“সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।” কবির এ কথার অর্থ – আমাদের সৌভাগ্য ও সার্থকতা যে আমরা এদেশে জন্মেছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বাংলায় কথা বলে। তবে আমাদের দেশে যেমন রয়েছে প্রকৃতির বৈচিত্র্য, তেমনি রয়েছে মানুষ ও ভাষার বৈচিত্র্য। বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলোতে বসবাস করে বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ। এদের কেউ চাকমা, কেউ মারমা, কেউ মুরং, কেউ তঞ্চঙ্গা ইত্যাদি। এছাড়া রাজশাহী আর জামালপুরে রয়েছে সাঁওতাল ও রাজবংশীদের বাস। তাদের রয়েছে নিজ নিজ ভাষা। একই দেশ অথচ কত বৈচিত্র্য। এটাই বাংলাদেশের গৌরব। সবাই সবার বন্ধু, আপনজন। এদেশে রয়েছে নানা ধর্মের লোক। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান। সবাই মিলেমিশে আছে যুগ যুগ ধরে।
বাংলাদেশের এই যে মানুষ, তাদের পেশাও কত বিচিত্র। কেউ জেলে, কেউ কুমার, কেউ কৃষক, কেউ শ্রমিক, কেউ আবার কাজ করে অফিস-আদালতে। সবাই আমরা পরস্পরের বন্ধু। একজন তার কাজ দিয়ে আরেকজনকে সাহায্য করে। গড়ে তোলে এই দেশ ৷
একবার ভাবি কৃষকের কথা। তারা কাজ না করলে আমাদের খাদ্য জোগাত কে? সবাইকে তাই আমাদের শ্রদ্ধা করতে হবে, ভালোবাসতে হবে। সবাই আমাদের আপনজন।
আমাদের আছে নানা ধরনের উৎসব। মুসলমানদের রয়েছে দুটি ঈদ, ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ- উল-আযহা । হিন্দুদের দুর্গা পূজাসহ আছে নানা উৎসব আর পার্বণ। বৌদ্ধদের আছে বুদ্ধ পূর্ণিমা ও প্রবারণা পূর্ণিমা। খ্রিষ্টানদের আছে ইস্টার সানডে আর বড় দিন। এছাড়াও রয়েছে নানা উৎসব। পহেলা বৈশাখ নববর্ষের উৎসব। আবার রাখাইনদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের বিজু উৎসব রয়েছে। আমরা একে অপরের উৎসবে সহযোগিতা করি।
আমাদের পোশাক-পরিচ্ছদও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের, ভিন্ন ভিন্ন ধাঁচের। মিল আমাদের একটা জায়গায় – সকলেই আমরা বাংলাদেশের অধিবাসী।
বাংলাদেশের প্রকৃতি ও জনজীবন ভারি বৈচিত্র্যময়। এই দেশকে তাই ঘুরে ঘুরে দেখা দরকার। কোথায় পাহাড়, কোথায় নদী, কোথায় বা এর সমুদ্রের বেলাভূমি। দেশের নানা প্রান্ত যেমন ঘুরে দেখা দরকার, তেমনি দরকার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া, পরস্পর মেলামেশা করা, কাছাকাছি আসা, মানুষকে ভালোবাসা ।
দেশ মানে এর মানুষ, নদী, আকাশ, প্রান্তর, পাহাড়, সমুদ্র – এইসব। দেশ হলো মায়ের মতো।
মা যেমন স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে আমাদের আগলে রাখেন, দেশও তেমনই তার আলো, বাতাস ও সম্পদ দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। এদেশকে আমরা ভালোবাসব।