• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি
ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি

চিকিৎসাবিজ্ঞানে মুসলিম মনীষীদের অবদান - Contributions of Muslim Scholars in Medical Science

চিকিৎসাবিজ্ঞানের আধুনিকায়ন এবং উদ্ভাবিত তত্ত্বসমূহের বাস্তব প্রয়োগ করে মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ এ শাস্ত্রে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। পৃথিবীর প্রাথমিক দিকে মানুষের মধ্যে চিকিৎসার ধারণা ততটা প্রবল ছিল না। কুরআন মজিদে মানুষের অসুস্থতা ও সেবা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের পর মুসলিমগণ এ বিষয়ে সচেতন হতে শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (স) তাঁর বাণীতে বিভিন্ন ভেষজ ও প্রাকৃতিক বিষয় দিয়ে চিকিৎসার নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে রাসুলের (স) চিকিৎসাবিষয়ক এ বাণীই মুসলিমদের পথপরিক্রমার পাথেয় হয়। মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মধ্যে আবু বকর আল- রাযি, ইবনে সিনা, আল-যাহরাবি, হাসান ইবনে হায়সাম, আল-তাবারি, ইবনে আল-নাফিস, ইবনে আল-আব্বাস, ইবনে ঈসা, ইবনে রুশদ, আবুল কাসিম প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আবু বকর আল-রাযি

খ্যাতনামা মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী, রসায়নবিদ ও দার্শনিক আবু বকর আল-রাযি ৮৬৪ খ্রি. ইরানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রায় ৩৫ বছর ইরানের রয়েল হাসপাতাল এবং বাগদাদের মুক্তাদারি হাসপাতালে চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কার করেন এবং ওষুধ তৈরি করেন। আল-রাযি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি তখনও পর্যন্ত ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি এমন রোগ নিয়েও গবেষণা করেন। তিনিই প্রথম বসন্ত ও হাম রোগের প্রকৃতি, সংক্রমণ ও নিরাময় নিয়ে গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার লেখা 'আল-জুদারী ওয়াল হাসবাহ' ছিল অত্যন্ত মৌলিক গ্রন্থ। এ গ্রন্থের আগে কোনো সভ্যতার লোকদেরই এ সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না।

আল-রাযি মূত্রনালি ও কিডনির পাথর রোগ সম্পর্কেও প্রাথমিক আলোচনা করেন। তিনি সার্জারি বা শল্য চিকিৎসায় বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। আল-রাযি হাম, শিশু চিকিৎসা, নিউরোসাইকিয়াট্রিক প্রভৃতি সম্পর্কে নতুন মতবাদ দেন। তিনিই শিশুরোগ ও এর চিকিৎসা সম্পর্কে প্রথম গ্রন্থ রচনা করেন। এজন্য আবু বকর আল-রাযিকে শিশু চিকিৎসার জনক (Father of Paediatrics) বলা হয়।

ইবনে সিনা

আবু আলী ইবনে সিনা হলেন আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক। তিনি আদিম পদ্ধতির চিকিৎসার পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতি চালু করেন। সেজন্য তাকে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র, চিকিৎসাপ্রণালি এবং শল্য চিকিৎসার দিশারী মনে করা হয়। ইবনে সিনা ওষুধ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ওষুধ তৈরি, সংরক্ষণ ও তা প্রয়োগের আধুনিক পদ্ধতির উদ্ভাবক তিনি। এজন্য ইউরোপীয় চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা তাকে 'Master of Medicine' বলেছেন। ইবনে সিনা প্রাচীন গ্রিসের চিকিৎসাবিজ্ঞানী হিপোক্রেটিস (Hippocrates) ও গ্যালেনের ( Galen) রেখে যাওয়া অসম্পূর্ণ চিকিৎসাশাস্ত্রের পূর্ণতা বিধান করেন। মধ্যযুগে যক্ষ্মা মহামারি আকার ধারণ করেছিল।

ইবনে সিনাই প্রথম ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, যক্ষ্মা একটি সংক্রামক ব্যাধি। মাটি ও পানির মাধ্যমে এটি বিস্তার লাভ করে। যক্ষ্মা বিষয়ে ইবনে সিনার গবেষণা ছিল অত্যন্ত আধুনিক। চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপর ইবনে সিনা বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হচ্ছে “কানুন ফিত তিব'। তিনি এ গ্রন্থে ৭৬০টি ওষুধের বর্ণনা এবং চিকিৎসাপদ্ধতি উল্লেখ করেছেন।

ইবনে সিনা এটি ছাড়াও 'কিতাবুস শিফা' নামে ১৮ খণ্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। এতে তিনি বিভিন্ন রোগের উপসর্গ ও সেগুলোর নিরাময় পদ্ধতি সম্পর্কে বিবরণ দেন। কিতাবুল মুরাদ, কিতাবুল নাযাত, কিতাবুল কুলনজ ইবনে সিনার অন্যতম গ্রন্থ ।

আল-যাহরাবি

আবুল কাসিম যাহরাবি স্পেনের সর্বশ্রেষ্ঠ শল্য চিকিৎসক (সার্জন)। শল্য চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কার এবং সর্বসাধারণের কাছে চিক্সিাশাস্ত্রকে সহজ পাঠ্যে পরিণত করা তার শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব। তিনি দাঁত সাফ করা, মাড়ির গোশত কাটা, দাঁত তোলা, চোখের ছানি অপসারণ, অন্ধত্ব দূরীকরণ, মূত্রনালির পাথর অপসারণ, ভাঙা হাড় বের করা ও বাড়তি গোশত কেটে ফেলার যন্ত্র তৈরি করেন। তার বিখ্যাত বই 'আল-তাসরিফ লিমান আযিযা আন আল- তায়ালিফ' তাকে সাধারণ লোকদের প্রিয় চিকিৎসকে পরিণত করেছে।

হাসান ইবনে হায়সাম

হাসান ইবনে হায়সাম হলেন শ্রেষ্ঠ দৃষ্টিবিজ্ঞানী। চক্ষুচিকিৎসার প্রায় সব আধুনিক পদ্ধতিরই তিনি সফল প্রয়োগকারী ছিলেন। তার গ্রন্থ 'কিতাবুল মানাযির' তাকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।

আল-তাবারি

মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী আল-তাবারি আরবি ভাষায় সর্বপ্রথম চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি বিভিন্ন রোগের প্রকৃতি ও চিকিৎসাপদ্ধতি বিষয়ে কয়েকটি মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেন। এগুলোর মধ্যে 'ফিরদাউস আল-হিকমাহ ফিত-তিব' বা 'চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বর্গ' গ্রন্থটি সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। এটিকে চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রথম বিশ্বকোষ বলা হয়।
ইবনে নাফিস: ইবনে আল-নাফিস মানবদেহে রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। যদিও এটি উইলিয়াম হার্ভে ও মিগুয়েল সার্ভেটাসের আবিষ্কার বলে চিহ্নিত হয়, কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো তাদের আবিষ্কারের প্রায় তিনশত বছর আগে ইবনে নাফিস এ আবিষ্কার সম্পন্ন করেন।

ইবনে আব্বাস

আলী ইবনে আব্বাস আল-মাজুসী স্মরণকালের অন্যতম মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী। চিকিৎসাশাস্ত্রে তার শ্রেষ্ঠ অবদান 'কিতাব আল মালিকী'। এ গ্রন্থে তিনি চিকিৎসা পদ্ধতির তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক দিক নিয়ে আলোচনা করেন। ইবনে ঈসা; আলী ইবনে ঈসা চক্ষুবিশেষজ্ঞ ছিলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর তার বত্রিশ খানা মূল্যবান গ্রন্থ রয়েছে। এর মধ্যে 'তাযকিরাত আল-কাহালিন' অন্যতম।

ইবনে রুশদ

খ্যাতিমান দার্শনিক ইবনে রুশদ ব্যাবহারিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। তিনি বহু প্রতিষেধক ওষুধ আবিষ্কার করেন। 'আল-কুল্লিয়াত ফিত তিব' তার চিকিৎসাবিষয়ক গ্ৰন্থ।

আম্মার

শীর্ষস্থানীয় চক্ষুবিশেষজ্ঞদের মধ্যে আম্মার অন্যতম। এ বিষয়ে তিনি 'আল-মুনতাখাব ফি ইলাজ আল-আইন' নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থে আম্মার ১৩০ রকমের চক্ষু রোগ ও এগুলোর চিকিৎসা পদ্ধতি বিশ্লেষণ করেন।

বর্তমানে প্রচলিত জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতির পাশাপাশি মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা ভেষজ চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপরও কাজ করেন। তারা এ শাস্ত্রের আবিষ্কার, বিকাশ ও সমৃদ্ধির নেপথ্যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ভেষজ পদ্ধতির ওপর মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা প্রথম গ্রন্থ রচনা করেন এবং এর আলোকে ওষুধ তৈরি ও বিপণনের জন্য সংস্থা গড়ে তোলেন। সর্বসাধারণের নিয়মতান্ত্রিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে মুসলিমরা প্রথম পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল গড়ে তোলেন। খলিফা ওয়ালিদের নির্দেশে ৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে সিরিয়ার দামেস্কে এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়।

এভাবে মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের অসাধারণ মেধা ও দক্ষতায় চিকিৎসাবিজ্ঞান শাস্ত্রগত উন্নতির পাশাপাশি ব্যাবহারিক ক্ষেত্রেও আধুনিক রূপ লাভ করে ।

দলীয় কাজ: শ্রেণির সব শিক্ষার্থী দুটি দলে ভাগ হয়ে প্রত্যেক দল একজন করে বক্তা নির্বাচন করবে। চিকিৎসাশাস্ত্রে মুসলিম মনীষীদের অবদান' সম্পর্কে দুই দল থেকে দুজন বক্তা বক্তৃতা দেবে। শ্রেণিশিক্ষক তা পর্যবেক্ষণ করবেন।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ