- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নিরাপদ ও নৈতিক ব্যবহার
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নিরাপদ ও নৈতিক ব্যবহার
সাইবার অপরাধ
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ বাংলাদেশের মাটিতে একটি অত্যন্ত দুঃখের ঘটনা ঘটেছিল। সে রাতে চট্টগ্রামের রামুতে বৌদ্ধবিহার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালের এপ্রিলের ১৫ তারিখ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন শহরে একটি ম্যারাথন দৌড়ের শেষে উপস্থিত দর্শকদের মাঝে একটা বোমা বিস্ফোরণ হয়ে ৩ জন মানুষ মারা গিয়েছিল, আহত হয়েছিল দুই শতাধিক।
২০১১ সালের জুন মাসের ৯ তারিখ নিউইয়র্ক টাইমসের একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছে, সিটি ব্যাংকের লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ড নম্বর এবং তার গোপন তথ্য প্রকাশিত হয়ে গেছে। যে কারণে অসংখ্য মানুষের টাকা-পয়সার নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চুরি সংঘটিত হয়েছিল যা বাংলাদেশ ব্যাংক সাইবার হাইস্ট (cyber heist) নামে পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব নিউইয়র্কের একটি একাউন্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ডলার জমা ছিল। হ্যাকারদের দ্বারা SWIFT (Society for Worldwide Interbank Financial Telecommunication) নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব নিউইয়র্কের ঐ অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে স্থানান্তর করার জন্য পঁয়ত্রিশটি প্রতারণামূলক নির্দেশ প্রেরণ করা হয়েছিল। পঁয়ত্রিশটি প্রতারণামূলক নির্দেশের মধ্যে পাঁচটি নিেের্দশে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থানান্তর করতে সফল হয়েছে। এর মধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কায় এবং ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনে স্থানান্তর করা হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ নিউইয়র্ক একটি ভুল বানানযুক্ত নির্দেশ পাওয়ার কারণে তাদের সন্দেহ হয় এবং তারা অবশিষ্ট ত্রিশটি লেনদেন ব্লক করেছে, যার পরিমাণ ৮৫০ মিলিয়ন ডলার। যাইহোক, শ্রীলঙ্কায় স্থানান্তরিত সমস্ত অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ফিলিপাইনে স্থানান্তরিত ৮১ মিলিয়নের মধ্যে মাত্র ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। ফিলিপাইনে স্থানান্তরিত বেশিরভাগ অর্থ চারটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে গেছে, যা Rizal Commercial Banking Corporation (RCBC) এর একক ব্যক্তির দ্বারা রাখা হয়েছে, কোনো কোম্পানি বা কর্পোরেশনে নয়। উল্লেখ্য এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে ডেনিয়েল গর্ডনের (Daniel Gordon) এর পরিচালনায় ২০২৩ সালে হলিউডে Billion Dollar Heist নামে একটি মুভিও তৈরি হয়েছে।
উপরের ঘটনাগুলোতে একটির সাথে আরেকটির মিল নেই মনে হলেও আসলে প্রত্যেকটার পেছনে কাজ করেছে সাইবার অপরাধ। রামুর বৌদ্ধবিহার ধ্বংস করার জন্য মানুষের মাঝে ধর্মবিদ্বেষী মনোভাব তৈরি করার উদ্দেশ্যে একটি আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটের সাহায্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। বস্টনের বোমা হামলার জন্য ঘরে বসে বোমাটি কীভাবে তৈরি করা যায়, সেটি হামলাকারী ইন্টারনেট থেকে শিখে নিয়েছে। ক্রেডিট কার্ড নম্বর বের করার জন্য দুর্বৃত্তরা কোনো একটি ব্যাংকের তথ্যভান্ডারকে হ্যাক করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের কারণে আমাদের জীবনে অসংখ্য নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক সেরকম সাইবার অপরাধ নামে সম্পূর্ণ নতুন এক ধরনের অপরাধের জন্ম হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে এই অপরাধগুলো করা হয় এবং অপরাধীরা সাইবার অপরাধ করার জন্য নিত্য নতুন পথ আবিষ্কার করে যাচ্ছে। প্রচলিত কিছু সাইবার অপরাধ হলো:
স্প্যাম: তোমরা যারা ইমেইল ব্যবহার কর তারা সবাই কম বেশি এই অপরাধটি দিয়ে আক্রান্ত হয়েছে। স্প্যাম হচ্ছে যন্ত্র দিয়ে তৈরি করা অপ্রয়োজনীয়, উদ্দেশ্যমূলক কিংবা আপত্তিকর ইমেইল, যেগুলো প্রতি মুহূর্তে তোমার কাছে পাঠানো হচ্ছে। স্প্যামের আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা নিতে গিয়ে সবার অনেক সময় এবং সম্পদের অপচয় হয়।
প্রতারণা: সাইবার অপরাধের একটা বড়ো অংশ হচ্ছে প্রতারণা। ভুল পরিচয় এবং ভুল তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে নানাভাবে যোগাযোগ করা হয় এবং তাদেরকে নানাভাবে প্রতারিত করার চেষ্টা করা হয়। যেমন- ইমেইল বার্তায় লটারিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রাপ্তির ঘোষণা।
আপত্তিকর তথ্য প্রকাশ: অনেক সময়েই ইন্টারনেটে কোনো মানুষ সম্পর্কে ভুল কিংবা আপত্তিকর তথ্য প্রকাশ করে দেওয়া হয়। সেটা শত্রুতামূলকভাবে হতে পারে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হতে পারে কিংবা অন্য যেকোনো অসৎ উদ্দেশ্যে হতে পারে। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে সেটি করার চেষ্টা করা হলে অভিযোগ করে সেটি বন্ধ করে দেওয়া যায়। কিন্তু অনেক সময় অজ্ঞাত পরিচয় দিয়ে গোপনে সেটি করা হয় এবং সেটি বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আপত্তিকর তথ্য প্রকাশ করে বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করায় বাংলাদেশে কয়েকবার ইন্টারনেটে ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় সেবা বন্ধ রাখতে হয়েছিল।
হুমকি প্রদর্শন: ইন্টারনেট, ই-মেইল বা কোনো একটি সামাজিক যোগাযোগের সাইট ব্যবহার করে কখনো কখনো কেউ কোনো একজনকে নানাভাবে হয়রানি করতে পারে। ইন্টারনেটে যেহেতু একজন মানুষকে সরাসরি অন্য মানুষের মুখোমুখি হতে হয় না, তাই কেউ চাইলে খুব সহজেই আরেকজনকে হুমকি প্রদর্শন করতে পারে।
সাইবার যুদ্ধ: ব্যক্তিগত পর্যায়ে একজনের সাথে আরেকজনের সংঘাত অনেক সময় আরও বড়ো আকার নিতে পারে। একটি দল বা গোষ্ঠী এমনকি একটি দেশ নানা কারণে সংঘবদ্ধ হয়ে অন্য একটি দল, গোষ্ঠী বা দেশের বিরুদ্ধে এক ধরনের সাইবার যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। ভিন্ন আদর্শ বা ভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে এবং সেখানে অনেক সময়ই সাইবার জগতের রীতিনীতি বা আইনকানুন ভঙ্গ করা হয়।
সাইবার অপরাধ একটি নতুন ধরনের অপরাধ এবং এই অপরাধকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সবাই এখনো ভালো করে জানে না। কোন্ ধরনের অপরাধ হলে কোন্ ধরনের শাস্তি দিতে হবে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে মাত্র কিছুদিন হলো সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু হয়েছে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

