• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি

শরিয়তের উৎস

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

শরিয়তের উৎস

তিলাওয়াত : গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য

তিলাওয়াত শব্দের অর্থ পাঠ করা, আবৃত্তি করা, পড়া, অনুসরণ করা ইত্যাদি। আল-কুরআন পাঠ করাকে ইসলামি পরিভাষায় কুরআন তিলাওয়াত বলা হয়। কুরআন মজিদ মুখস্থ পড়া যায়, আবার দেখেও তিলাওয়াত করা যায়। আল-কুরআন দেখে পড়াকে নাযিরা তিলাওয়াত বলা হয়।

কুরআন মজিদ শিখতে হলে প্রথমে দেখে দেখে তা পাঠ করতে হয়। অতঃপর হরকত, হরফ ইত্যাদি চিনে তাজবিদ সহকারে পাঠ করতে হয়। আমরা অনেকেই পুরো কুরআন মজিদ মুখস্থ করতে পারিনি। সুতরাং আমরা নিয়মিত দেখে দেখে তাজবিদসহ আল-কুরআন তিলাওয়াত করব। এভাবে দেখে দেখে কুরআন তিলাওয়াত করাও উত্তম কাজ। এতে অনেক নেকি বা সাওয়াব পাওয়া যায় ।

আল-কুরআন মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী। এটি মানুষের প্রতি আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত । এটি হলো পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান-ভাণ্ডার। এতে যেমন তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, ইবাদত ইত্যাদি বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে, তেমনি পার্থিব জীবনের প্রয়োজনীয় নানা জ্ঞান-বিজ্ঞানের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ও নির্দেশনা রয়েছে। এজন্য একজন ফরাসি পণ্ডিত যথার্থই বলেছেন, “কুরআন বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বিজ্ঞান সংস্থা, ভাষাবিদদের জন্য শব্দকোষ, বৈয়াকরণের জন্য ব্যাকরণ গ্রন্থ এবং বিধানের জন্য একটি বিশ্বকোষ।”

সুতরাং হালকাভাবে আল-কুরআন পাঠ করলেই চলবে না। বরং একে খুবই গুরুত্বের সাথে তিলাওয়াত করতে হবে। এর মর্মার্থ ও তাৎপর্য উপলব্ধি করতে হবে। এতে বর্ণিত বিষয়াদি সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-গবেষণা করতে হবে। তাহলে আমরা আল-কুরআনের জ্ঞান ও শিক্ষা আয়ত্ত করতে পারব । আল্লাহ তায়ালাও চিন্তা-গবেষণা সহকারে কুরআন তিলাওয়াতের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা করে না, না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?” (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ২৪) অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “এটি কল্যাণময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি নাজিল করেছি যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ (এ থেকে) উপদেশ গ্রহণ করে ।” (সুরা সা'দ, আয়াত ২৯)

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,

وَلَقَد يَتَرنَا الْقُرْآنَ لِلذِكْرِ فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرِه

অর্থ : “নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি, অতএব কোনো উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি?” (সূরা আল-কামার, আয়াত ২২)

অতএব বুঝেশুনে ও চিন্তা-গবেষণা সহকারে কুরআন পড়া উচিত। এভাবে তিলাওয়াত করলে আল-কুরআনের শিক্ষা ও উপদেশ অনুধাবন করা যায় । চিন্তা-গবেষণার পাশাপাশি আল-কুরআন সহিহ-শুদ্ধ ও সুন্দরভাবে পাঠ করাও অত্যাবশ্যক । কুরআন মজিদ ভুল ও অসুন্দর সুরে তিলাওয়াত করলে গুনাহ হয় । অশুদ্ধ ও অসুন্দররূপে কুরআন তিলাওয়াত করলে নামায শুদ্ধ হয় না । শুদ্ধ ও সুন্দররূপে কুরআন তিলাওয়াত করার নিয়মকে তাজবিদ বলা হয়। পূর্ববর্তী শ্রেণিসমূহে আমরা তাজবিদের নানা নিয়মকানুন জেনে এসেছি । তাজবিদসহ কুরআন তিলাওয়াত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ রয়েছে। তিনি বলেন-

وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًاه

অর্থ : : “আর আপনি কুরআন আবৃত্তি করুন ধীরে ধীরে ও সুস্পষ্টভাবে।” (সূরা আল-মুাম্মিল, আয়াত ৪) সুন্দর সুরে কুরআন তিলাওয়াত প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন-

لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَّمْ يَتَغَنَّ بِالْقُرْآنِ -

অর্থ : “যে ব্যক্তি সুললিত কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয় । অর্থাৎ সে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত নয়।” (বুখারি)

বস্তুত রাসুলুল্লাহ (স.) অত্যন্ত সুন্দর সুমধুর স্বরে তাজবিদ সহকারে কুরআন তিলাওয়াত করতেন । আমরাও শুদ্ধ ও সুন্দররূপে কুরআন তিলাওয়াত করতে চেষ্টা করব ।
কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত অত্যন্ত বেশি । এর প্রতিটি হরফ তিলাওয়াতেই নেকি পাওয়া যায় । নবি করিম (স.) বলেন,

مَن قَرَأَ حَرْفًا مِّنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا -

অর্থ : “যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি হরফও পাঠ করবে সে একটি নেকি লাভ করবে। আর এ নেকির পরিমাণ হলো দশ গুণ।” (তিরমিযি)

বস্তুত, কুরআন তিলাওয়াত উত্তম ইবাদত । রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন-

أفَضَلُ عِبَادَةِ أُمَّتِي قِرَاءَةُ الْقُرْآنِ -

অর্থ : “আমার উম্মতের উত্তম ইবাদত হলো কুরআন তিলাওয়াত।” (বায়হাকি)

কুরআন হলো নুর বা জ্যোতি। এটি তিলাওয়াতকারীর মর্যাদা সমুন্নত করে। কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। এর মাধ্যমে মানুষের অন্তর পরিশুদ্ধ হয় । মানুষ নৈতিক ও মানবিক গুণাবলিতে উদ্ভাসিত হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “এই অন্তরসমূহে মরিচা ধরে যেভাবে লোহায় পানি লাগলে মরিচা ধরে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো : হে আল্লাহর রাসুল (স.), এর পরিশোধক কী? তিনি বললেন, মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করা এবং কুরআন তিলাওয়াত করা।” (বায়হাকি)

প্রকৃতপক্ষে, যথাযথভাবে কুরআন তিলাওয়াত করার দ্বারা মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারে। শুদ্ধ ও সুন্দররূপে কুরআন তিলাওয়াত করলে এবং এর মর্মার্থ বুঝে সে অনুযায়ী আমল করলে মানুষ প্রভূত সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হয়। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে এবং সে অনুযায়ী আমল করে, কিয়ামতের দিন তার পিতামাতাকে সূর্যের চাইতেও উজ্জ্বল মুকুট পরানো হবে।” (আহমাদ ও আবু দাউদ)। অতএব, আমরা কুরআন তিলাওয়াতে যত্নবান হব ।

শানে নুযুল

'শান' শব্দের অর্থ অবস্থা, মর্যাদা, কারণ, ঘটনা, পটভূমি। আর নুযুল অর্থ অবতরণ । অতএব, শানে নুযুল অর্থ অবতরণের কারণ বা পটভুমি । ইসলামি পরিভাষায়, আল-কুরআনের সূরা বা আয়াত নাজিলের কারণ বা পটভূমিকে শানে নুযুল' বলা হয় । একে 'সববে নুযুল'ও বলা হয় ।

আল-কুরআন মহানবি (স.)-এর প্রতি একসাথে নাজিল হয়নি । বরং নানা প্রয়োজন উপলক্ষে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে অল্প অল্প করে নাজিল হয়েছে। কোনো ঘটনার বিধান বর্ণনায় কিংবা কোনো সমস্যার সমাধানে কুরআনের অংশবিশেষ নাজিল হতো। যে ঘটনা বা অবস্থাকে কেন্দ্র করে আল-কুরআনের আয়াত বা সুরা নাজিল হতো সে ঘটনা বা অবস্থাকে ঐ সূরা বা আয়াতের শানে নুযুল বলা হয় । যেমন : রাসুলুল্লাহ (স.)-এর শিশুপুত্র ইন্তেকাল করলে কাফিররা তাঁকে আবতার বা নির্বংশ বলে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে লাগল । এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা মহানবি (স.)-কে সান্ত্বনা দিয়ে সূরা আল-কাওসার নাজিল করেন। অতএব, মহানবি (স.)-এর প্রতি কাফিরদের উপহাস করার ঘটনাটি সূরা আল-কাওসারের শানে নুযুল হিসেবে পরিচিত। শানে নুযুল জানার উপকারিতা অনেক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

ক. এর দ্বারা শরিয়তের বিধান প্রবর্তনের রহস্য জানা যায় ।

খ. আয়াতের অর্থ, উদ্দেশ্য ও সঠিক মর্মার্থ অবগত হওয়া যায় ।

কাজ : শিক্ষার্থীরা কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে ১০টি বাক্য নিজ খাতায় লিখে শিক্ষককে দেখাবে।