ট্রাম্পের Big Beautiful Bill

প্রিপারেশন

৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

৪ জুলাই ২০২৫ হোয়াইট হাউসে জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুল আলোচিত নতুন কর ও ব্যয় বিলে (One Big Beautiful Bill) স্বাক্ষর করেন। এর মধ্য দিয়ে তার বহুল প্রতীক্ষিত বিলটি আইনে পরিণত হয়।

কংগ্রেসে বিল পাস

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট মার্কিন আইনসভার নাম কংগ্রেস। নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস (প্রতিনিধি পরিষদ) এবং উচ্চকক্ষ সিনেট। ৩ জুলাই ২০২৫ নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ২১৮-২১৪ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাস হয়। পরে এতে স্বাক্ষর করেন স্পিকার মাইক জনসন। এর আগে ১ জুলাই ২০২৫ বিলটি উচ্চকক্ষ সিনেটেও মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে পাস হয়। বিলটির পক্ষে-বিপক্ষে সমান সংখ্যক ভোট পড়ায় রিপাবলিকান সিনেটর ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স টাইব্রেকিং ভোট দেন।

বিলের উল্লেখযোগ্য দিক স্থায়ী কর ছাড়

প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প ২০১৭ সালে Tax Cuts and Jobs Act নামের একটি আইন পাস করেন। এটি কর হ্রাস করে ও করদাতাদের জন্য আয়কর থেকে ছাড় (Standard deduction) বাড়ায়। এই সুবিধা চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের পর বাতিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নতুন বিল এটিকে স্থায়ী করে। এছাড়া ২০২৮ সাল পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন আরও বাড়ানো হয়।

ওভারটাইম ও টিপসের ওপর কর ছাড়

ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, এবার টিপস ও ওভারটাইম আয়ের ওপর করছাড় দেওয়া হয়। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি গাড়ি ক্রয়ের জন্য নেওয়া ঋণের সুদও কর থেকে ছাড় পাবে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য অতিরিক্ত ৬,০০০ ডলার কর ছাড় রাখা হয়। অভিবাসী বহিষ্কারে বরাদ্দ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অবৈধ অভিবাসীদের তাড়াতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে Immigration and Customs Enforcement (ICE) সংস্থাকে ৪৫ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হয় বন্দিশিবির পরিচালনার জন্য। এসব অভিবাসীদের বহিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনায় আরও ১৪ বিলিয়ন ডলার ও ২০২৯ সালের মধ্যে নতুন ১০,০০০ এজেন্ট নিয়োগে কয়েক বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়। এছাড়া মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর নতুন প্রতিরক্ষা কাঠামো তৈরিতে ৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়।

মেডিকেইড ও খাদ্য সহায়তা কমছে

নতুন বিলের ব্যয় কমাতে রিপাবলিকানরা যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রধান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাজেটে অর্থ বরাদ্দ কমান। এই দুটি
কর্মসূচি হলো ১৯৬৫ সালের Medicaid (দরিদ্র ও প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবা) ও ১৯৩৯ সালের Supplemental Nutrition Assistance Program (SNAP) (খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি)। দুটি ক্ষেত্রেই বাজেট কমানোর পাশাপাশি নতুন কাজের শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়।

সবুজ জ্বালানির কর সুবিধা বাতিল

জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকার সময় পরিবেশবান্ধব যানবাহন ও প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ দিতে যে কর-সুবিধা চালু হয়, ট্রাম্পের নতুন বিলে তার অনেকটাই তুলে নেওয়া হয়। বাড়িঘরের উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব বা বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি কিনতে যে ভর্তুকি পাওয়া যেত, তা-ও বাদ দেওয়া হয়।

অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় কর ছাড়

State and Local Tax Deduction (SALT)-এ কর ছাড় কতটা দেওয়া হবে, তা বিলের অন্যতম বিতর্কিত বিষয়। অনেক মার্কিনিকে ফেডারেল ট্যাক্সের পাশাপাশি নিজ নিজ অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় ট্যাক্সও দিতে হয়। সিনেটের পদক্ষেপ অনুযায়ী, ২০২৮ সাল পর্যন্ত কর ছাড়ের সর্বোচ্চ সীমা ৪০,০০০ ডলার থাকবে।

সীমা বাড়ছে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার

ঋণ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণের সীমা বা 'ডেট লিমিট' পাঁচ ট্রিলিয়ন (পাঁচ লাখ কোটি) ডলার বাড়ানো হয়। সরকার আগস্টের মধ্যেই বর্তমান ঋণ সীমা ছাড়িয়ে যাবে এবং সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে যুক্তরাষ্ট্র ঋণ খেলাপিতে পড়বে। ধনীদের লাভ, গরিবের ক্ষতি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, বিলটি ধনিক শ্রেণিকে তুলনামূলক বেশি সুবিধা দিচ্ছে। নিম্ন আয়ের শ্রেণির করদাতাদের গড় আয় ২.৫% কমবে। অন্যদিকে উচ্চ আয়ের মানুষের আয় ২.৪% বাড়বে।

বিষয় : সাধারণ জ্ঞান