- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- নবম-দশম শ্রেণি
- হৃদযন্ত্রের যত কথা এবং অন্যান্য
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
হৃদযন্ত্রের যত কথা এবং অন্যান্য
Rh ফ্যাক্টর
এতক্ষণ পর্যন্ত যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে, সেটি কিন্তু সম্পূর্ণ হয়নি, কারণ এখন পর্যন্ত রক্তের গ্রুপের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাজনের কথা বলা হয়নি। তোমরা যারা রক্ত গ্রুপের সাথে পরিচিত, তারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ যে, রক্তের গ্রুপ বোঝানোর সময় শুধু A, B, AB কিংবা 0 বলা হয় না, সব সময়েই এর পর একটি প্লাস বা মাইনাস যুক্ত করা হয় (যেমন- A+, O-ইত্যাদি)। এই প্লাস বা মাইনাস চিহ্নটি কোথা থেকে আসে?
রেসাস নামের বানরের লোহিত রক্তকোষে এক ধরনের অ্যান্টিজেন রয়েছে যেটি অনেক মানুষের রক্তের লোহিত কোষে পাওয়া যায়। এই বানরের নাম অনুসারে এটাকে Rhesus Factor বা সংক্ষেপে Rh ফ্যাক্টর বলে। যাদের শরীরে এই অ্যান্টিজেন পাওয়া যায়, তাদের রক্তকে Rh+ এবং যাদের শরীরে এটি নেই, তাদের রক্তকে Rh- বলা হয়। রক্তের গ্রুপের পিছনে যে প্লাস এবং মাইনাস চিহ্নটি থাকে, সেটি এই Rh ফ্যাক্টর ছাড়া অন্য কিছু নয়।
তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ Rh- রক্ত সবসময়ই Rh+ বিশিষ্ট রক্তের মানুষকে দেওয়া সম্ভব (চিত্র ৩.০৬) কিন্তু উল্টোটা এক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করে। Rh- রক্তবিশিষ্ট মানুষকে Rh+ বিশিষ্ট রক্ত দিয়ে প্রথমবার গ্রহীতার কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না কিন্তু ধীরে ধীরে গ্রহীতার রক্ত রসে Rh+ অ্যান্টিজেনের বিপরীত অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। কাজেই দ্বিতীয়বার Rh+ বিশিষ্ট রক্ত দেওয়া হলে এই অ্যান্টিবডি Rh+ রক্তের লোহিত কোষের সাথে বিক্রিয়া করে রক্তকে জমাট বাঁধিয়ে দেবে। একবার Rh+ বিশিষ্ট রক্ত গ্রহণ করার পর যদি গ্রহীতা আর ঐ রক্ত গ্রহণ না করে তাহলে ধীরে ধীরে তার শরীরের Rh+এর অ্যান্টিবডি নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং গ্রহীতা তার স্বাভাবিক রক্ত ফিরে পেতে পারে। তবে তার শতভাগ নিশ্চয়তা নেই।
সন্তানসম্ভবা মায়েদের জন্য এই Rh ফ্যাক্টরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি মায়ের রক্ত Rh- এবং বাবার রক্ত Rh+ হয় তাহলে তাদের সন্তান হবে Rh+ বিশিষ্ট, কারণ Rh+ একটি 'প্রকট' বৈশিষ্ট্য (অর্থাৎ এটি Dominate করে)। মাতৃগর্ভে ভ্রূণ প্ল্যাসেন্টা বা 'অমরা'-এর মাধ্যমে মায়ের জরায়ুর সাথে যুক্ত থাকে। সন্তানের Rh+ রক্ত প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমে মায়ের রক্তে পৌঁছাবে এবং মায়ের রক্তরসে Rh+ এর বিপরীত অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। যেহেতু এই অ্যান্টিবডি খুব ধীরে ধীরে তৈরি হয়, তাই প্রথম সন্তানের বেলায় মায়ের রক্তের Rh+ এর অ্যান্টিবডি সন্তানের দেহে পৌঁছে তার রক্তের কোনো ক্ষতি করতে পারে না এবং একজন সুস্থ সন্তান জন্ম নেয় (চিত্র ৩.০৭)।
তবে দ্বিতীয় সন্তান গর্ভধারণ করার পর মায়ের শরীরের Rh+ এর অ্যান্টিবডি সন্তানের রক্তে প্রবেশ করতে থাকে এবং ভূণের লোহিত কণিকা ধ্বংস করে, ভ্রূণ বিনষ্ট হয়, অনেক সময় গর্ভপাত হয়। সন্তান জীবিত জন্ম নিলেও তার প্রচন্ড রক্তস্বল্পতা থাকে এবং জন্মের পর জন্ডিস রোগ দেখা দেয়।
এজন্য বিয়ের আগেই হবু বর-কনের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ