• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি

সৌরজগৎ ও ভূমণ্ডল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

সৌরজগৎ ও ভূমণ্ডল

স্থানীয় সময় ও প্রমাণ সময়

স্থানীয় সময় (Local Time) : প্রতিদিন পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে তার নিজ মেরুরেখার উপর আবর্তিত হচ্ছে। ফলে পূর্ব দিকে অবস্থিত স্থানগুলোতে আগে সূর্যোদয় ঘটে। পৃথিবীর আবর্তনের ফলে কোনো স্থানে যখন সূর্য ঠিক মাথার উপর আসে বা সর্বোচ্চে অবস্থান করে তখন এ স্থানে মধ্যাহ্ন এবং স্থানীয় ঘড়িতে তখন বেলা ১২টা ধরা হয়। এ মধ্যাহ্ন সময় থেকে দিনের অন্যান্য সময় স্থির করা হয়। একে কোনো স্থানের স্থানীয় সময় বলা হয়। সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যেও স্থানীয় সময় নির্ণয় করা যায়। পৃথিবীর কেন্দ্রে কোণের পরিমাণ ৩৬০ ডিগ্রি। এই ৩৬০ ডিগ্রি কৌণিক দূরত্ব আবর্তন করতে পৃথিবীর ২৪ ঘণ্টা বা (28 * 60) = 3, 880 মিনিট সময় লাগে। সুতরাং পৃথিবী ১ ডিগ্রি ঘোরে (3, (880/5)%) = 8 মিনিট সময়ে অর্থাৎ প্রতি ১ ডিগ্রি দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সময়ের পার্থক্য হয় ৪ মিনিট।

প্রমাণ সময় (Standard Time) : দ্রাঘিমারেখার উপর মধ্যাহ্ন সূর্যের অবস্থানের সময়কালকে দুপুর ১২টা ধরে স্থানীয় সময় নির্ধারণ করলে একই দেশের মধ্যে সময় গণনার বিভ্রাট হয়। সেজন্য প্রত্যেক দেশের একটি প্রমাণ সময় নির্ণয় করা হয়। প্রত্যেক দেশেই সেই দেশের মধ্যভাগের কোনো স্থানের দ্রাঘিমারেখা অনুযায়ী যে সময় নির্ণয় করা হয় সে সময়কে ঐ দেশের প্রমাণ সময় বলে। অনেক বড়ো দেশ হলে কয়েকটি প্রমাণ সময় থাকে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের চারটি এবং কানাডাতে পাঁচটি প্রমাণ সময় রয়েছে। গ্রিনিচের (০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা) স্থানীয় সময়কে সমগ্র পৃথিবীর প্রমাণ সময় হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রমাণ সময় গ্রিনিচের সময় অপেক্ষা ৬ ঘণ্টা অগ্রবর্তী। ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমারেখা বাংলাদেশের প্রায় মধ্যভাগে অবস্থিত। এ কারণে এ দ্রাঘিমার স্থানীয় সময়কে বাংলাদেশের প্রমাণ সময় ধরে কাজ করা হয়।

নিচের উদাহরণ দুটি থেকে দ্রাঘিমা ও সময়ের সম্পর্ক বোঝা যাবে।

> ঢাকা ও সিউলের সময়ের ব্যবধান ২ ঘণ্টা ৩২ মিনিট। ঢাকার দ্রাঘিমা ১০° পূর্ব হলে সিউলের দ্রাঘিমা কত (সিউল ঢাকার পূর্বে অবস্থিত)?
সিউল ঢাকার পূর্বে অবস্থিত হওয়ায় এর দ্রাঘিমা বেশি হবে।
ঢাকা ও সিউলের সময়ের ব্যবধান ২ ঘণ্টা ৩২ মিনিট ১৫২ মিনিট।
৪ মিনিট সময়ের ব্যবধানে দ্রাঘিমার ব্যবধান হয় ১০
সুতরাং, ১ মিনিট সময়ের ব্যবধানে দ্রাঘিমার ব্যবধান হয় (১/৪)
সুতরাং, ১৫২ মিনিট সময়ের ব্যবধানে দ্রাঘিমার ব্যবধান হয় (১*১৫২/৪)=৩৮
অতএব, সিউলের দ্রাঘিমা ৯০ + ৩৮ = ১২৮
উত্তর: সিউলের দ্রাঘিমা ১২৮° পূর্ব।
ঢাকা ও চেন্নাইয়ের দ্রাঘিমা যথাক্রমে ৯০° পূর্ব এবং ৮০°১৫′ পূর্ব। ঢাকায় যখন মধ্যাহ্ন চেন্নাইয়ের স্থানীয় সময় তখন কত?
ঢাকা ও চেন্নাইয়ের মধ্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য, ৯০° - ৮০°১৫′ = ৯° ৪৫′
১০ দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সময়ের পার্থক্য হয় ৪ মিনিট।
অতএব, ১০ দ্রাঘিমার জন্য সময়ের পার্থক্য হয় ৯ * ৪′ = ৩৬ মিনিট। ১′ দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সময়ের পার্থক্য হয় ৪ সেকেন্ড সুতরাং ৪৫′ দ্রাঘিমার জন্য সময়ের পার্থক্য হয় ৪৫′ × ৪" = ১৮০ সেকেন্ড = ৩ মিনিট।

সুতরাং, ৯৪৫′ দ্রাঘিমার জন্য মোট সময়ের পার্থক্য হয় ৩৬ মিনিট ৩ মিনিট = ৩৯ মিনিট।
চেন্নাই ঢাকার পশ্চিমে অবস্থিত। চেন্নাইয়ের দ্রাঘিমা কম। সেজন্য চেন্নাইয়ের সময়ও কম। সুতরাং, ঢাকায় যখন মধ্যাহ্ন অর্থাৎ দুপুর ১২টা তখন চেন্নাইয়ের স্থানীয় সময় হবে, ১২টা-৩৯ মিনিট সকাল ১১টা ২১ মিনিট।

উত্তর: চেন্নাইয়ের স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২১ মিনিট।

প্রতিপাদ স্থান (Antipode): ভূপৃষ্ঠের উপর অবস্থিত কোনো বিন্দুর বিপরীত বিন্দুকে সেই বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান বলে। প্রতিপাদ স্থান সম্পূর্ণভাবে একে অন্যের বিপরীত দিকে থাকে। প্রতিপাদ স্থান নির্ণয় করার জন্য ভূপৃষ্ঠের কোনো কিন্দু থেকে পৃথিবীর কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর ঠিক বিপরীত দিকে একটি কল্পিত রেখা টানা হয়। ঐ কল্পিত রেখা যে বিন্দুতে ভূপৃষ্ঠের বিপরীত পাশে এসে পৌঁছায় সেই বিন্দুই পূর্ব বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান চিত্র ৩.৪ ক স্থানের প্রতিপাদ স্থান খ আর চ স্থানের প্রতিপাদ স্থান ছ। কোনো স্থানের অক্ষাংশ জানা থাকলে তার প্রতিপাদ স্থানেরও অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়।

কোনো স্থানের অক্ষাংশ যত ডিগ্রি, এর প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ তত ডিগ্রি হবে। স্থান দুটি একটি নিরক্ষরেখার উত্তরে ও অপরটি দক্ষিণে অবস্থিত হবে। দুটি স্থান দুই গোলার্ধে হবে। একটি স্থানের অক্ষাংশ ৭০ ডিগ্রি উত্তর হলে তার প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ ৭০ ডিগ্রি দক্ষিণ হবে। কোনো স্থানের দ্রাঘিমা এবং এর প্রতিপাদ স্থানের ক দ্রাঘিমা যোগ করলে ১৮০ ডিগ্রি হবে। সুতরাং, ১৮০ ডিগ্রি থেকে এক স্থানের দ্রাঘিমা বাদ দিলে এর প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা পাওয়া যায়।

এক স্থানের দ্রাঘিমা পূর্ব হলে এর প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা পশ্চিমে হবে। যেমন, ৪০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত স্থানের প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা হবে ১৮০-৪০ ডিগ্রি ১৪০ ডিগ্রি পশ্চিম। স্থান দুটির মধ্যে সময়ের পার্থক্য হবে ১২ ঘণ্টা। চিত্রে চ বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান ছ বিন্দু (চিত্র দেখ)। ঢাকার প্রতিপাদ স্থান দক্ষিণ আমেরিকার অন্তর্গত চিলির নিকট প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত।