- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- নবম-দশম শ্রেণি
- অম্ল, ক্ষারক ও লবণের ব্যবহার
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
অম্ল, ক্ষারক ও লবণের ব্যবহার
লবণের ব্যবহার
লবণের ব্যবহারের কথা বলা হলে সবার আগে আমাদের খাবারের কথা চলে আসে। আমরা আমাদের খাবারে সব সময় লবণ ব্যবহার করি। লবণ ছাড়া তরকারি রান্না করলে সেটি স্বাদহীন হবে এবং আমরা অনেকেই তা খেতে পারব না। যে লবণ আমাদের খাদ্যের স্বাদ বাড়িয়ে খাওয়ার উপযোগী করে তোলে, তা হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl), যা সাধরণ লবণ বা টেবিল লবণ নামেও পরিচিত। তরকারি ছাড়াও আরও অনেক খাবার, যেমন- পাউরুটি, আচার, চানাচুর ইত্যাদিতে খাবার লবণ ব্যবহার করা হয়। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য আরেকটি লবণ-সোডিয়াম গ্লুটামেট ব্যবহার করা হয়, যেটি 'টেস্টিং সল্ট' নামে পরিচিত।
আমরা কাপড় কাচার যে সাবান ব্যবহার করি তা হলো মূলত সোডিয়াম স্টিয়ারেট (C17H35COONa)। আর শেভিং ফোম বা জেলে থাকে পটাশিয়াম স্টিয়ারেট (C17H35COOK)। কাপড় কাচার সোডা হিসেবে আমরা যে সোডিয়াম কার্বোনেট (Na2CO3) ব্যবহার করি তাও একটি লবণ। আবার আমরা জীবাণুনাশক হিসেবে যে তুঁতে (CuSO4.5H2O) বা ফিটকিরি [K₂SO₄.Al2(SO4)3.24H2O] ব্যবহার করি, সেগুলোও লবণ।
কৃষিতে লবণের ব্যবহার
তোমরা জানো যে মাটির এসিডিটি নিষ্ক্রিয় করার জন্য আমরা যে চুনাপাথর ব্যবহার করি, এই চুনাপাথর একটি লবণ। আবার আমরা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য যে সার ব্যবহার করে থাকি, তাদের বেশির ভাগই হলো লবণ। যেমন- অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট (NH4NO3), অ্যামোনিয়াম ফসফেট ((NH4)3PO4), পটাশিয়াম নাইট্রেট (KNO3) ইত্যাদি।
তুঁতে বা কপার সালফেট (CuSO4) কৃষিজমিতে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রতিরোধে বহুল ব্যবহৃত একটি লবণ। এটি শৈবালের উৎপাদন বন্ধে খুব কার্যকরী।
শিল্পকারখানায় লবণ
শিল্পকারখানায় নানা কাজে খাবার লবণ অপরিহার্য। যেমন- চামড়াশিল্পে চামড়ার ট্যানিং করতে, মাখন ও পনিরের শিল্পোৎপাদনে, কাপড় কাচার সোডা ও খাবার সোডা তৈরি করতে, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের তড়িৎ বিশ্লেষণ ইত্যাদি কাজে খাবার লবণ ব্যবহৃত হয়। বেশ কিছু লবণ যেমন- তুঁতে (CuSO4), মারকিউরিক সালফেট (HgSO4), সিলভার সালফেট (Ag₂SO₄) শিল্পকারখানায় প্রভাবক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
টেক্সটাইল ও রং তৈরির কারখানায় রং ফিক্স করার কাজে লবণ প্রয়োজন হয়। ধাতুর বিশুদ্ধকরণে লবণ লাগে। রাবার প্রস্তুতিতে লবণ ব্যবহার করে রাবারকে (ল্যাটেক্স) রাবার গাছের নির্যাস থেকে আলাদা করা হয়। ওষুধ কারখানায় স্যালাইন এবং অন্যান্য ওষুধেও লবণ ব্যবহৃত হয়। ডিটারজেন্ট তৈরিতেও ফিলার হিসেবে লবণ খুবই প্রয়োজনীয়।
কাজেই দেখা যাচ্ছে যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কৃষিতে, শিল্পকারখানায় লবণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কাজ: ধাতু ও এসিড থেকে লবণ তৈরি (চিত্র ৭.১৩)।
এই পরীক্ষাটি তোমাদের স্কুলের ল্যাবরেটরিতে শিক্ষকের উপস্থিতিতে করা বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজনীয় উপকরণ: একটি ধাতু (যেমন- Mg), পাতলা হাইড্রোক্লোরিক এসিড, একটি বিকার, চামচ, ফানেল, ১টি পাত্র, ত্রিপদী স্ট্যান্ড, স্পিরিট ল্যাম্প বা বার্নার, অ্যাপ্রোন।
পদ্ধতি: অ্যাপ্রোন পরে নাও। বিকারে ৫০ মিলিলিটার পাতলা হাইড্রোক্লোরিক এসিড নাও। এবার ৫-১০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম রিবন (সরু তার) বা তার গুঁড়া চামচ দিয়ে বিকারে যোগ করো। কোনো বুদ্বুদ উঠছে কি? না উঠলে হালকা তাপ দাও। দেখবে বুদ্বুদ উঠতে শুরু করবে। বুদ্বুদ উঠা শেষ হলে আরও কিছু ম্যাগনেসিয়াম যোগ করো। তাপ দেয়ার পরও বুদ্বুদ না উঠলে বুঝতে হবে এসিড পুরোপুরি বিক্রিয়া করে ফেলেছে এবং আর কোনো এসিড বিকারে অবশিষ্ট নেই। এভাবে সমস্ত এসিড বিক্রিয়া না করা পর্যন্ত অল্প অল্প করে ম্যাগনেসিয়াম রিবন (সরু তার) বা গুঁড়া যোগ করতে হবে। এবারে ফানেল ও ফিল্টার কাগজের সাহায্যে অতিরিক্ত ম্যাগনেসিয়াম মিশ্রণ থেকে আলাদা করো। প্রাপ্ত দ্রবণকে ত্রিপদী স্ট্যান্ডের উপর বসিয়ে স্পিরিট ল্যাম্প দিয়ে তাপ দিতে থাক, যতক্ষণ পর্যন্ত না পাত্রের গায়ে লবণের ছোট ছোট দানা দেখা যায়। এবারে তাপ দেওয়া বন্ধ করে পাত্রটিকে ঠান্ডা কর। পাত্রের তলায় বা গায়ে দানাদার বস্তু কী পেয়েছ? এটি হলো ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড লবণ। এখানে ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে MgCl₂ ও H₂ গ্যাস উৎপন্ন করেছে। এই হাইড্রোজেন গ্যাসের কারণেই আমরা বিকার থেকে বুদ্বুদ উঠতে দেখি। MgCl2 পানিতে দ্রবীভূত ছিল, পানি বাষ্পীভূত করে আমরা লবণটি আলাদা করতে পেরেছি।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ