• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • সৌরজগৎ ও ভূমণ্ডল
সৌরজগৎ ও ভূমণ্ডল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

সৌরজগৎ ও ভূমণ্ডল

দিবা রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি এবং ঋতু পরিবর্তনে বার্ষিক গতির ভূমিকা

আমরা লক্ষ করেছি যে, বছরের বিভিন্ন সময়ের দিন ও রাতের সময়ের ব্যবধান হয়। অর্থাৎ কোনো সময় দিন বড়ো থাকে আবার কোনো সময় রাত বড়ো থাকে। আমরা কখনো কি ভেবে দেখেছি কেন এই তারতম্য ঘটে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, বার্ষিক গতির ফলে এই তারতম্য ঘটে।

দিবারাত্রির হ্রাসবৃদ্ধির কারণ

আমরা নিচের চিত্রের দিকে লক্ষ করি। এখানে সূর্যকে পরিক্রমণকালে কক্ষপথে পৃথিবীর চারটি অবস্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যথা: ২১শে জুন, ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২২শে ডিসেম্বর ও ২১শে মার্চ।

২১শে জুন: পৃথিবী সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণকালে ২১শে জুন কক্ষপথের এমন এক অবস্থানে পৌঁছে যেখানে উত্তর মেরু সূর্যের দিকে সর্বাপেক্ষা বেশি কোণে (২৩.৫০) ঝুঁকে থাকে এবং দক্ষিণ মেরু সূর্য থেকে সর্বাপেক্ষা দূরে সরে পড়ে। এ দিন মধ্যাহ্নে ২৩.৫° উত্তর অক্ষাংশে সূর্যকিরণ লম্বভাবে (৯০° কোণে) পড়ে। এই তারিখে উত্তর গোলার্ধের্ব দিন সবচেয়ে বড়ো এবং রাত সবচেয়ে ছোটো হয়। এ সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধে বিপরীত অবস্থা বিরাজ করে। সুমেরুবৃত্ত (৬৬.৫° উত্তর) থেকে উত্তরে উত্তর মেরু পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা দিন ও কুমেরুবৃত্ত (৬৬.৫° দক্ষিণ) থেকে দক্ষিণে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা রাত থাকে। ২১শে জুনের পর সূর্য আর উত্তর গোলার্ধের দিকে সরে না, দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে সরতে থাকে। সূর্যের এই অস্থানকে উত্তর অয়নান্ত বলে।

২৩শে সেপ্টেম্বর: ২১শে জুনের পর উত্তর মেরু সূর্য থেকে দূরে সরতে থাকে এবং দক্ষিণ মেরু নিকটে আসতে থাকে। এতে উত্তর গোলার্ধে ক্রমশ দিন ছোটো ও রাত বড়ো এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দিন বড়ো ও রাত ছোটো হতে থাকে। ২৩শে সেপ্টেম্বর পৃথিবী এমন এক স্থানে অবস্থান করে যখন উভয় মেরু সূর্য থেকে সমান দূরে থাকে। এই দিন সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখায় লম্বভাবে (৯০° কোণে) সুমেরুবৃত্তে ও কুমেরুবৃত্তে ৬৬.৫° কোণে এবং মেরুদ্বয়ে ০° কোণে পতিত হয়। তাই এ তারিখে পৃথিবীর সর্বত্র দিবারাত্রি সমান হয়।

২২শে ডিসেম্বর: ২৩শে সেপ্টেম্বরের পর উত্তর মেরু সূর্য থেকে আরও দূরে সরতে থাকে এবং দক্ষিণ মেরু অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী হয়। ফলে উত্তর গোলার্ধে দিনের সময় কমতে থাকে এবং রাতের সময় বাড়তে থাকে। এভাবে ২২শে ডিসেম্বর পৃথিবী এমন এক অবস্থানে পৌঁছে যখন দক্ষিণ মেরু সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি (২৩.৫০) হেলে থাকে। এই দিন সূর্যকিরণ মকরক্রান্তি রেখায় লম্বভাবে (৯০° কোণে) পতিত হয়। তাই এই তারিখে দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়ো এবং রাত সবচেয়ে ছোটো হয়। ২২শে ডিসেম্বরের পর সূর্য আর দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে সরে না, উত্তর গোলার্ধের দিকে সরতে থাকে। সূর্যের এই অস্থানকে দক্ষিণ অয়নান্ত বলে।

২১শে মার্চ: ২২শে ডিসেম্বরের পর পৃথিবী আপন কক্ষপথে আরও অগ্রসর হলে উত্তর মেরু ক্রমশ সূর্যের নিকট আসে এবং দক্ষিণ মেরু দূরে সরে যায়। এতে উত্তর গোলার্ধে দিন বড়ো ও রাত ছোটো হতে থাকে। অবশেষে ২১শে মার্চ পৃথিবী আপন কক্ষপথের এমন এক স্থানে পৌঁছে যেখানে উভয় মেরু সূর্য থেকে সমান দূরে থাকে। এই দিন ২৩শে সেপ্টেম্বরের মতো দিবা-রাত্রি সমান হয়। পৃথিবীর এ অবস্থানকে বাসন্ত বিষুব বলে। ২১শে মার্চের পর পৃথিবী আপন কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে আবার ২১শে জুনের অবস্থায় ফিরে যায়। এভাবে পৃথিবীর বার্ষিক গতির জন্য দিবারাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে।

ঋতু পরিবর্তন

আমরা পাশের ৩.১০ চিত্রটির দিকে তাকাই। এখানে সূর্যকে পরিক্রমণকালে পৃথিবীর চারটি অবস্থান থেকে যঋতু পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। বার্ষিক গতির জন্য সূর্যরশ্মি কোথাও লম্বভাবে আবার কোথাও তির্যকভাবে পতিত হয় এবং দিবা- রাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে। লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মি কম বায়ুস্তর ভেদ করে আসে বলে ভূপৃষ্ঠকে অধিক উত্তপ্ত করে। তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মি যে কেবল অধিক বায়ুস্তর ভেদ করে আসে তা নয়, এটি লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মি অপেক্ষা অধিক স্থানব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে বছরের বিভিন্ন সময়ে ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র তাপের তারতম্য হয় এবং ঋতু পরিবর্তন ঘটে। পৃথিবীতে সময়ভেদে তাপমাত্রার পার্থক্য বা পরিবর্তনকে ঋতু পরিবর্তন বলে। সূর্যকে পরিক্রমণকালে পৃথিবীর চারটি অবস্থান থেকে ঋতু পরিবর্তনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল: ২১শে জুন সূর্যের উত্তরায়ণের শেষ দিন। এই দিন সূর্যরশ্মি কর্কটক্রান্তির উপর লম্বভাবে পতিত হয়। ফলে ঐ দিন এখানে দীর্ঘতম দিন এবং ক্ষুদ্রতম রাত্রি হয়। ২১শে জুনের দেড় মাস পূর্ব থেকে দেড় মাস পর পর্যন্ত মোট তিন মাস উত্তর গোলার্ধে উত্তাপ বেশি থাকে। এ সময় উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল। এ সময়ে সূর্যের তির্যক কিরণের জন্য দক্ষিণ গোলার্ধে দিন ছোটো ও রাত বড়ো হয়। এজন্য সেখানে তখন শীতকাল।

উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল: ২৩শে সেপ্টেম্বর সূর্যরশি নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে পড়ে এবং সর্বত্র দিবারাত্রি সমান হয়। সেজন্য এ তারিখের দেড় মাস পূর্ব থেকে দেড় মাস পর পর্যন্ত মোট তিন মাস তাপমাত্রা মধ্যম ধরনের হয়ে থাকে। এ সময় উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল।

উত্তর গোলার্ধে শীতকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল: ২২শে ডিসেম্বর সূর্যের দক্ষিণায়নের শেষদিন অর্থাৎ এই দিন সূর্য মকরক্রান্তির উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে সেখানে দিন বড়ো ও রাত ছোটো হয়। এ তারিখের দেড় মাস পূর্বে ও পরে দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল এবং উত্তর গোলার্ধে শীতকাল থাকে।

উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকাল: ২১শে মার্চ তারিখে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু সূর্য থেকে সমান দূরে থাকে। এই দিন সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয় এবং সর্বত্র দিনরাত্রি সমান হয়। ২১শে মার্চের দেড় মাস পূর্ব থেকে দেড় মাস পর পর্যন্ত এই তিন মাস উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকাল থাকে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ