• হোম
  • একাডেমি
  • মাদরাসা
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • বাংলাদেশে ইসলাম
বাংলাদেশে ইসলাম

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

বাংলাদেশে ইসলাম

প্রাক-ইসলামি বাংলার বিভিন্ন অবস্থা

রাজনৈতিক অবস্থা:

খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক পর্যন্ত সমগ্র বাংলায় অনার্য অধিবাসীরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল। কিন্তু খ্রীস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শেষের দিকে নন্দরাজ বংশের পতনের পর শক্তিশালী মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠার পর সমগ্র বাংলার বিভিন্ন অংশে আর্যদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা হতে থাকে। তাই দেখা যায় সূদীর্ঘকালব্যাপী বাংলার বিভিন্ন অংশে আর্য ও হিন্দু শক্তির আধিপত্য বিরাজিত ছিল। এসময় কতিপয় রাজার হিংসা ও দমন নীতির কারণে বাংলার রাজনৈতিক অরাজকতা চরমে পৌছে। সমগ্র বাংলার অনৈক্য ও আত্মকলহ দেখা দেয়। এ অরাজকতার হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য তৎকালীন বাংলার নেতৃবৃন্দ একত্রিত হয়ে পারস্পরিক ঝগড়া বিবাদ ভুলে গিয়ে নিজেদের মধ্য থেকে গোপাল নামক একজনকে রাজা নির্বাচন করলে ৭৫০ অব্দে পাল রাজবংশের গোড়াপত্তন ঘটে। এ বংশ প্রায় ৪০০ বছর রাজত্ব করে।

একাদশ শতকের শেষভাগে পাল রাজবংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন বিজয় সেন নামক এক শক্তিশালী সামন্ত রাজা সমগ্র বাংলাদেশে প্রভুত্ব স্থাপন করলে সেন বংশের শাসন শুরু হয়। অতঃপর বখতিয়ার খলজীর লক্ষণাবর্তী অধিকারের দ্বারা বাংলার সাধারণ মানুষের উপর যে রাজনৈতিক নির্যাতন চলছিল তার অবসান হয়।

ধর্মীয় অবস্থা:

বাংলার যে সকল ধর্মীয় মতাদর্শ প্রচলিত ছিল তা হলো:

(ক) আর্যধর্ম: আর্যরা তৌহিদবাদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী ছিল। তারা অগ্নি, ইন্দ্র, বারুন, পবন প্রভৃতির পূজা করত। সাধারনত হোম, যজ্ঞ ও বলিদানের মাধ্যমে তাদের এ সব পূজানুষ্ঠান সম্পন্ন হতো।

(খ) ব্রাহ্মণ্যবাদঃ ব্রাহ্মণগণ বিভিন্ন মন্ত্র উচ্চারণ করে পূজা কার্য সম্পাদন করতেন। ধর্ম কর্ম অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মনদের এ প্রাধান্যের ভিত্তিতে ধীরে ধীরে আর্যধর্ম ব্রাহ্মণ্যধর্মে পরিণিত হয়। এভাবে সমাজে বর্ণাশ্রমের উদ্ভব হয়। সৃষ্ট হয় ধর্মীয় শ্রেণি ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্রের।

(গ) জৈন ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম: ধর্মীয় নানাবিধ বিশৃঙ্খলার উপর ভিত্তি করে ভারতে জৈন ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের উদ্ভব হয়। জৈনদের কোনো লিখিত ধর্মগ্রন্থ ছিল না। তাদের ধর্মগ্রন্থের একমাত্র উৎস ছিল মহাবীর। এ ধর্মের শিক্ষাসমূহ বিকৃতির বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে ধীরে ধীরে হিন্দু ধর্মের অংশে পরিণত হয় এবং জৈন ধর্মও বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারক হলেন গৌতম বুদ্ধ। এ ধর্ম জাতিভেদকে প্রশ্রয় দেয়নি। এ ধর্মের শিক্ষা হচ্ছে অহিংস, দয়া, দান, সৎচিন্তা, সংযম, সত্যভাষণ, সৎকার্যসাধন, স্রষ্টাতে আত্মসমর্পন প্রভৃতি মানুষের মুক্তি লাভের প্রধান উপায়। বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাসীদের মতে যাগ-যজ্ঞ ও পশুবলী দিয়ে ধর্মপালন করা যায় না। তবে বিকৃতি ও ষড়যন্ত্রের অসংখ্যা আক্রমনে বৌদ্ধ ধর্মের আসল চেহারা অতলে তলিয়ে গেছে। এমনকি বহু সাধনার পর সূত্রের বাণী নিয়ে যিনি আসলেন সেই গৌতম বুদ্ধকেও তাঁর অনুসারীরা ভ্রান্ত ভাবে উপস্থাপন করেন। অষ্টম শতকে বাংলায় পালরাজাগণের অভ্যূদয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। একাদশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত এ প্রভাব অব্যাহত থাকে। তবে পরবর্তীতে হিন্দু ধর্মের প্রভাবে বৌদ্ধ ধর্ম দূর্বল হয়ে পড়ে।

(ঘ) হিন্দু ধর্মঃ দ্বাদশ শতকের শেষভাগে সেন বংশের প্রভাবে বাংলায় হিন্দু ধর্মের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। বিষনু ও শিবের পূজা ছাড়াও অন্যান্য দেব দেবীর পূজা তখন বাংলায় প্রসার লাভ করে। এক সময় সেনরাজগণ বাংলায় মূর্তি পূজার প্রচলন করেন। ধর্মের নামে সতীদাহর ন্যায় গর্হিত প্রথার প্রচলন বাংলায় দেখা যায়। হিন্দু যাজকরা জাতিভেদ ও বর্ণাশ্রম প্রথাকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ