• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • নাগরিক সমস্যা ও আমাদের করণীয়
নাগরিক সমস্যা ও আমাদের করণীয়

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

নাগরিক সমস্যা ও আমাদের করণীয়

জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের উপায় : সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ

দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে বহুবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপক জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে না পারলে দেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারে।

জনসংখ্যার পুনর্বণ্টন: বাংলাদেশের সর্বত্র জনসংখ্যার অবস্থান একই রকম নয়। কাজেই যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি সেখান থেকে অল্প ঘনত্ব এলাকায় জনসংখ্যা সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে জনসংখ্যা পুনর্বণ্টন করতে হবে। এতে জনগণের কর্মসংস্থান হবে আর জীবনযাত্রার মানও বেড়ে যাবে।

জনশক্তি রপ্তানি: দেশের যুব সমাজকে প্রযুক্তি ও দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও পাশ্চাত্যের উন্নত দেশে প্রেরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রায় আয় বাড়বে ও বেকারত্ব দূর হবে। সরকার এ বিষয়ে ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

কর্মসংস্থান বৃদ্ধি: জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেলে জনগণের আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া মানুষকে কাজ দিতে পারলে এবং অভাব থেকে মুক্ত করতে পারলে তারা নিজেরা আত্মসচেতন হবে এবং দায়দায়িত্ব বুঝতে পারবে।

শিক্ষার প্রসার: শিক্ষা মানুষকে সচেতন করে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সচেষ্ট থাকে। ছোট পরিবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে শিক্ষিত পরিবার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন: কৃষির উন্নয়ন, শিল্পের উন্নয়ন, উন্নত বাজার সৃষ্টি এবং উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করতে হবে। উচ্চ ফলনশীল ফসল আবাদ, একই জমিতে একাধিক ফসল চাষাবাদ করতে হবে। কাঁচামাল তৈরি করে শিল্প গড়ে তুলতে হবে। কুটির শিল্পের তৈরি মালামাল দিয়ে বৃহৎ শিল্প গড়ে তুলতে হবে। কৃষিজাত দ্রব্য ও শিল্পজাত দ্রব্য যাতে ন্যায্যমূল্যে ও সহজে বিক্রি করা যায় তার জন্য বাজার এবং যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। এসব করতে সক্ষম হলে জনসংখ্যা সমস্যা না হয়ে জনসম্পদে পরিণত হবে।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা: উচ্চ জন্মহার রোধ করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 'ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট'-এই শ্লোগানকে কার্যকর করার জন্য সরকারকে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে অধিক হারে মাঠকর্মী নিয়োগ করতে হবে। জন্মনিয়ন্ত্রণের ঔষধপত্র সহজলভ্য করতে হবে এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সেবা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্লিনিক গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে গণসচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।

জনসংখ্যানীতি গ্রহণ : ১৯৭৬ সালের জনসংখ্যানীতিকে আরও সংস্কার করে ২০০৪ সালে সরকার নতুন জনসংখ্যানীতি গ্রহণ করে। এই নীতির আওতায় সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধি করে দেশে প্রজনন হার হ্রাস করা, পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা এবং এ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সেবা সহজলভ্য করা। পাশাপাশি কিশোর-কিশোরীদের সচেতন করার জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে তথ্য, উপদেশ ও সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা; গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে জন্মনিয়ন্ত্রণের সুফল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা; নারী-পুরুষের সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সহায়তা করা। মেয়েদের ১৮ বছর এবং ছেলেদের ২১ বছরের পূর্বে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ না হওয়া। জনসংখ্যানীতির এসব দিক বাস্তবায়ন করতে হবে।

সুবিধাবঞ্চিতদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধকরণ: বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে জনসংখ্যা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সেবাবঞ্চিত এলাকাসমূহে সেবার মান উন্নত করতে হবে এবং গরিব ও দুস্থদেরকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একসাথে কাজ করতে হবে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ