- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- নবম-দশম শ্রেণি
- হৃদযন্ত্রের যত কথা এবং অন্যান্য
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
হৃদযন্ত্রের যত কথা এবং অন্যান্য
হৃৎপিন্ডের কাজ
আমরা পূর্বে জেনেছি, মানুষের রক্ত সংবহনতন্ত্র হৃৎপিণ্ড, ধমনি, শিরা এবং কৈশিক জালিকা নিয়ে গঠিত। মানুষের হৃৎপিণ্ড অবিরাম সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে ধমনি ও শিরার মাধ্যমে রক্ত সংবহন করে। হৃৎপিণ্ড পাম্পের মতো নির্দিষ্ট তালে ও ছন্দে সংকুচিত এবং প্রসারিত হয়ে সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন ঘটায় (চিত্র ৩.১১)।
হৃৎপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সংকোচনকে সিস্টোল (systole) এবং স্বতঃস্ফূর্ত প্রসারণকে ডায়াস্টোল (diastole) বলে। উল্লেখ্য, অলিন্দে যখন সিস্টোল হয়, নিলয় তখন বেশিরভাগ সময় ডায়াস্টোল অবস্থায় থাকে।
মানবদেহের রক্ত সংবহন ৩.১২ চিত্রে দেখানো হয়েছে।
হার্ট-বিট
আমরা আগেই বলেছি, হৃৎপিণ্ড একটি স্বয়ংক্রিয় পাম্পের মতো দেহের ভিতরে সারাক্ষণ ছন্দের তালে স্পন্দিত হয়। হৃৎপিণ্ডের এই স্পন্দনকে হৃৎস্পন্দন বা হার্ট-বিট বলে। এই হৃৎস্পন্দনের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরে রক্ত প্রবাহিত করে।
হার্ট-বিট বা হৃৎস্পন্দন একটি জটিল বিষয়। মানুষের হৃৎপিণ্ড মায়োজনিক (myogenic) অর্থাৎ বাইরের কোনো উদ্দীপনা ছাড়া হৃদপেশি নিজে থেকে সংকোচন ও প্রসারণের দ্বারা হৃৎস্পন্দন সৃষ্টি করে। তবে বাইরের উদ্দীপনা দ্বারা এই সংকোচন-প্রসারণের হার কম-বেশি হতে পারে। একটি হৃৎস্পন্দন হৃৎপিণ্ডে পরপর সংঘটিত ঘটনার সমষ্টিকে কার্ডিয়াক চক্র বলে। হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে রক্ত দেহের ভেতর গতিশীল থাকে। কার্ডিয়াক চক্র চারটি ধাপে (চিত্র ৩.১৩: ক, খ, গ, এবং ঘ) সম্পন্ন হয়:
(ক) অলিন্দের ডায়াস্টোল: এ সময় অলিন্দ দুটি প্রসারিত অবস্থায় থাকে। ফলে সারা শরীরের উচ্চমাত্রায় CO, যুক্ত রক্ত ঊর্ধ্ব ও নিম্ন মহাশিরা দিয়ে ডান অলিন্দে এবং ফুসফুস থেকে উচ্চমাত্রায় ০, সমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরা দিয়ে বাম অলিন্দে প্রবেশ করে।
(খ) অলিন্দের সিস্টোল: অলিন্দ দুটি রক্তপূর্ণ হলে এ দুটি সংকুচিত হয়। ডান অলিন্দ থেকে CO যুক্ত রক্ত ডান নিলয় এবং বাম অলিন্দ থেকে উচ্চমাত্রায় ০, সমৃদ্ধ রক্ত বাম নিলয়ে আসে।
(গ) নিলয়ের সিস্টোল: নিলয় দুটি রক্তপূর্ণ অবস্থায় সংকুচিত হয়। এ সময় ট্রাইকাসপিড ও বাইকাসপিড কপাটিকা বন্ধ থাকে এবং সেমিলুনার কপাটিকা খোলা থাকে। নিলয়ের সিস্টোলের সময় কপাটিকাগুলো বন্ধের সময় হৃৎস্পন্দনের প্রথম যে শব্দের সৃষ্টি হয়, তাকে 'লাব' বলে।
এ সময় বাম নিলয় থেকে উচ্চমাত্রায় ০, যুক্ত রক্ত মহাধমনি এবং ডান নিলয় থেকে উচ্চমাত্রায় CO, যুক্ত রক্ত ফুসফুসীয় ধমনিতে প্রবেশ করে। মহাধমনি থেকে রক্ত বিভিন্ন ধমনি ও শাখা দিয়ে দেহস্থ বিভিন্ন জালকে ছড়িয়ে পড়ে এবং কলাকোষকে পুষ্টিদ্রব্য ও অক্সিজেন সরবরাহ করে। অপরপক্ষে ফুসফুসীয় ধমনি থেকে উচ্চমাত্রায় CO, যুক্ত রক্ত ফুসফুসীয় জালকে প্রবেশ করে। ফুসফুস থেকে রক্ত অক্সিজেন গ্রহণ করে ফুসফুসীয় শিরা দিয়ে বাম অলিন্দে আসে। অপরপক্ষে সারা দেহস্থ রক্ত জালক থেকে উচ্চমাত্রায় কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত রক্ত উপশিরা, শিরা ও মহাশিরা দিয়ে পুনরায় অলিন্দে ফিরে আসে।
(ঘ) নিলয়ের ডায়াস্টোল: নিলয়ে সিস্টোলের পরপরই নিলয়ের ডায়াস্টোল শুরু হয়। এই সময় আবার অলিন্দ থেকে রক্ত এসে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিলয় পূর্ণ হতে থাকে। এই সময় এখানকার সেমিলুনার ভালভ বন্ধের সময় যে দ্বিতীয় শব্দের সৃষ্টি হয় তাকে 'ডাব' বলে।
সুতরাং হৃৎপিণ্ডের শব্দগুলো হলো:
- নিলয়ের সিস্টোল লাব
- নিলয়ের ডায়াস্টোল ডাব
একটি সিস্টোল ও একটি ডায়াস্টোলের সমন্বয়ে একটি হৃৎস্পন্দন সম্পন্ন হয় এবং সময় লাগে প্রায় ০.৮ সেকেন্ড। একজন সুস্থ মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রতি মিনিটে ৬০-১০০ বার হয়। এটাকে হার্ট-বিট বলা হয়। আমাদের হাতের কবজির রেডিয়াল ধমনিতে এই স্পন্দন গোনা যায় আবার বুকের নির্দিষ্ট স্থানে স্টেথোস্কোপ বসিয়ে শব্দ শোনা যায়। হাতের কবজিতে হৃৎস্পন্দন অনুভব করাকে পালস বলে। স্টেথোস্কোপের সাহায্যে হৃৎস্পন্দনের যে শব্দ শোনা যায়, তাকে হার্টসাউন্ড বলে। হৃৎস্পন্দন বা হার্ট-বিটকে যখন প্রতি মিনিটে হাতের কবজিতে বা শরীরের আরো কিছু নির্দিষ্ট স্থানে গণনা করা হয়, তখন তাকে পালস রেট বলে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ