- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- নবম-দশম শ্রেণি
- হৃদযন্ত্রের যত কথা এবং অন্যান্য
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
হৃদযন্ত্রের যত কথা এবং অন্যান্য
রক্তকোষ
রক্তরসের মধ্যে ছড়ানো বিভিন্ন রকমের কোষকে রক্তকোষ বলে। রক্তকোষগুলো প্রধানত তিন রকমের, যথা:
(ক) লোহিত বা লাল রক্তকোষ বা এরিথ্রোসাইট
(খ) শ্বেত রক্তকোষ বা লিউকোসাইট এবং
(গ) অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট বা প্লেটলেট।
লোহিত রক্তকোষ
মানবদেহের পরিণত লোহিত রক্তকোষ দ্বি-অবতল এবং চাকতি আকৃতির (চিত্র ৩.০২)। এতে হিমোগ্লোবিন নামে রঞ্জক পদার্থ থাকার কারণে দেখতে লাল বর্ণের হয়। এজন্য এদেরকে Red Blood Cell বা RBC বলে। অন্যভাবে বলা যায়, লোহিত কোষ প্রকৃতপক্ষে হিমোগ্লোবিন ভর্তি চ্যাপ্টা আকৃতির ভাসমান ব্যাগ। এ কারণে লোহিত কোষ অধিক পরিমাণ অক্সিজেন পরিবহণ করতে পারে। পরিণত লোহিত কোষগুলোর বিভাজন হয় না। এ কোষগুলো সর্বক্ষণই অস্থিমজ্জার ভিতরে উৎপন্ন হতে থাকে এবং উৎপন্ন হওয়ার পর রক্তরসে চলে আসে। মানুষের লোহিত কোষের গড় আয়ু প্রায় চার মাস অর্থাৎ ১২০ দিন। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের লোহিত রক্তকোষগুলো উৎপন্ন হওয়ার পর রক্তরসে আসার পূর্বে নিউক্লিয়াসবিহীন হয়ে যায়। অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর ক্ষেত্রে এরকম ঘটে না অর্থাৎ এদের লোহিত কোষগুলোতে নিউক্লিয়াস থাকে। লোহিত কোষ প্লীহা (Spleen) তে সঞ্চিত থাকে এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে প্লীহা থেকে লোহিত কোষ রক্তরসে সরবরাহ হয়।
বিভিন্ন বয়সের মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে গড়ে লোহিত কোষের সংখ্যা ভিন্ন। যেমন- ভ্রূণ দেহে; ৮০-৯০ লাখ; শিশুর দেহে: ৬০-৭০ লাখ; পূর্ণবয়স্ক পুরুষ দেহে: ৪.৫-৫.৫ লাখ এবং পূর্ণবয়স্ক নারীর দেহে: ৪.০-৫.০ লাখ।
লোহিত কোষের কাজ
লোহিত কোষের প্রধান কাজ হলো:
১. দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করা।
২. নিষ্কাশনের জন্য কিছু পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইডকে টিস্যু থেকে ফুসফুসে বহন করা।
৩. হিমোগ্লোবিনের সাহায্যে রক্তের অম্ল-ক্ষারের সমতা বজায় রাখার জন্য বাফার হিসেবে কাজ করা।
শ্বেত রক্তকোষ বা লিউকোসাইট
শ্বেত কোষের নির্দিষ্ট কোনো আকার নেই। এগুলো হিমোগ্লোবিনবিহীন এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকারের কোষ। শ্বেত কোষের গড় আয়ু ১-১৫ দিন। হিমোগ্লোবিন না থাকার কারণে এদের শ্বেত রক্তকোষ, ইংরেজিতে White Blood Cell বা WBC বলে। শ্বেত কোষের সংখ্যা RBC-এর তুলনায় অনেক কম। এরা অ্যামিবার মতো দেহের আকারের পরিবর্তন করে। ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় (চিত্র ৩.০৩) এটি জীবাণুকে ধ্বংস করে। শ্বেত কোষগুলো রক্তরসের মধ্য দিয়ে নিজেরাই চলতে পারে। রক্ত জালিকার প্রাচীর ভেদ করে টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। দেহ বাইরের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে দ্রুত শ্বেত কোষের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে। মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে ৪-১০ হাজার শ্বেত রক্তকোষ থাকে। অসুস্থ মানবদেহে এর সংখ্যা সাধারণত বেড়ে যায়। শ্বেত রক্ত কোষে DNA থাকে।
প্রকারভেদ: গঠনগতভাবে এবং সাইটোপ্লাজমে গ্রানিউল বা দানার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি অনুসারে শ্বেত কোষকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় (চিত্র ৩.০৪), যথা
(ক) অ্যাগ্রানুলোসাইট বা দানাবিহীন এবং (খ) গ্রানুলোসাইট বা দানাযুক্ত।
(ক) অ্যাগ্রানুলোসাইট
এ ধরনের শ্বেত কোষগুলোর সাইটোপ্লাজম দানাহীন ও স্বচ্ছ। অ্যাগ্রানুলোসাইট শ্বেত কোষ দুই রকমের; যথা-লিম্ফোসাইট ও মনোসাইট। দেহের লিম্ফনোড, টনসিল, প্লীহা ইত্যাদি অংশে এরা তৈরি হয়। লিম্ফোসাইটগুলো বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ছোট কোষ। মনোসাইট ছোট, ডিম্বাকার ও বৃক্কাকার নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট বড় কোষ। লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি গঠন করে এবং এই অ্যান্টিবডির দ্বারা দেহে প্রবেশ করা রোগজীবাণু ধ্বংস করে। এভাবে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণুকে ধ্বংস করে।
(খ) গ্রানুলোসাইট
এদের সাইটোপ্লাজম সূক্ষ্ম দানাযুক্ত। গ্রানুলোসাইট শ্বেত কোষগুলো নিউক্লিয়াসের আকৃতির ভিত্তিতে তিন প্রকার যথা: নিউট্রোফিল, ইওসিনোফিল এবং বেসোফিল। নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়া জীবাণু ভক্ষণ করে। ইওসিনোফিল ও বেসোফিল হিস্টামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে দেহে এলার্জি প্রতিরোধ করে। বেসোফিল হেপারিন নিঃসৃত করে রক্তকে রক্তনালী বা রক্তবাহিকার ভেতরে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।
অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট
ইংরেজিতে এদেরকে প্লেটলেট (Platelet) বলে। এগুলো গোলাকার, ডিম্বাকার অথবা রড আকারের হতে পারে। এদের সাইটোপ্লাজম দানাদার এবং সাইটোপ্লাজমে কোষ অঙ্গাণু- মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বস্তু থাকে; কিন্তু নিউক্লিয়াস থাকে না। অনেকের মতে, অণুচক্রিকাগুলো সম্পূর্ণ কোষ নয়; এগুলো অস্থিমজ্জার বৃহদাকার কোষের ছিন্ন অংশ। অণুচক্রিকাগুলোর গড় আয়ু ৫-১০ দিন। পরিণত মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে অণুচক্রিকার সংখ্যা প্রায় দেড় থেকে সাড়ে চার লাখ। অসুস্থ দেহে এদের সংখ্যা সাধারণত আরো বেশি বা কম হয়।
অণুচক্রিকার প্রধান কাজ হলো রক্ত তঞ্চন করা বা জমাট বাঁধানোতে (blood clotting) সাহায্য করা। যখন কোনো রক্তবাহিকা বা কোনো টিস্যু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কেটে যায়, তখন সেখানকার অণুচক্রিকাগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে অনিয়মিত আকার ধারণ করে (চিত্র ৩.০৫) এবং থ্রম্বোপ্লাসটিন (Thromboplastin) নামক পদার্থ তৈরি করে। এ পদার্থগুলো রক্তের প্রোটিন প্রোথ্রমবিনকে থ্রমবিনে পরিণত করে। থ্রমবিন পরবর্তীকালে রক্তরসের প্রোটিন-ফাইব্রিনোজেনকে ফাইব্রিন জালকে পরিণত করে রক্তকে জমাট বাঁধায় কিংবা রক্তের তঞ্চন ঘটায়। ফাইব্রিন একধরনের অদ্রবণীয় প্রোটিন, যা দ্রুত সুতার মতো জালিকা প্রস্তুত করে। এটি ক্ষতস্থানে জমাট বাঁধে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। তবে রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়াটি আরও জটিল, এ প্রক্রিয়ার জন্য আরও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ভিটামিন K ও ক্যালসিয়াম আয়ন জড়িত থাকে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ