• হোম
  • একাডেমি
  • মাদরাসা
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনা জীবন
হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনা জীবন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনা জীবন

সনদের গুরুত্ব

প্রথম লিখিত সংবিধান ৪ মদিনা সনদ পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ব প্রথম লিখিত সংবিধান। ইতোপূর্বে শাসকের ঘোষিত আদেশই ছিল আইন। মহানবি (স.) সর্ব প্রথম জনগনের মঙ্গলার্থে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রীয় শাসনে দেশের সকল সম্প্রদায় ও জনগণের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তিনি এই সনদ প্রণয়নের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। বস্তুত মদিনার সনদে নাগরিক সাম্যের মহান নীতি, আইনের শাসন, ধর্মের স্বাধীনতা ও সহিষ্ণুতা, সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ঘোষিত হওয়ায় এই সনদকে মহাসনদ বলা হয়।

রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয়: মদিনা সনদ মুসলমান ও অমুসলমান সম্প্রদায়কে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করে হিংসা, দ্বেষ ও কলহের অবসান ঘটায়। বিপদে একে অপরকে সাহায্য করার জন্য তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। মদিনা রাষ্ট্র তথা ইসলামি প্রজাতন্ত্র সংরক্ষণে সকলের সমভাবে যুদ্ধ ব্যয় বহন করার ব্যবস্থা, হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক।
সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা: মদিনা সনদ গোত্র প্রথার বিলোপ সাধন করে ইসলামি ভ্রাতৃত্ববোধের ভিত্তিতে হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর উপর রাষ্ট্র, সমাজ ও ধর্মীয় অনুশাসন পরিচালনার দায়িত্ব অপর্ণ করে। অধ্যাপক পি, কে, হিট্টি বলেন, মদিনা প্রজাতন্ত্রই পরবর্তীকালে বৃহত্তম ইসলামি সাম্রাজ্যের ভিত্তিমূল স্থাপন করেন।

ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান : মদিনা সনদ মুসলমান ও অমুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করে। মদিনার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা একে অপরের ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। হযরত মুহাম্মদ (স.) এ শর্ত দ্বারা যে মহানুভবতা ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দেন তা বিশ্বের ইতিহাসে সত্যিই বিরল। সর্বগুণান্বিত, সর্বশ্রেষ্ঠ যুগান্তকারী এ মহাপুরুষ তৎকালীণ বিশ্বে ধর্ম ও রাজনৈতিক সমন্বয়ে যে ইসলামী উম্মাহ বা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, উত্তরকালে ইহা বিশাল ইসলামী সাম্রাজ্য স্থাপনে সহায়তা করে।

মদিনার পুনর্গঠন ও মহানবির (স.) এর শ্রেষ্ঠত্বঃ মদিনা সনদের মাধ্যমে মহানবি (স.) দীর্ঘকালব্যাপী যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত আরব জাহানকে একতাবদ্ধ করার একটি মহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত মদিনা নগরীর পুনর্গঠনের প্রয়াস পান। উপরন্তু এই সনদে হযরত মুহাম্মদ (স.) তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, কুটনৈতিক দূরদর্শিতা ও শ্রেষ্ঠত্ব বিকাশের মাধ্যমে বিশ্বের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ যুগান্তকারী মহাপুরুষরূপে আর্বিভূত হন।

ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা: মদিনা সনদের শর্তসমূহ হতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, মুসলিম সমাজের চরম কর্তৃত্ব আরব গোত্রীয় প্রধানদের নিকট হতে হযরত মুহাম্মদ (স.) এর উপর এবং তদূর্ধ্বে আল্লাহ তাআলার উপর ন্যস্ত হয়েছে। এই সনদ আল্লাহর সর্বময় প্রভুত্বের ধারণা প্রচারিত করে। এ যাবৎ আরবদের নিকট তা একেবারেই অজ্ঞাত ছিল। মুসলিম সমাজের জনসাধারণকে তাদের গোত্রীয় স্বাধীনতার একটি বিশেষ অংশ পরিহার করে ঐশী নির্দেশের নিকট আনুগত্য স্বীকার করতে হয়েছিল। সুতরাং মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজ তখন ঐশীতন্ত্রে পরিণত হল। ফলে আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত বিধানের আলোকে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনীয় দায়িত্ব নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর উপর পূর্ণাঙ্গ ভাবে ন্যস্ত হলো।

প্রকৃত প্রস্তাবে ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য বর্তমান থাকল না। নবজাত মুসলিম রাষ্ট্র ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রে পরিণত হল। বস্তুতপক্ষে, মদিনা সনদের কতোগুলো ধারা হতে প্রতীয়মান হয় যে, মদিনা রাষ্ট্র ছিল একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র। সে রাষ্ট্রে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের নাগরিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকার স্বীকৃত ছিল। এ রাষ্ট্রে সকল গোত্রের যোগদানের সুযোগ উন্মুখ ছিল। সে রাষ্ট্রে ব্যক্তি স্বাধীনতা, ধর্মীয় অধিকার, সামাজিক মূল্যবোধ, গণতান্ত্রিক মর্যাদাবোধ, আল্লাহর একত্ব ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস এবং নবি ও রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নেতৃত্ব স্বীকৃত ছিল। এ রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামোর যে ধাচ মুহাম্মদ (স.) তৈরি করেছিলেন এর উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে খলিফাগণ যুগোপযোগী নীতিমালা সংযোজন করে অধিকতর কল্যাণকর প্রশাসন কাঠামো গড়ে তুলতে সক্ষম হন।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ