- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
- বাংলাদেশ: রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
বাংলাদেশ: রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা
বাংলাদেশের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য
সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলিল। একটি ভবন বা ইমারত যেমন এর নকশা দেখে তৈরি করা হয়, তেমনি সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। সরকার কী ধরনের হবে, নাগরিক হিসাবে আমরা কী অধিকার ভোগ করব, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ কী ক্ষমতা ভোগ করবে তার সবকিছুই এতে লিপিবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশের সংবিধান রচনার ইতিহাস নিম্নরূপ:
দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয় অর্জিত হয়। পাকিস্তানের শাসন যুক্ত হয়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালের ১০ই এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে এবং ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে একটি সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ছয় মাসের মধ্যে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করে। ১৯৭২ সালের ৩০শে অক্টোবর গণপরিষদে এটি আলোচিত হয়। অবশেষে একই বছরের ৪ঠা নভেম্বর গণপরিষদে এটি চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।
সংবিধান কোনো অপরিবর্তনশীল বিষয় নয়। সময়ের প্রয়োজনে এটি পরিবর্তিত এবং সংশোধিত হতে পারে। এ যাবৎ ১৭ বার সংশোধিত হয়েছে। সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধনী (সপ্তদশ) সংসদে পাশ হয় ৮ই জুলাই ২০১৮। কিন্তু এইসব সংশোধনী সবসময় জনআকাঙ্ক্ষা থেকে হয়নি বরং নানা সময়ে অগণতান্ত্রিকভাবে সংশোধনীগুলো আনা হয়েছে।
আমাদের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:
১. গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার: বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে।
২. সংসদীয় পদ্ধতির সরকার: বাংলাদেশে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা চালু থাকবে। এই পদ্ধতিতে প্রকৃত শাসন ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকবে।
৩. লিখিত সংবিধান: এটি একটি লিখিত দলিল। যা ১১ ভাগে বিভক্ত এবং এতে ১৫৩টি অনুচ্ছেদ ও একটি প্রস্তাবনা আছে।
৪. রাষ্ট্রীয় মূলনীতি: সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।
৫. রাষ্টধর্ম: সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্য সকল ধর্ম ও ধর্মের অনুসারীদের সমান মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
৬. জাতি ও জাতীয়তা: বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি নামে পরিচিত হবে এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের পরিচয় হবে 'বাংলাদেশি'।
৭. এককেন্দ্রিক সরকার: দেশে এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত থাকবে।
৮. এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা: সংবিধানে এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত ৩০০জন সংসদ সদস্য ও তাদের দ্বারা নির্বাচিত ৫০জন মহিলা সংসদ সদস্য নিয়ে এই আইনসভা গঠিত হবে।
৯. মৌলিক অধিকার: সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও তা সংরক্ষণের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
১০. জনগণের সার্বভৌমত্ব: সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ক্ষমতা পরিচালনা করবে।
১১. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: সংবিধানে বিচারবিভাগের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
১২. সর্বজনীন ভোটাধিকার: সংবিধানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ১৮ বছর থেকে তদুর্ধ বয়সের সকল নাগরিককে ভোটাধিকার প্রদান করা হয়েছে।
১৩. নির্বাচন অনুষ্ঠান: মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৪. সংবিধান সংশোধন: সংসদ সদস্যদের মোট সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে সংবিধান সংশোধন করা যাবে। বাংলাদেশের সংবিধানের মূল গণতান্ত্রিক চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক এবং স্বৈরতন্ত্রের বীজ সংবিধানেই আছে যা বারে বারে স্বৈরতান্ত্রিক উত্থানকে সংহত করেছে বলে অনেক বিশেজ্ঞরা মনে করেন। সংবিধানের সংস্কার বিষয়টি এ কারণে ইদানীং প্রাসঙ্গিক।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

