- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
- বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা
কিশোর অপরাধের ধারণা ও কারণ
সাধারণভাবে রাষ্ট্র বা সমাজ স্বীকৃত নয় এমন কাজকে অপৰাধ বলে। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে বা কিশোরদের দ্বারা সংগঠিত বিভিন্ন ধরনের অপরাধকেই বলা হয় কিশোর অপরাধ। কোন বয়স পর্যন্ত অপরাধীকে কিশোর অপরাধী বলা হবে তা নিয়ে অবশ্য বিভিন্ন দেশের সমাজবিজ্ঞানী ও আইনবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোরদের অপরাধমূলক কাজকে কিশোর অপরাধ বলা হয়। অন্যদিকে পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডে কিশোর অপরাধীর বয়স ৭ থেকে ১৮ বছর। আর জাপানে এ বয়সসীমা ১৪ থেকে ২০ বছর। কিশোর বয়সে এরা রাষ্ট্র ও সামজের আইন ও নিয়ম ভাঙে বলেই তারা কিশোর অপরাধী।
শিশু-কিশোররা নানা কারণে অপরাধী হয়ে ওঠে। আমাদের দেশে কিশোর অপরাধের অন্যতম প্রধান কারণ দারিদ্র্য। দরিদ্র পরিবারের কিশোরদের অনেক সাধ বা ইচ্ছাই অপূর্ণ থেকে যায়। এর ফলে তাদের মধ্যে বাড়ে হতাশা এবং এ হতাশাই তাদের অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। সুস্থ পারিবারিক জীবন ও সুষ্ঠু সামাজিক পরিবেশের অভাবেও শিশু-কিশোররা অপরাধী হয়ে উঠতে পারে। বাড়ির বাইরে বা কর্মস্থলে অতি ব্যস্ততার কারণে মাতাপিতার পক্ষে তাঁদের সন্তানদের যথেষ্ট সময় বা মনোযোগ দিতে না পারা, আদর-যত্নের অভাব, মাতাপিতার অকালমৃত্যু বা বিবাহবিচ্ছেদ, এমনকি অভিভাবকদের অতিরিক্ত শাসনের কারণেও অনেক কিশোর ধীরে ধীরে অপরাধী হয়ে ওঠে।
সৃজনশীল কাজে যুক্ত থাকার সুযোগের অভাবেও অনেক কিশোর-কিশোরী অপরাধী হয়ে ওঠে। ছোটবেলা থেকেই অ খেলাধুলা, সংগীত, ছবি আঁকা, শরীর চর্চা ও বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যাবলির সঙ্গে জড়িত শিশু-কিশোররা সাধারণত আনন্দময় পরিবেশে সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে। অন্যদিকে যারা এসবের সুযোগ পায় না তারা মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির অন্য পথ খোঁজে। তারাই পরে নানা রকম অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় ও শিল্পাঞ্চলে বস্তি রয়েছে। বস্তির পরিবেশ ও সেখানকার নানা খারাপ অভিজ্ঞতা শিশু-কিশোরদের অপরাধী করে তোলে। সঙ্গদোষে এবং অভাবের তাড়নায়ও বস্তির শিশু-কিশোররা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। দরিদ্র পরিবারের শিশু-কিশোররা অল্পবয়সেই নানা রকম কাজ করে টাকা উপার্জন করতে বাধ্য হয়। এই টাকায় কখনো কখনো তারা জুয়া খেলে, মাদক সেবন করে এবং সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়ায়। অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে বা লোভে পড়েও তারা অনেক সময় অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
শারীরিক-মানসিক ত্রুটি বা বৈকল্য থাকলে শিশুকে অন্যের সামাজিক গ্লানি বয়ে চলতে হয়, যা থেকে হয়। শিশুমনে হীনমন্যতার জন্ম হয়। এর ফলেও অনেকে অপরাধী হতে পারে। আবার বেশি রকম আবেগপ্রবণ বা প্রতিভাবান শিশু-কিশোররাও অনেক সময় অপরাধী হয়ে ওঠে। কারণ এ ধরনের শিশু-কিশোরদের মানসিক গঠন সাধারণের চেয়ে জটিল হয়। তারাও তাদের প্রতিভা বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে অপরাধী হয়ে উঠতে পারে।
যেসব মাতাপিতা বারবার কর্মস্থল পরিবর্তন করেন তাদের সন্তানেরা কেউ কেউ নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। সঙ্গী বা বন্ধু নির্বাচনে তাদের সমস্যা হয়। এভাবে সঙ্গদোষেও কেউ কেউ অপরাধী হতে পারে। বর্তমানে মোবাইল ও ইন্টারনেটের অপব্যবহারের ফলেও সমাজে এক ধরনের কিশোর অপরাধ দেখা যাচ্ছে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

