- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি
ইসলামি সংস্কৃতির ব্যাবহারিক দিক ও উদাহরণ- Practical Aspects and Examples of Islamic Culture
মানুষের সমগ্র জীবন নিয়েই ইসলামি সংস্কৃতির বিস্তার। জন্ম, মৃত্যু, লেনদেন, দেখা-সাক্ষাৎ, দৈনন্দিন জীবনের সব ক্ষেত্রেই এ সংস্কৃতি বিরাজমান। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ইসলামি সংস্কৃতির ব্যাবহারিক দিক সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
শিশুর জন্মের পর আজান দেওয়া ও সুন্দর নাম রাখা: ইসলামি সংস্কৃতির বিশেষ দিক হলো জন্মের পর শিশুকে আজানের ধ্বনি শোনানো, তার অর্থবহ সুন্দর নাম রাখা এবং জন্মের ৭ম, ১৪তম বা ২১তম দিনে আকিকা দেওয়া । রাসুল (স) বলেন,
অর্থ: যখন শিশুর জন্ম হয়, তার একটি সুন্দর নাম রাখ (বায়হাকি)। তিনি আরও বলেন, সন্তানের জন্য আকিকা আবশ্যক। সুতরাং, তার পক্ষে রক্ত প্রবাহিত কর এবং তার কষ্ট দূর কর (সহিহ বুখারি)। কাজের সূচনা: প্রতিটি ভালো কাজের শুরুতে আল্লাহর নাম নেওয়া ইসলামি সংস্কৃতির অঙ্গ। রাসুলুল্লাহ (স) বলেন,
كُلُّ امْرِ ذِي بَالٍ لَمْ يُبْدَءُ بِاسْمِ اللَّهِ فَهُوَ أَقْطَعُ أَوْ أَبْتَرُ .
অর্থ: প্রতিটি ভালো কাজের শুরুতে যদি আল্লাহর নাম নেওয়া না হয় তাহলে তা হয় অসম্পূর্ণ অথবা নিম্নমানের (দারু কুতনি, সুনানে আবু দাউদ ও সুনানে ইবনে মাযাহ)।
খাদ্যগ্রহণ: খাবার খেতে হবে ডান হাতে। সবাই মিলে একসাথে খাদ্যগ্রহণ করা ইসলামি সংস্কৃতির অংশ। রাসুল (স) বলেন,
অর্থ: তোমরা একত্রে খাবার গ্রহণ কর, আর আল্লাহর নাম স্মরণ কর, এতে তিনি তোমাদের বরকত দেবেন (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)।
খাবারের শুরুতে 'বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ' এবং খাওয়া শেষ হলে 'আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি আআমানা ওয়া সাকানা ওয়া জাআলানা মিনাল মুসলিমীন' বলা এ সংস্কৃতির অন্যতম দিক। শেষে অবশ্য শুধু 'আলহামদুলিল্লাহ' বললেও চলবে।
ঘুম: ঘুম আল্লাহর নিয়ামত। ঘুমাতে যাওয়ার সময় বলতে হয়-
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে ঘুমাতে যাই, আর তোমার নামেই জেগে উঠি (তিরমিযি)।
ঘুম থেকে জেগে পড়তে হয়
অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি ঘুম থেকে আমাদের জাগিয়ে দিয়েছেন এবং প্রত্যাবর্তন তাঁর কাছেই (বুখারি ও মুসলিম)।
পারস্পরিক সাক্ষাৎ: মুসলিমগণ পারস্পরিক সাক্ষাতে প্রথমেই সালাম বিনিময় করবেন। রাসুলুল্লাহ (স) বলেন
অর্থ: ক্ষুধার্তকে খাবার দেবে আর পরিচিত অপরিচিত নির্বিশেষে সবাইকে সালাম দেবে (সহিহ বুখারি)। সালামের পর কুশল জিজ্ঞাসা, মুসাফাহা ও মুআনাকা করা যেতে পারে।
কথাবার্তা: ইসলামি সংস্কৃতির বিশেষ দিক হলো সুন্দর ও সুস্পষ্ট বাক্যালাপ। কথাবার্তায় ঔদ্ধত্য বা অহংকার প্রকাশ পাবে না। রাসুলুল্লাহ (স) বলেন,
অর্থ: তোমরা একে অপরের সাথে বিনয়ী ব্যবহার করবে এবং অহংকার করবে না (সহিহ মুসলিম)।
ছোট-বড় সম্পর্ক: ইসলামি সংস্কৃতিতে ছোটরা বড়দের সম্মান করবে। লেনদেনে, কথাবার্তায় তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে। আর বড়রা ছোটদের স্নেহ করবে, আদব শেখাবে। রাসুলুল্লাহ (স) বলেন,
مَنْ لَمْ يَرْحَمُ صَغِيرَنَا وَلَمْ يُوَقِّرُ كَبِيرَنَا فَلَيْسَ مِنَّا .
অর্থ: যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের শ্রদ্ধা করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় (তিরমিযি)। পোশাক: ইসলামি সংস্কৃতির অন্যতম দিক শালীন ও শোভন পোশাক-পরিচ্ছদ । আল্লাহ বলেন,
يبَنِي آدَمَ قَد اَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْا تِكُمْ وَرِيْشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ .
অর্থ: হে বনি আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, সাজসজ্জার বস্ত্র এবং পরহেজগারির পোশাক, এটি সর্বোত্তম (সুরা আল-আরাফ : ২৬)।
এজন্য মুসলমানের পোশাক হবে মার্জিত ও রুচিসম্পন্ন। তা পুরুষ ও মহিলাদের ইজ্জত-আবরু পুরোপুরি আবৃত করে রাখবে। এ পোশাক পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হবে কিন্তু চাকচিক্য ও বিলাসিতার প্রতীক হবে না ।
পানীয়: ইসলামি সংস্কৃতিতে বসে পান করতে হয়। দাঁড়িয়ে পান করা শোভন নয়। আবার এক নিঃশ্বাসে সবটুকু পান করা যাবে না। পান করতে হবে থেমে থেমে, ধীরে ধীরে কমপক্ষে তিন নিঃশ্বাসে। সাহাবি হযরত আনাস (রা) বলেন,
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَنَفَسُ فِى الشَّرَابِ ثَلثا .
অর্থ: মহানবি (স) তিনবারে বা তিনদমে পান করতেন (তিরমিযি)।
এছাড়া পানপাত্রটি ধরতে হবে ডান হাতে। ডান হাতে ধরা সম্ভব না হলে বাম হাতে ধরতে হবে আর তার নিচে ডান হাত রাখতে হবে।
শয়ন: ডান পাশে ফিরে শোয়া উত্তম। ওজু করে, কুরআন মাজিদের সুরা ইখলাস, মূলক বা ফাতিহার মতো সুরা পড়তে পড়তে ঘুমাতে যাওয়া উত্তমI উঠাবসা, চলাফেরা: পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন স্থানে বসতে হবে। মজলিসে কাউকে কষ্ট দিয়ে বসা যাবে না বা কাউকে উঠিয়ে দিয়ে তার জায়গায় বসা যাবে না। যেখানে জায়গা ফাঁকা পাওয়া যাবে সেখানেই বসতে হবে। হাঁটতে হবে মৃদু পদক্ষেপে । হাঁটার মধ্যে দম্ভ বা অহংকার প্রকাশ করা যাবে না। এমন ভাবেও হাঁটা যাবে না যাতে অলস মনে হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ .
অর্থ: আর তুমি পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণা কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না (সুরা লুকমান: ১৮)। প্রস্রাব-পায়খানা: শালীনতার সাথে নির্দিষ্ট স্থানে প্রস্রাব-পায়খানা করা ইসলামি সংস্কৃতির অংশ। এ সময়ে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে ঢিলা-কুলুপ বা টয়লেট পেপার এবং প্রয়োজনীয় পানি ব্যবহার করতে হয়। টয়লেটে বাম পা দিয়ে ঢুকতে হয় আর ডান পা দিয়ে বের হতে হয়। টয়লেটে প্রবেশের সময় বলতে হয়,
اللهمَّ إنِّي أَعُوْذُبِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ .
অর্থ: হে আল্লাহ! শয়তানের প্ররোচনা থেকে আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই (বুখারি ও মুসলিম)।
টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় বলতে হয়,
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي اذْهَبَ عَنِّي الْأَذَى وَعَافَانِي .
অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমার কষ্ট দূর করেছেন এবং আমাকে শান্তি দিয়েছেন (ইবনে মাযাহ)। হাসি: অট্টহাসি নয় বরং পরিমিত মুচকি হাসি ইসলামি সংস্কৃতির অঙ্গ। রাসুলুল্লাহ (স) সবসময় তার চেহারা মুবারক নিঃশব্দ মিষ্টি হাসিতে উদ্ভাসিত রাখতেন। রাসুল (স) বলেন,
অর্থ: তোমার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে তোমার মৃদু হাসিও সদকা (সুনানে তিরমিযি)। তাকবির: মুসলিমদের ছোট-বড় যেকোনো সমাবেশে তাকবির ধ্বনি বা আল্লাহু আকবার বলা ইসলামি সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ
অর্থ: আর তোমরা আল্লাহর নামে তাকবির বল, কেননা তিনি তোমাদের হিদায়াত দিয়েছেন (সুরা আল-বাকারা: ১৮৫) আজান, সালাত ও জামায়াত: প্রতিদিন সালাতের জন্য পাঁচবার আজান দেওয়া, মসজিদে সব মুসলিম মিলে জামায়াতের সাথে সালাত আদায় করা ইসলামি সংস্কৃতির অনিবার্য অঙ্গ। কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জানাজা: কোনো মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যু হলে তার জানাজা দিতে হয়। মৃতের জানাজায় উপস্থিত হওয়া প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজে কিফায়া। রাসুলুল্লাহ (স) বলেন, এক মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের ছয়টি হক রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো— মৃত্যু হলে তার জানাজায় উপস্থিত হওয়া (মিশকাত)।
গোশত খাওয়া: হালাল পশুর গোশত খাওয়া এ সংস্কৃতির বিশেষ দিক। হালাল পশুকে আল্লাহর নাম নিয়ে বৈধ উপায়ে জবেহ করতে হবে। আল্লাহ বলেন,
অর্থ: আর তোমরা এমন পশুর গোশত খাবে না যা জবেহের সময় আল্লাহর নাম উল্লেখ করা হয়নি (সুরা আল-আনআম:১২১)।
নাচ-গান প্রসঙ্গে নিয়ন্ত্রণ: ইসলামে গান-বাজনা নিয়ে আলেমদের মধ্যে মিশ্র ও সমন্বয়মূলক মতামত পাওয়া যায়। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রশংসামূলক হামদ, নাতসহ ইসলামি সংগীত পরিবেশন করা এ সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ। তবে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণে নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে উচ্ছৃঙ্খলভাবে নাচগান করাকে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। রাসুল (স) বিভিন্ন উৎসব বা উপলক্ষ্যে গান গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে নিষেধ করেননি। তিনি ঈদের সময় বালকদের 'দব' নামের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গানবাজনা করতে দেখে তা অনুমোদন করেছেন বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। নারী-পুরুষ উভয়ের পর্দা: পুরুষেরা নারীদের থেকে এবং নারীরা পুরুষদের থেকে চক্ষু ও দৃষ্টিকে সংযত রাখার মাধ্যমে পর্দা রক্ষা করবে। আল্লাহ বলেন, মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত। আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হিফাজত করে (সুরা নুর: ৩০-৩১)। পরিবার গঠন: ইসলামি শরিয়তের বিধান মেনে নারী-পুরুষের বিবাহের মাধ্যমে পরিবার গঠন করা ইসলামি সংস্কৃতির একটি উৎকৃষ্ট দিক।
সাহরি ও ইফতার: রমজান মাসে সাওম পালন করা, তারাবিহ সালাত আদায়, ইফতার করা ও সাহরি খাওয়া ইসলামি সংস্কৃতির বিশেষ দিক। এ সংস্কৃতি মানুষকে সহানুভূতি ও ভালোবাসায় আবদ্ধ করে।
ঈদ উৎসব: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ইসলামি সংস্কৃতির দুটি আনন্দ উৎসব। সালাত আদায়, মানুষের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া এ সংস্কৃতিকে মহিমান্বিত করেছে এবং শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছে।
দাড়ি ও গোফ: মুসলিম পুরুষেরা দাড়ি লম্বা করবে এবং গোফ খাটো করবে, হাদিসে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, -
خَالِفُوا الْمُشْرِكِيْنَ اَحْفُو الشَّوَارِبَ وَاَوْفُوا اللحى
অর্থ: তোমরা মুশরিকদের উল্টো কর, গোফ ছোট কর এবং দাড়ি লম্বা কর (সহিহ মুসলিম)।
ইসলামি সংস্কৃতিকে মানবকল্যাণ ও সাফল্যের নিশ্চয়তা বিধায়ক ঐশী সংস্কৃতি বলা যায়। তাই মানবজাতির পার্থিব কল্যাণ, সাফল্য ও শান্তিলাভ এবং পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য জীবনের সব পর্যায়ে ইসলামি সংস্কৃতির অনুকরণ, অনুশীলন, অনুসরণ ও বাস্তবায়ন অনিবার্য ।
একক কাজ: ইসলামি সংস্কৃতির ৫টি ব্যাবহারিক দিক লেখো।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

