- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- ষষ্ঠ শ্রেণি
- প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
আমার প্রিয় খেলা
ভূমিকা
বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয় ও অভিজাত খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেটকে খেলার রাজাও বলা হয়। রেকর্ড ভাঙা এবং রেকর্ড গড়ার খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেট নিয়ে সমগ্র বিশ্বে এখন উত্তেজনা। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা প্রতিদিন বাড়ছে। আমার প্রিয় খেলা ক্রিকেট।
ক্রিকেটের জন্ম
কবে প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু হয়, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। তবে মনে করা হয়, ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ইংল্যান্ডে ক্রিকেট খেলা আরম্ভ হয়। হ্যাম্পসায়ারের অন্তর্গত হ্যাম্পারডন নামক স্থানে প্রথম ক্রিকেট দল গড়ে ওঠে। পরে তা সমগ্র ব্রিটেন এবং সকল ব্রিটিশ উপনিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশসহ অনেক দেশে ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
প্রকারভেদ
ক্রিকেট খেলা দু-ধরনের। একটি হলো ওয়ান ডে ম্যাচ বা এক দিনের খেলা, অন্যটি টেস্ট ম্যাচ বা পাঁচ দিনের খেলা। এখন আবার শুরু হয়েছে টুয়েন্টি টুয়েন্টি ম্যাচ। বিশ্বে বিখ্যাত টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্ত দেশগুলো হলো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ।
উপকরণ
ক্রিকেট খেলার মুখ্য উপকরণ কাঠের ব্যাট ও বল। ব্যাট দৈর্ঘ্যে আড়াই ফুট ও প্রস্থে সাড়ে চার ইঞ্চি হয়। এ খেলায় প্রায় সাড়ে তিন ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট চামড়ায় মোড়ানো কাঠের বল ব্যবহার করা হয়। খেলার জন্য কাঠের তৈরি তিনটি দণ্ড প্রয়োজন হয়। এগুলোকে উইকেট বলে। বিপরীত দিকে একইভাবে আরও তিনটি উইকেট থাকে। উইকেটের মধ্যে ব্যবধান সমান রাখার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট মাপের দু-টুকরো কাঠ উইকেটের উপর বসানো হয়। একে বেল বলে। এ ছাড়া পায়ে পরার জন্য তুলার তৈরি এক প্রকার পুরু প্যাড ও হাতে পরার জন্য গ্ল্যাভস বা হাতমোজা প্রয়োজন পড়ে।
মাঠের আকৃতি
ক্রিকেট মাঠ বৃত্তাকার। সাধারণত এর ব্যাসার্ধ হয় ৭০ গজ। মাঠের মাঝখানে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় পিচ। পিচের দৈর্ঘ্য হয় ২২ গজ।
নিয়ম-কানুন
দুটি দলের মধ্যে ক্রিকেট খেলা হয়। প্রতি দলে এগারো জন করে খেলোয়াড় থাকে। ক্রিকেট খেলা পরিচালনার জন্য দুইজন আম্পায়ার থাকেন। ক্ষেত্রবিশেষে তৃতীয় আম্পায়ার দেখা যায়। খেলা আরম্ভের পূর্বে দুজন আম্পায়ার এবং দু-দলের দুজন অধিনায়ক মাঠে নামেন। মুদ্রা ছুড়ে দিয়ে টসের মাধ্যমে এক দল জয়ী হয়। টসে জয়লাভকারী অধিনায়ক ইচ্ছে করলে ব্যাটিং বা ফিল্ডিং যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন। উভয় দলকে একবার করে ব্যাট করতে হয়। ফিল্ডিংকারী দলের সমস্ত খেলোয়াড় মাঠের ভেতর অধিনায়কের নির্দেশ মেনে তাদের নিজস্ব স্থানে অবস্থান করেন। যে-দল প্রথম ব্যাটিং করবে, সে দলের দুজন খেলোয়াড় ব্যাট হাতে দু উইকেটে গিয়ে দাঁড়ান। তাঁদের মধ্যে একজন বল পেটান, অপরজন প্রয়োজনবোধে রান সংগ্রহ করার জন্য দৌড়ান। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা ব্যাটসম্যানদের আউট করার চেষ্টা করেন। বল নিক্ষেপকারীকে বোলার বলে। একজন বোলার পরপর ছটি বল করতে পারেন। ছটি বলে এক ওভার ধরা হয়। ব্যাটসম্যান অতি সতর্কতার সাথে বল মারেন। সুযোগমতো বল ব্যাটের আঘাতে দূরে পাঠান।
ব্যাটসম্যান যখন বল দূরে পাঠান, তখন অপর দিকের উইকেটে অপেক্ষমাণ খেলোয়াড় ও ব্যাটসম্যান একে অন্যের পাশে দৌড়ে এলে এক রান হয়। বল গড়িয়ে সীমারেখা পার হলে চার রান হয়। আর বল না গড়িয়ে মাঠের উপর দিয়ে সীমানা অতিক্রম করলে ছয় রান হয়।
বল যদি উইকেটে লাগে, তাহলে ব্যাটসম্যান আউট হন। একে বোল্ড আউট বলে। ব্যাট দিয়ে আঘাত করার পর তা মাটিতে পড়ার আগেই বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় ধরে ফেললে ব্যাটসম্যান আউট হন। একে কট আউট বলে। এ ছাড়া ব্যাটসম্যান রান আউট বা স্টাম্প আউটও হতে পারেন। এক দলের সবাই আউট হয়ে গেলে বা নির্ধারিত ওভার শেষ হয়ে গেলে অন্য দল ব্যাটিং করতে নামে।
ক্রিকেট খেলার জয়পরাজয় নির্ধারিত হয় রানের সংখ্যা বা নির্দিষ্ট সময়ে কতজন ব্যাটসম্যান নট আউট থেকে যায়, তা হিসেব করে। এ-খেলায় যে-দল রান, ওভার, সময় ও উইকেটরক্ষায় সক্ষম হয়, সে-দলই জয়লাভ করে।
ক্রিকেট খেলার আনন্দ
ক্রিকেট খেলার চমক ভিন্ন মাত্রার। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য সাজানোর মতো মাঠে ফিল্ডার সাজানো খুবই কৌশলের ব্যাপার। ক্রিকেটের উত্তেজনা বেড়ে যায় যখন, ব্যাটসম্যানের নৈপুণ্যে সেই ব্যূহ তছনছ হয়ে যায় ছক্কা ও চারের মারে। ছক্কা ও চারের মারে রান তোলার উত্তেজনাই আলাদা। বোলিংয়ের দাপট বা ফিল্ডারদের হাতে ব্যাটিং-বিপর্যয় এই উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনাকে চরমে পৌছে দেয়। একদিনের ক্রিকেটের উত্তেজনা আলাদা। বর্তমানে টি-টুয়েন্টি (২০ ওভার) ম্যাচ সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ খেলা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
উপকারিতা
অন্যান্য খেলার মতো ক্রিকেট খেলা ও আনন্দদায়ক ও স্বাস্থ্যকর। এ-খেলা একাধারে খেলোয়াড়দের শৃঙ্খলাবোধ, পারস্পরিক সমঝোতা, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, দায়িত্বজ্ঞান ও সতর্কতার শিক্ষা দেয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেশের ক্রীড়াদলকে শুভেচ্ছাদূত বলে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলোয়াড়গণ এ-খেলায় পারদর্শী হয়ে উঠছেন। বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
সতর্কতা
ক্রিকেট খেলায় যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। কাঠের বল বেশ শক্ত। বোলারের সজোরে নিক্ষেপ করা বল কোনো খেলোয়াড়ের শরীরে লাগলে সে মারাত্মকভাবে আহত হতে পারে, মাথায় লাগলে অনেক সময় মৃত্যুর কারণও হয়ে দাঁড়ায়। তাই যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে ক্রিকেট খেলা উচিত। ক্রিকেট খেলা অত্যন্ত সময়হরণকারী, এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়। তা ছাড়া ক্রিকেট বেশ ব্যয়বহুল খেলা। সবকিছুরই ভালো-মন্দ দুটি দিক থাকে। ক্রিকেটের ভালো দিকই বেশি। মন্দ যে দিকগুলোর কথা বলা হলো, সেদিকে আমরা সচেতন থাকব।
উপসংহার
আধুনিক যুগে যত খেলা রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেট। ক্রিকেট খেলা যেমন আনন্দদায়ক, তেমনি ব্যয়সাপেক্ষ ও সময়সাপেক্ষ। সময় ও অর্থের অধিক ব্যয়ের কারণে অনেক সমালোচক একে অপচয় বলে মনে করেন। তবু বিশ্ব আজ ক্রিকেটজ্বরে আক্রান্ত। এর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ