• হোম
  • একাডেমি
  • মাদরাসা
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনা জীবন
হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনা জীবন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনা জীবন

ইহুদি গোত্রসমূহ

বানু কাইনুকা: মদিনার বানু কাইনুকা ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ছিল। বদরের যুদ্ধের অব্যবহিত পরে এ সম্প্রদায়ের একজন ইহুদি যুবক জনৈক মুসলিম তরুণীকে বাজারে প্রকাশ্যভাবে অপমান করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন মুসলমান ও একজন ইহুদি নিহত হলে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মদিনা সনদের শর্ত ভঙ্গ করে ইহুদিরা যুদ্ধের হুমকি দিলে ইহুদি ও মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। হযরত মুহাম্মদ (স.) স্বয়ং বানু কাইনুকাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ অথবা মদিনা ত্যাগ করার আদেশ প্রদান করেন। মুসলিম প্রজাতন্ত্রের বিশ্বাসঘাতক এ ইহুদি সম্প্রদায় পনের দিন নিজেদের দুর্গে অবরুদ্ধ থাকার পর ৬২৫ খ্রিস্টাব্দে (তৃতীয় হিজরি) তাদেরকে মদিনা হতে বিতাড়িত করা হয়। অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

বানু নাজির: ইহুদিদের প্রকাশ্যে বিরোধিতা, ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা এবং হিংসাত্মক কার্যকলাপে মদিনার মুসলমানরা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। বদরের যুদ্ধে কুরাইশদের পরাজয়ের পর মদিনা সনদের শর্ত ভঙ্গ করে বানু নাজির গোত্রের কা'ব ইবন আশরাফ বীর গাঁথা রচনা করে বিধর্মীদের উৎসাহ দান করে। আবু রাফি সাল্লাম নামক একজন নাজির গোত্রীয় ইহুদি সুলাইম ও গাতফান প্রভৃতি আরব বেদুইন গোত্রগুলোকে ইসলামের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করতে থাকে। হঠকারিতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে অভিযুক্ত ইসলামের এ দুই পরম শত্রুকে হত্যা করার আদেশ প্রদান করা হয়। নব-প্রতিষ্ঠিত ইসলামী প্রজাতন্ত্রের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

উপরন্তু: উহুদের যুদ্ধে বানু নাজিরের সরদার আবদুল্লাহ বিন উবাই বিশ্বাসঘাতকতা করে সনদের শর্তভঙ্গ করলে মহানবি (স.) বানু নাজিরের মহল্লায় উপস্থিত হয়ে তাদের অংশের মুক্তিপণ দিতে অনুরোধ জানান। তথায় আমর বিন জাহাশ মহানবি (স.) কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। সৌভাগ্যক্রমে মহানবি (স.) এ দূরভিসন্ধির কথা জানতে পেরে তাদেরকে মদিনা ত্যাগের নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্দেশ অমান্য করে তারা আবদুল্লাহর নেতৃত্বে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করলে মহানবি (স.) তাদেরকে অবরোধ করতে বাধ্য হন। অবশেষে তাদেরকে মদিনা হতে বহিষ্কার করা হয়। মদিনা হতে বিতাড়িত হয়ে তারা সিরিয়া ও খাইবারে গিয়ে বসবাস করতে থাকে। হিজরি চতুর্থ বছরে (৬২৬ খ্রিস্টাব্দে) বানু নাজির গোত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

বানু কুরাইযা : ইহুদিদের অপর প্রভাবশালী গোত্র ছিল মদিনার বিশ্বাঘাতক বানু কুরাইযা। খন্দকের যুদ্ধে এ ইহ্রদি গোত্র পৌত্তলিক, কুরাইশ ও বেদুইনদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ত্রি-শক্তির সংঘ গঠন করে এবং ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার সকল প্রকার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু ত্রি-শক্তির সংঘের শোচনীয় পরাজয়ের পর হযরত মুহাম্মদ (স.) এ বিশ্বাসঘাতক বানু কুরাইযাকে সমুচিত শাস্তি প্রদানের জন্য মদিনা ত্যাগ করতে আদেশ দেন কিন্তু আদেশ অমান্য করলে তাদের দুর্গ অবরোধ করা হয়। আত্মসমর্পণ করলে হযরত (স.) ইহুদিদের ইচ্ছানুযায়ী আউস গোত্রের দলপতি সাদ বিন মুয়াজ (রা.) এর উপর বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে বিচার ভার ন্যস্ত করেন। তাঁর বিচারে ইসলামের বিরোধিতাকারী ইহুদিদের প্রায় ২৫০ ব্যক্তিকে প্রাণদন্ড দেয়া হয় এবং নারী ও শিশুদেরকে দাসদাসীতে পরিণত করা হয়।

মূল্যায়ন: ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ ও নিরপেক্ষ সমালোচনায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ইহুদিদের বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তা তাদের জিঘাংসামূলক ব্যবহার, ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার তুলনায় অতি নগণ্য। ইহুদিদের জঘন্য রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের বহু দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যেতে পারে। যথা-

মদিনা সনদের পরিপন্থী ইহুদি গোত্র মক্কার কুরাইশদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে মুসলমানদের গুপ্ত খবর কুরাইশদের পরিবেশন করত। গুপ্তচর বৃত্তি বিশ্বাসঘাতকতার অন্যতম দৃষ্টান্ত: (২) কা'ব ইবন আশরাফ বদরের যুদ্ধে কুরাইশদের বিপর্যয়ে মক্কায় গমন করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিধর্মীদের প্ররোচিত করতে থাকে, (৩) মুসলিম তরুণীর শালীনতা হানির চেষ্টা, (৪) আবু রাফি সাল্লাম কর্তৃক আরব বেদুইন গোত্র সুলাইম ও গাতফানকে ইসলামের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলা, (৫) আমর বিন জাহাশ গৃহ চূড়ায় আরোহণ করে হযরত (স.) কে হত্যার চেষ্টা করে, (৬) বিরে মাউনায় আরব বেদুইন গোত্র কর্তৃক মুসলিম ধর্মপ্রচারকের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল বানু সুলাইম এবং তাতে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র ছিল বলে মনে করা হয়, (৭) বিরে মাউনা হতে আত্মরক্ষা করে একজন মুসলমান ভুলক্রমে বানু আমির গোত্রের দুইজনকে হত্যা করেন। হযরত (স.) ইহুদি ও মুসলমানদের উভয়কে সনদের শর্তানুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ করেন। কিন্তু বানু নাজির গোত্র সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদানে অস্বীকার করে। হযরত (স.) স্বয়ং ক্ষতিপূরণ আদায় করতে গেলে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়, (৮) খাইবার হতে বহিষ্কৃত হয়ে মদিনার উপকণ্ঠে ইহুদিগণ মুসলমানদের বাড়িঘর লুণ্ঠন করত এবং আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করত, (৯) ইহুদিদের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত খায়বারের যুদ্ধ, (১০) খায়বারের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তারা হযরত মুহাম্মদ (স.) কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করার হীন চক্রান্ত করে।

কুরআন শরীফে বর্ণিত আছে, "নিশ্চয় মুখে (মুসলমানদের বিরুদ্ধে) তারা জঘন্য ঘৃণা বা হিংসা প্রকাশ করেছে এবং অন্তরে তাদের (মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা) আরও অধিক। হিংসাত্মক ও বিদ্রোহজনক কার্যকলাপের তুলনায় ইহুদিদের প্রতি হযরত (স) খুবই মানবোচিত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ডব্লিউ মুইর বলেন, যে কারণে মুহাম্মদ (স.) ইহুদিগণকে শাস্তি প্রদান করেন তা রাজনৈতিক, ধর্মীয় নহে। অতএব ইহুদিদের প্রতি মহানবি (স.) কঠোর ও অন্যায় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন বলে সেপ্রঙ্গার, উইল প্রমুখ ইউরোপীয় ঐতিহাসিকগণ যে মন্তব্য করেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ