• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • মূলধনি আয়-ব্যয় প্রাক্কলন
মূলধনি আয়-ব্যয় প্রাক্কলন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

মূলধনি আয়-ব্যয় প্রাক্কলন

মূলধন বাজেটিং-এর পদ্ধতিসমূহ

প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং-এর বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলিত আছে। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ এবং সার্বিকভাবে লাভজনক বিনিয়োগ বা প্রকল্প নির্বাচন করাই মূলধন বাজেটিং পদ্ধতিসমূহের কাজ। উদাহরণ: দর্জির দোকানির সেলাই মেশিন, মুদির দোকানির ফ্রিজ এবং চুল কাটার সেলুনে মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ের জন্য লাভজনক হবে কি না, এসব সিদ্ধান্তে মূলধন বাজেটিং পদ্ধতি সঠিক নির্দেশনা দিতে পারে। মূলধন বাজেটিং-এর পদ্ধতিসমূহ নিম্নরূপ:
১. গড় মুনাফার হার পদ্ধতি
Accounting Rate of Return (ARR) Method
২. পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি
Pay Back Period (PBP) Method
৩. নিট বর্তমান মূল্য পদ্ধতি Net Present Value (NPV) Method
৪. অভ্যন্তরীণ মুনাফার হার পদ্ধতি Internal Rate of Return(IRR) Method

১. গড় মুনাফার হার পদ্ধতি

মূলধন বাজেটিং-এর একটি সহজ পদ্ধতি হলো গড় মুনাফার হার পদ্ধতি। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি গড় মুনাফা হার নির্ধারণে ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রত্যাশিত নগদ প্রবাহের পরিবর্তে প্রত্যাশিত নিট মুনাফাকে বিবেচনা করা হয়। তোমরা জেনেছ যে, বিক্রয় থেকে করসহ সব খরচ বাদ দিলে নিট মুনাফা পাওয়া যায়। প্রত্যাশিত বার্ষিক গড় নিট মুনাফাকে গড় বিনিয়োগ দিয়ে ভাগ করলে গড় মুনাফার হার পাওয়া যায়। অর্থাৎ,
গড় মুনাফার হার = গড় নিট মুনাফা গড় বিনিয়োগ X ১০০

এ পদ্ধতিতে প্রকল্পের প্রত্যাশিত নিট মুনাফার সমষ্টিকে মোট বছরের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে গড় মুনাফা এবং নিট বিনিয়োগকে ২ দিয়ে ভাগ করলে গড় বিনিয়োগ পাওয়া যাবে।

সিদ্ধান্ত নীতি

গড় মুনাফার হার যত বেশি হয় তত ভালো। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যদি প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়, তবে ব্যাংকের একটি চাহিদা থাকে। গড় মুনাফার হার ব্যাংক সুদ অপেক্ষা কম হলে ঋণ পাওয়া যায় না। এমতাবস্থায় প্রকল্পটির গড় মুনাফা হার অধিকতর হলে গ্রহণযোগ্য। কোনো কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রে গড় মুনাফার একটি সর্বনিম্ন হার পূর্বনির্ধারিত থাকে। নির্দিষ্ট কোনো বিনিয়োগ বা প্রকল্পের জন্য নির্ণীত গড় মুনাফার হার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন হার থেকে কম হলে বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্পটি বাতিল বা বর্জন করা হয়। পক্ষান্তরে গড় মুনাফার হার যদি কাঙ্ক্ষিত হার থেকে বেশি হয়, তবে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।

একাধিক প্রকল্পের ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত নীতি অনুসারে গ্রহণযোগ্য বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্পগুলোকে ক্রমানুসারে সাজানো হয় এবং প্রতিষ্ঠানের মূলধনের পর্যাপ্ততা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্প নির্বাচন করা হয়।

গড় মুনাফা হার পরিমাপ করার সূত্রে তেমন জটিলতা না থাকার কারণে এটি বোঝা সহজ। আবার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পাওয়া যায় বলে এটি অনেকের কাছে জনপ্রিয়। তবে পদ্ধতিটির কিছু অসুবিধা রয়েছে। প্রথমত, গড় মুনাফার হার পদ্ধতি নগদ প্রবাহের পরিবর্তে নিট মুনাফা ব্যবহার করে, নিট মুনাফার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে বলে অনেকে পদ্ধতিটিকে নির্ভরযোগ্য মনে করে না। দ্বিতীয়ত, পদ্ধতিটি অর্থের সময় মূল্যকে বিবেচনা করে না। যেকোনো বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্পের নগদ প্রবাহ ভবিষ্যৎ বছরগুলো থেকে আসে। যেহেতু আজকের ১ টাকা ভবিষ্যতের ১ টাকার সমান নয়, ভবিষ্যতে আগত নগদ প্রবাহের মূল্য সমান হয় না।

কিন্তু গড় মুনাফার হার পদ্ধতি সব নগদ প্রবাহ সমমূল্যের বিবেচনা করে, এটি পদ্ধতিটির সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা। এখন আমরা উদাহরণের মাধ্যমে গড় মুনাফার প্রয়োগ সম্পর্কে পরিচিত হব।

উদাহরণ: মনে করো, তোমার বাবা ক এবং খ নামে দুটি বিনিয়োগ প্রকল্পে বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা করছেন। প্রকল্প দুটির বিস্তারিত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো।

প্রকল্প-ক: প্রকল্পের মেয়াদকাল ৩ বছর এবং প্রাথমিক মূলধন হিসেবে ১ কোটি টাকা দরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলে আগামী ৩ বছর প্রাক্কলিত বিক্রয় যথাক্রমে ৮ লক্ষ টাকা, ১৯৯ লক্ষ টাকা ও ৮০ লক্ষ টাকা এবং চলতি খরচ বিক্রয়ের ৪০ শতাংশ অনুমান করা হয়। অতএব, ৪০ শতাংশ হারে আগামী তিন বছর চলতি খরচ যথাক্রমে ৩.২০ লক্ষ, ৭৯.৬০ লক্ষ টাকা এবং ৩২ লক্ষ টাকা হয়। এর মধ্যে কাঁচামালের খরচ, শ্রমিকের মজুরি, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি আছে। এর পরে আসছে স্থায়ী খরচ। স্থায়ী খরচ উৎপাদন বা বিক্রয়ের পরিবর্তনে পরিবর্তিত হবে না যেমন, বিল্ডিং ভাড়া। চলতি খরচের পাশাপাশি আগামী তিন বছরে প্রতিবছর ৫ লক্ষ টাকা করে স্থায়ী খরচ অনুমান করা হয়।

এর পরে আসছে অবচয় ব্যয়। প্রত্যেক প্রকল্পে মেশিনপত্র বাবদ কিছু বিনিয়োগ করতে হয়। এই প্রকল্পে যে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ দেখান হয়েছে, সেটা মেশিনপত্র বাবদ ব্যয়। এটা থেকেই অবচয় বের করতে হয়। বিনিয়োগের পরিমাণকে বিনিয়োগের আয়ুষ্কাল দিয়ে ভাগ করলে অবচয় পাওয়া যাবে। যেহেতু প্রকল্পটি থেকে বিক্রয় পাওয়া যাবে মাত্র ৩ বছর। সুতরাং প্রকল্পটির আয়ুষ্কাল মাত্র ৩ বছর। ১ কোটি টাকা বিনিয়োগকে ৩ দিয়ে ভাগ করে প্রতিবছরের অবচয় দেখানো হয়েছে ৩৩.৩৩ লক্ষ টাকা।

বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে স্থায়ী ও চলতি ব্যয় এবং অবচয় বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় বের করা যায়। ধরা যাক, করের হার ৩০ শতাংশ। প্রথম বছর লাভের বদলে ক্ষতি হচ্ছে ৩৩.৫৩ লক্ষ টাকা। প্রকল্পটিতে ২য় ও ৩য় বছরে লাভ হবে যথাক্রমে প্রায় ৮১.০৭ ও ৯.৬৭ লক্ষ টাকা। এখানে লক্ষণীয় যে লাভ হলে যেমন ৩০ শতাংশ হারে কর বাদ দেওয়া হয় ১ম বছরের ক্ষতির উপরেও কর হিসাব করে ক্ষতি কমানো হবে।

যদি আমরা ধরে নিই যে, প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য প্রকল্প থেকে করযোগ্য আয় হয় এবং এই প্রকল্পে যদি ক্ষতি হয়, তবে প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট প্রদেয় কর একই হারে কমে যায়। এভাবে হিসাব করে ক-প্রকল্প থেকে তিন বছরে যে নিট মুনাফা প্রত্যাশা করা হচ্ছে তা যথাক্রমে ১ম বছরে নিট ক্ষতি ২৩.৪৭ লক্ষ টাকা, ২য় বছরে নিট লাভ ৫৬.৭৫ লক্ষ টাকা ও ৩য় বছরে নিট লাভ ৬.৭৭ লক্ষ টাকা হবে। উল্লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে 'ক' প্রকল্পের গড় মুনাফার হার নিম্নরূপে নির্ধারণ করা যায়।
প্রকল্প-ক
বিবরণ
পরিমাণ (লক্ষ টাকায়)
বছর ১
বছর ২
বছর ৩
বিক্রয়
৮.০০
১৯৯.০০
৮০.০০
চলতি ব্যয় (বিক্রয়ের ৪০%)
(৩.২০)
(৭৯.৬০)
(৩২.০০)
স্থায়ী খরচ
(৫.০০)
(৫.০০)
(৫.০০)
অবচয়
(৩৩.৩৩)
(৩৩.৩৩)
(৩৩.৩৩)
করযোগ্য মুনাফা/ক্ষতি
(৩৩.৫৩)
৮১.০৭
৯.৬৭
কর (৩০%)
(১০.০৬)
(২৪.৩২)
(২.৯০)
নিট মুনাফা বা ক্ষতি
(২৩.৪৭) ৫৬.৭৫
৬.৭৭
-২৩.৪৭+৫৬,৭৫+৬.৭৭এখানে, গড় মুনাফা = লক্ষ টাকা = ১৩.৩৫ লক্ষ টাকা ৩
গড় বিনিয়োগ
১০০+০
লক্ষ টাকা = ৫০ লক্ষ টাকা

গড় মুনাফার হার ১০০ = ২৬.৭০% ১৩.৩৫, ৫০

প্রকল্প-খ: প্রকল্প 'ক' এর ন্যায় প্রকল্প 'খ' এর আয়ুষ্কাল ৩ বছর এবং প্রাথমিক বিনিয়োগ ১ কোটি টাকা অনুমান করা হয়। আগামী তিন বছরে প্রকল্পটি থেকে যথাক্রমে ১৫১ লক্ষ টাকা, ১১০ লক্ষ টাকা এবং ৪৯ লক্ষ টাকা বিক্রয় পূর্বানুমান করা হয়। চলতি খরচ বিক্রয়ের ৩০ শতাংশ হারে প্রাক্কলন করা হয়। চলতি খরচের পাশাপাশি স্থায়ী খরচ বাবদ প্রতিবছর ২০ লক্ষ টাকা এবং অবচয় বাবদ প্রতিবছর ৩৩.৩৩ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্প ক-এর ন্যায় প্রকল্প খ-এর কর হার ৩০% পূর্বানুমান করা হয়। উল্লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে 'খ' প্রকল্পের গড় মুনাফা হার নিম্নরূপে নির্ধারণ করা যায়: 

বিবরণ
বছর ১ (লক্ষ টাকা)
বছর ২ (লক্ষ টাকা)
বছর ৩ (লক্ষ টাকা)
বিক্রয়
১৫১.০০
১১০,০০
৪৯.০০
চলতি খরচ (৩০%)
(৪৫.৩০)
(৩৩.০০)
(১৪.৭০)
স্থায়ী খরচ
(২০.০০)
(২০.০০)
(২০.০০)
অবচয়
(৩৩.৩৩)
(৩৩.৩৩)
(৩৩.৩৩)
করযোগ্য মুনাফা বা ক্ষতি
৫২.৩৭
২৩.৬৭
(১৯.০৩)
কর (৩০%)
(১৫.৭১)
(৭.১০)
(৫.৭১)
নিট মুনাফা
৩৬.৬৬
১৬.৫৭
(১৩.৩২)
এখানে,
৩৬.৬৬+১৬.৫৭-১৩.৩২ গড় মুনাফা = লক্ষ টাকা = ১৩.৩০ লক্ষ টাকা ৩ ১০০+০ গড় বিনিয়োগ = লক্ষ টাকা = ৫০ লক্ষ টাকা ২

বি. দ্র: অবচয়ের পদ্ধতির কারণে মেয়াদ শেষে প্রকল্পের মূল্য শূন্য (০) হয়। সুতরাং, গড় মুনাফার হার ১৩.৩০ x ১০০ = ২৬.৬০% ৫০ লক্ষণীয় যে, দুটি প্রকল্পের গড় মুনাফার হার সমান নয়। এখানে 'ক' প্রকল্পের গড় মুনাফার হার ২৬.৭০% এবং 'খ' প্রকল্পের গড় মুনাফা ২৬.৬০%। তাহলে 'ক' প্রকল্পের গড় মুনাফার হার বেশি হওয়ায় তোমার বাবা 'ক' প্রকল্পে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

কাজ: ৫ বছর মেয়াদি ১টি প্রকল্পের প্রাথমিক বিনিয়োগ ৩ কোটি টাকা। প্রাক্কলিত বিক্রয় যথাক্রমে ৬০ লক্ষ টাকা, ২ কোটি টাকা, ১.৮ কোটি টাকা, ২.৪ কোটি টাকা ও ১.৬ কোটি টাকা। স্থির খরচ বার্ষিক ১৫ লক্ষ টাকা, পরিবর্তনশীল খরচ বিক্রয়ের ৩৫% এবং কর হার ৩০%। প্রকল্পটির গড় মুনাফার হার নির্ণয় করো।

পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি

ব্যবসায় বা প্রকল্পে বিনিয়াগকৃত টাকা কত দিনে ফেরত আসবে তা পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি নির্দেশ করে। পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত বা প্রকল্প মূল্যায়নের একটি সহজ ও জনপ্রিয় পদ্ধতি। ব্যবসায় বা প্রকল্প থেকে আগত প্রতি বছরের নগদ প্রবাহগুলো যদি সমান হয়, তবে বিনিয়োগকৃত টাকাকে বার্ষিক নগদ প্রবাহ দিয়ে ভাগ করলে পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করা যায়। অর্থাৎ,
পে-ব্যাক সময় = বিনিয়োগ বার্ষিক নগদ প্রবাহ
মনে করি, দর্জির দোকানির মেশিন কিনতে ১৫,০০০ টাকা প্রয়োজন। ক্রয়কৃত মেশিন ব্যবহার করে সে তার ব্যবসায় থেকে আগামী ৪ বছর বার্ষিক ৫০০০ টাকা নগদপ্রবাহ নিশ্চিত করতে পারবে। এক্ষেত্রে পে-ব্যাক সময় হবে:
পে-ব্যাক সময় = ১৫,০০০ ৫,০০০ = ৩ বছর
ব্যবসায় বা প্রকল্প থেকে আগত নগদপ্রবাহ অনেক সময় সমান নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ ব্যবহার করে পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করা হয়। অর্থাৎ, নগদ প্রবাহগুলোকে ক্রমান্বয়ে যোগ করা হয়। তারপর নিম্নের উদাহরণে ব্যবহৃত ফর্মুলা অনুযায়ী পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করা হয়।
গড় মুনাফার হার পদ্ধতিতে ব্যবহৃত উদাহরণে 'ক' প্রকল্পের ৩ বছরের নিট মুনাফা যথাক্রমে (২৩.৪৭) লক্ষ টাকা, ৫৬.৭৫ লক্ষ টাকা এবং ৬.৭৭ লক্ষ টাকা। পে-ব্যাক সময় এবং মূলধন বাজেটিং-এর অন্যান্য পদ্ধতিতে মুনাফার পরিবর্তে নগদ প্রবাহ ব্যবহার করা হয়। সাধারণত নিট মুনাফার সাথে অবচয় যোগ করলে নগদ প্রবাহ পাওয়া যায়। অতএব, পূর্বের উদাহরণে বর্ণিত প্রকল্প 'ক'-এর নির্ণীত নিট মুনাফার সাথে অবচয় যোগ করে নিম্নরূপে নগদ প্রবাহ নির্ণয় করা যায়।
বিবরণ
বছর ১ (লক্ষ টাকায়)
বছর ২ (লক্ষ টাকায়)
বছর ৩ (লক্ষ টাকায়)
নিট মুনাফা যোগ: অবচয়
(২৩.৪৭)
৫৬.৭৫
৬.৭৭
নগদ প্রবাহ (প্রায়)
১০
৯০
৪০
বি.দ্র: নগদ প্রবাহ নির্ণয়ে দশমিক পরিহার করা হয়েছে।
উপরের সারণিতে নির্ণীত নগদ প্রবাহ ব্যবহার করে প্রকল্পটির পে-ব্যাক সময় হবে নিম্নরূপ।
বছর
বার্ষিক নগদ প্রবাহ (লক্ষ টাকায়)
ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ (লক্ষ টাকায়)
-১০০
- ১০০

১০
-৯০

৯০

80
উপরের ছক থেকে লক্ষণীয় যে প্রথম দুই বছরে বিনিয়োগকৃত টাকা পুরোটা ফেরত আসে। ফলে প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় হবে ২ বছর।
আবার গড় মুনাফার হার পদ্ধতিতে প্রকল্প 'খ'-এর নির্ণীত নিট মুনাফার সাথে অবচয় যোগ করলে প্রকল্প 'খ'-এর নগদ প্রবাহ পাওয়া যাবে।

বিবরণ
বছর ১ (লক্ষ টাকায়)
বছর ২ (লক্ষ টাকায়)
বছর ৩ (লক্ষ টাকায়)
নিট মুনাফা
৩৬.৬৬
১৬.৫৭
(১৩.৩২)
যোগ অবচয়
নগদ প্রবাহ (প্রায়)
৭০
৫০
২০
বি.দ্র: নগদ প্রবাহ নির্ণয়ে দশমিক পরিহার করা হয়েছে।
সারণিতে নির্ণীত নগদ প্রবাহ ব্যবহার করে প্রকল্প 'খ'-এর পে-ব্যাক সময় নিম্নরূপে নির্ণয় করা যায়।
বছর
বার্ষিক নগদ প্রবাহ (লক্ষ টাকায়)
ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ (লক্ষ টাকায়)
-১০০
-১০০

৭০
-৩০

৫০
২০

২০
80
উপরে ছক থেকে লক্ষণীয় যে, প্রথম বছরে বিনিয়োগকৃত টাকার ৭০ লক্ষ টাকা ফেরত আসে। দ্বিতীয় বছরের নগদ প্রবাহ হয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা কিন্তু প্রারম্ভিক বিনিয়োগ ফেরত পেতে মাত্র ৩০ লক্ষ টাকা দরকার। ৩০ = ০.৬ বছর। অতএব, পে-ব্যাক সময় ১.৬ অতএব ৩০ লক্ষ টাকা ফেরত আসতে সময় দরকার ৫০
বছর। নিচে সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় করা হলো:
= ১ বছর + ৩০ বছর পে-ব্যাক সময় ৫০ = (১ + ০.৬) বছর = ১.৬ বছর

সিদ্ধান্ত নীতি

পে-ব্যাক সময় পদ্ধতিতে, যে প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় যত কম, সে প্রকল্পটি তত গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। অনুরূপভাবে যে প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় যত বেশি, সে প্রকল্পটি তত বেশি অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। আবার যদি প্রতিষ্ঠানের হাতে এক বা একাধিক বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্প থাকে তাহলে বিনিয়োগ সুযোগগুলোকে বা প্রকল্পগুলোকে পে-ব্যাক সময় অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে সাজানো হয়। পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠানের তহবিলের পর্যাপ্ততা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্প গ্রহণ করা হয় এবং অবশিষ্টগুলোকে বাতিল করা হয়।

প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহৃত পে-ব্যাক সময় নির্ধারণ করে থাকে। কোম্পানির কর্মকর্তারা বিভিন্ন বিষয় যেমন: বিনিয়োগের ধরন (স্থায়ী সম্পত্তির ক্রয়, ব্যবসার সম্প্রসারণ, উৎপাদন পদ্ধতির প্রতিস্থাপন বা আধুনিকায়ন), বিনিয়োগ বা প্রকল্প ঝুঁকি এবং অন্যান্য বিষয় চিন্তাভাবনা করে এটি নির্ধারণ করেন।

পে-ব্যাক সময় পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা

পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি মূলধন বাজেটিং-এর সবচেয়ে সরল ও জনপ্রিয় পদ্ধতি। এর জনপ্রিয়তার কারণ প্রথমত: এই পদ্ধতি সহজবোধ্য ও সহজ। তবে এর কিছু অসুবিধাও আছে। এখানে কিছু অসুবিধা তুলে ধরা হলো।

১. পে-ব্যাক সময় মূলত কোনো লাভের হার নয়। এটা একটি সময়কাল, যখন বিনিয়োজিত মূলধন ফেরত আসবে বলে আশা করা হয়। পে-ব্যাক সময়কাল অতিবাহিত হলে প্রতিষ্ঠানটির কোনো লাভ হবে না প্রতিষ্ঠানটি কেবল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।

২. যদি দুই বা ততোধিক প্রকল্প থাকে, তবে যার পে-ব্যাক কাল কম; তা গ্রহণ করা হয় যদি একটি প্রকল্প থাকে তাহলে এটি গ্রহণযোগ্য কি না তা এই পদ্ধতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।

৩. পে-ব্যাক কালের বাইরের নগদ প্রবাহ গণনা করা হয় না। উপরের প্রকল্প ক-তে পে-ব্যাক ছিল ২ বছর। এমতাবস্থায় ৩য় বছরে যদি প্রকল্পটি একটি বিশাল অঙ্কের নগদ প্রবাহ দেয়, তবুও পে-ব্যাক কাল ২ বছরই থাকবে।

৪. পে-ব্যাক অর্থের সময়মূল্য বিবেচনা করে না। অর্থের সময়মূল্য অধ্যায়ে আমরা জেনেছি, আগামী বছরের ১০০ টাকা ৫ বছর পরের ১০০ টাকা থেকে অধিকতর মূল্যবান, কিন্তু পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি অর্থের সময়মূল্য বিবেচনা করে না। এখানে আগামী বছরের ১০০ টাকা এবং ৫ বছর পরের ১০০ টাকা সমান মূল্যবান মনে করা হয়। এটি একটি সমস্যা।

কাজ-১: মনে করো, তোমার বাবা একটি প্রকল্পে ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগের চিন্তা করছেন, যা থেকে আগামী ৬ বছর যথাক্রমে ১০,০০০ টাকা, ১৫,০০০ টাকা ২০,০০০ টাকা, ১০,০০০ টাকা, ২০,০০০ এবং ৩০,০০০ টাকা পাওয়া যাবে। প্রকল্পটির পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করো।

এ অধ্যায়ে তোমরা গড় মুনাফার হার পদ্ধতি এবং পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছ। তবে মূলধন বাজেটিং পদ্ধতিগুলোর মধ্যে উল্লিখিত দুটি পদ্ধতির তুলনায় নিট বর্তমান মূল্য পদ্ধতি ও অভ্যন্তরীণ মুনাফার হার পদ্ধতি বহুল প্রচলিত হিসাবে স্বীকৃত। বিশেষ করে অর্থের সময় মূল্য বিবেচনা করে বিধায় পদ্ধতি দুটি অনেকের কাছে জনপ্রিয়। পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে তোমরা পদ্ধতি দুটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে।

পরবর্তী

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ