• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

সুশাসন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

সুশাসন

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের করণীয় | Government Steps to Establish Good Governance

একটি রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের ভূমিকা ব্যাপক ও বিস্তৃত। সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশিত হয়। নিচে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের করণীয় আলোচনা করা হলো:

১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিবেশ সৃষ্টি: সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রথমত সরকারকেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কারণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক শাসন ব্যবস্থা ব্যতিরেকে সুশাসন কল্পনা করা যায় না। শাসক তথা সরকারের মধ্যে যখন আমরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মনোভাব দেখতে পাব তখনই আশা করব তাদের দ্বারা সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। আর এ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সরকারের আইন, শাসন ও বিচার বিভাগে থাকতে হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

২. দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ: সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারকে অবশ্যই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশ্বজুড়ে দুর্নীতি আজ উন্নয়ন ও সুশাসনের পথে একটি প্রধান বাধা। দুর্নীতির কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সাথে সাথে বাড়ছে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। সাম্প্রতিককালে দাতা দেশ ও সংস্থাসমূহ বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণদানের জন্য যেসব শর্ত আরোপ করছে তার মধ্যে সুশাসন অন্যতম। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দুর্নীতি রোধ ছাড়া সুশাসনের পথ প্রশস্ত করার কোনো উপায় নেই।

৩. দারিদ্র্য বিমোচন: সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে দেশ থেকে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সরকারকে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কেননা ক্ষুধার রাজ্যে সবকিছু গদ্যময় মনে হয়। দারিদ্র্য শুধু দেশকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে দেয় না, রাষ্ট্রে জনগণের নৈতিক মানবিক অবক্ষয়েরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করে দেশকে দারিদ্র্য বিমোচন করা প্রয়োজন।

৪. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। পৃথিবীর যেকোনো সভ্য দেশের শাসনব্যবস্থায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকা উচিত। একটি দেশের সুশাসন নিশ্চিত করতে যুগোপযুগী স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই।

৫. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ সরকারের দায়িত্ব। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অবাধ তথ্যপ্রবাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এ তথ্যপ্রবাহ চলমান রাখতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। গণমাধ্যম যেমন- রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ইত্যাদি যেন স্বাধীন মতামত প্রকাশ, নানা ধরনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি এবং অসংগতি প্রকাশে কোনো হুমকি বা বাধার মুখে না পড়ে, তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।

৬. আমলাতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারকে প্রশাসনিক তথা আমলাতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। রিচার্ড ক্রসম্যান (Richard Crossman) বলেছেন, "An uncontrolled bureaucracy is a threat to democracy." অনিয়ন্ত্রিত আমলাতন্ত্র যেমন গণতন্ত্রের প্রতি হুমকিস্বরূপ তেমনি সুশাসনের একটি বড় অন্তরায়। তাই সুশাসন নিশ্চিতকল্পে আমলাতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৭. সাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারকে সাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করা প্রয়োজন। আর এর জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করা সরকারের দায়িত্ব।

৮. আইনের শাসন এবং মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য সরকারকে একদিকে যেমন আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে তেমনি অন্যদিকে মানবাধিকারের বিষয়টির ওপরও গুরুত্বারোপ করতে হবে। কারণ বর্তমান বিশ্বায়নের (Globalization) যুগে বিশ্বব্যাপী আইনের শাসন ও মানবাধিকার ইস্যুটি অতীব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে।

৯. সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধি: সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারি নীতি, কর্মকাণ্ডের দ্রুত ও সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে দক্ষ, দূরদর্শী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

১০. আইনসভাকে কার্যকর করে তোলা সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থায় আইনসভার গুরুত্ব অপরিসীম। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আইনসভার সদস্য হিসেবে কাজ করে। সংসদ সদস্যরা আইনসভায় জনগণের সমস্যা তুলে ধরবেন। ভুল-ত্রুটি ধরে দিয়ে সরকারকে তা শোধরানোর চেষ্টা করবেন সে জন্য জাতীয় সংসদ বা আইনসভা কার্যকর করে তুলতে হবে।সরকার ও বিরোধী দল মিলে সংসদে বসে সকল সমস্যার সমাধান বের করতে হবে। এভাবে কার্যকর আইনসভার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব।

১১. সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব: রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। জনগণের কল্যাণে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সৎ, দক্ষ ও প্রজ্ঞাবান নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব যেমন জাতির উন্নয়নে সহজে কাজ করতে পারে। তেমনি দুর্নীতি রোধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সফল হতে পারে।

১২. অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন রাষ্ট্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত বৈধ সরকার খুবই প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ সরকার গঠনে অংশগ্রহণ করে থাকে। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু না হলে রাজনৈতিক বিরোধ দেশে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করে। যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাই সুশাসনের জন্য অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন জরুরি।

১৩. জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি: সরকারি নীতি, জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের সাথে জনগণের সুসম্পর্ক থাকা আবশ্যক। আর এজন্য প্রয়োজন সরকার গঠন, সরকারি কর্মকাণ্ডসহ রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ। কোনো সমাজে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণকে তাই নিশ্চিত করা অন্যতম পূর্বশর্ত।

১৪. ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন- শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগসহ নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন প্রভৃতি সংস্থার মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। কেননা ক্ষমতার ভারসাম্য জনগণের অধিকার রক্ষা করে সুশাসন নিশ্চিত করতে পারে।

১৫. শক্তিশালী স্থানীয় সরকার জনগণের কল্যাণে সুশাসনের জন্য বিভিন্ন স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার যেমন- জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন প্রভৃতি সংস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। কেননা মাঠপর্যায়ের এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে জনগণের সরাসরি যোগাযোগ হয়ে থাকে।

১৬. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা রাষ্ট্রে বসবাসরত সকল ধর্মের বর্ণের সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রের সু-শৃঙ্খল ও শান্তিময় পরিবেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রকে অবশ্যই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে।

১৭. শিক্ষার সম্প্রসারণ শিক্ষার মাধ্যমে একটি জাতি আধুনিক বিশ্বের নবতর চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করতে পারে। চরম প্রতিযোগিতামূলক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা মানুষকে সচেতন করে দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ করে, বিভিন্ন পেশার জন্য যোগ্য ও দক্ষ করে তোলে। তাই সুশাসনের জন্য জনগণকে ব্যাপকভাবে শিক্ষিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

১৮. দেশপ্রেমের জাগরণ সুশাসনের জন্য দেশপ্রেমের জাগরণ ঘটাতে হবে। নিজে দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, নিজ নিজ দায়িত্ব যথার্থভাবে পালন, দেশের দুর্দিনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করাই হলো দেশপ্রেম। দেশপ্রেমের প্রবল তাগিদেই সরকার ও জনগণ যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে সর্বদা প্রস্তুত থাকে। তাই দেশপ্রেম সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করে তোলে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ