• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

সুশাসন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

সুশাসন

সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুশাসনের গুরুত্ব | Importance of Good Governance in Social, Political and Economic Sector

আধুনিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সুশাসনের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সুশাসন অপরিহার্য। নিচে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুশাসনের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:

সামাজিক ক্ষেত্রে সুশাসনের গুরুত্ব (Importance of good governance in social sector)

সুশাসন সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। সুশাসিত সমাজ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে: নাগরিকগণ সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করে। সন্তানসন্ততিরা তা অনুসরণের মাধ্যমে শিক্ষিত রুচিবান ও সংস্কৃতিবান হয়ে গড়ে ওঠে।

বর্তমান কালে বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা দিয়ে থাকে। এসব কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা দাতা দেশ ও সংগঠনসমূহ চাপ প্রয়োগ করে থাকে। তাই সামাজিক উন্নয়নের জন্য সুশাসন অত্যাবশ্যক।

নিম্নে সামাজিক ক্ষেত্রে সুশাসনের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:

১. সুষ্ঠু সমাজ গঠন: সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুন্দর, সুস্থ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন করা সম্ভব। সুশাসন সমাজের অন্তর্গত সকল মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে। এতে সামাজিক সংহতি ও সম্প্রীতি গড়ে ওঠে।

২. সামাজিক উন্নয়ন সুশাসন সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। র সুশাসন সমাজের সকল ক্ষেত্রের উন্নয়ন গঠন করতে পারে। করে। রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা, সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে

৩. সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা সমাজের সকল মানুষ যেন তাদের সামাজিক অধিকারসমূহ ভোগ করতে পারে; যেমন-সম্পত্তির অধিকার, শিক্ষার অধিকার, নিরাপদে বসবাসের অধিকার ইত্যাদি সেজন্য সুশাসন অপরিহার্য। সমাজ জীবনে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের সামাজিক অধিকার সুরক্ষিত হতে পারে।

৪. দারিদ্র্য বিমোচন: সুশাসন সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, সরকারি সাহায্য-সহায়তা, সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের ক্ষেত্রে সুশাসন জরুরি। যে সমাজে সুশাসন নেই সেখানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ক্রমে বাড়তেই থাকে।.

৫. নারীর ক্ষমতায়ন: আমাদের সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সুশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। উন্নয়নের মূলধারায় ব্যাপকভাবে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবাধিকারসহ সামাজিক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ। বিশ্বায়নের প্রতিকূল প্রভাব থেকে দেশের কর্মজীবী নারীসহ সমাজের দুর্বল অংশকে রক্ষা করতে পারলে রাষ্ট্রে নারীদের জন্য যথেষ্ট সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হবে। পরিবার ও সমাজে তাদের যে অবস্থান তার স্বীকৃতি দিতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুশাসন কায়েমের মাধ্যমে তা সম্ভব।

৬. সামাজিক নিরাপত্তা সুশাসন সমাজে বসবাসকারী মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। মানুষ স্বভাবতই সামাজিক নিরাপত্তার সাথে বসবাস করতে চায়। এটি নাগরিক হিসেবে তার অধিকার। সমাজের অসহায় নারী-শিশু, বৃদ্ধ, এতিম, প্রতিবন্ধী, দরিদ্র ও বেকার মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় অনুদান, সামাজিক বিমা, আশ্রয় কেন্দ্র, চিকিৎসা সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মকাণ্ড গ্রহণ করা প্রয়োজন। আর এজন্য সুশাসন জরুরি।

৭. দুর্নীতিমুক্ত সমাজ দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সুশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি একটি বড় রকমের বাধা। সুশাসন সমাজ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে জনগণের কল্যাণের পথ প্রশস্ত করতে পারে।

৮. মানবাধিকার রক্ষা সমাজে মানবাধিকার রক্ষায় সুশাসন ভূমিকা পালন করে। সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে মানবাধিকার সহজেই সুরক্ষিত হয়। সুশাসনবিহীন সমাজে সহজে মানবাধিকার আশা করা যায় না।

৯. সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি: সুশাসনের মাধ্যমে সামাজিক শাস্তি, শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় বলে সামাজিক বিরোধ-অস্থিরতা কমে যায়। ফলে সমাজে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হয়।

১০. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সুশাসন সামাজিক ক্ষেত্রে আইনের শাসনকে প্রতিষ্ঠিত করে। সমাজের সকল মানুষ সমানভাবে আইনের শাসন দ্বারা পরিচালিত হবে। সবাই আইনের শাসনে আশ্রয় লাভের সুবিধা লাভ করবে। সুশাসনই সামাজিক জীবনে আইনের শাসনের নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারে। এতে জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষিত হয় এবং সামাজিক শাস্তি ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়।

১১. সামাজিক শান্তি ও সাম্য প্রতিষ্ঠা: সুশাসন যেমন সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করে, তেমনিভাবে সামাজিক সাম্যও প্রতিষ্ঠিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। সমাজের মধ্যে সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেন কোনো বৈষম্য করা না হয় তা সুশাসনই নিশ্চিত করতে পারে। তাই সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সুশাসনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুশাসনের গুরুত্ব (Importance of good governance in political sector)

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। সুশাসন ছাড়া কোনো রাষ্ট্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। তাই বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুশাসনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:

১. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা: রাষ্ট্রীয় জীবনে আইনের শাসন কায়েম, জনগণের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সুশাসন প্রয়োজন। সুশাসন না হলে আইন সঠিকভাবে কার্যকর করা যায় না। সুশাসন সমাজের আইনের শাসন কায়েম করে।

২. মৌলিক অধিকার রক্ষা সুশাসন জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে। মৌলিক অধিকার ভোগ ছাড়া, মানুষের ব্যক্তিত্বের যেমন বিকাশ ঘটে না তেমনি নাগরিক জীবনের পূর্ণতা আসে না। সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা যায়।

৩. রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন সুশাসন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন সাধন করে। সুশাসনের ফলে জনগণের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বিকাশ যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি সরকার, রাজনৈতিক দলসমূহ ও জনগণের মধ্যেও সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এ ধরনের পরিবেশ পরিস্থিতি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সুন্দর, স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে।

৪. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা সুশাসন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। বিচারকগণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারেন। ফলে জনগণ বিচার বিভাগের কাছ থেকে সুবিচার পেতে পারে। এতে জনগণের অধিকার স্বাধীনতা, ও নাগরিক মর্যাদা সুরক্ষিত হয়।

৫. রাজনীতিতে জবাবদিহিতা সৃষ্টি রাজনীতি যাতে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে ব্যবহৃত না হয়ে জনস্বার্থে ব্যবহৃত হয় রাষ্ট্রের সুশাসন ব্যবস্থা তা নিশ্চিত করে। সুশাসন সরকারি ও বিরোধী দলের দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন রোধে কার্যকরী ভূমিকা রেখে স্থিতিশীল ও সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এতে রাজনীতিতে জবাবদিহিতার সৃষ্টি হয়।

৬. গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান সুশাসন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সাহায্য করে। এ ব্যাপারে সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের ভূমিকাই মুখ্য। উভয় দলই যদি সহিষ্ণুতা, আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে দলের ভেতর ও বাইরে গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রাখে তাহলে সুশাসন এক্ষেত্রে সহজেই সফলকাম হতে পারে।

৭. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা সরকারি কর্মকাণ্ডের প্রতিটি বিষয় জনগণের জানার অধিকার রয়েছে। সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রে তথ্য জানার ব্যবস্থা থাকলে জনগণের সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারে। সরকারও গ্রহণযোগ্যতা পায়। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সরকারি কর্মের স্বচ্ছতা বাড়বে। স্বচ্ছতা কাজের জবাবদিহিতা ও দুর্নীতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এভাবে সুশাসনের পথ প্রশস্ত হয়।'

৮. রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি: সুশাসন দেশের রাজনীতিতে ঐকমত্যের সৃষ্টি করে। সুশাসনের ফলে সরকারি দল, বিরোধীদলসহ সর্বস্তরের মানুষ রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার সমান সুফল ভোগ করে। এতে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য সৃষ্টি হয়।

৯. রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: রাজনীতিতে জনগণের অধিকমাত্রায় অংশগ্রহণের প্রশ্নে সুশাসন কার্যকর ভূমিকা পালন করে। সুশাসনের ফলে জনগণ নির্ভয়ে, স্বাচ্ছন্দ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া, ভোটধিকার প্রয়োগসহ গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। এর ফলে রাজনীতিতে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায় এবং সুষ্ঠু জনমত গড়ে ওঠে।

১০. যোগ্য নেতৃত্বের সৃষ্টি: গণতন্ত্র তথা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলা আবশ্যক। যোগ্য নেতৃত্বই জাতিকে উন্নতির দিকে পরিচালিত করে। সমাজে সুশাসন নিশ্চিত হলে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে জনগণ নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে সহজেই সম্পৃক্ত হতে পারে। ফলে জনগণের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। এছাড়া ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের ফলে স্থানীয় পর্যায়েও নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়। তাই বলা যায়, যোগ্য নেতৃত্বের সৃষ্টিতে সুশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্র সুশাসনের গুরুত্ব (Importance of good governance in economic sector)

অর্থনৈতিক ক্ষেত্র সুশাসনের ভূমিকা বা গুরুত্ব অপরিসীম। যেকোনো রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুশাসনের' কোনো বিকল্প নেই। নিম্নে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুশাসনের গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো:

১. অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি দেশের সঠিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুশাসনের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সুশাসন দেশে ব্যাপক শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি বৃদ্ধি, আমদানির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস, উৎপাদন, বণ্টন-ভোগের ক্ষেত্রে ক্ষমতা বিধান করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন নিশ্চিত করতে পারে। সুশাসন নিশ্চিত হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নও সাধিত হয়।

২. অর্থনৈতিক সাম্য: সুশাসনের ফলে সমাজে একধরনের অর্থনৈতিক সাম্যের সৃষ্টি হয়। সুশাসন সমাজে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ ও ন্যায্য মজুরি পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করে। সুশাসন সমাজ জীবনে অর্থনৈতিক সাম্য সৃষ্টি করে। অর্থনৈতিক সাম্যের মাধ্যমে সুশাসন সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করে।

৩. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুশাসন কায়েম হলে জনগণের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জিত হয়। যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাওয়া বা পেশা গ্রহণ এবং উপযুক্ত পারিশ্রমিক বা আর্থিক সুবিধা লাভ করাই হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ব্যতীত মানুষ অন্যান্য স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে পারে না। সুশাসন জনগণকে অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্ত করে আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করে।

৪. দারিদ্র্য নিরসন সুশাসন সমাজ থেকে দারিদ্র্য নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ, কর্মকাণ্ড গ্রহণ করে থাকে। দারিদ্র্যের কারণে কোনো দেশ শুধু সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়েই পিছিয়ে পড়ে না বরং মানবিক ও নৈতিক অবক্ষয়ও ঘটে থাকে। দারিদ্র্যপীড়িত মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়। তাদের দ্বারা কোনো উন্নয়ন আশা করা তো দূরের কথা বরং দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে তারা কখনো কখনো নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। তাই সুশাসন ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে জনগণের মধ্যে অসমতা দূর করতে কাজ করে থাকে।

৫. দাতা গোষ্ঠীর সহযোগিতা তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈদেশিক সাহায্য-সহযোগিতার উপর নির্ভরশীল। এসব দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুশাসনের কোনো বিকল্প নেই। কেননা আন্তর্জাতিক দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো বিভিন্ন রাষ্ট্রে সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের সময় সুশাসনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এতে দাতাগোষ্ঠী মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাই আন্তজার্তিক সাহায্য-সহযোগিতার জন্য সুশাসন খুবই জরুরি।

৬. বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস: অনেকে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাসের জন্য জাতীয় উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করে থাকেন। আত্মমর্যাদাশীল ওস্বনির্ভর জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য এটা খুবই দরকার। আর এজন্যও সুশাসন প্রয়োজন। সুশাসনের জন্য যেকোনো দেশ নিজস্ব সম্পদ ও জনশক্তিকে কাজে লাগয়ে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে। অর্থনৈতিক চাহিদা মেটাতে দাতাগোষ্ঠীর নিকট নানা শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ হয় না।

৭. উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ সুশাসনের ফলে একটি দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনগন সহজেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। এর ফলে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হয়।

৮. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ সুশাসন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে। কেননা সমাজের নারীকে প্রান্তিক অবস্থায় রেখে সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।

৯. মানব সম্পদের উন্নয়ন: টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে দেশের জনসংখ্যাকে অবশ্যই দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করতে হবে। বিশেষ করে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে দক্ষ মানব সম্পদ ছাড়া একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব নয়। তাই একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে দক্ষ মানব সম্পদের উন্নয়নে সুশাসনের ভূমিকা অপরিসীম।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ