরেকটি চুক্তিতে) মিসর এবং সুদানকে নীলনদের পানির প্রায় সমস্ত অধিকার দেওয়া হয়। ঔপনিবেশিক আমলের সেসব নথিপত্রে নীলনদের উজানে যে প্রকল্প পানি প্রবাহে প্রভাব ফেলতে পারে, সেখানে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো নথিপত্রেই চুক্তির বাইরে থাকা দেশগুলোকে অংশ করা হয়নি, যার মধ্যে রয়েছে ইথিওপিয়াও।

নাইল বেসিন ইনিশিয়েটিভ

নাইল বেসিন ইনিশিয়েটিভ (NBI) হলো নাইল অববাহিকার দেশগুলোর মধ্যে একটি অংশীদারত্বমূলক উদ্যোগ। ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই প্রচেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। শুরু থেকেই এই উদ্যোগটি বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমর্থন পেয়ে আসছে।

নীলনদ

বিশ্বের দীর্ঘতম নদী নীলনদ (Blue Nile)। এর দৈর্ঘ্য ৬,৬৫০ কিমি (৪,১৩০ মাইল)। 'নীল' শব্দটি সেমেটিক শব্দ 'নাহাল' থেকে এসেছে যার অর্থ নদী। আবার অন্য ধারণা অনুযায়ী গ্রিক শব্দ 'নেলস' থেকে এসেছে, যার অর্থ 'উপত্যকা'। আফ্রিকা মহাদেশে নীলনদের আশীর্বাদপুষ্ট দেশ ১১টি- মিসর, সুদান, দক্ষিণ সুদান, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, উগান্ডা, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, কেনিয়া, তানজানিয়া, রুয়ান্ডা ও বুরুন্ডি। দীর্ঘ এই নদীর শ্বেত নীলনদ ও নীলাভ নীলনদ নামে দুটি উপনদী রয়েছে। শ্বেত নীলনদ (White Nile) আফ্রিকার মধ্যভাগের হ্রদ অঞ্চল এবং নীলাভনীলনদ (Blue Nile) ইথিওপিয়ার তানা হ্রদের সঙ্গে সংযুক্ত। দুটি উপনদী সুদানের রাজধানী খার্তুমের নিকটে মিলিত হয়েছে।

মিসর নীলনদের দান

খ্রিষ্টপূর্ব ৩১০০ অব্দে নীলনদের অববাহিকায় গড়ে উঠে সবচেয়ে বড় মিসরীয় সভ্যতা। মিসরের সভ্যতা প্রাচীনকাল থেকেই নীলের উপর নির্ভরশীল। গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাসের মতে, 'মিসর নীলনদের দান'। মিসরের রাজধানী কায়রো নীলনদের তীরে অবস্থিত। নীলনদ মিসরের অর্থনীতির মূল: ভিত্তি। নীলনদ আমিষের অফুরান ভান্ডার। প্রধান প্রধান শস্যের মধ্যে চাষাবাদ হতো যুব, রুটির জন্য গম এবং বিয়ারের জন্য বার্লি। কাপড় ও দড়ি' তৈরির উপকরণ হিসেবে চাষাবাদ হতো এক জাতীয় শনগাছ। এই শনজাতীয় উদ্ভিদ থেকে পৃথিবীর প্রথম কাগজ তৈরি করা হয়, যার নাম প্যাপিরাস।

বিষয় : সাধারণ জ্ঞান