- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- নবম-দশম শ্রেণি
- মূলধনি আয়-ব্যয় প্রাক্কলন
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
মূলধনি আয়-ব্যয় প্রাক্কলন
মূলধন বাজেটিং-এর গুরুত্ব
মূলধন বাজেটিং অর্থায়নের সাফল্যের চাবিকাঠি। মূলধন বাজেটিং বাস্তবসম্মত ও সঠিক হলে ব্যবসায়ের সরাসরি উপকৃত হয়। মূলধন বাজেটিং ব্যর্থ হলে ব্যবসায়টিও সাধারণত ব্যর্থ হয়। ব্যর্থতার দায়িত্ব অর্থ ব্যবস্থাপককে নিতে হয়। মূলধন বাজেটিং এত গুরুত্বপূর্ণ হবার কয়েকটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. মুনাফা-সংক্রান্ত: একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য মুনাফা অর্জন। মুনাফা অর্জনে মূলধন বাজেটিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোম্পানি সাধারণত নগদ প্রবাহ পাবার আশায় তার দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগযোগ্য তহবিল বিভিন্ন সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করে। ফলে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অনেকটা নির্ভর করে মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্তের উপর। মুদির দোকানির ফ্রিজ কেনার ফলে স্বাভাবিকভাবে ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিম বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে ব্যবসায়ের মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দোকানির আশেপাশের লোকজন যদি ঠাণ্ডা পানীয় ও আইসক্রিম খেতে অভ্যস্ত না হয় সেক্ষেত্রে ফ্রিজ কেনার সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো সুবিধা আনবে না। সুতরাং, ভালো বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত যেমন ব্যবসায়টির জন্য পর্যাপ্ত আয় নিশ্চিত করতে পারে, অন্যদিকে ত্রুটিপূর্ণ বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের কারণে ব্যবসায়টি লোকসানের সম্মুখীন হতে পারে। তাই বলা যায়, মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্ত একটি ব্যবসায়ের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
২. বিনিয়োগের বিশাল আকার: স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়, সংযোজন, আধুনিকায়ন এবং প্রতিস্থাপন প্রভৃতি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের জন্য সাধারণত বড় অঙ্কের তহবিল প্রয়োজন হয়। ফলে কোনো কারণে সিদ্ধান্তে ভুল হলে সেটি সংশোধন করার সাধারণত সুযোগ থাকে না এবং সংশোধনের সুযোগ থাকলেও বড় অঙ্কের মাশুল দিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি কোম্পানি ঢাকার অদূরের একটি জায়গায় তাদের কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় এই ভেবে যে সেখানে সময়মতো বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সরবরাহ পাবে। কিন্তু কারখানা স্থাপনের পর দেখা গেল সরকার নতুন বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমতাবস্থায় কোম্পানিটি কারখানায় উৎপাদন আরম্ভ করতে পারবে না। কিন্তু কোম্পানিটিকে হয়তো এ কারণে ব্যাংক থেকে বড় আকারের ঋণ নিতে হয়েছে, যার সুদ ব্যাংকে নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে। ফলে এরকম একটি ভুল সিদ্ধান্ত ব্যবসায়টিকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। অল্প টাকার ব্যাপার হলে অন্য কোথাও থেকে হয়তো, অর্থ সংকুলান করা যেত কিন্তু বড় বিনিয়োগ বলে তেমন সুযোগও নেই। এখন যদি প্রকল্পটি বিক্রয় করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেখানে উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যাবে না। কারণ প্রকল্পটি ইতিমধ্যে অলাভজনক প্রতীয়মান হয়েছে। সুতরাং কোম্পানিটিকে বড় অঙ্কের মাশুল দিতে হবে।
৩. ঝুঁকির ভিত্তিতে: মূলধন বাজেটিং-এর অধিকাংশ অনুমানই ভবিষ্যতের উপর নির্ভরশীল। একটি স্থায়ী সম্পত্তি যেমন: মেশিনটিতে বিনিয়োগ করা উচিত কি না এই সিদ্ধান্তটি নির্ভর করে ওই মেশিনটিতে উৎপাদিত পণ্য ভবিষ্যতে কত টাকা করে এবং কী পরিমাণে বিক্রয় হবে, কত টাকায় পণ্যটি উৎপাদন হবে ইত্যাদির উপর। ভবিষ্যতের এই তথ্য-উপাত্ত অনুমাননির্ভর, যা বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে। সুতরাং, মূলধন বাজেটিং সর্বদাই ঝুঁকিযুক্ত সিদ্ধান্ত। যেমন: বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের আশংকা করে ছাতা প্রস্তুতকারী তার ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ করে ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নতুন মেশিন কিনে অধিক ছাতা উৎপাদন করে। উৎপাদনকারীর প্রাক্কলন অনুযায়ী বর্ষাকালে বৃষ্টি না হলে আশানুরূপ ছাতা বিক্রি হবে না। ফলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে ঝুঁকি নিরূপণ ও ঝুঁকির গ্রহণযোগ্যতা যাচাই প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ