- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব
যোগাযোগ
যোগাযোগ করার পদ্ধতিকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করা যায় একমুখী ও দ্বিমুখী। যখন একজন ব্যক্তি বা একটি প্রতিষ্ঠান অনেকের সাথে যোগাযোগ করে সে পদ্ধতিটি হলো "একমুখী", ইংরেজিতে যাকে বলে 'ব্রডকাস্ট"। রেডিয়ো টেলিভিশন তার সবচেয়ে সহজ উদাহরণ-যেখানে রেডিয়ো বা টিভি স্টেশন থেকে সবার জন্য অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। যাদের জন্য অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়, তারা কিন্তু পাল্টা যোগাযোগ করতে পারে না। কোনো কোনো লাইভ অনুষ্ঠানে দর্শক বা শ্রোতাদের অবশ্য ফোন করে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হয় যেখানে লক্ষ লক্ষ শ্রোতাদের মধ্যে দু-একজন যোগাযোগ করতে পারে, কাজেই এটি আসলে একমুখী ব্রডকাস্টই থেকে যায়। প্রক্রিয়া ভেদে যোগাযোগ বিভিন্ন রকম হতে পারে। মৌখিক, লিখিত, অমৌখিক এবং অনেক সময় সংকেতের সাহায্যেও যোগাযোগ করা যায়।
১৯৭১ সালের ১৫ই আগস্ট দিবাগত রাত ২টা ১৫ মিনিটে প্রচন্ত বিস্ফোরণের শব্দে পুরো চট্টগ্রাম বন্দর কেঁপে উঠেছিল। সেই রাতে মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডোদের একটি দল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সতর্ক পাহারা ফাঁকি দিয়ে বন্দরের অসংখ্য জাহাজে মাইন লাগিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। জাহাজগুলো ডুবে বন্দরে ঢোকার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই তখন দেশি বিদেশি কোনো জাহাজই আর আসতে পারছিল না। মুক্তিযুদ্ধের এটি ছিল অনেক বীরত্বপূর্ণ একটি অভিযান।
কিন্তু তোমরা কি জানো, নৌ কমান্ডোর এই দুঃসাহসিক দলটিকে সে অভিযানের দিনক্ষণটি কেমন করে জানানো হয়েছিল? তাদের সাথে যেহেতু যোগাযোগের কোনো উপায়ই ছিল না, তাই মুক্তিযোদ্ধাদের অনুরোধে আকাশবাণী রেডিয়ো থেকে ১৩ ই আগস্ট বেজে ওঠে বিখ্যাত গায়ক পঙ্কজ মল্লিকের গাওয়া একটি গান "আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান"। সেই গানটি ছিল একটি সংকেত, সেটি শুনে নৌ কমান্ডোরা বুঝতে পেরেছিল তাদের এখন আঘাত হানার সময় এসেছে। এতদিন পরে তোমাদের কাছে এ ঘটনাটি অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে।
রেডিয়ো বা টোলিভিশনের মাধ্যমে অনেক দূরেও তথ্য পাঠানো যায়। তথ্য প্রযুক্তির যুগান্তকারী উন্নয়নের জন্য আজকাল রেডিয়ো বা টেলিভিশনের অনুষ্ঠানেও একটা বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। টেলিভিশনের দু-একটি চ্যানেলের পরিবর্তে এখন শত শত চ্যানেল দেখা সম্ভব। বাংলাদেশে বসেই একজন সারা পৃথিবীর অনেক টেলিভিশন চ্যানেল দেখতে পারে। শুধু যে আমরা অসংখ্য চ্যানেল দেখতে পারি তা নয়- সারা পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো কিছুক্ষণের মধ্যে চ্যানেলগুলো দেখাতে পারে।
ব্রডকাস্ট পদ্ধতির যোগাযোগের আরও উদাহরণ হচ্ছে খবরের কাগজ এবং ম্যাগাজিন। তোমরা কি জানো যতই দিন যাচ্ছে ততই অনলাইন পত্রিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা দেখার জন্যে শুধু যে কম্পিউটার লাগে তা নয়, স্মার্ট মোবাইল ফোনেও দেখা সম্ভব।
যোগাযোগের একমুখী ব্রডকাস্ট পদ্ধতির সম্পূরক রূপটি হচ্ছে দ্বিমুখী যোগাযোগ। যার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হচ্ছে টেলিফোন। তোমরা সবাই জানো যে, টেলিফোনে দুজন একই সাথে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। মাত্র একযুগ আগেও বাংলাদেশে শুধু সচ্ছল ও ক্ষমতাবান মানুষদের কাছে টেলিফোন ছিল। এখন এদেশে যেকোনো মানুষ মোবাইল ফোনে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং এটি সম্ভব হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নের জন্য।
বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠী দেশের বাইরে থেকে কাজ করে আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। এখন তাদের আত্মীয়স্বজন ইচ্ছে করলেই তাদের সাথে যোগাযোগ করে কথা শুনতে পারে কিংবা দেখতে পারে। আর এখন এ কাজটি করা সম্ভব হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে।
একসময় মানুষের নামটিই ছিল পরিচয়। এখন নামের পাশাপাশি আরেকটি পরিচয় খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছে, সেটি হচ্ছে তার ই-মেইল এড্রেস। কয়েকটি অক্ষর ও বিশেষ চিহ্ন দিয়ে একটি ই-মেইল এড্রেস তৈরি হয় এবং এটি দিয়ে পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো মানুষ যোগাযোগ করতে পারে। তোমরা নিশ্চয়ই এতদিনে জেনে গেছ পৃথিবীর মানুষের ভেতর এখন যোগাযোগের বেশির ভাগই হয়ে থাকে ই-মেইলে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অন্যতম একটি বিষয় হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আজকাল সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একজন একই সময়ে অনেকের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, সংগঠিত হতে পারে-এমনকি সংঘটিত হয়ে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে।
কাজেই তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ তথ্যপ্রযুক্তি সারা পৃথিবীর সকল মানুষের ভেতর যোগাযোগটা বাড়িয়ে দিয়ে একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম দিতে শুরু করেছে- যেখানে ভার্চুয়াল (Virtual) জগতে সবাই সবার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
তোমরা হয়ত জেনে থাকবে যে ভিন্ন ভৌগোলিক দূরত্বে অবস্থান করেও ভারচুয়াল জগতে বা ইন্টারনেটে সভা বা সম্মেলন করা, সেমিনার আয়োজন করা, ভার্চুয়্যাল ক্লাসরুম তৈরি করা যায়। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে সভা করা, টেলিমেডিসিনের ক্ষেত্রে ডাক্তার, রোগী ও হসপিটালের সাথে সভা করা, সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে কমিউনিটির মধ্যে ভার্চুয়্যাল গেট-টু-গেদার আয়োজন করা ইত্যাদি কাজে বর্তমানে ওয়েব কনফারেন্সিং প্রযুক্তি ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ওয়েব কনফারেন্সিং বলতে ইন্টারনেটে বিভিন্ন মিডিয়া (অডিয়ো, ভিডিয়ো অথবা উভয়) ব্যবহার করে ওয়েব সেমিনার, ওয়েবকাস্ট এবং ওয়েব মিটিংসহ বিভিন্ন ধরনের অনলাইন কনফারেন্সিং সেবাকে বুঝানো হয়।
সভায় অংশগ্রহণকারীগণ ভিন্ন ভৌগোলিক দূরত্বে থাকা সত্ত্বেও ভিডিয়ো কনফারেন্সিং সফ্টওয়্যার তাদের মুখোমুখি সাক্ষাত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। অন্যদিকে অডিয়ো কনফারেন্সিং সফ্টওয়্যার সাধারণ টেলিফোনের তুলনায় কম ব্যয়ে ফোন করা বা টেলিকনফারেনন্সিং করার সক্ষমতা তৈরি করে।
স্মার্ট ফোন, ট্যাব ও আধুনিক ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ, ওয়েব ক্যামেরা, মাইক, স্পিকার ইত্যাদি বিল্ট ইন অবস্থায় থাকার ফলে সহজেই ওয়েব কনফারেন্সিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়। তবে ডেস্কটপ কম্পিউটারে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ, ওয়েবক্যাম, হেডসেট (অথবা মাইক্রোফোন ও অডিয়ো স্পিকার) প্রয়োজন হয়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

