• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • নবজীবনের সূচনা
নবজীবনের সূচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

নবজীবনের সূচনা

জৈব অভিব্যক্তির উপর বিভিন্ন মতবাদ

জৈব অভিব্যক্তির ফলে নতুন প্রজাতির অথবা একটি প্রজাতি থেকে অন্য একটি প্রজাতির উৎপত্তি হয়। অভিব্যক্তির কৌশল সম্পর্কে যে সকল বিজ্ঞানী বিভিন্ন মতবাদ (theories) প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাঁদের মতবাদগুলো আমরা এখন আলোচনা করব।

ল্যামার্কের তত্ত্ব

ল্যামার্ক (চিত্র ৪.২০) 'বায়োলজি' শব্দটির প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি প্রথম বিবর্তন বা অভিব্যক্তির ওপর বিশ্লেষণী তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এ বিষয়টি তিনি ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর লেখা 'ফিলোসোফিক জুওলজিক' (Philosophic Zoologique) নামে একটি বইতে লিপিবদ্ধ করেন।

ল্যামার্কের তত্ত্বকে ল্যামার্কিজম (Lamarckism) বা ল্যামার্কবাদ বলে। কয়েকটি প্রধান প্রতিপাদ্যের ওপর ভিত্তি করে ল্যামার্কবাদ গঠিত। সেগুলো এখানে আলোচনা করা হলো: 

১. ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্র

ল্যামার্কের মতে, জীবের প্রয়োজনে জীবদেহে কোনো নতুন অঙ্গের উৎপত্তি অথবা কোনো পুরোনো অঙ্গের অবলুপ্তি ঘটতে পারে। তাঁর মতে, যদি কোনো জীবের কোনো অঙ্গ ধারাবাহিকভাবে ক্রমাগত ব্যবহৃত হয়, তবে সেই অঙ্গ পরিবেশের প্রয়োজনীয়তার জন্য ধীরে ধীরে সবল ও সুগঠিত হবে। অন্যদিকে, জীবের কোনো অঙ্গ পরিবেশের জন্য অপ্রয়োজনীয় হলে ঐ অঙ্গের আর ব্যবহার থাকে না। সুতরাং ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে অঙ্গটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গে পরিণত হবে এবং অবশেষে অবলুপ্ত হয়ে যাবে। ল্যামার্কের মতে, অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহার জীবদেহে পরিবর্তন সূচিত করে, যা জীবের বংশপরম্পরায় অর্জিত বৈশিষ্ট্য।

২. পরিবেশের প্রভাব

জীব সদা পরিবর্তনশীল পরিবেশে নিজেকে উপযুক্তভাবে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সব সময় চেষ্টা করে। এটি জীবের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। স্বাভাবিকভাবে পরিবর্তনশীল পরিবেশে নিজেকে অভিযোজিত করতে জীবদেহে নানা রকমের পরিবর্তন দেখা যায়। ল্যামার্কের মতে, পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলে জীবের স্বভাব এবং দৈহিক পরিবর্তন ঘটে। এটাও একটি জীবের অর্জিত বৈশিষ্ট্য।

৩. অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ ও নতুন প্রজাতির উৎপত্তি

ল্যামার্কের মতে, কোনো জীবের জীবনকালে যে সকল বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয়, সেই সমস্ত বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সঞ্চারিত হয় অর্থাৎ অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ ঘটে। ল্যামার্কের তত্ত্ব অনুযায়ী, অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণের জন্য এবং প্রতিটি প্রজন্মে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জিত হওয়ায় ধীরে ধীরে একটি প্রজাতি থেকে অপর একটি নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়। ল্যামার্ক কতগুলো পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই তার মতবাদ রচনা করেছিলেন। তার দেওয়া কয়েকটি দৃষ্টান্তের সাহায্যে মতবাদটির স্বপক্ষে ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

  • ক্রমাগত পানিতে সাঁতার কাটার ফলে জলজ পাখির পায়ের আঙুলের অন্তর্বর্তী স্থানগুলো পাতলা চামড়া দ্বারা সংযুক্ত হওয়ায় লিপ্তপদে পরিণত হয়েছে।
  • সাপের পূর্বপুরুষদের গিরগিটির মতো চারটে পা ছিল, কিন্তু গর্ত ও ফাটলে বাস করার জন্য পায়ের ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে বর্তমানে ঐ বৈশিষ্ট্যটি সম্পূর্ণরূপে লুপ্ত হয়েছে।
  • ল্যামার্কের মতে, জিরাফের সুদীর্ঘ গ্রীবা, খুব উঁচু গাছ থেকে পাতা সংগ্রহের জন্য, অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণের ফলেই ঘটেছে।

আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীরা জৈব অভিব্যক্তিতে ল্যামার্কের মতবাদ গ্রহণ করতে পারেননি। শুধু সময়ের সাথে প্রজাতির পরিবর্তন হয়েছে, সেটি বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন না। বংশগতিবিদ্যার প্রসারের পর বিজ্ঞানীরা জীবের মধ্যে অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুক্রম অনুসন্ধান করেছেন কিন্তু সেটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ বাস্তব অর্জিত বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চালিত হয়, এর সপক্ষে বর্তমান বংশগতিবিদগণ কোনো প্রমাণ পাননি। সহজভাবে বলা যায়, কোনো মানুষ ব্যায়াম করে এবং ক্রমাগত ব্যবহার করে তার একটি হাতকে শক্তিশালী করে তুললে তার সন্তান শক্তিশালী হাত নিয়ে জন্ম নেবে সেটি সত্যি নয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ