• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি
  • বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ও উন্নয়ন

বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের জীবন আচরণ বা সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। একে বলা হয় সাংস্কৃতিক পরিবর্তন। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে পাশ্চাত্য ও ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এছাড়া লোকসংস্কৃতির প্রভাবও একেবারে কম নয়; যেমন: পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা, প্রযুক্তি, সংগীত, কলা, দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ, ফ্যাশন ইত্যাদিতে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক পরিবর্তন এসেছে। যাকে আমাদের সংস্কৃতি থেকে পৃথক করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনে তো বটেই শহরের জীবনেও ইদানীং বিভিন্ন লোক উৎসব, বর্ষবরণ, মেলা ইত্যাদির আধিক্য ও বিভিন্ন লোক সামগ্রীর সম্ভার দেখে এই পরিবর্তন স্পষ্টই চোখে পড়ে। বিশ্বায়নের প্রভাবেও বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতিতে পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। আগে যেমন যাত্রা, পালাগান, সার্কাস, জারিসারির মাধ্যমে মানুষ বিনোদনের চাহিদা পূরণ করত, বর্তমানে ঘরে বসে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সে চাহিদা পূরণ করছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে।

বস্তুগত ও অবস্তুগত উভয় সংস্কৃতিতে আমাদের দেশে পরিবর্তন ঘটেছে। তবে এক্ষেত্রে বস্তুগত সংস্কৃতি এগিয়ে আছে। যত দ্রুত আমরা ফ্রিজ, টেলিভিশন গ্রহণ করি ততো দ্রুত অন্য দেশের ধ্যান- ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি ও বিলাস সামগ্রী গ্রহণ করতে পারি না। বাংলাদেশে পারিবারিক ব্যবস্থায় বা পারিবারিক সম্পর্কে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে, পূর্বের যৌথ পরিবার ভেঙে এখন একক পরিবার গ্রাম শহর উভয় স্থানে গড়ে উঠেছে। যা তাদের আচার-আচরণে ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে প্রকাশ পাচ্ছে।

অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের ফলে পরিবারে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর সমঅধিকার ও নারী স্বাধীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা নারী-পুরুষের চিরায়ত সম্পর্কে পরিবর্তন এনেছে। এখন নারী-পুরুষ একত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। যা শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে ঠিকই কিন্তু গৃহস্থলী কাজের চাপ কমায়নি যা পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে আসা অবস্তুগত সংস্কৃতির অংশ। ফলে গৃহস্থলী কাজের চাপ সামলাতে গৃহশ্রমিকের শ্রম শোষণ চলছে।

প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আমাদের সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এই পরিবর্তন মানুষের জীবন যাপন, পেশা, বিনোদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ডিজিটাল নির্ভরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। যা পুরানো নিয়ম ভেঙে নতুন আন্তঃসম্পর্কের জাল তৈরি করছে।

বিভিন্ন সাংস্কৃ​তিক উন্নয়ন

সংস্কৃতির বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদানের ইতিবাচক বা ঊর্ধ্বমুখী পরিবর্তন সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি এক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এছাড়া শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, গবেষণা, খেলাধুলা, বিনোদন, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য, বৈদেশিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, নারী-পুরুষ সম্পর্ক ইত্যাদি ক্ষেত্রেও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটেছে।

কৃষি, শিল্প, চিকিৎসা ও শিক্ষায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতিতে উন্নয়ন বয়ে আনছে।

পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুসরণে আমাদের দেশে বিভিন্ন ব্যাংক, বিমা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, বহুজাতিক কোম্পানি, আধুনিক বিপণী বিতান ইত্যাদির সম্প্রসারণ হয়েছে। ফলে এগুলোকে ঘিরে এক ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে যা সাংস্কৃতিক উন্নয়ন সাধন করছে।

বিশ্বের উন্নত দেশের অনুকরণে প্রচলিত ধারার শিক্ষার সাথে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার চেষ্টা চলছে। আবার প্রচলিত ধারার শিক্ষার পাশাপাশি দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষাকে মানুষের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এসব পরিবর্তন মূলত শিক্ষা সংস্কৃতিরই পরিবর্তন, যা শিক্ষার সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম বা প্রাইভেট চ্যানেল প্রতিষ্ঠার ফলে সাংস্কৃতিক বিপ্লব হয়েছে। যার মাধ্যমে সংস্কৃতির বিস্তার ঘটছে দ্রুত এবং জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে তাদের আচরণে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটছে। এটি একটি সাংস্কৃতিক উন্নয়ন।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ