- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি : বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি : বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত
মহাকাশ অভিযান (Space Exploration)
মহাকাশচারীসহ কিংবা মহাকাশচারী ছাড়াই কোনো মহাকাশযান যখন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাঁধন কাটিয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে কমপক্ষে একশত কিলোমিটার উপরে বায়ুমণ্ডলের বাইরে যায় আমরা সেটাকে মহাকাশ অভিযান বলে থাকি। মহাকাশ অভিযানের কয়েকটি মাইল ফলকের মাঝে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো, ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবরে মহাকাশে প্রথম উপগ্রহ স্পুটনিক উৎক্ষেপণ, ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল প্রথম মানুষ, ঘুরি গ্যাগারিনের মহাকাশ অভিযান, ২০ জুলাই ১৯৬৯ প্রথম মানুষের চাঁদে অবতরণ, ২ ডিসেম্বর ১৯৭১ প্রথম মঙ্গল গ্রহে মার্স-৩-এর অবতরণ এবং ১২ এপ্রিল ১৯৮১ প্রথম স্পেস শাটল উৎক্ষেপণ। এর ভেতর চাঁদে অবতরণ এবং স্পেস শাটলের উৎক্ষেপণ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, অন্যগুলো ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের। মহাকাশ অভিযান করার জন্য একটি মহাকাশযানকে ঘণ্টায় প্রায় তিরিশ হাজার মাইল গতিবেগ অর্জন করতে হয় যেটি শব্দের গতিবেগ থেকে প্রায় আটগুণ বেশি। এর জন্য একাধিক রকেটকে নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
মহাকাশচারীসহ একটি মহাকাশযানকে আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে হলে এই প্রচণ্ড গতিবেগে বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করার সময় বাতাসের ঘর্ষণে সৃষ্ট তাপকে বিকিরণ করে তার গতিবেগ আবার সহনশীল পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিজ্ঞানীদের দীর্ঘকাল গবেষণা করতে হয়েছে। মহাকাশযানের গতিপথ নির্ণয়, যন্ত্রপাতি নিখুঁতভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ এবং সর্বক্ষণ পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হয়।
মহাকাশ প্রযুক্তির বিকাশ হওয়ার পর অসংখ্য স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য এক ধরনের স্যাটেলাইটকে বলে জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট। এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৬০০০ কিলোমিটার উপরে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে মিল রেখে হবহ একই গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, তাই জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটকে পৃথিবী থেকে আকাশে এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে বলে মনে হয়। টেলিকমিউনিকেশনে ব্যবহার করার জন্য এটি প্রথম আবশ্যকীয় শর্ত। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু-১ নামে যে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে স্থাপন করে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিকানা অর্জন করেছে, সেটি একটি জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট।
ব্যবহার (Application)
বর্তমান বিশ্বে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি প্রযুক্তি। শুনে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করি। আমাদের স্মার্টফোনে যে জিপিএস (GPS: Global Positioning System) আছে, সেগুলো অসংখ্য স্যাটেলাইটের সিগনাল ব্যবহার করে কাজ করে। যখন আমরা টেলিভিশনে কোনো অনুষ্ঠান দেখি সেগুলো অনেক সময় স্যাটেলাইট থেকে সম্প্রচার করা হয়। আমরা যখন দূর দেশে কথা বলি অনেক সময়েই সেই কথাগুলো স্যাটেলাইটের ভেতর দিয়ে সেখানে যায়। যখন সমুদ্রে নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়, আবহাওয়া স্যাটেলাইট তার নিখুঁত ছবি তুলে আমাদের সতর্ক করে দেয়। মহাকাশ গবেষণায় স্যাটেলাইট অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে, হাবল টেলিস্কোপে তোলা গ্রহ-নক্ষত্রের ছবি বিজ্ঞানের জগতে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করেছে।
তবে মহাকাশ অভিযানে প্রযুক্তিগত সমস্যা ছাড়াও মনুষ্য সৃষ্ট সমস্যাও আছে, যেমন মহাকাশে বিভিন্ন উচ্চতায় অসংখ্য পরিতাক্ত এবং অকেজো মহাকাশযান কিংবা তাদের ভগ্নাংশ অচিন্তনীয় গতিবেগে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে যাচ্ছে। সেগুলোর সঙ্গে অন্য মহাকাশযানের সংঘর্ষের আশঙ্কা এখন একটি বাস্তব সমস্যা। মহাকাশ অভিযান যে এখন শুধু মানুষের কল্যাণের জন্য করা হয় সেটিও সত্যি নয়। অনেক দেশই নানা ধরনের গোপন সামরিক তথ্য সংগ্রহের জন্য স্যাটেলাইটগুলো ব্যবহার করে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধবাজ দেশগুলো মহাকাশভিত্তিক সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে, যেটি সমস্ত পৃথিবীকে একটি বড় বিপদের ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।
২০১৮ সালের ১২ যে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ উৎক্ষেপণ করা হয়, ফলে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম যুক্ত হয়। এই স্যাটেলাইট স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের দুর্গম অঞ্চলগুলোতে টেলিযোগাযোগ স্থাপন, নিরবচ্ছিন্ন সম্প্রচার সেবা নিশ্চিত করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক বা ট্রান্সমিশন টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন ব্যাহত না হয় সেই ব্যবস্থা করা। ইতোমধ্যে আমরা এই উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনে সক্ষম হয়েছি।
এছাড়া যেসব জায়গায় ফাইবার অপটিক ক্যাবল বা সাবমেরিন ক্যাবল পৌঁছায়নি, সেসব জায়গায় এ স্যাটেলাইটের সাহায্যে ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙামাটি বেতবুনিয়ার ভূ-কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। জয়দেবপুরের ভুকেন্দ্রটি মূল স্টেশন আর বেতবুনিয়া স্টেশনটি বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা ও টিভি চ্যানেল এবং বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশের টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ থেকে ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা যেমন সাশ্রয় হচ্ছে এবং বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২ উৎক্ষেপণের উদ্যোগও গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২ উৎক্ষেপণ করা হলে আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ