- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- নবম-দশম শ্রেণি
শরিয়তের উৎস
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
শরিয়তের উৎস
সূরা আদ-দুহা
সূরা আদ-দুহা আল-কুরআনের ৯৩তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ১১। এটি পবিত্র মক্কা নগরীতে নাজিল হয় । সূরাটির প্রথম শব্দ দুহা থেকে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে আদ-দুহা।
শানে নুযুল
হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে যে, একবার রাসুলুল্লাহ (স.) অসুস্থ থাকার কারণে দুই-তিন রাত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতে পারেননি । এ সময় জিবরাইল (আ.) আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর নিকট শুহি নিয়ে আগমন করেননি । এতে মক্কার কাফির-মুশরিকরা বলতে লাগল যে, মুহাম্মদ (স.)-কে তাঁর প্রতিপালক পরিত্যাগ করেছে এবং তাঁর প্রতি বিরূপ হয়েছে।
অন্যদিকে আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিল মহানবি (স.)-এর নিকট এসে বলতে লাগল, “হে মুহাম্মদ! আমার মনে হয় তোমার নিকট যে শয়তান আসত সে তোমাকে পরিত্যাগ করে চলে গেছে। দুই-তিন রাত যাবৎ আমি তাকে তোমার নিকট আসতে দেখছি না।” কাফিরদের এসব কথার ও ঠাট্টা-বিদ্রূপে মহানবি (স.) মর্মাহত হন। তখন আল্লাহ্ তারালা প্রিয়নবি (স.)-কে সান্ত্বনা প্রদান করে এ সূরা নাজিল করেন। এ সূরার মাধ্যমে কাফিরদের প্রচারিত গুজবের প্রতিবাদও জানানো হয়।
ব্যাখ্যা
এ সুরায় আল্লাহ তায়ালা মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)- কে প্রদত্ত নানা নিয়ামতের কথা বর্ণনা করেছেন। নবি-রাসুলগণ আল্লাহ তায়ালার মনোনীত ব্যক্তি। তাঁরা আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা। মহান আল্লাহ তাঁদের অজস্র নিয়ামত দান করেন। তাঁদের সকল বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন । আমাদের প্রিয়নবি (স.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ও রাসুল। তিনি ছিলেন আল্লাহ তায়ালার হাবিব অর্থাৎ প্রিয়তম বা বন্ধু । আল্লাহ তাঁকে সর্বাবস্থায় সাহায্য ও নিয়ামত দান করেন।
আমরা জানি, হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর জন্মের পূর্বেই তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। এরপর তাঁর ছয় বছর বয়সে তাঁর মাতা ইন্তেকাল করেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা স্বীয় অসীম রহমতে তাঁকে সুন্দরভাবে লালনপালন করেন । রাসুলুল্লাহ (স.) মানবজাতির দুঃখকষ্ট লাঘবের জন্য ও পরকালীন মুক্তির জন্য চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে হিদায়াত দান করেন, সত্য ও সুন্দর পথের নির্দেশনা প্রদান করেন । মহানবি (স.) দরিদ্র ছিলেন। আল্লাহ তায়ালাই তাঁকে অভাবমুক্ত করেন । সচ্ছলতা দান করেন। এভাবে রাসুলুল্লাহ (স.)-কে দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ তায়ালা বহু নিয়ামত দান করেন ।
পাশাপাশি পরকালেও আল্লাহ তায়ালা রাসুল (স.)-কে নানা নিয়ামত দান করার সুসংবাদ দান করেছেন এ সূরায়। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন যে, মহানবি (স.)-এর আখিরাতের জীবন দুনিয়ার জীবন অপেক্ষা বহুগুণে উত্তম হবে। সেখানে তিনি উত্তম প্রতিদান লাভ করবেন এবং আল্লাহ তায়ালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবেন ।
এ সমস্ত নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ তায়ালা রাসুল (স.)-কে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশ দেন । রাসুল (স.)-কে ইয়াতীম ও ভিক্ষুকদের সাথে কঠোর ব্যবহার না করার আদেশ দেন। পরিশেষে আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও প্রচার করার দায়িত্ব প্রদান করেন ।
শিক্ষা
এ সূরা থেকে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিক্ষা লাভ করি । যেমন :
১. আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের কখনোই পরিত্যাগ করেন না।
২. তিনিই তাদের সকল বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন ।
৩. পরকালে তিনি তাদের কল্যাণময় জীবন দান করবেন ।
৪. ধনী ও সচ্ছল ব্যক্তিদের উচিত গরিব-দুঃখী, ইয়াতীম ও ভিক্ষুকদের কল্যাণ করা।
৫. অভাবী, সাহায্যপ্রার্থী, ইয়াতীমদের প্রতি কঠোর হওয়া যাবে না, তাদের গালমন্দ কিংবা মারধর করা যাবে না এবং তাঁদের ধমকও দেওয়া যাবে না। বরং তাদের সাথে সদাচরণ করতে হবে।
৬. দুনিয়ার সকল কল্যাণ ও নিয়ামত আল্লাহ তায়ালার দান। এসব নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা সকলের কর্তব্য। যেমন আল্লাহ তায়ালা আমাদের ইমান, কুরআন, ধন-দৌলত, জ্ঞান-বুদ্ধি ইত্যাদি নিয়ামত দান করেছেন । সুতরাং এসবের জন্য আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। এসব নিরামতের কথা মানুষের মাঝে প্রচার করতে হবে ।
কাজ : শিক্ষার্থীরা সুরা আদ-দুহা-এর শানে নুযুল নিজ খাতায় মুখস্থ লিখে শিক্ষককে দেখাবে ।