- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- নবম-দশম শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
পৌরনীতি ও নাগরিকতা
পৌরনীতি ও নাগরিকতা
পৌরনীতির ইংরেজি শব্দ সিভিক্স (Civics)। সিভিক্স শব্দটি দুটি ল্যাটিন শব্দ 'সিভিস' (Civis) ও 'সিভিটাস' (Civitas) থেকে এসেছে। 'সিভিস' শব্দের অর্থ নাগরিক (Citizen) আর 'সিভিটাস' শব্দের অর্থ নগররাষ্ট্র (City State)। প্রাচীন গ্রিসে নাগরিক ও নগররাষ্ট্র ছিল অবিচ্ছেদ্য। ঐ সময় গ্রিসে ছোটো ছোটো অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠে নগররাষ্ট্র। যারা নগর রাষ্ট্রীয় কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করত, তাদের নাগরিক বলা হতো। কিন্তু দাস, মহিলা ও বিদেশিদের রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিলনা বিধায় তাদেরকে নাগরিক বলা হতো না।
একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আধুনিক রাষ্ট্র রূপ লাভ করেছে সতেরোশ এবং আঠারোশ শতাব্দীতে। দাস প্রথা বিলুপ্ত হয় ১৮০৭ সালে এবং নারীরা ভোটাধিকার পায় ১৯১৯ সালে। আধুনিক রাষ্ট্র গঠিত হয় সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে একটি সুনির্দিষ্ট ভূখণ্ডে একটি জনগোষ্ঠীকে নিয়ে যেখানে আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থা, সুসংগঠিত প্রশাসন এবং সরকার গঠনের মাধ্যমে নাগরিকদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করা হয়। একইসাথে আধুনিক রাষ্ট্র পুলিশ ও সেনাবাহিনী গঠন করে জনগণকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে এবং রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করে। আধুনিক রাষ্ট্র নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকার প্রদান করে। আধুনিক রাষ্ট্রে সকল নাগরিক সমানভাবে সকল অধিকার ভোগ করে।
বর্তমানে একদিকে নাগরিকের ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে, অন্যদিকে নগর রাষ্ট্রের স্থলে বৃহৎ আকারের জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন- বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার এবং ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। নাগরিক অধিকার ভোগের পাশাপাশি আমরা রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে থাকি। তবে আমাদের মধ্যে যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮ বছরের কম, তারা ভোটদান কিংবা নির্বাচিত হওয়ার মতো রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতে পারে না। তাছাড়া বিদেশিদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার যেমন-নির্বাচনে ভোটদান বা নির্বাচিত হওয়ার অধিকার নেই। মূলত রাষ্ট্র প্রদত্ত নাগরিকের মর্যাদাকে নাগরিকতা বলা হয়। নাগরিকতা ও রাষ্ট্রের সাথে জড়িত সবই 'পৌরনীতি ও নাগরিকতা'র বিষয়বস্তু। ব্রিটিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ই. এম. হোয়াইট যথার্থই বলেছেন, পৌরনীতি হলো জ্ঞানের সেই মূল্যবান শাখা, যা নাগরিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবতার সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে।
বিষয়বস্তুর দৃষ্টিতে পৌরনীতিকে দুটি অর্থে আলোচনা করা যায়। ব্যাপক অর্থে পৌরনীতি নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। যেমন- অধিকার ও কর্তব্য, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নাগরিকতার স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়, নাগরিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। সংকীর্ণ অর্থে অধিকার ও কর্তব্য পৌরনীতির বিষয়বস্তু।
সুতরাং বলা যায়, নাগরিক, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের আচরণ ও কার্যাবলি নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে যে বিষয়টি আদর্শ নাগরিক জীবন সম্বন্ধে জ্ঞান দান করে তাকে 'পৌরনীতি ও নাগরিকতা' বলা হয়।
একক কাজ: পৌরনীতি ও নাগরিকতার প্রাচীন ও আধুনিক ধারণার পার্থক্য নির্ণয় কর।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ