- হোম
- একাডেমি
- মাদরাসা
- নবম-দশম শ্রেণি
- হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনা জীবন
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনা জীবন
বদরের যুদ্ধ (মার্চ, ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ)
হিজরতের পর মদিনায় ইসলামের দৃঢ় প্রতিষ্ঠা ও প্রসার, হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি ও কর্মকান্ডে সাফল্য লাভ এবং মদিনা নগরীর শাসন শৃঙ্খলা উন্নত হওয়ায় মক্কার কুরাইশদের মনে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এই ঈর্ষা ও শত্রুতা থেকেই পৌত্তলিক মক্কাবাসী মহানবি (স) এর সঙ্গে প্রথম যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটায় ইসলামের ইতিহাসে তা "গাজওয়ায়ে বদর” )غزوةً بَدْرٍ( বা বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত।
বদরের যুদ্ধের কারণ :
মক্কার কুরাইশদের শত্রুতা: মদিনায় ধর্মভিত্তিক ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামকে আন্তর্জাতিকীকরণে মহানবির প্রচেষ্টায় মক্কার কুরাইশগণ ঈর্ষান্বিত হয়। তারা জন্মভূমি মক্কা হতে হযরত মুহাম্মদ (স.) কে বিতাড়িত করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইসলামি রাষ্ট্রকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে।
আবদুল্লাহে ইবনে উবাই-এর ষড়যন্ত্র:
হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর অসামান্য প্রাধান্য খর্ব করার জন্য বানু খাযরাজ বংশীয় আবদুল্লাহ বিন উবাই নামক একজন প্রতিপত্তিশালী মুনাফিক নেতা গোপনে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। কেননা হিজরতের পূর্বে মদিনায় তার শাসকরূপে অধিষ্ঠিত হবার কথা ছিল; কিন্তু ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও মদিনা সনদের পরিপ্রেক্ষিতে তার আশা পূর্ণ হয়নি। এর ফলে সে মক্কার কুরাইশদের সঙ্গে দুরভিসন্ধিমূলক কার্যকলাপে নিয়োজিত হয় এবং মদিনায় হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর বিরুদ্ধে প্রচারণা ও বিরুদ্ধাচরণ দ্বারা একটি মুনাফিক দল গঠন করে। ইসলামের প্রতি বাহ্যিক আনুগত্য স্বীকার করলেও আবদুল্লাহর নেতৃত্বে মুনাফিক দল হযরত মুহাম্মদ (স.) এর বিরুদ্ধে শত্রুতা করেন।
মদিনার ইহুদিদের ষড়যন্ত্র:
মদিনার ইহ্রদি সম্প্রদায় প্রথমে হযরত মুহাম্মদ (স.) কে সানন্দে বরণ করলেও তাঁর ক্রমবর্ধমান প্রতিপত্তি ও সুনাম তাদেরকে অত্যন্ত বিক্ষুদ্ধ করে তোলে। মদিনা সনদে তাদেরকে সকল প্রকার ধর্মীয় ও নাগরিক স্বাধীনতা প্রদান সত্ত্বেও ইহ্রদিগণ কোনদিনই মুসলমানদের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব প্রকাশ করেনি। উপরন্ত মদিনা সনদের শর্ত লংঘন করে তারা কুরাইশদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র ও গুপ্ত সংবাদ প্রেরণ করে ইসলাম ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিলোপ সাধন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। এমনকি তারা মদিনা আক্রমণের জন্য শত্রুদেরকে প্ররোচিত করতে থাকে। সৈয়দ আমীর আলী যথার্থই মন্তব্য করেন, সমগ্র মদিনা বিদ্রোহ ও বিশ্বাসঘাতকতায় ভরে গিয়েছিল।
আর্থিক কারণ: মক্কা হতে সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত বাণিজ্য পথে মদিনা অবস্থিত ছিল। এই জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মদিনার গুরুত্ব অপরিসীম। বাণিজ্য পথ ব্যতীত এই পথটি হজ্জ যাত্রীদের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মুহাম্মদ (স) কর্তৃক মদিনায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে কুরাইশগণ নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ হারাতে পারে এ আশঙ্কায় মদিনার ইসলামি রাষ্ট্রের পতন ঘটানোর জন্য তারা যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে।
কুরাইশদের হিংসাত্মক কার্যকলাপ : পবিত্র কা'বা গৃহের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকায় সমগ্র আরবের পৌত্তলিকদের মধ্যে কুরাইশদের অপরিসীম প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। মক্কা ও মদিনার বাণিজ্য পথে বসবাসকারী বিভিন্ন আরব গোত্র কুরাইশদের সাথে গোপনে যোগসূত্র স্থাপন করে হযরতের বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকলে মুসলমানদের নিরাপত্তার অভাব দেখা দেয়। মদিনার সীমান্তবর্তী এলাকায় কুরাইশগণ অথবা তাদের সাহায্যকারী আরব গোত্র মুসলমানদের শস্যক্ষেত্র জ্বালিয়ে দিত, ফলবান বৃক্ষ ধ্বংস করত এবং উট ও ছাগল অপহরণ করত। এই প্ররোচণামূলক ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য মহানবি (স.) আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
নাখলার খন্ডযুদ্ধ: কুরাইশদের ক্রমবর্ধমান আক্রমণ ও লুটতরাজ বন্ধ করার জন্য মহানবি (স.) হযরত আবদুল্লাহ ইবন জাহাশের নেতৃত্বে ১২ জনের একটি গোয়েন্দা দল সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রেরণ করেন। হযরতের নির্দেশ অনুযায়ী তিনদিন পর সীলমোহরকৃত আদেশপত্র উন্মোচন করে হযরত আবদুল্লাহ সঙ্গীদের নিয়ে নাখলার দিকে অগ্রসর হওয়ার এবং মক্কা কাফেলার জন্য অপেক্ষা করার নির্দেশ পেলেন। লক্ষণীয় যে মহানবি (স.) কাফেলার উপর আক্রমণ করতে আদেশ করেন নি। কিন্তু হযরত আবদুল্লাহ (রা.) ভুলক্রমে চারজন যাত্রীর মক্কার এক কাফেলার উপর আক্রমন করলে নাখলায় একটি খন্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর ফলে কুরাইশ নেতা আমর বিন হাযরামী নিহত ও অপর দুইজন বন্দী হয়। নাখলার খণ্ড যুদ্ধকে বদরের যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু এটি ছিল একটি অজুহাত মাত্র। কেননা তারা অনেকদিন আগ থেকেই ইসলামের উত্তরোত্তর শক্তি বৃদ্ধিতে চিন্তিত হয়ে এর ধ্বংস সাধনে প্রবৃত্ত হয়।
আবু সুফিয়ানের কাফেলা আক্রমণের মিথ্যা গুজব: ইসলামের ঘোরতর শত্রু আবু সুফিয়ান অস্ত্র সংগ্রহের জন্য বাণিজ্যের অজুহাতে এক কাফেলা নিয়ে সিরিয়া গিয়েছিল। নাখলা যুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে কুরাইশগণ মক্কায় কাফেলার নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। এসময় এক ভিত্তিহীন জনরব উঠল যে, আবু সুফিয়ানের কাফেলা মদিনার মুসলমান অধিবাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এ গুজবের সত্যতা যাচাই না করেই আক্রমনাত্মক নীতি অনুসরণ করে আবু জাহল ১০০০ সৈন্য নিয়ে আবু সুফিয়ানের সাহায্যার্থে মদিনা অভিমুখে রওয়ানা হয়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ
