- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- নবম-দশম শ্রেণি
- অম্ল, ক্ষারক ও লবণের ব্যবহার
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
অম্ল, ক্ষারক ও লবণের ব্যবহার
প্রাত্যহিক জীবনে এসিডের ব্যবহার ও সাবধানতা
তোমরা কি জানো, বোলতা বা বিচ্ছু হুল ফুটালে প্রচন্ড জ্বালা করে কেন? এর কারণ হলো বোলতা এবং বিচ্ছুর হুলে থাকে হিস্টামিন (Histamine) নামে এক ধরনের ক্ষারক পদার্থ। তাই এসব ক্ষেত্রে জ্বালা নিবারণের জন্য যে মলম ব্যবহার করা হয়, তাতে থাকে ভিনেগার অথবা বেকিং সোডা, যেগুলো এসিড কিংবা এসিডজাতীয়। এগুলো ঐ ক্ষারকের সাথে বিক্রিয়া করে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করে; ফলে জ্বালা আর থাকে না।
আবার আমরা প্রায় সবাই সাধারণত মাংস, পোলাও, বিরিয়ানি এ ধরনের খাবার খাওয়ার পর কোনো ধরনের কোমল পানীয় পান করি। এটা কি আমাদের কোনো কাজে আসে? আসলে খাবার হজম করার জন্য আমাদের পাকস্থলীতে নির্দিষ্ট মাত্রায় হাইড্রোক্লোরিক এসিডের প্রয়োজন হয়। এই মাত্রার হেরফের হলে আমাদের পরিপাকে অসুবিধা হয়। কোমল পানীয়গুলো অল্পমাত্রায় এসিডিক, তাই গুরুপাক খাবার পর কোমল পানীয় আমাদের পরিপাকে সাহায্য করে।
পূর্বের শ্রেণিতে তোমরা জেনেছ যে লেবু, কমলা, আপেল, পেয়ারা, আমলকী ইত্যাদি নানা রকম ফলের মাঝে আছে নানা রকমের জৈব এসিড, যেগুলো আমাদের খুবই প্রয়োজনীয়। আবার কিছু কিছু এসিড আছে, যেগুলো রোগ প্রতিরোধও করে। যেমন ভিটামিন সি বা এসকরবিক এসিড। তোমরা কি জানো, ভিটামিন সি ক্ষত সারাতে খুবই সহায়ক হিসেবে কাজ করে এবং আমাদের শরীরে এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়?
আম, জলপাই ইত্যাদি নানা রকম আচার (চিত্র ৭.০২) সংরক্ষণে কী এসিড ব্যবহার করা হয় সেটি কি তোমরা জানো? এটি হলো ভিনেগার বা এসিটিক এসিড (CH3COOH)। বিয়েবাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার পর বোরহানি বা দই খেলে কোনো লাভ হয় কি? হ্যাঁ, লাভহয়। কোমল পানীয়ের মতো বোরহানি (চিত্র ৭.০৩) বা দই খেলে এতে বিদ্যমান ল্যাকটিক এসিড হজমে সহায়তা করে। তোমরা কি জানো, কেক, বিস্কুট বা পাউরুটি ফোলানো হয় কীভাবে? এটি করা হয় বেকিং সোডা ব্যবহার করে।
তাপ দিলে বেকিং সোডা ভেঙে কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়, যেটি কেক বা পাউরুটিকে ফুলিয়ে তোলে। আমরা টয়লেট পরিষ্কার করার জন্য যেসব পরিষ্কারক ব্যবহার করি, তার মূল উপাদান কী তোমরা জানো? এর মূল উপাদান হলো শক্তিশালী এসিড, যেমন- HCl, HNO3 কিংবা H2SO4।
সৌর প্যানেলে তৈরি সৌরবিদ্যুৎ সংরক্ষণের জন্য, বা বাসাবাড়িতে আইপিএস (IPS) চালানোর জন্য এবং গাড়িতে যে ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, তার অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান হলো সালফিউরিক এসিড।
তোমরা জানো যে, ফসল উৎপাদনের জন্য সার হলো অতি প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। সার হিসেবে আমরা যেগুলো ব্যবহার করি তার অন্যতম উপাদান হলো অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট (NH4NO3), অ্যামোনিয়াম সালফেট ((NH4)2SO4) ও অ্যামোনিয়াম ফসফেট ((NH4) 3PO4)। সার কারখানায় এগুলো তৈরি করা হয় যথাক্রমে নাইট্রিক এসিড (HNO3), সালফিউরিক এসিড (H₂SO₄) এবং ফসফরিক এসিড (H3PO4) দিয়ে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে নানা রকম এসিড। তাই আমাদের জীবনে এসিডের ভূমিকা অপরিসীম ও অনস্বীকার্য। তবে কিছু কিছু এসিড, বিশেষ করে শক্তিশালী এসিডগুলো (যেমন-H2SO4, HNO3, HCI) মানবদেহের জন্য যেমন মারাত্মক ক্ষতিকর, তেমনি আমাদের অনেক প্রয়োজনীয় এবং নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্রের জন্যও অনিষ্টকর আমাদের শরীরে কোথাও এসব এসিড লাগলে সেই স্থান পুড়ে যায় এবং সেখানে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি করে। তোমরা হয়তো এসিড ছুড়লে মানুষের শরীর কীভাবে ঝলসে যায় সেগুলো পত্রিকায় বা টেলিভিশনের খবরে দেখেছ। অন্যদিকে এসিড কাপড়ে লাগলে কাপড়ও পুড়ে যায় কিংবা ছিদ্র হয়ে যায়। একইভাবে ধাতব পদার্থসমূহ এসিডের সংস্পর্শে এলে তাও ক্ষয় হয়ে যায়। অতএব এসিডের ব্যবহারে আমাদের খুবই সাবধান হতে হবে। কোনো কারণে গায়ে এসিড পড়লে সাথে সাথে প্রচুর পানি দিয়ে সেই জায়গাটা ধুয়ে ফেলতে হবে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ