• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

সুশাসন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

সুশাসন

সুশাসনের সমস্যা সমাধানের উপায় | The Way of Solving the Problems of Good Governance

সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যেমন একাধিক সমস্যা রয়েছে, তেমনি সমাধানের ক্ষেত্রেও রয়েছে বহুবিধ উপায়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপায়গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক রাজনীতি ও প্রশাসন: সুশাসনের পূর্বশর্ত (Pre-requisite) হচ্ছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে রাজনীতি ও প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই সহজেই অনুমেয় যে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

২. গণতন্ত্রের চর্চা: গণতন্ত্র চর্চা ব্যতিরেকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা প্রায় অকল্পনীয়। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান করতে পারলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। মূলত গণতান্ত্রিক শাসন হলো জনগণের শাসন। মার্কিন সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, "Democracy is a government of the people, by the people and for the people." অর্থাৎ, জনকল্যাণের শাসন, জনপ্রতিনিধির শাসন, যা সুশাসনের উপাদানের সাথে সামঞ্জস্যশীল।

৩. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একটি দেশের সুশাসন নির্ভর করে সে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর। রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আন্তরিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি যদি গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণমূলক হয় তবে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই বলা হয়, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।

৪. স্বাধীন বিচার বিভাগ: সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপায় হলো স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা। এর জন্য বিচার বিভাগকে অন্যান্য বিভাগ বিশেষ করে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথকীকরণ প্রয়োজন। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা ব্যতিরেকে সুশাসন অকল্পনীয়। রাষ্ট্রের জনগণ যখন মৌলিক অধিকার ভোগ করবে, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও ন্যায়বিচার পাবে তখন সুশাসন বিরাজ করবে।

৫. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা: আইনের শাসন সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপায়। অধ্যাপক ডাইসি (A. V. Dicey) বলেছেন, "All men are equal in the eye of law:" অর্থাৎ, আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান। আইনের শাসনের মধ্যে মানবাধিকারের বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই সমগ্র বিশ্বব্যাপী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে সমধিক গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে।

৬. দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি রোধ: তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে এ সংক্রান্ত কমিশন রয়েছে, তথাপি সেগুলো কতখানি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।

৭. অবাধ তথ্যপ্রবাহ সুশাসনের সমস্যা সমাধানের অন্যতম উপায় হলো অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতকরণ। আর এ তথ্যপ্রবাহ চলমান রাখতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। সুশাসনের জন্য সরকারের গৃহীত নীতি, কার্যক্রম বা সিদ্ধান্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের নিকট পৌঁছানো এবং জনগণের সমস্যা, দাবি ইত্যাদি সরকারের নিকট পৌছানো একান্ত আবশ্যক। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক যোগাযোগ ও ফিডব্যাক-এর মুখ্য কাজটি সম্পাদনে গণমাধ্যম অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

৮. ক্ষমতার বৈধতা সুশাসনের সমস্যা সমাধানের আর একটি উপায় হলো ক্ষমতার বৈধ কর্তৃপক্ষ। এর জন্য প্রয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যারা ক্ষমতায় বা নেতৃত্বে এসেছে তাদের ক্ষমতার বৈধতা নিয়ে কখনো কখনো সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বৈধ ও জনকল্যাণমূলক সরকার প্রয়োজন।

৯. ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ: সুশাসনের সমস্যা সমাধানের একটি উল্লেখযোগ্য উপায় হলো প্রশাসনিক তথা সরকারি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। লর্ড অ্যাক্টন (Lord Acton) বলেছেন, "Power corrupts, absolute power tends to corrupt absolutely." তাই বলা বাহুল্য, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অপরিহার্য।

১০. রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি সুশাসনের সমস্যা সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো দেশের বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে, রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি। যেমন- একটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি কী হওয়া উচিত সে বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজন।

১১. জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এজন্য প্রতিনিধিত্বমূলক প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কাঠামো তৈরি করে জনগণকে এর সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণ সম্পৃক্ত হলে তা বাস্তবায়নে কোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে না; যা সুশাসনকেই ত্বরান্বিত করবে

১২. সহনশীলতা: সহনশীলতা সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম শর্ত। রাষ্ট্রে বসবাসকারী নাগরিক ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকলের সহনশীল হতে হবে। অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে সরকারি ও বিরোধীদলের মধ্যে * পরস্ত্রবিরোধী তিক্ত ও অসহিষ্ণু মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া সরকারি কর্মচারীরা জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আন্তরিকতা ও ধৈর্য প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে সামাজিক অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। রাজনৈতিক দলগুলোও অগণতান্ত্রিক ও অযোক্তিক আচরণ করে থাকে। তাই রাষ্ট্রে বসবাসকারী সকল পক্ষ, গোষ্ঠীকে পরমত সহিষ্ণু হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করবে।

১৩. আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রোধ: আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা আমলাদের বাড়াবাড়ি সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় রকমের অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। আমলারা আন্তরিক, দক্ষ ও জনকল্যাণমুখী না হলে সরকারি কোনো পরিকল্পনা বা কর্মস্থান সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হতে পারে না। আমলাদের অনীহা, দায়িত্বহীনতা অনেক সময় জনগণের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই গণমুখী প্রশাসন চালু করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দীর্ঘসূত্রিতা দূর করা অবশ্যই জরুরি।

১৪. সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব: সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রায় পরিকল্পনা, কর্মকাণ্ডের সাফল্য যোগ্য নেতৃত্বের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব জাতিকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করে দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ, নেতৃত্ব সুশাসনকে নিশ্চিত করে তোলে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ