• হোম
  • একাডেমি
  • মাদরাসা
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনা জীবন
হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনা জীবন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনা জীবন

বদর যুদ্ধের গুরুত্ব

সামরিক প্রজ্ঞার পরিচয়ঃ বিশাল কুরাইশ বাহিনী স্বল্পসংখ্যক মুসলিম সৈন্যের নিকট শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলে অমুসলিমরা ইসলাম ধর্ম ও মদিনা রাষ্ট্রের সামরিক শক্তি সম্বন্ধে ভীত হয়ে উঠে। সৈন্যসংখ্যা যুদ্ধে ভাগ্য নির্ধারণ করে এ ধারণা ভ্রান্তিতে পরিণত হয় এবং মুসলমানদের মনে অসামান্য সাহস, উদ্দীপনা ও আত্মপ্রত্যয়ের সঞ্চার করে যা মুসলমানদের ভবিষ্যতের যুদ্ধ জয়ের এক দূর্বার আকাঙ্খায় উদ্বুদ্ধ করে।

ইসলাম প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি: বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সম্প্রসারণের সূচনা করে এবং পরবর্তী একশ বছরের মধ্যে (৬২৪-৭২৪) ইসলাম পশ্চিমে আফ্রিকা হতে পূর্বে ভারতবর্ষ ও মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। যোসেফ হেল বলেন- পরবর্তীকালে সমস্ত সামরিক বিজয় এ যুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রদর্শিত ও বিকশিত আরব গুণাবলির জন্যই সম্ভব হয়। যথা- শৃঙ্খলা ও মৃত্যুর প্রতি অবহেলা। হযরত মুহাম্মদ (স.) যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে নির্দেশ দেন, তোমরা কেউ সারি ভেঙে এগিয়ে যেওনা এবং আমার আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ শুরু করো না।

চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণকারী যুদ্ধ: মক্কার প্রায় এক সহস্র বীর সেনার বিরুদ্ধে তিনশত তের জন মুসলমানের যুদ্ধাভিযান যে অজ্ঞতার বিরুদ্ধে জ্ঞানের, অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের সংঘর্ষ তা নিশ্চিতরূপে বলা যেতে পারে। এ যুদ্ধে জয়লাভ না করলে ইসলাম শুধু রাষ্ট্র হিসেবেই নহে ধর্ম হিসেবেও পৃথিবীর বুক হতে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।

মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: বদরের যুদ্ধ মুষ্টিমেয় মুসলমানদের মনে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে জিহাদের অনুপ্রেরণা প্রদান করে। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে আল্লাহ স্বয়ং তাদের সাহায্যকারী। ধর্মযুদ্ধে জীবিত অবস্থায় গাজী ও মৃত্যুতে শহীদ হওয়ার প্রেরণা এবং পারলৌকিক পুরস্কার লাভের বাসনা তাদের পরবর্তী বিজয়গুলোতে প্রভাব বিস্তার করে।
রাজনৈতিক নেতা হিসেবে মুহাম্মদ (স.)-এর স্বীকৃতি ৪ বদরের যুদ্ধ বিজয় ইসলাম প্রচারে নব দিগন্তের সূচনা করে।

ইসলামের মর্যাদা ও দক্ষতা বৃদ্ধির কথা এবং গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলের কথা চিন্তা করে নিকলসন বলেন, বদরের যুদ্ধ ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা স্মরণীয় যুদ্ধের অন্যতম। বদরের প্রান্তরে বিজয় লাভের ফলে সকলের দৃষ্টি মুহাম্মদ (স.) এর উপর নিবন্ধ হল। আরবগণ তাঁর ধর্মকে যতই উপেক্ষা করুক না কেন, তাঁকে সম্মান না করে পারল না। এ যুদ্ধ ইসলামকে মদিনা প্রজাতন্ত্রের ধর্ম হতে একটি সুসংঘবদ্ধ রাষ্ট্রের ধর্মে উন্নীত করে।

ইহুদি ও খ্রিস্টানদের মনে ভীতি: ইহুদি ও খ্রিস্টান আরবগণ ইসলামের অসীম ক্ষমতার বিরুদ্ধাচরণ হতে সাময়িকভাবে বিরত থাকল। মুনাফিকগণ ধর্মদ্রোহিতার জঘন্য পাপাচার হতে ক্ষণিকের জন্য নিবৃত্ত রইল। বিধর্মীরা হযরতের ঐশ্বরীক ক্ষমতায় আকৃষ্ট হল এবং মুসলমানগণ বদরের বিজয়কে আল্লাহর প্রতিশ্রুত পুরস্কারস্বরূপ গ্রহণ করে তাওহিদ ও নবুয়তে বিশ্বাস।

বিশ্ব বিজয়ের সূচনা: বদরের যুদ্ধের মহাবিজয় ইসলামকে কেবল আরবেই নয়, অনারব অঞ্চলও সার্বজনীন করে তোলে। এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটেনিকার জনৈক লেখক বলেন, বদরের যুদ্ধ শুধু একটি বিখ্যাত যুদ্ধই নয় এর ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম। ইহা হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করতেও যথেষ্ট সহায়তা করেছে।

রাষ্ট্র নায়কের মর্যাদা লাভঃ যুদ্ধক্ষেত্র হতে বিজয়ীর বেশে মহানবি (স.) মদিনায় ফিরে এসে পরাক্রমশালী যোদ্ধা, সুদক্ষ সমরনায়ক ও সুবিবেচক শাসকের পূর্ণ মর্যাদা লাভ করেন। ঘটনাবলি বিচারে হযরত মুহাম্মদ (স.) একজন যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতা তা প্রমানিত হল। এ বিজয়ের ফলে হযরত মুহাম্মদ (স.) একাধারে নবি ও রাষ্ট্র পরিচালকের দায়িত্বভার পরিচালনা করতে থাকেন। মুসলমানদের বদর বিজয় ইসলামের অপরাজেয় শক্তির পরিচায়ক। এর ফলে ইহ্রদি এবং খ্রিষ্টানগণ ভীত ও শঙ্কিত হয়ে পড়ে। প্রকাশ্যে ধর্মপ্রচার ও আচার অনুষ্ঠান পালন, রাষ্ট্রীয় কার্য তত্ত্বাবধান, যুদ্ধবিগ্রহ পরিচালনা, দূত প্রেরণ দ্বারা বহির্বিশ্বে ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং ইসলামী রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও পরিধি বৃদ্ধি পায় এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে।

তবে তাদের বিরুদ্ধাচারণ বন্ধ হয়নি। বদর যুদ্ধের গুরুত্ব সম্পর্কে অধ্যাপক পি.কে হিট্টি বলেন, ইতোপূর্বে রাষ্ট্রীয় ভিত্তি ব্যতিরেকে ইসলাম শুধু ধর্ম মাত্র ছিল। এখন থেকেই ইসলাম একটি রাষ্ট্রের ধর্মে পরিণত হল। বদরের পরে মদিনাতে এটা রাষ্ট্রীয় ধর্মের থেকেও বড় ভূমিকা পালন করেছিল। অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম নিজেই একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। সে সময় এবং সেখান থেকেই ইসলাম পরিণত হয় একটি সংগঠিত রাষ্ট্রে এবং সারা বিশ্ব তাকে সেভাবেই স্বীকৃতি দিয়েছে। এজন্য বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে একটি যুগসন্ধিক্ষণকারী ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ