• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি

শরিয়তের উৎস

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

শরিয়তের উৎস

শরিয়ত

শরিয়ত আরবি শব্দ। এর অর্থ পথ, রাস্তা। এটি জীবনপদ্ধতি, আইন-কানুন, বিধি-বিধান অর্থেও ব্যবহৃত হয় । ব্যাপক অর্থে শরিয়ত হলো এমন সুদৃঢ় ও সুস্পষ্ট পথ, যা অনুসরণ করলে মানুষ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নিজ গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। ইসলামি পরিভাষায়, ইসলামি কার্যনীতি বা জীবনপদ্ধতিকে শরিয়ত বলা হয়। অন্যকথায়, ইসলামি আইন-কানুন বা বিধি-বিধানকে একত্রে শরিয়ত বলা হয় । অর্থাৎ মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স.) যেসব আদেশ-নিষেধ ও পথনির্দেশনা মানুষকে জীবন পরিচালনার জন্য প্রদান করেছেন তাকে শরিয়ত বলে ।
শরিয়ত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

ثُمَّ جَعَلْنَكَ عَلَى شَرِيعَةٍ مِّنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ

অর্থ : “অতঃপর আমি আপনাকে শরিয়তের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছি। সুতরাং আপনি তার অনুসরণ করুন । আর আপনি অজ্ঞদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করবেন না।” (সূরা আল-জাসিয়া, আয়াত ১৮)

শরিয়তের বিষয়বস্তু ও পরিধি

শরিয়তের বিষয়বস্তু ও পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। এটি হলো মানবজাতির জন্য সার্বিক ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানব জীবনের সকল বিষয়ের বিধি-বিধান ও নির্দেশনা এতে বিদ্যমান। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا

অর্থ : “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৩)

সুতরাং বোঝা গেল যে, ইসলামি শরিয়তের বিষয়বস্তু ও পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। মুসলিম মনীষীগণ শরিয়তের বিষয়বস্তুকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা-

  • আকিদা বা বিশ্বাসগত বিধি-বিধান।
  • নৈতিকতা ও চরিত্র সংক্রান্ত রীতি-নীতি 
  • বাস্তব কাজকর্ম সংক্রান্ত নিয়মকানুন ।

বস্তুত মানুষের সবধরনের আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনা উপরিউক্ত তিনটি বিষয়ের আওতাভুক্ত। ফলে মানুষের আর্থ- সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় সকল কাজই শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত। শরিয়তের নির্দেশনার বাইরে কোনো কাজই নেই ।

শরিয়তের গুরুত্ব

মানবজীবনে শরিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম । শরিয়ত হলো মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রদত্ত আদেশ-নিষেধ ও বিধি-বিধান। সুতরাং শরিয়ত মেনে চললে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুল খুশি হন। অন্যদিকে, শরিয়ত অস্বীকার করা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুলকে অস্বীকার করার নামান্তর। কোনো মুসলমান এরূপ কাজ করতে পারে না। এমনকি শরিয়তের এক অংশ পালন করা আর অন্য অংশ অস্বীকার করাও মারাত্মক পাপ (কুফর) ।

যে ব্যক্তি এরূপ করে তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে । আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর, আর কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান কর? তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল হলো পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। আর কিয়ামতের দিন তারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ৮৫)

শরিয়ত হলো জীবন পরিচালনার দিকনির্দেশনা। এর দ্বারা জীবনের নানা ক্ষেত্রে ইসলামি বিধি-নিষেধ জানা যায় ।

কোনটি হালাল, কোনটি হারাম ইত্যাদি জানা যায় । ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল ইত্যাদি বিষয়ের জ্ঞানও শরিয়তের শিক্ষার মাধ্যমেই লাভ করা যায়। উত্তম চরিত্র ও নৈতিকতার নানা শিক্ষাও শরিয়তে বিবৃত রয়েছে। সুতরাং সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনার জন্য শরিয়ত অপরিহার্য।

তাছাড়া শরিয়ত আমাদের ইবাদতের পদ্ধতি ও নিয়ম-কানুন শিক্ষা দেয়। সালাত, যাকাত, সাওম, হজ ইত্যাদি কীভাবে, কোথায়, কোন সময়ে আদায় করতে হয় তাও শরিয়তের বর্ণনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের উপায়, পারিবারিক ও সামাজিক সম্প্রীতি ইত্যাদিও শরিয়তের আওতাভুক্ত । অতএব, মানুষের সার্বিক জীবনাচরণে শরিয়তের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

শরিয়তের উৎসসমূহ

শরিয়ত হলো ইসলামি জীবনপদ্ধতি। এটি আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুলের আদেশ-নিষেধ ও দিকনির্দেশনার সমষ্টি । অতএব, শরিয়ত এর প্রধান উৎস দুটি। যথা- আল-কুরআন ও আল-হাদিস বা সুন্নাহ।

পরবর্তীতে কুরআন ও সুন্নাহ এর স্বীকৃতি ও নির্দেশনার ভিত্তিতে শরিয়তের আরও দুটি উৎস নির্ধারণ করা হয় । এগুলো হলো ইজমা ও কিয়াস। সুতরাং আমরা বলতে পারি- শরিয়ত এর উৎস চারটি। যথা-

  • আল-কুরআন
  • সুন্নাহ
  • ইজমা
  • কিয়াস 

আমরা পর্যায়ক্রমে শরিয়তের এ চারটি উৎস সম্পর্কে জানব ।

কাজ : শিক্ষার্থীরা ইসলামি শরিয়তের পরিচয় ও গুরুত্ব সম্পর্কে ১০টি বাক্য নিজ খাতায় বাড়ি থেকে লিখে এনে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করবে ।

পূর্ববর্তী