• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি
  • বাংলাদেশের অর্থনীতি
বাংলাদেশের অর্থনীতি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

বাংলাদেশের অর্থনীতি

বাংলাদেশে মানব উন্নয়ন

মানবসম্পদ উন্নয়ন

মানুষ তখনই রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পদে পরিণত হয় যখন সে কিছু করতে পারে। কেউ শারীরিক শ্রম দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য সম্পদ তৈরিতে সহায়তা করে আবার কেউ মেধা দিয়ে নতুন নতুন সম্পদ উদ্ভাবন করে সহায়তা করে থাকে। দেশের কৃষি, শিল্প বা সেবাখাতে উৎপাদন বৃদ্ধির কাজে যারা শ্রম ও মেধা দিয়ে কাজ করেন তারা নিজেদেরকে শ্রমশক্তিতে রূপান্তরিত করেন। শ্রমশক্তি সম্পন্ন মানুষকেই দেশের মানবসম্পদ বলা হয়। প্রতিটি অদক্ষ মানুষকে শ্রমশক্তি সম্পন্ন বা মানবসম্পদ পরিণত করাই হচ্ছে মানবসম্পদের উন্নয়ন। উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বাসস্থান, চিকিৎসা ও খাদ্যের সংস্থানের মাধ্যমেই মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। কোনো অদক্ষ মানুষ নয়, কেবলমাত্র দক্ষ মানুষই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। সুতরাং দেশের সকল মানুষকে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান লাভের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দক্ষতা সৃষ্টি করতে হবে। দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করার জন্য সুস্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। অতএব চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও উৎপাদনমুখী সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলাই মানবসম্পদের উন্নয়ন।

বাংলাদেশে মানবসম্পদ উন্নয়ন

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ অনুযায়ী ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যা ছিলো ১৭১ মিলিয়ন। ২০২২ সালে প্রকাশিত আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬১৬জন। বিবিএস পরিচালিত সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ, ২০২৩-২০২৪ অনুযায়ী ১৫ বছরের উপরে অর্থনৈতিকভাবে কর্মক্ষম শ্রমশক্তি ৭.৩৫ কোটি। উক্ত শ্রমশক্তির শতকরা ৪৫ ভাগ কৃষি, ১৭ ভাগ শিল্প এবং ৩৮ ভাগ বিভিন্ন সেবাখাতে নিয়োজিত রয়েছে। মোট শ্রমশক্তির জনসংখ্যার ৪.৮ কোটি পুরুষ এবং ২.৫৫ কোটি নারী কাজে নিয়োজিত রয়েছে। বাকি মানুষ সার্বক্ষণিক কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়। তবে তাদের মধ্যে ১৫ বছরের নিচের শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধ মানুষ রয়েছেন।

আমাদের দেশে সাক্ষরতার হার এখন দ্রুতগতিতে বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৭৭.৯ শতাংশ (উৎস: অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪); ২০০৯ সালে এই হার ছিল ৫৪.৮%। দেশে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যাপক সমস্যা রয়েছে। ফলে আমাদের বিপুল জনগণের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। দারিদ্রের কারণে অনেক মানুষ তাদের সন্তানদের শিক্ষা ও খাদ্যের ঢ়ধঃয যোগান দিতে পারছে না। ফলে তারা দ্রুত দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হয়ে উঠতে পারছে না। আমাদের দেশের মানুষ দক্ষ জনসম্পদে পরিণত না হওয়ার কারণ 'দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র'। নিচের উদাহরণটি পড়লেই এ চক্রটি কীভাবে মানবসম্পদে পরিণত হওয়ার পথে বাধা তা পরিষ্কার হওয়া যাবে।

দরিদ্র লোকের পর্যাপ্ত খাদ্য থাকে না বলে দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। তাই এরা কাজ পায় না বা করতে পারে না। ফলে আয় কম হয়। কম আয়ের কারণে সঞ্চয় করতে পারে না বা কম সঞ্চয় করে। সঞ্চয় কম হলে মূলধন কম হয়, ফলে বিনিয়োগ কম হয়। বিনিয়োগ কম হলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না তাই অনেক লোকই কাজের অভাবে দরিদ্রই থেকে যায়। সুতরাং দারিদ্র্যের এই চক্রাকার আবর্তের কারণে মানবসম্পদ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশে মানবসম্পদ পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন জনসাধারণকে খাদ্যের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ