• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • হৃদযন্ত্রের যত কথা এবং অন্যান্য
হৃদযন্ত্রের যত কথা এবং অন্যান্য

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

হৃদযন্ত্রের যত কথা এবং অন্যান্য

অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডি

একজনের রক্তের সাথে আরেকজনের রক্ত মেশানো হলে কেন সেটি কখনো কখনো স্বাভাবিকভাবে মিশে যায় আবার কেন কখনো কখনো গুচ্ছবদ্ধ হয়ে যায় সেটি বুঝতে হলে প্রথমে আমাদের দুটি বিষয় বুঝতে হবে, একটি হচ্ছে অ্যান্টিজেন, অন্যটি হচ্ছে অ্যান্টিবডি। অ্যান্টিজেন হচ্ছে বহিরাগত কোনো বস্তু বা প্রোটিন, যেটি আমাদের রক্তে প্রবেশ করলে আমাদের শরীরের নিরাপত্তাব্যবস্থা (Immune System) সেটাকে শরীরের জন্য ক্ষতিকর মনে করে তাকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। অ্যান্টিজেনকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের রক্ত যে পদার্থ তৈরি করে, সেটাই হচ্ছে অ্যান্টিবডি। অ্যান্টিজেন এবং তাকে প্রতিরোধ করার জন্য সৃষ্ট অ্যান্টিবডি যখন একই দ্রবণে থাকে, তখন একটি বিশেষ ধরনের বিক্রিয়া ঘটে। অ্যান্টিজেনকে আক্রমণ করার এই বিক্রিয়াকে অ্যান্টিবডি-অ্যান্টিজেন বিক্রিয়া বলা যায় এবং রক্তের মাঝে এই বিক্রিয়ার কারণে রক্ত কোষগুলো গুচ্ছবদ্ধ হয়ে যায়।

১৯০০ সালে ড. কার্ল ল্যান্টস্টেইনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবিষ্কার করলেন, বিভিন্ন মানুষের রক্তের লোহিত কোষে দুই ধরনের অ্যান্টিজেন পাওয়া যায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই দুইটি অ্যান্টিজেনকে প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন মানুষের সিরামে (যে তরলে লোহিত কণিকা ভাসমান থাকে) দুটি অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। লোহিত কোষে থাকা এই দুটি অ্যান্টিজেনকে A এবং B নাম দেওয়া হয়েছে। তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ একজন মানুষের রক্তের লোহিত কোষে যদি A অ্যান্টিজেন থাকে তাহলে কোনোভাবেই তার রক্তে A অ্যান্টিজেনের অ্যান্টিবডি থাকতে পারবে না; যদি থাকে তাহলে এই অ্যান্টিবডি নিজেই নিজের রক্তের লোহিত কোষকে আক্রমণ করে মৃত্যুর কারণ হয়ে যাবে। A অ্যান্টিজেনের অ্যান্টিবডি না থাকলেও, B অ্যান্টিজেনের অ্যান্টিবডি থাকে। একইভাবে যে রক্তের লোহিত কোষে B অ্যান্টিজেন আছে সেখানে A অ্যান্টিজেনের অ্যান্টিবডি আছে।

অ্যান্টিজেন এবং তার অ্যান্টিবডির বিষয়টি বুঝে থাকলে আমরা মানুষের রক্ত কীভাবে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে সেটি বুঝতে পারব। যদি লোহিত রক্ত কোষে A এবং B এই দুটি অ্যান্টিজেন থাকা সম্ভব হয় তাহলে আমরা রক্তকে নিচের চারভাগে ভাগ করতে পারি:

গ্রুপ A
রক্তে অ্যান্টিজেন A
সিরামে A অ্যান্টিজেনের অ্যান্টিবডি নেই। B অ্যান্টিজেনের অ্যান্টিবডি আছে।
গ্রুপ B
রক্তে অ্যান্টিজেন B
সিরামে ৪ অ্যান্টিজেনের অ্যান্টিবডি নেই, শুধু A অ্যান্টিজেনের অ্যান্টিবডি আছে।
গ্রুপ AB
রক্তে অ্যান্টিজেন A এবং B দুটোই আছে।
সিরামে A কিংবা B কারো অ্যান্টিবডি নেই থাকা সম্ভব নয়।
গ্রুপ ০
রক্তে A কিংবা B কোনো অ্যান্টিজেন নেই।
সিরামে A এবং B দুটো অ্যান্টিজেনেরই অ্যান্টিবডি আছে।

এখন তোমরা নিজেরাই বলতে পারবে কোন মানুষের কোন গ্রুপের রক্ত দেওয়া সম্ভব।

০ গ্রুপের রক্তের লোহিত কোষে যেহেতু কোনো অ্যান্টিজেনই নেই তাকে যেকোনো গ্রুপেই দেওয়া সম্ভব। সেই গ্রুপে যে অ্যান্টিবডিই থাকুক, কোনো ক্ষতি করা সম্ভব নয়। এজন্য ০ গ্রুপকে বলা হয় ইউনিভার্সাল ডোনার।

আবার অন্যদিকে AB গ্রুপের রক্ত, নিজের গ্রুপ ছাড়া অন্য কোনো গ্রুপকে দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ অন্য সব গ্রুপেই কোনো না কোনো অ্যান্টিবডি আছে এবং AB গ্রুপ দুটো অ্যান্টিজেনই থাকার কারণে যে কোনো একটি বা দুটি অ্যান্টিবডিই লোহিত কোষকে আক্রান্ত করে গুচ্ছবদ্ধ করে দেয়।

A গ্রুপ এবং B গ্রুপের রক্ত নিজের গ্রুপ ছাড়া শুধু AB গ্রুপকে দেওয়া যেতে পারে, কারণ AB গ্রুপে কোনো অ্যান্টিবডি নেই, তাই A কিংবা B অ্যান্টিজেনকে আক্রান্ত করতে পারবে না।

আবার আমরা যদি গ্রহীতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি তাহলে উল্টোটা দেখতে পাব। ০ গ্রুপ কারো রক্তই নিতে পারবে না, কারণ অন্য কোনো গ্রুপের সিরামে দুই ধরনের অ্যান্টিবডিই আছে। অন্যদিকে AB গ্রুপ সবার রক্তই নিতে পারবে কারণ তার সিরামে কোনো ধরনের অ্যান্টিবডিই নেই। এজন্য AB কে বলা হয় Universal Acceptor.

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ