• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি

আকাইদ ও নৈতিক জীবন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

আকাইদ ও নৈতিক জীবন

সৎকর্মশীল ও নৈতিকজীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাসের ভূমিকা

আখিরাত হলো পরকাল। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে আখিরাত বলা হয়। আখিরাত হলো মানুষের অনন্ত জীবন। এটি চিরস্থায়ী। পক্ষান্তরে দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। বস্তুত দুনিয়ার জীবন হলো আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্র। বলা হয়েছে-

الدُّنْيَا مَزْرَعَةُ الْآخِرَةِ

অর্থ : “দুনিয়া হলো আখিরাতের শস্যক্ষেত্র ।” (প্রবাদ)

মানুষ শস্যক্ষেত্রে যেরূপ চাষাবাদ করে, বীজ বপন করে, যেভাবে পরিচর্যা করে; ঠিক সেরূপই ফল লাভ করে। যদি কোনো ব্যক্তি তার শস্যক্ষেত্রের পরিচর্যা না করে তবে সে ভালো ফসল লাভ করে না। তদ্রূপ দুনিয়ার কাজকর্মের প্রতিদান আখিরাতে দেওয়া হবে । দুনিয়াতে ভালো কাজ করলে আখিরাতে মানুষ পুরস্কৃত হবে। আর মন্দ কাজ করলে শাস্তি ভোগ করবে ।

কবর, হাশর, মিযান, সিরাত, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি আখিরাত জীবনের এক একটি পর্যায়। ইসলামি বিশ্বাস মোতাবেক, যে ব্যক্তি ইমান আনে, সৎকর্ম করে সে আখিরাতে শান্তিময় জীবন লাভ করবে। কবর থেকে শুরু করে আখিরাতের প্রতিটি পর্যায়ে সে সুখ, শান্তি ও সফলতা লাভ করবে । অন্যদিকে দুনিয়াতে যে ব্যক্তি অবাধ্য হবে, পাপাচার করবে সে আখিরাতের সকল পর্যায়ে কষ্ট ভোগ করবে। তার স্থান হবে জাহান্নাম ।

মানবজীবন গঠনের জন্য আখিরাতে বিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে জীবন পরিচালনায় নীতি ও আদর্শের অনুসরণ করতে বাধ্য করে । যে ব্যক্তি আখিরাতে বিশ্বাস করে সে প্রত্যহ তার প্রতিটি কাজের হিসাব নিজেই নিয়ে থাকে। এভাবে দৈনন্দিন আত্মসমালোচনার মাধ্যমে মানুষ তার ভুল-ত্রুটি শুধরে সচ্চরিত্রবান হিসেবে গড়ে ওঠে।

আখিরাতে পুণ্যবানকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করানো হবে। জান্নাত হলো চিরশান্তির স্থান। জান্নাত লাভের আশা মানুষকে দুনিয়ার জীবনে সৎকর্মশীল করে তোলে । মানুষ জান্নাত ও তার নিয়ামত প্রাপ্তির আশায় নেক আমল করে, ভালো কাজ করতে উৎসাহিত হয়। কেননা আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস, ভালোবাসা ও সৎকর্ম ব্যতীত জান্নাত লাভ করা যায় না। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّلِحَتِ لَهُمْ جَنَّتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهُرُ : ذَلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِيرُة

অর্থ : “নিশ্চয়ই যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। এটাই মহাসাফল্য।” (সূরা আল-বুরূজ, আয়াত ১১)

এভাবে পরকালীন জীবনে জান্নাত লাভের আশা মানুষকে সৎকর্মশীল হতে সাহায্য করে।

জাহান্নাম অতি কষ্টের স্থান। এতে রয়েছে সাপ, বিচ্ছু ও আগুনের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। দুনিয়ার জীবনের পাপী, অবাধ্য ও মন্দ আচরণের লোকদের পরকালে জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

فَأَمَّا مَنْ طَغَى وَأَقَرَ الْحَيَوةَ الدُّنْيَا هُ فَإِنَّ الْجَحِيمَ هِيَ الْمَأوى

অর্থ : “অনন্তর যে সীমালঙ্ঘন করে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয় জাহান্নামই হবে তার আবাস।” (সূরা আন-নাযিআত, আয়াত ৩৭-৩৯)

জাহান্নামের শাস্তির ভয়ও মানুষকে অন্যায় ও পাপ থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে। দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালার আদেশ না মানা, পার্থিব লোভ লালসার বশবর্তী হয়ে অন্যায় অনৈতিক কাজ করা ইত্যাদি জাহান্নামিদের কাজ । সুতরাং জাহান্নামের ভয়ে মানুষ এসব কাজ থেকে বেঁচে থাকে এবং আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করে ।

আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে বড় বড় অন্যায় এবং অনৈতিক কাজের পাশাপাশি ছোট ছোট পাপ ও অসৎ, কাজ থেকেও বিরত রাখে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ

অর্থ : “অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলেও তা সে দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও সে দেখবে।” (সূরা আল-যিলযাল, আয়াত ৭-৮)

আল্লাহ তায়ালা পরকালে মানুষের সামান্যতম ভালো বা মন্দ কাজ সবই প্রদর্শন করবেন । অতঃপর এগুলোর পুরস্কার বা শাস্তি দেওয়া হবে। সুতরাং আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে ছোট-বড়, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরনের অন্যায় থেকে বিরত রাখে এবং পাপমুক্ত, সৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে।

আমরা আখিরাতে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করব এবং এ বিশ্বাসের আলোকে ইহকালে আমাদের জীবনকে পাপমুক্ত রাখব, সৎকর্মশীল হব এবং নৈতিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হব।

কাজ : শিক্ষার্থীরা 'সৎকর্মশীল হতে ও নৈতিক জীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাসের ভূমিকা সম্পর্কে ১০টি বাক্য লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।