- হোম
- একাডেমি
- মাদরাসা
- নবম-দশম শ্রেণি
- হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনা জীবন
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনা জীবন
খন্দকের যুদ্ধের কারণ (৬২৭ খ্রিস্টাব্দ)
কুরাইশদের আশঙ্কা: কুরাইশরা উহ্রদ যুদ্ধে সাময়িক জয়লাভ করলেও এতে তাদের আশানুরূপ সাফল্য অর্জিত হয়নি। তারা মক্কার সাথে মদিনাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এবং তাদের বাণিজ্য পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কোন সেনাবাহিনী মদিনায় রেখে যায়নি। ফলে কুরাইশদের যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানগণ নিজেদের সংগঠিত করে পূর্বের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী হয়ে উঠেন। মদিনায় মুসলমানদের এই শক্তি বৃদ্ধিতে মক্কার কুরাইশগণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। তারা মনে করল যে, মুসলমানদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে তাদের আর্থ-সামাজিক ও ধর্মীয় সুযোগ-সুবিধা চিরতরে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তারা শেষবারের মতো যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করল।
বেদুইনদের শত্রুতা : মদিনার শহরতলীতে বসবাসকারী বেদুঈনরা লুটতরাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। হযরত মুহাম্মদ (স.) তাদের এ সব কার্যকলাপ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এমনকি কয়েকবার তাদেরকে এ জন্য শাস্তি প্রদান করেন। সঙ্গত-কারণে মুসলমানদের উপর বেদুইনরা অসন্তুষ্ট ছিল। প্রতিশোধ গ্রহণের বাসনায় তারাও কুরাইশদের সাথে হাত মিলাল।
ইহুদিদের উসকানিঃ উহুদ যুদ্ধের পর মদিনা হতে বানু নাজির গোত্রের ইহ্রদিদের বহিষ্কার করা হয়েছিল। তারা খাইবারের ওয়াদি উল কুরা ও সিরিয়ার বাণিজ্য পথে এবং অন্যান্য জায়গায় বসতি স্থাপন করল। অবিলম্বে এসব ইহুদি স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী লোকদেরকে মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতে লাগল। তাদের প্ররোচনায় প্রভাবিত হয়ে সব ইহুদি গোত্রই মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হল। উপরন্তু, তারা মক্কার কুরাইশদের মদিনা পুনরাক্রমণের জন্য অনবরত উত্তেজিত করতে থাকে।
যুদ্ধের ঘটনা ৪ ৬২৭ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ আবু সুফিয়ান কুরাইশ, ইহুদি ও বেদুইনদের একটি সম্মিলিত বাহিনীর নেতৃত্ব দান করে ১০০০০ সৈন্যসহ মদিনার দিকে অগ্রসর হয়। মহানবি (স.) ৩০০০ সৈন্য সংগ্রহ করে এই সম্মিলিত বাহিনীকে প্রতিরোধ করার উপায় উদ্ভাবনের লক্ষ্যে পরামর্শ সভা আহবান করেন। সভায় পারস্যবাসি হযরত সালমান ফারসি (রা)-এর পরামর্শ গৃহীত হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী, শহরের তিন দিকে অরক্ষিত স্থানে পরিখা খনন করা হয়। পরিখা অথবা খন্দক হতেই এ যুদ্ধের নামকরণ হয়েছে 'খন্দকের যুদ্ধ'। ইংরেজি ভাষায় এ যুদ্ধকে Battle of the confederates বা সম্মিলিত শক্তিসমূহের যুদ্ধ বলা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে এটা 'আহযাবের যুদ্ধ' নামে অভিহিত হয়েছে। আত্মরক্ষামূলক এ ব্যবস্থায় শিশু ও নারীদের নিরাপদ দুর্গ ও গম্বুজে আশ্রয় প্রদান করা হয়। উদ্ভাবনী শক্তির প্রতীক ও আত্মরক্ষার বলিষ্ঠ উপায়- এ পরিখা কুরাইশদের আক্রমণকে প্রতিহত করে। আত্মরক্ষার এ অভিনব কৌশল দেখে বিধর্মী কুরাইশরা বিস্মিত হল। আপ্রাণ চেষ্টা করেও তারা মদিনায় প্রবেশ করতে সমর্থ হল না। তিন সপ্তাহের অধিককাল মদিনা অবরোধ করে অবশেষে তারা রণে ভঙ্গ দেয়। বেদুইন, কুরাইশ ও ইহুদিদের দ্বারা গঠিত ত্রি-শক্তির মধ্যে ঐক্যের অভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মহানবি (স.) এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, রণকৌশল, মুসলিম গোয়েন্দা বাহিনীর কর্তব্যনিষ্ঠা এবং মুসলিম বাহিনীর অসাধারণ ঐক্য ও শৃঙ্খলাবোধ শত্রুপক্ষের পরাজয়ের পেছনে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ
