• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

সুশাসন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

সুশাসন

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য | Duties and Responsibilities of Citizen to Establish Good Governance

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। যদি দেশের নাগরিকগণ সকলে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা অনেকটাই সহজ হয়। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকদেরও তৎপর ও আন্তরিক হতে হবে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। রাজনৈতিক অংশগ্রহণ হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ও নীতি নির্ধারণে সমাজের সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা। জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ফলে সরকারের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করে।

২. সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন: সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সৎ ও যোগ্য প্রতিনিধি বা নেতৃত্ব নির্বাচন করা নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আধুনিক গণতন্ত্র প্রতিনিধিত্বশীল শাসনব্যবস্থা। নাগরিকগণ শাসন ব্যবস্থায় কিছুকাল অন্তর অন্তর তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে থাকে। এসব প্রতিনিধি সৎ, দক্ষ ও যোগ্য না হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

৩. দুর্নীতির বিরুদ্ধে সজাগ থাকা: সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকদের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে সজাগ থাকা। কারণ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায় হলো দুর্নীতি। দুর্নীতিকে নিছক একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা সমীচীন হবে না, বরং দুর্নীতি আজ রাষ্ট্র, সমাজ, সংস্কৃতি ও প্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সাধারণ নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্নীতি বিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

৪. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। নাগরিকগণ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই নাগরিকগণ যদি রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয় তাহলে একটি দেশের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ (Intervention) করতে পারে না।

৫. সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা: সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারি কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করা নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সরকারের ভালো কাজে যেমন সহযোগিতা করা প্রয়োজন তেমনি জনকল্যাণ বা জনস্বার্থ বিরোধী কাজে সমালোচনা করাও নাগরিকের দায়িত্ব।

৬. তথ্য অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া বর্তমানে তথ্য প্রাপ্তির অধিকার জনগণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। প্রত্যেক নাগরিকের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নাগরিকদের 'তথ্য অধিকার আইন' (Rights of Information Law) সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

৭. আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দেশের প্রতিটি নাগরিকের উচিত আইন মেনে চলা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। একজন নাগরিককে যেমন নিজেকে আইন-শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে, তেমনি অন্যরা যাতে আইন মেনে চলে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

৮. উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ জনগণকে রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে। এছাড়া দেশের দুর্যোগকালীন মুহূর্তে সরকারের আহ্বানে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে সুশাসন নিশ্চিত হতে পারে।

৯. নিষ্ঠার সাথে সরকারি দায়িত্ব পালন নাগরিকদের নিষ্ঠা ও সততার সাথে সরকারি দায়িত্ব সম্পাদন করা আবশ্যক। প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন। করে, তবে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। ফলে নিশ্চিত হয় সুশাসন।

১০. নিয়মিত কর প্রদান: রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেক নাগরিকের নিয়মিতভাবে কর, খাজনা পরিশোধ করা উচিত। সরকার জনকল্যাণের লক্ষ্যে যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। নাগরিকগণ নিয়মিত কর প্রদান না করলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হতে পারে। তাই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সরকারের সুশাসন কায়েমের জন্য কর, খাজনা প্রদান করে সরকারকে সহযোগিতা করা নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

১১. জাতীয় সম্পদের অপচয় রোধ করা কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দল জাতীয় সম্পদ, সম্পত্তির কোনোরূপ ক্ষতি, আত্মসাৎ যেন করতে না পারে, এ ব্যাপারে জনগণকে সজাগ থাকতে হবে। সরকারি বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের বেদখল বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার সুশাসনের পথকে সংকুচিত করে। তাই রাষ্ট্রীয় অপচয় রোধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।

১২. সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা করা দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রে বসবাসকারী সকল নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর অধিকার প্রয়োগে বাধা, ধর্ম ও মতামত প্রকাশে বাধা সামাজিক সম্প্রীতি তথা রাষ্ট্রীয় সংহতিকে বিপন্ন করে তুলতে পারে। তাই সকল নাগরিকের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার ব্যাপারে নাগরিকদের দায়িত্ব রয়েছে। এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে যেমন সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষিত হয়, তেমনি তা সুশাসনের পথকে প্রশস্ত করে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ