• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি
ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি

প্রযুক্তিতে মুসলমানদের অবদান- Muslims Contribution to Technology

প্রযুক্তি (Technology) বলতে বিজ্ঞানের ব্যাবহারিক দিককে বোঝায়। Oxford Dictionary-তে Technology- র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, The application of scientific knowledge for practical purposes.

প্রযুক্তি বলতে কিছু প্রায়োগিক কৌশলকে বোঝায়, যার সাহায্যে মানুষ প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত উপাদানকে নিজের প্রয়োজনে সহজে ও দক্ষতার সাথে কাজে লাগাতে পারে। যেমন— আগে মানুষ যোগাযোগের জন্য উঁচু পাহাড়, সৃষ্ট প্রতিধ্বনি, আগুনের ধোঁয়া প্রভৃতি ব্যবহার করত। কিন্তু যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মানুষ এখন কম্পিউটার, রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল, স্যাটেলাইট প্রভৃতি ব্যবহার করছে। যোগাযোগ ছাড়াও প্রযুক্তির আরও নানাবিধ ক্ষেত্র রয়েছে। মানবজীবনের প্রায় প্রতিটি দিকের সাথেই প্রযুক্তি জড়িত। একেকটি প্রযুক্তির সংযোজন ও উন্নয়ন মানবজীবনের একেকটি দিককে করেছে বিশেষভাবে প্রভাবিত। প্রযুক্তির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র হলো-

  • জৈব প্রযুক্তি
  • মহাকাশ প্রযুক্তি
  • যোগাযোগ প্রযুক্তি
  • চিকিৎসা প্রযুক্তি
  • তথ্য প্রযুক্তি
  • নৌ প্রযুক্তি
  • ন্যানো প্রযুক্তি
  • রাসায়নিক প্রযুক্তি
  • কৃষি প্রযুক্তি
  • নির্মাণ প্রযুক্তি প্রভৃতি ।

জেনে রাখো:

বিখ্যাত কয়েকজন মুসলিম মনীষী :
  • আল কিন্দি: ফালাসিফা গোষ্ঠীর প্রবর্তক এবং আরব জাতির দার্শনিক হিসেবে পরিচিত।
  • আল ফারাবি: 'দ্বিতীয় এরিস্টটল' এবং আল-মুআল্লিমুস সানি বা দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে খ্যাত।
  • ইবনে সিনা: আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক।
  • ইমাম গাযযালি (র): মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও ইসলামি চিন্তাবিদ; তাকে 'হুজ্জাতুল ইসলাম' (ইসলামের দলিল) বলা হয় ।
  • জাবির ইবনে হাইয়ান: 'আলকেমি' বা রসায়নশাস্ত্রের জনক।
  • আল-খাওয়ারিজমি : বীজগণিতের জনক ।
  • হাসান ইবনে হায়সাম: একজন মুসলিম চক্ষুবিজ্ঞানী; তিনি ম্যাগনিফাইং গ্লাস আবিষ্কার করেন।
  • মুহাম্মদ আবদুস সালাম: পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী একমাত্র মুসলিম মনীষী ।

প্রযুক্তির ধারা অত্যন্ত গতিশীল ও নিত্য পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে মানবসভ্যতার যেমন বিবর্তন ঘটেছে তেমনি মানুষ নিত্যদিনের নানাবিধ সমস্যার সমাধানে প্রযুক্তিরও উন্নয়ন করেছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে দৈনন্দিন কাজকে করেছে সহজ থেকে সহজতর ।

মহান আল্লাহ তায়ালা ১৮ হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে মানুষই সর্বশ্রেষ্ঠ। বাকি সব মাখলুকাত মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। বিশ্বের সব সৃষ্টিই সরাসরি মানুষের প্রয়োজন পূরণে কাজে লাগানো সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজন। এজন্যই মানুষ প্রযুক্তির সাহায্য নেয় ।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিভিন্নভাবে মানুষকে প্রযুক্তির প্রতি উৎসাহিত করেছেন। পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আ)কে সৃষ্টির পরেই আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের বিভিন্ন বিষয়ের নাম ও সেগুলোর ব্যবহার শিখিয়েছেন। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন হলো বিশ্বের সব জ্ঞানের উৎস। এমন কোনো বিষয় নেই যার ইঙ্গিত কুরআনে নেই। প্রযুক্তির উন্নয়নের লক্ষ্যে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্নভাবে ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। যেমন—  খাদ্য সংরক্ষণে প্রযুক্তির উৎকর্ষের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে সুরা ইউসুফের ৪৭-৪৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন— 'তোমরা ক্রমাগত সাত বছর উত্তমরূপে ফসল ফলাতে থাকবে। অতঃপর ফসল তোলার সময় এলে তোমরা যে পরিমাণ ফসল তুলতে চাও তার মধ্য থেকে সামান্য অংশ তোমাদের খাবারের জন্য রাখবে, তা বাদ দিয়ে বাকি অংশ শীর্ষ সমেত রেখে দেবে। এরপর আসবে সাতটি কঠিন (খরার) বছর, তোমরা এ দিনের জন্য যা রেখেছিলে, তা খেয়ে যাবে, কিন্তু অল্প পরিমাণ ব্যতীত যা তোমরা (বীজের জন্য) তুলে রাখবে।'

এছাড়াও মানুষের জীবনকে আরও সহজ, সুন্দর, সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত করার জন্য আল্লাহ কুরআন ও তাঁর নবির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নির্দেশনা দিয়েছেন। নিচে কয়েকটি ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরা হলো- পোশাক প্রযুক্তির প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

'জান্নাতে তাদের স্বর্ণ-কঙ্কণে অলংকৃত করা হবে এবং তারা পাতলা ও মোটা রেশমের সবুজ কাপড় পরিধান করবে' (সুরা কাফ : ৩১)।

গৃহস্থালির বিভিন্ন ব্যবহার্য দ্রব্যাদি তৈরির প্রযুক্তি উৎকর্ষের জন্য পশুর চামড়া ব্যবহারে ইঙ্গিত দিয়ে আল্লাহ বলেছেন— আল্লাহ তায়ালা 'চতুষ্পদ জন্তুর চামড়া দিয়ে তোমাদের জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা করেছেন। তোমরা এগুলোকে সফরকালে ও অবস্থানকালে পাও। আর ভেড়ার পশম, উটের বাবরিচল ও ছাগলের লোম দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসবাবপত্র ও ব্যবহারের সামগ্রী (তৈরি করেছেন) (সুরা নাহ্ল: ৮০)।

যাতায়াতের সুবিধার জন্য ও মানব পদচারণা বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে আল্লাহ নৌ-প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে সুরা হুদ এর ৩৭-৩৮ নং আয়াতে হযরত নূহ (আ) এর কাহিনি বর্ণনা করেছেন । আল্লাহ বলেন, 'তুমি আমারই তত্ত্বাবধানে, আমারই আদেশে একটি নৌকা বানাও' (সুরা হুদ: ৩৭)

বাতাসকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শূন্যে ভেসে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যে যাওয়া যায় এই ধারণা আমরা পাই হযরত সুলায়মান (আ) এর ঘটনা থেকে, যা থেকে মানুষ 'এরোস্পেস' এর প্রযুক্তিগত ইঙ্গিত পায়।

লোহা ও তামার ব্যবহার প্রযুক্তির উন্নয়নকে করেছে ত্বরান্বিত। এ সম্পর্কে ইঙ্গিত রয়েছে আল কুরআনের সুরা সাবা-এর ১০-১৩ নং আয়াতে । আল্লাহ বলেন, '(আমি তাকে বলেছিলাম, সে বিগলিত লোহা দিয়ে) তুমি পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি করো এবং সেগুলোর কড়াসমূহ যথাযথভাবে সংযুক্ত করো' (সুরা সাবা : ১১)

কুরআন ও হাদিসের এরূপ ইঙ্গিতপূর্ণ বিভিন্ন বক্তব্যে উৎসাহিত হয়ে এবং গবেষণা করেই মুসলিম মনীষীগণ প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় নিজ নিজ অবদান রেখে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন । তাদের অবদান নিচে তুলে ধরা হলো-

কাগজ আবিষ্কারের আগে সাহাবিগণ ওহি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করতেন গাছের পাতা, বাকল, পাথর প্রভৃতি। ৭০৪ খ্রি. সমরখন্দ মুসলমানদের আয়ত্তে আসলে চীনের কাগজ শিল্পে প্রযুক্তির প্রাথমিক স্তরের ব্যাপক উন্নয়ন করেন মুসলমানগণ ।

মুসলিম বিজ্ঞানী আল জাজারী (১১৩৬-১২০৬ খ্রি.) ঘূর্ণায়মান হাতল আবিষ্কারের মাধ্যমে পানি উত্তোলনের যন্ত্র তৈরি করেন, যা হাইড্রো পাওয়ার প্রযুক্তিতে চলত। মধ্যযুগে মুসলিম বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই তার তৈরি এ যন্ত্রের ব্যবহার হতো। তিনি পানিচালিত জলঘড়িও তৈরি করেছিলেন।

স্পেনের বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী আব্বাস ইবনে ফারনাস (৮১০-৮৭৫ খ্রি.) সর্বপ্রথম সূক্ষ্ম ক্রোনোমিটার ও চশমা আবিষ্কার করেন ।

মিশরের মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে ইউনুস (৯৫০-৯৯৬) ঘড়িতে পেন্ডুলামের সফল ব্যবহার করেন। ইবনে সিনা (চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক) তার ‘মায়ার আল আকল' এ কপিকল ভারোত্তোলক, স্ক্রু, গোঁজ, চরকি এর ব্যবহার সম্পর্কে প্রথম আলোকপাত করেন। মহাবিজ্ঞানী যাকারিয়া আল রাযি নবম শতাব্দীতে কেরোসিন উৎপাদন পদ্ধতি আবিষ্কার করে তৈরি করেন নাফাতাহ্ বা কেরোসিনের বাতি। তিনি কৃত্রিম উপায়ে বরফ তৈরির পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেন।

চিকিৎসা প্রযুক্তিতে ইবনে সিনাকেই জনকের আসন দেওয়া হয়। আল রাযি, হাসান ইবনে হায়সাম প্রমুখ মনীষীগণ শরীরের বাড়তি গোশত কাটা, হাড় কাটা, দাঁত তোলা, ক্ষত সেলাই করা প্রভৃতি কৌশলী যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রযুক্তিতে আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়েছিলেন।

হাসান ইবনে হায়সামের তৈরি করা ‘ম্যাগনিফাইং গ্লাস' গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। এটি বর্তমানেও গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানেও মুসলমানরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মুসলমানদের মধ্যে ইব্রাহীম আল ফাজারী হলেন প্রথম প্রযুক্তিবিদ, যিনি সূর্য ও নক্ষত্রের উচ্চতা নির্ণয়ের সহায়ক যন্ত্র 'অ্যাস্ট্রলেইব. (Astrolabe) নির্মাণ করেন। এছাড়াও একাদশ শতাব্দীর দিকে সূর্যের উচ্চতা নির্ণয়ের নিমিত্তে মুসলিম বিজ্ঞানী আবু মোহাম্মদ আল খুজাব্দী তৈরি করেন— 'আস সুদ আল ফাখরী' এবং 'আল আলা আস সামিল' নামে দুটি যন্ত্র। দ্বাদশ শতাব্দীর দিকে নাসিরউদ্দিন তুসী একটি 'মানমন্দির' প্রতিষ্ঠা করেন। পঞ্চদশ শতাব্দীতে এসে ‘ইকুয়েটেরিয়াম' নামে গ্রহসমূহের অবস্থান নির্ণয়ে সহায়ক একটি যন্ত্র তৈরি করেন মুসলিম জ্যোতির্বিদ জামশিদ গিয়াসউদ্দিন আল কামী ।

মুসলমান পরমাণু বিজ্ঞানীদের মধ্যে ভারতের ড. এ. পি. জে আব্দুল কালাম ও পাকিস্তানের ড. আব্দুল কাদির খানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় । এছাড়াও পোশাক প্রযুক্তির উন্নয়ন মুসলমানদের হাত ধরেই হয়েছিল। কুফাতে তৈরি মেয়েদের ওড়না 'কুফিয়া' বাগদাদের 'বাদাচিন'; মাওসিলের 'মসলিন' মিসরের ফুসতাতের কাপড় 'ফাসতিযান' প্রভৃতি কাপড় তৈরির উন্নত প্রযুক্তির স্বাক্ষর বহন করে। বর্তমানেও ইরানের কার্পেট ও সিরামিক শিল্প বিখ্যাত। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ।

ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, মানুষ তার প্রয়োজন পূরণে প্রযুক্তির উন্নয়নে সর্বদাই সচেষ্ট ছিল। আর এ সব উন্নয়নে মুসলমানদের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। মুসলমানগণই ছিলেন এই উন্নয়নের পথ প্রদর্শক। বর্তমানের এই আধুনিক প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ, যার শুরুটা হয়েছিল মুসলমানদের হাতেই।

দলীয় কাজ: শিক্ষার্থীরা ৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে প্রতিটি গ্রুপ কুরআন থেকে বর্তমানে আবিষ্কৃত ১টি করে প্রযুক্তির ইঙ্গিতপূর্ণ আয়াত বের করে খাতায় লিখবে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ