- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
- কৃষি উপকরণ
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
কৃষি উপকরণ
ভালো উন্নত বীজ নির্বাচন
বীজ একটি মৌলিক কৃষি উপকরণ। বীজের মাধ্যমে উদ্ভিদের বংশ বিস্তার ঘটে। উদ্ভিদ বিজ্ঞান অনুযায়ী নিষিক্ত ও পরিপক্ক ডিম্বককে বীজ বলে। আমরা জানি উদ্ভিদের অন্যান্য অঙ্গ ব্যবহার করেও বংশ বিস্তার সম্ভব। কৃষিতত্ত্ব এগুলোকেও বীজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কৃষিবিদগণ এগুলোকে কৃষিতাত্ত্বিক বীজ বলেন আর নিষিক্ত পরিপক্ব ডিম্বককে বলা হয় সত্যিকার বীজ (true seed) বা উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ (sexual seed)। বীজের মাধ্যমে উদ্ভিদের জাতের গুণাগুণ পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। অঙ্গজ প্রজননে মাতৃ উদ্ভিদের অর্থাৎ যে উদ্ভিদের অঙ্গ ব্যবহার করা হলো তার গুণাগুণ পরবর্তী বংশধরে প্রকাশ ঘটতে পারে। অপর দিকে যৌন বীজে মাতা ও পিতা উদ্ভিদ উভয়ের গুণের একটি যৌক্তিক মিশ্রণ নিয়মানুসারে ঘটে। এ ক্ষেত্রে অসুবিধা এই যে স্বপরাগায়ন (self fertilized) না হলে, মা গাছের সকল গুণাগুণ পরবর্তী প্রজন্মে নাও পাওয়া যেতে পারে। তবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে দুইটি আলাদা জাতের (একই ফসলের) মধ্যে সংকরায়ণ (hybridization) ঘটিয়ে তৃতীয় জাত তৈরি করা যায় যাতে মাতার কিছু এবং পিতার কিছু ভালো গুণের সমাহার ঘটতে পারে। এইভাবে বীজের বংশগতিগত (genetic) উন্নয়ন সম্ভব, যাকে বলা হয় সংকরায়ণ।
কৃষক চাষাবাদের জন্য উন্নত গুণাগুণসম্পন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের উন্নত বীজ ব্যবহার করে লাভবান হতে চায়। কৃষি গবেষণা সংস্থাগুলো বীজ উন্নয়নের কাজ করে, বীজ প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ উন্নতজাতের বীজের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় এবং Banglades Agricultural Development Corporation (BADC) এর মতো রাষ্ট্রীয় কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিভিন্ন স্বীকৃত প্রতিনিধির মাধ্যমে কৃষকদের উন্নত বীজ সরবরাহ করে।
চলতি কোনো ফসলের জাতের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কিছু কাঙ্ক্ষিত গুণের ভিত্তিতে ক্রমাগত বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও বীজের উন্নতি বা জাতের উন্নতি ঘটানো যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে উন্নয়নকে বলা হয় চয়ন-প্রজনন (selection breeding)। পর্যবেক্ষণ ও বাছাই এখানে মূল কৌশল। সংকরায়ণের পরও বেশ কয়েক প্রজন্ম (generation) পর্যবেক্ষণ ও বাছাই করা হয়।
চাষি পর্যায়ে উন্নত বীজ নির্বাচনের আগে আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। যেমন-
- চাষির কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের জন্য ফসলের কোন কোন জাত উপযুক্ত।
- ঐ জাতগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে কম সময়ে ফলন দেয়।
- ঐ জাতগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে কম খরচে সবচেয়ে বেশি ফলন দিতে পারে।
- কোন জাতটির রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি।
- কোন জাতটির মাঠ পরিচর্যা সহজতর।
যদিও উচ্চ ফলনশীলতা উন্নত জাতের একটি বিশেষ গুণ। কিন্তু উন্নত জাতের বীজ হলেই উচ্চ ফলন পাওয়া নিশ্চিত হয় না, চাষির প্রয়োজন উন্নত জাতের ভালো বীজ। ভালো বীজের আরও কিছু ভালো গুণ থাকা প্রয়োজন যেমন-
- মিশ্রণহীন বীজ
- অন্তত ৮০% অঙ্কুরোদগম ক্ষমতাসম্পন্ন
- চারার উচ্চমানের সতেজতা
- পরিচ্ছন্নতা
- সুস্থ বীজ (রোগজীবাণুর দূষণ ও সংক্রমণমুক্ততা)
সহজাতের ও বিশ্বাসযোগ্য পরীক্ষার মাধ্যমে বীজের উল্লিখিত গুণগুলো আছে কি না তা নির্ধারণ করা যায়। এই গুণগুলোর ঘাটতি থাকলেও যে কোনো বীজও উচ্চ ফলন দিতে ব্যর্থ হয়। তাই উন্নত ভালো বীজ নির্বাচন উচ্চ ফলন পাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। বীজের অঙ্কুরোদগম এবং চারার সতেজতা পরীক্ষা:
উপরের চিত্রের ব্লটার পরীক্ষা এবং পেপার টাওয়েল পরীক্ষার মাধ্যমে বীজের অঙ্কুরোদগম এবং চারার সতেজতা নির্ণয় করা যায়। ব্লটার পরীক্ষায় একটি পেট্রিডিসের মধ্যে ব্লটিং পেপার বিছিয়ে পানি দিয়ে বীজ স্থাপন করে উপযুক্ত পরিবেশে রেখে বীজের অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করা হয়। একই ভাবে একটি ট্রের মধ্যে কয়েক স্তর নিউজপেপার বিছিয়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে বীজ স্থাপন করে অঙ্কুরোদগম ঘটানো হয়। কয়েকদিন রেখে চারাগুলোর বৃদ্ধি পরীক্ষা করে বীজের তেজ বা চারার সতেজতা নির্ণয় করা যায়। অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা এবং চারার সতেজতা শতকরা হারে নির্ণয় করা যায়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

