- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
- কম্পিউটার নেটওয়ার্ক
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক
স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার
তোমরা সবাই জান, নেটওয়ার্ক শুধু একটি প্রতিষ্ঠান বা একটি শহরের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়, এমনকি একটি দেশের মাঝেও সীমাবদ্ধ নয়, নেটওয়ার্ক এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। যার অর্থ পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে সিগন্যাল পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় পৌঁছে দিতে হয়। কাছাকাছি জায়গা হলে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে পাঠানো যেতে পারে কিন্তু পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাঠাতে হলে স্যাটেলাইট বা অপটিক্যাল ফাইবার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
স্যাটেলাইট: স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ মহাকাশে থেকে পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরতে থাকে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে এটি ঘুরে, তাই এটিকে মহাকাশে রাখার জন্য কোনো জ্বালানি বা শক্তি খরচ করতে হয় না। পৃথিবী তার অক্ষে চব্বিশ ঘণ্টায় ঘুরে আসে, স্যাটেলাইটকেও যদি ঠিক চব্বিশ ঘণ্টায় একবার পৃথিবীকে ঘুরিয়ে আনা যায় তাহলে পৃথিবী থেকে মনে হবে সেটি বুঝি আকাশের কোনো এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। এ ধরনের স্যাটেলাইটকে বলে জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট। যেকোনো উচ্চতায় জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট রাখা যায় না। এটি প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার উপরে একটি নির্দিষ্ট কক্ষ পথে রাখতে হয়। আকাশে একবার জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট বসানো হলে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে সেখানে সিগন্যাল পাঠানো যায় এবং স্যাটেলাইট সেই সিগন্যালটিকে নতুন করে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে পাঠিয়ে দিতে পারে।
এই পদ্ধতিতে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে রেডিয়ো, টেলিফোন, মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারনেটে সিগন্যাল পাঠানো যায়। ১৯৬৪ সালে প্রথম যখন এভাবে মহাকাশে প্রথমবার জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়, তখন যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল।
বাংলাদেশও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নামে একটি স্যাটেলাইট ২০১৮ সালের ১২ মে তারিখে মহাকাশে প্রেরণ করে। স্যাটেলাইট প্রেরণকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৫৭তম। এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এক নতুন যুগের সূচনা হলো।
স্যাটেলাইট দিয়ে যোগাযোগ করার দুটি সমস্যা রয়েছে। যেহেতু স্যাটেলাইটটি পৃথিবী থেকে অনেক উঁচুতে থাকে তাই সেখানে সিগন্যাল পাঠানোর জন্য অনেক বড়ো এন্টেনার দরকার হয়। দ্বিতীয় সমস্যাটি একটু বিচিত্র। পৃথিবী থেকে যে সিগন্যাল পাঠানো হয় সেটি ওয়্যারলেস সিগন্যাল। ওয়্যারলেস সিগনাল দ্রুত বেগে গেলেও এই বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করতে একটু সময় নেয়। তাই টেলিফোনে কথা বললে অন্য পাশ থেকে কথাটি সাথে সাথে না শুনে একটু পরে শোনা যায়।
অপটিক্যাল ফাইবার অপটিক্যাল ফাইবার অত্যন্ত সরু এক ধরনের প্লাস্টিক কাচের তন্ত্র। অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে আলোক সিগন্যাল পাঠানো হয়। ঠিক যেমনি বৈদ্যুতিক তার দিয়ে বৈদ্যুতিক সিগন্যাল পাঠানো হয়। তোমাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগতে পারে, অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে কিভাবে আলোক সিগন্যাল পাঠানো হয়। তোমরা নিশ্চয়ই এতদিনে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন সম্পর্কে জেনেছ। এই পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে আলোক সিগন্যাল অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়।
বৈদ্যুতিক সিগন্যালকে প্রথমে আলোক সিগন্যালে পরিণত করা হয়। এরপর আলোক সিগন্যালকে অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়। অপরপ্রান্তে আলোক সিগন্যালকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে পরিণত করা হয়। এভাবেই অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে সিগন্যাল পাঠানো সম্ভব হয়।
অপটিক্যাল ফাইবারের ভেতর দিয়ে অনেক বেশি সিগন্যাল পাঠানো সম্ভব। শুনে অবাক হবে যে একটি অপটিক্যাল ফাইবারের ভেতর দিয়ে একসাথে কয়েক লক্ষ টেলিফোন কল পাঠানো সম্ভব।
ইদানীং অপটিক্যাল ফাইবার যোগাযোগ এত উন্নত হয়েছে যে পৃথিবীর সব দেশেই অপটিক্যাল ফাইবারের নেটওয়ার্ক দিয়ে একে অন্যের সাথে সংযুক্ত। অনেক সময়েই এই অপটিক্যাল ফাইবার পৃথিবীর এক মহাদেশ থেকে অন্যদেশে নেবার সময় সেটিকে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে নেওয়া হয়। এই ধরনের ফাইবারকে বলে সাবমেরিন ক্যাবল।
স্যাটেলাইট সিগনাল আলোর বেগে যেতে পারে কিন্তু অপটিক্যাল ফাইবার কাচ/প্লাস্টিক তত্ত্বর (fiber) ভেতর দিয়ে যেতে হয় বলে সেখানে আলোর বেগ এক-তৃতীয়াংশ কম। তারপরেও পৃথিবীর এক পৃষ্ঠ থেকে অন্য পৃষ্ঠে অপটিক্যাল ফাইবারে সিগন্যাল পাঠাতে হলে সেটি অনেক তাড়াতাড়ি পাঠানো যায়। কারণ তখন প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরের স্যাটেলাইটে সিগন্যালটি গিয়ে আবার ফিরে আসতে হয় না।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

