- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি
ইসলাম শিক্ষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য- Importance and Significance of Islamic Education
মানুষের জীবনধারায়; বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য ইসলাম শিক্ষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সীমাহীন। কেননা, অন্য সব সৃষ্টির ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ তার শিক্ষা। পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আ) আল্লাহর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেই ফেরেশতা ও জিন জাতির ওপর মর্যাদাবান হয়েছিলেন। আদিকাল থেকে পৃথিবীতে যত অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন ও অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার কারণ হলো অনৈতিকতা ও ইসলামের বিধান পালন না করা। আধুনিক যুগেও অন্যায় ও অনৈতিকতার ভয়াবহ বিস্তার লক্ষ করা যায়। এর থেকে মুক্তি পেতে দরকার সচ্চরিত্রবান মানুষ। আর সচ্চরিত্র নামের এ মহামূল্যবান সম্পদটি অর্জন করা সম্ভব ইসলাম শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে ।
ইসলাম শিক্ষা ফরজ: ইসলাম শিক্ষা গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য। ইসলাম বিষয়ক জ্ঞানার্জন ব্যতীত ইমান ও ইসলামের উপর অবিচল থাকা সম্ভব নয়। রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন-
طلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
অর্থ: জ্ঞানান্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিমের (নর-নারীর) উপর ফরজ (সুনান ইবন মাজাহ)।
সর্বপ্রথম নির্দেশ: আল্লাহ তায়ালা মহানবি (স) এর উপর ওহি নাযিলের সূচনা করেছেন পড়ার নির্দেশ সম্বলিত আয়াত অবতীর্ণ করার মাধ্যমে । মহানবি (স) এর উপর সর্বপ্রথম নাযিলকৃত আয়াত হচ্ছে—
إِقْرَ أُبِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ .
অর্থ: পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন (সুরা আলাক : ১)।
কল্যাণ লাভ: ইসলাম শিক্ষা মানুষের চিরায়ত কল্যাণ ও মঙ্গল বিধান করে। এর মাধ্যমে মানুষ সামগ্রিক সাফল্য লাভে সক্ষম হয়।
আল্লাহ বলেন,
وَمَن يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِي خَيْرًا كَثِيرًا .
অর্থ: যাকে হিকমত বা দীনের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তাকে দেওয়া হয়েছে বিপুল কল্যাণ (সুরা আল-বাকারা: ২৬৯)।
জান্নাত লাভ: ইসলাম শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ ইসলামের বিধিবিধান সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং তা পালনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে। ফলে সে জান্নাত লাভের জন্য আমল করে। এতে জান্নাত লাভের পথ তার জন্য সুগম হয়। রাসুলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেন,
مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَلَ اللَّهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا مِّنْ طُرُقِ الْجَنَّةِ .
অর্থ: যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোনো একটা পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তায়ালা সে পথের মাধ্যমে সে ব্যক্তির জান্নাতের পথ-সহজ ও সুগম করে দেন (মুসলিম, ইবনে মাযাহ)।
ক্ষমা লাভ: মানুষ কোনো না কোনোভাবে পাপকাজে লিপ্ত হয়। শয়তানের প্ররোচনায় পাপাচার কারও কারও অভ্যাসে পরিণত হয়। ইসলাম শিক্ষা বিভিন্ন ধরনের গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের উপায় নির্দেশ করে। এ শিক্ষা গ্রহণের জন্য মানুষের পাপ ক্ষমা করা হয়। রাসুলুল্লাহ (স) বলেন,
مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ كَانَ كَفَّارَةٌ لِمَا مَضى .
অর্থ: যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণ ও অর্জন করে, তা তার অতীতের সব কিছুর কাফফারা হয়ে যায় (সুনানে তিরমিযি)।
'জিন' শব্দটির আক্ষরিক অর্থ অদৃশ্য, কোনো কিছু যা গুপ্ত, অন্তরালে বসবাসকারী। ইসলামের বিশ্বাস মতে, জিন জাতি আল্লাহর এক বিশেষ সৃষ্টি। কুরআনের ৭২তম সুরার নাম 'আল-জিন'। এতে এ জাতির বর্ণনা রয়েছে। মানবসৃষ্টির প্রধান উপকরণ যেমন মাটি, তেমনি জিনসৃষ্টির প্রধান উপকরণ আগুন । এ জাতির মধ্যেও মানুষের মতো নর-নারী আছে এবং সন্তান প্রজননের ধারা বিদ্যমান আছে।
নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম: ইবাদত সম্পাদনের জন্য ইসলাম শিক্ষা আবশ্যক। সে কারণে আল্লাহর কাছে এ শিক্ষার মর্যাদা অনেক বেশি। ইসলামি জ্ঞানার্জনকারীকে আল্লাহ তায়ালা নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম প্রতিদান দেন। রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন,
تَدَارُسُ الْعِلْمِ سَاعَةُ مِنَ اللَّيْلِ خَيْرٌ مِّنْ اِحْيَاتِهَا .
অর্থ: রাতে অল্প সময় জ্ঞান চর্চা করা সারারাতের ইবাদতের (নফল) চেয়ে উত্তম (দারিমি)।
দোয়া লাভ: ইসলাম শিক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তির জন্য আল্লাহর সৃষ্টিজগতের সবকিছু দোয়া করতে থাকে। তাঁর কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। মহানবি (স) বলেন,
জেনে রাখো:
আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের জন্য আটটি জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন। এগুলো হলো— ১. জান্নাতুল ফিরদাউস, ২. দারুল মাকাম, ৩. দারুল কারার, ৪. দারুস সালাম, ৫. জান্নাতুল মাওয়া, ৬. জান্নাতুল আদন, ৭. দারুন নাইম ও ৮. দারুল খুলদ।
إنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ وَأَهْلَ سَمَوَاتِهِ وَأَرْضِهِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِي جُحْرِهَا لَيُصَلُّونَ عَلَى مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ .
অর্থ: মানুষকে যে উত্তম বিষয় শেখায় তার জন্য আল্লাহ তায়ালা, তাঁর ফেরেশতারা, আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা এমনকি গর্তের পিঁপড়া আর সাগরের মাছও দোয়া করে (সুনানে তিরমিযি) ৷
শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি : ইসলাম শিক্ষা মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার মাপকাঠি। যারা ইলম অর্জন করে না তারা কখনোই ইসলামি ইলমের অধিকারীদের সমান হতে পারে না। আল্লাহ বলেন,
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ .
অর্থ: বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে? (সুরা যুমার : ৯)।
অর্থাৎ যারা ইসলামি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত তারা কিছুতেই এ শিক্ষা অর্জনকারীদের সমান হতে পারে না ।
পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হিসেবে জীবন নির্বাহ: আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী পরিপূর্ণভাবে মুমিনের জীবন নির্বাহের ক্ষেত্রেও ইসলাম শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর মাধ্যমে ব্যক্তি ইসলামের সব বিধিবিধান জানতে পারে। হালাল, হারাম, পাক, নাপাক সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান লাভ করে। ফলে তার পক্ষে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালনা করা সম্ভব হয়। সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নিরূপণ: মানবসৃষ্টির শুরু থেকে সত্য-মিথ্যার সংঘাত চলে আসছে। সাধারণ অবস্থায় মানুষের পক্ষে যথার্থভাবে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নিরূপণ করা সম্ভব নয়। ইসলাম শিক্ষার মাধ্যমে এ পার্থক্য নিরূপণ করা যায়। ইসলামকে সমুন্নত রাখা: ইসলামের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রেও ইসলাম শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। এ দায়িত্ব নিয়ে নবি-রাসুলগণ পৃথিবীতে এসেছেন। রাসুলুল্লাহ (স)-এর ওফাতের মাধ্যমে সে ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ইসলাম শিক্ষায় শিক্ষিত লোকদের ওপর এ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে।
নৈতিক চরিত্র ও মানবিকতার বিকাশ: ইসলামের আদর্শ ও জীবনদর্শন অনুযায়ী মানুষের নীতি-নৈতিকতা গড়ে তোলা এবং সব মানবিক গুণাবলির পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের জন্য ইসলাম শিক্ষার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কেননা এ শিক্ষা উন্নত নৈতিক গুণ ও মানবিক গুণসমূহ বিকশিত হওয়ার নির্দেশনা ও প্রেরণা দেয় ৷
একক কাজ: ইসলাম শিক্ষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে ১০ বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ লেখো ।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

